Ignite the reading passion in kids this summer & "Make Reading Cool Again". Use CHILDREN40 to get exciting discounts on children's books.
Ignite the reading passion in kids this summer & "Make Reading Cool Again". Use CHILDREN40 to get exciting discounts on children's books.

Sarajit Mondal

Tragedy

3  

Sarajit Mondal

Tragedy

তাগিদ

তাগিদ

9 mins
664


একবার হঠাৎ আমরা গরিব হয়ে গেলাম। কেমন করে জানি না, তবে তা বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারলাম।

আচকা একদিন আমাদের ঘরের হাঁড়ি বন্ধ হয়ে গেল। মা কাঁদতে শুরু করল। কিন্তু বাইরের লোক তখনো বুঝতে পারল না। তাই মায়ের কথামতো যখন আমি দোকানে ধারে চাল কিনতে গেলাম, ওরা ভাবল, আমাদের খুচরো নেই। চাল কিনছি ঘরে কাজের লোক বা চাষের শ্রমিকদের চাল দিয়ে তাদের বেতন দেব বলে। কিন্তু কেন জানি না, বাইরের কোন লোক আমাদের সেরকম গরিব ভাবতে পারল না।

আমিও বুঝতে পারিনি প্রথমে। হঠাৎ একদিন মায়ের সাথে বাবার ঝগড়া হল আর পরের দিনই বুঝে গেলাম, আমরা খুবই গরিব হয়ে গেছি। স্কুলের পড়াশুনোতে বা খেলাধুলোতে এতটাই ব্যস্ত থাকতাম যে বাবার ব্যবসার হঠাৎ মন্দা বুঝতে একটু দেরি হয়ে গেছিল। বুঝলাম ঝগড়ার পরের দিন থেকেই।

বাবা কি তাহলে একসাথে অনেকগুলো টাকা হারিয়ে ফেলেছে বা ঠকেছে, না কি জুয়া খেলে হেরেছে ? না কি ...? কিছুই বুঝলাম না। কেবল বুঝলাম আমরা গরিব হয়ে গেছি। মারাত্মক গরিব!

এর আগেও একবার গরিব হয়েছিলাম আমরা। সেই দিনটার কথাও আমার মনে আছে। আমি তখন খুবই ছোট। মা বাবাকে বলল, ধান কাটতে যাও। বাবাও ঘরের হাঁড়ির খবরটা বুঝেছিল হয়তো আগেই। তাই কিছু না বলে মাঠে চলে গেছিল আধপাকা ধান কাটতে। তারপর সেই ধান তখনই ঝেড়ে-মেড়ে শুকনো করে ঢেঁকিতে ভেনে চাল বানানো হয় আর দিনের শেষে সেই সন্ধ্যেবেলায় সারাদিনের প্রথম ও শেষ খাবার ফেনভাত পেট পুরে খাই। কি মিষ্টিই না ছিল সে খাবার!

আজও আমার সে কথা মনে পড়ে। যদিও- আমি এখন, প্যারিসের এক পাঁচতারা হোটেলে বসে প্রিয়তমা স্ত্রীকে নিয়ে চিকেন ফ্রায়েড রাইস খাচ্ছি!—

না, কোন স্বপ্ন নয়। চাকরি সুত্রে আমি আজ বউসহ প্যারিসে।

আমার প্যারিসে পৌঁছানো একটা লম্বা লড়াইয়ের কাহিনী। এ কাহিনীতে কার অবদান বেশি সে কথা এখন ঠিক বলতে পারছি না। তবে আমার স্ত্রী সবসময়ই বলে এব্যাপারে তার বাবা শ্রী পঙ্কজ মণ্ডলের অবদানই নাকি সবচেয়ে বেশি। আর আমি বলি, আমার মা-বাবা ও আমার পড়াশুনা বা বড় হওয়ার প্রেরণা বা তাগিদ।

ব্যাপারটা যে ঠিক কী, তা বুঝতে হলে , চলুন না আমার অতীতে একবার ঘুরে আসি ?


ছোটবেলায় যেদিন থেকে স্কুলে যেতে শিখলাম, কেন জানি না, আমি স্কুলকেই বেশি ভালবেসে ফেললাম। মা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের দ্বিতীয়ভাগ কিনে দিয়ে রান্না করতে করতে আমায় পড়াত। কখনো ঝগড়া করিও না, মিথ্যা বলা পাপ, ইত্যাদি। আর আমি “গোপাল বড় সুবোধ বালক”-এর মতো মা-বাবার সব কথা শুনতাম। স্কুলের শিক্ষকমহাশয়দের প্রিয় গুরুজন ভেবে শ্রদ্ধা করতাম ও তাদের কথামতো মন দিয়ে পড়াশুনা করতাম। পরিবর্তে স্কুলে, বাড়িতে ও বন্ধুদের কাছে খুব স্নেহ-ভালোবাসা পেতাম।

তারপর, একসময় স্কুলই হয়ে গেল আমার ধ্যান জ্ঞান। সবসময় পড়তাম। ঠিক সময়ে খাওয়া-দাওয়া করতাম, ঘুমাতাম। স্কুলের ক্লাসগুলোতে ফার্স্টও হতে লাগলাম। বেশ মজায় কাটতে লাগল আমার সেই দিনগুলি।

 

একদিন হঠাৎ রাতে মায়ের সাথে বাবার খুব ঝগড়া হল। তারপর যা বুঝলাম, সে কথা আগেই বলেছি। হ্যাঁ, জানতে পারলাম, আমরা খুবই গরিব হয়ে গেছি।

হঠাৎ আমার গতি কেমন যেন পথহারা হয়ে গেল। মাঝেমধ্যে মা-বাবার ঝগড়া আমাকে খুবই পীড়া দিতে লাগল। আমার রাতের ঘুম কখনো কখনো তাদের হঠাৎ হঠাৎ চিৎকার-চেঁচামেচিতে ভেঙে যেতে লাগল। ঘুম ভাঙলে আমি অনেকসময় বিছানায় বিনিদ্র হয়ে পড়ে থাকতাম। আর এভাবে ঘুম ভাঙলেই মা-বাবার উপর চুপি চুপি নজর রাখতে শুরু করলাম।

বাবাকে কেমন যেন মাঝরাত থেকে বিছানায় জেগে উঠে বসে থাকতে দেখতাম। বসে বসে একটার পর একটা বিড়ি টেনে যেত। দেখলে মনে হোত বাবা প্রচণ্ড চিন্তায় ডুবে গেছে বা যাচ্ছে।

বাকি সবাই ঘুমে ব্যস্ত। আমি ঘুমের ঘোরে শুয়ে থেকে থেকে বাবাকে ওই অবস্থায় দেখতে দেখতে কিছু না বুঝতে পেরে আবার কখন ঘুমিয়ে পড়তাম। তারপর সকাল হলেই বাবাকে আর দেখতে পেতাম না। বাবা কোথায় চলে যেত।

যত বেলা বাড়ত, ততই একজন একজন করে কম করে হলেও সারাদিনে অন্ততঃ আট-দশ জন লোক আসত, বাবার খোঁজে। তাদের কেউ কেউ তো বাবাকে রীতিমতো গালিগালাজ করতে করতে ফিরে যেত। “ আর কতদিন লুকিয়ে থাকবি। একদিন ঠিক হাতে পাবই। তারপর দেখে নেব কে তোকে বাঁচায়?” কথাগুলো যে বাবাকে উদ্দেশ্য করে, প্রথম প্রথম তা বুঝতে পারতাম না। একদিন মাকে তাদের ওই গালি শুনে কাঁদতে দেখলাম। তারপরই বুঝে গেলাম, কথাটা কাকে বলা হচ্ছে। পরে বুঝলাম কেন বলা হয়?

বাবা যে হঠাৎ করে এতটা দেনার দায়ী হয়ে যাবে তা কে জানত? কিন্তু হয়ে গেল। আর পাওনাদারদের চোখ থেকে পালাতে রোজ সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে কোথাও চলে যেত। আর ফিরত রাতে লুকিয়ে লুকিয়ে।

একদিন বাবা ধরা পড়ে গেল। দুজন লোকের কাছে। লোক দুটো খুব ভোরে আমাদের বাড়িতে এসে গেছিল।

আমার তো ঘুম ভাঙল, বাবার উপর লোকদুটোর কর্কশ কান ফাটানো আর জ্বালা ধরিয়ে দেওয়া খারাপ খারাপ গালি শুনে। লোকদুটো বাবাকে এই মারতে যায়, এই মারতে যায় আর কি ? চোখের সামনে বাবার এই বেইজ্জতি আমাকে সেই ছোট্ট বয়সেও বুঝিয়ে দিয়েছিল, অপমান কাকে বলে এবং তা কত বেদনাদায়ক ?

বাবা তো কয়েকবার আত্মহত্যা করতেও গেছিল, কিন্তু পারেনি। পারেনি, শুধু আমাদের জন্য। আমাদের ভালোবাসার কাছে পরাজিত হোত বলে বাবা ফিরে আসত আর এসে আমাদের প্রচণ্ড ভালোবেসে যেত। তারপর আবার লুকিয়ে পড়ত। সেসব দেখে বাবাকে কি নাই বেচারা মনে হোত !

আমরা কষ্ট পাব বলে বা আমার পড়াশুনা হতে মন বাবার দুঃখে ডুবে যাবে বলে বাবা কখনো আমাদের সামনে গরিব হয়ে যাওয়ার দুঃখ দেখাত না বা বলত না। আর তাই বাইরে বাইরে পালিয়ে থাকত।

আমি স্কুলে ভালো পড়াশুনা করে শিক্ষকদের কাছ হতে সবসময় বাহাবা পেতাম আর তাই সবসময় পড়াশুনোতে ডুবে থাকতে ভালোবাসতাম। আর এই পড়াশুনোতে ডুবে থাকতাম বলেই অনেকসময় মা-বাবার অনেক দুঃখ কষ্টের কথা বুঝতে পারতাম না।

সেবার স্কুল থেকে ভালো রেজাল্ট করে বেশ নাচতে নাচতে বাড়ি ফিরছিলাম। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতে আমাকে এক গ্রাম, পরে এক জঙ্গল ও ক্ষেতির মাঠ পার হয়ে আসতে হোত।

একদিন প্রায় সন্ধ্যে হয়ে গেছে। একা ফিরছি। জঙ্গলটার মাঝখানে। কেমন যেন একটু ভয় ভয় করতে লাগল। তবুও হরিণের মতো নাচ আমাকে সঙ্গ দিয়ে সে ভয়টা কাটিয়ে দিচ্ছিল।

আমার আনন্দ-নাচ হঠাৎ থেমে গেল। প্রথমে তো বুঝতেই পারিনি লোকটা কে? কেনই-বা এই জঙ্গলের গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে? একটু কাছে গেলাম। সে আমার দিকে পিছন ফিরে আছে। মনে হল কাঁদছে। হ্যাঁ, তার কান্না বেশ স্পষ্ট শোনা যেত লাগল। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না। প্রচণ্ড কষ্টের কান্না মনে হল। আমি ভাবলাম, বলি, ” কে তুমি ? কাঁদছ কেন?” - বলতে পারলাম না। কিন্ত পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম।

বাচ্চাদের একটা আলাদা গন্ধ আছে বা মা-বাবাদের নিশ্চয় একটা বিশেষ অনুভব শক্তি আছে যা দিয়ে তারা নিজেদের ছেলেমেয়ের উপস্থিতি সহজেই বুঝতে পারে। প্রচণ্ড দুঃখ যেমন মানুষকে কাঁদায় তেমনই প্রচণ্ড ভালোবাসাও মানুষকে খুবই কাঁদায়। অনেক লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেও তা চাপা যায় না। বাঁধভাঙা জলের মতোই তা আছড়ে পড়ে। হলোও তাই।

সে আমার দিকে মুখ ঘুরিয়েই বুঝে গেল আমি কে আর আমিও মুহূর্তমধ্যেই বুঝে গেলাম, সে আমার বাবা-ই!

বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে সশব্দে কাঁদতে লাগল। আর আমিও। যদিও আমি বুঝলাম না, বাবা কেন এভাবে এখানে কাঁদছে ? কিন্তু বাবা কাঁদছে মানেই তার নিশ্চয় খুব কষ্ট হচ্ছে। আর সে কথা ভেবেই আমি আরও কাঁদতে লাগলাম।

সন্ধ্যের অন্ধকারে বাবাকে সঙ্গে নিয়ে যখন বাড়ি ফিরছিলাম তখন দেখলাম বাবা কেমন যেন কান্না থামিয়ে ভীষণ ভয় পেয়ে আস্তে আস্তে গুটিয়ে যাচ্ছে। তবুও সে আমাকে তা বুঝতে দিতে চাইছিল না। বাবা আমাকে বলছিল, একা ঘরে ঢুকতে, সে পরে আসবে। কিন্তু সে অবস্থায় আমি একবারে একলা বাবাকে ফেলে বাড়ি আসতে চাইলাম না। সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরতে চাইলাম। সেও হঠাৎ কেমন যেন আমার ভালোবাসাতে সব ভুলে গেল আর বেশ গল্প করতে করতে বাড়িতে এসে ঢুকল।

বাড়িতে ঢোকামাত্রই দুটো লোক এসে আমাদের ঘরে ঢুকল। ভাবলাম চোর। কিন্তু ওরা চোর নয় । কারণ, চোরেরা জানে আমার বাবার কী অবস্থা এখন। সুতরাং,তাদের মুহূর্তমধ্যের গালিগালাজ হতেই বুঝে গেলাম তারা কারা? বাবার পাওনাদার। তাদের কথা হতে বুঝলাম, সকাল থেকেই তারা নাকি বেশ কয়েকবার আমাদের বাড়িতে এসেও বাবার দেখা পায়নি। তারা আজ ঠিকই করে নিয়েছিল, যেমন করেই হোক বাবার দেখা করেই যাবে। শুধু দেখাই না, একেবারে পাকা তিনহাজার টাকাটা নিয়েই যাবে।

বাবাও নাকি তাদের অপেক্ষা করার কথা বুঝে গেছিল। তাই সারাদিন ওই জঙ্গলেই লুকিয়ে ছিল। তারপর ভেবেছিল, এই সন্ধ্যেয় নিশ্চয় লোকগুলো চলে যাবে। তাই আমার সাথে ফিরছিল। হয়ত-বা আমাদের ভালবাসাই বাবাকে আমার সাথে ফিরিয়ে আনছিল। সে যাই হোক, ঘরে ঢোকামাত্রই লোকগুলোর তেড়েফুঁড়ে মারতে আসা দেখেই আমি আর বাবা কেমন যেন হকচকিয়ে গেলাম। লোকদুটো দুই চড় বাবার গালে বসিয়ে দিয়ে বলল, “ শালা, ভেবেছিস পালিয়ে বাঁচবি ? বাঁচতে দেব না রে ! টুঁটি টেনে ছিঁড়ে দেব। “

তারপর, তারা কেমন যেন সত্যি সত্যি বাবার গলা চেপে ধরতে এল ! মা, বোন ও আমি চেঁচিয়ে উঠলাম !

আমাদের চেঁচামেচিতে পাড়ার কয়েকজন লোক দৌড়ে এল।

লোকদুটো সরে গিয়ে বলতে লাগল, আজ-ই তিনহাজার টাকা চাই। ভেবেছিস লুকিয়ে থেকে হজম করে দিবি? মুখে জুতো মেরে আদায় করে নেব রে ! কি ভেবেছিস তুই ? আমারা বাইরের বলে ছাড়া পেয়ে যাবি। শালা, ছুঁচো, জোচ্চোর, বেল্লিক ! টাকা ফেল আগে-

পাড়ার লোকেরা ব্যাপারটা বুঝে গেল। তারপর বলল, এতজনের কাছে টাকা ধার নিয়ে কি লুকিয়ে থাকা যায় রাধা ? ওদের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা কর।

ব্যবস্থা করতে পারলে কি আজ এই অবস্থা হত ? এত সহজ ব্যাপারটা কেউ বুঝতে পারল না। বাবা চুপ রইল। মা ও বোন কাঁদতে লাগল।

আমি দানব হলে ওইদিনই ওই লোকদুটোকে মেরে ফেলতাম। আর মহামানব হলে ওই মুহূর্তেই কোথা থেকে সেই তিনহাজার টাকা যাদুগরের মতো এনে ওদের গায়ে ছুঁড়ে ফেলতাম। কিন্তু আমি, দানবও না আর মহামানবও নই। তাই কেবল মানব-এর মতোই রাগে দুঃখে ভাবতে লাগলাম, কীভাবে বাবাকে ঋণমুক্ত করা যায় ?

হঠাৎ আমার ভাবনা আমাকে কেমন যেন বড় করে দিল আর আমি বলে ফেললাম, বাবা, ওদের বল, এক মাসের মধ্যে ওরা টাকা পেয়ে যাবে।

আমার কথা শুনে তো সবাই অবাক ! কেমনে সে টাকা আসবে কেউ বুঝতে পারছে না। আমাদের একটু জমি আছে ঠিকই, তবে তা বিক্রি কি এখন করা যাবে ? আর তা বিকলে সবাই খাব কী ? সুতরাং, সেসব চিন্তা মা-বাবা করতে পারছে না। তাই আমার কথা তাদের একেবারে অবাক করে দিল !

আমি বললাম, বাবা, আমার বয়স ষোল। সেরকম কারোর কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে এস যা দিয়ে তোমার দেনা হয়তো শোধ হয়ে যাবে। আমি তো পড়াশোনায় ভালো ? অনেকে, আমার প্রতি রাজি হয়ে যাবে দু’বছর পর তাদের মেয়ে দিতে ।

“মানে-!” - মা-বাবা চেঁচিয়ে উঠল।

-হ্যাঁ, আমি তখন তাদের মেয়েকে বিয়ে করব। অগ্রিম বরপণ কেন নেওয়া যাবে না ?

গ্রামের পঙ্কজ জেঠু সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল। বলল, রাধা, চল, আমি দেব টাকা। আমার মেয়ে মায়াকে তোমাদের অপছন্দ হবে না নিশ্চয় ? তাছাড়া, মধুর বুদ্ধি ভালো। ও আরও পড়াশুনা করতে পারবে।

মা-বাবার দৃষ্টি আমার থেকে সরে গিয়ে পঙ্কজ জেঠুর দিকে বিস্ময়ে ধাবিত হল। জেঠূ আমার দিকে আগ্রহের ভঙ্গিমায় আর সেই পাওনাদার লোকদুটোর দিকে আমি কটমটিয়ে তাকিয়ে রইলাম।

ব্যাপারটা অনেকটা সিনেমার শেষ দৃশ্যের শেষের নিশ্চল ছবি হয়ে যাওয়ার মতো হল। কেবল, সে লোকদুটোকে রাগে গজ গজ করতে করতে চলে যেতে দেখলাম।

মা, বাবা ও বোনকে ঘরে নিয়ে গিয়ে বসালাম। শান্ত হতে বললাম।

বাবা বলল, তা বলে তোকে এভাবে বিক্রি করে -!

-বিক্রি কেন বলছ বাবা ? আমাদের সুস্থ জীবন ফিরে পেতে হলে-, তাছাড়া মায়া মেয়েটা তো খারাপ নয়? একদিন তো আমাকে বিয়ে করতে হবে ? সেটার কথাবার্তা এখন চুকে থাকলে ক্ষতি কী ? দু’তিন বছর পরে বিয়ে করা যাবে ?

আমি আরও পড়ব আর একদিন নিশ্চয় একটা ভালো চাকরিও পাব। তোমরা দেখে নিও।

মা বলল, হ্যাঁ বাবা, তোকে আরও বড় হতে হবে। তুই মা-বাবার দুঃখ-কষ্ট বুঝে আজ যা করলি, আমরা আশীর্বাদ করছি, তুই একদিন অনেক বড় হবি।

এরপর আমরা ঋণমুক্ত হয়ে যাব ভেবে আমি অনেক শান্তি বোধ করতে লাগলাম । এখানে ওখানে পড়ে থাকা জিনিসপত্র গোছাতে লাগলাম আর ভাবতে লাগলাম, সংসারটাকে আমি এভাবেই গোছাব।

একসময় উঠোনে পড়ে থাকা ব্যাগটা ঘরে তুলে রাখতে গিয়ে অবাক হলাম ! দেখলাম, সে ব্যাগের ভেতর একটা বড় দড়ি ! আমার রক্ত জল হয়ে গেল ! এই ব্যাগই আজ বাবা সঙ্গে নিয়ে গেছিল, অর্থাৎ- বাবা গলায় দড়ি--!!

শিউরে উঠলাম !!

***

আমার বউ বলল, আচ্ছা, তুমি তো কিছুই খেলে না দেখছি। কেমন যেন লাগছে তোমাকে ?


Rate this content
Log in

More bengali story from Sarajit Mondal

Similar bengali story from Tragedy