তোমার জন্য
তোমার জন্য
আমরা তিন জন ছিলাম। স্কুলে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান সকাল বেলা।এই সকালে আমি,বনশ্রী আর তনুশ্রী উপস্থিত ছিলাম।
সকাল আটটা বাজে।গার্লস হাইস্কুলের দিদিমণি সকল আর আমরা ছাত্রী তিন জন পতাকা উত্তোলন করলাম।
--এরপর, আরও দশজন।তারপর, পনের জন।আমাদের নিয়ে মোট আটাশ জন ছাত্রী ।আমরা তিন জন উদ্বোধনী সংগীত গাইলাম, "জনগণমন অধিনায়ক জয় হে"------
তারপর, আমি গাইলাম।"মোরা শান্তিকামী তাই অগ্রগামী----"।
"ধনধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা" গানের সাথে বিশ্রী নেচেছিল।
উৎসব খুব সুন্দর হল।
বনশ্রী বাড়ি যাওয়ার জন্য খুব তাড়াতাড়ি করছিল। তনুশ্রী আর আমাকে সুপর্ণাদি দুজনের হাতে পতাকার দুদিকের দড়ি ধরিয়ে দিয়ে সবার সামনে রাখলেন। তারপর, মার্চ করতে করতে আবার স্কুল চত্ত্বরে।
বনশ্রী চলে গেল। আমি তোমার জন্য রয়ে গেলাম সেদিন। আজও মনে পড়ে।তনুশ্রীর সাথে কয়েকদিন আগেই দেখা হয়েছিল। এই চব্বিশ বছর আগের কথা সে বেমালুম ভুলে গ্যাছে।আমি মনে রেখেছিলাম। কারণ, গান আজও আমাকে টানে পুরনো স্কুলে।
এতো ভালোবেসেছিলাম,বোধহয়,আমার মাঝও এতো ভালোবাসিনি।
বনশ্রীর সাথে ফেসবুকের মধ্যেই দেখা হয়েছিল ।ও সেদিন চিনতে পারল।কারণ, কলেজে একবার দেখা হয়েছিল যেদিন অনার্স ক্লাস ছিল না আমি পাস কোর্সের ক্লাসে গেছিলাম। তাই দেখা হয়েছিল।
কতদিন পরে দেখা হল।মন কেমন তোমার জন্য হু হু করে উঠল।
তোমার উঠানের ঘাসগুলো এখনও গজায় ?
না,সেখানে আর মাটি নেই। আর আমার মত করে কেউ ঘাস পরিস্কার করে না।সেই মাটি হয়তো এককোণে অল্প আছে।নইলে পতাকা তোলার বাঁশ কোথায় পুঁতে রাখা হয়?
__তোমার জন্য একটা পুরনো ডায়েরি আছে।যেদিন আমার ডাক আসবে তখন কোনও পাবলিশার্স থেকে ঐ ডায়েরীর কথাগুলো উপন্যাস করে প্রকাশিত করব।তনুশ্রীর সাথে আবার দেখা হবে।ঐ পাবলিশার্স থেকে যেদিন স্বাধীনতার গান ছাপা হয়ে আসবে সকলের সামনে তনুশ্রী হয়তো আসবে আমার কাছে।
গান গাইবে, "পুরনো সেই দিনের কথা সে কি ভোলা যায়----"।
তারপর, আমরা দুজন প্রার্থনা করব তোমার উন্নতির জন্য। হয়তো আবার জন্ম নেব তোমার আশ্রয় আর আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য।
ফিরে আসবে অতীত পরের জন্মে।দুজনে তখন বলবো,"জানিস তনু,আগের জন্মেও মনে হয় তুই আর আমি এই স্কুলেই পড়তাম।"
