STORYMIRROR

SUMITA CHOUDHURY

Classics Others

3  

SUMITA CHOUDHURY

Classics Others

সূর্য

সূর্য

2 mins
163

গল্প- সূর্য 

 সুমিতা চৌধুরী 


"সূর্য, ওয়ার্ডটা আজকে খুব ভালো করে পরিষ্কার করবি, বুঝলি। আগামী কাল স্বাস্থ্যমন্ত্রী আসবে সাত সকালেই। কোথাও যেন এতোটুকু নোংরা না থাকে। আমায় যেন কৈফিয়ৎ দিতে না হয়।"

"আচ্ছা দিদি।"

সূর্য মেট্রনদিদিকে তার স্বভাবসুলভ সংক্ষিপ্ত উত্তর দিয়ে, নিজের কাজে লেগে গেল। ঘন্টাখানেকের মধ্যে সত্যিই ফিমেল মেডিকেল ওয়ার্ডটা যেন ঝকঝক করে উঠল। মেট্রন সুলতা এবারও প্রতিবারের মতো সূর্যর প্রশংসা না করে পারলেন না। সূর্য মিষ্টি হেসে বিদায় নিল, অন্য ওয়ার্ডের সাফাই অভিযানে।


পরের দিন যথারীতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী এলেন সদলবলে হাসপাতাল পরিদর্শনে। সবাই যে যাঁর দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত ভীষণভাবে। যদি এবার শিকে ছেঁড়ে হাসপাতালের ভাগ্যে, তাহলে গত দুবছর ধরে কিছু নতুন মেশিনপত্র কেনার যে দরবার করে আসছেন তাঁরা, তা সফল হবে। টাকার মঞ্জুরি পেলে, বলা যায় হাসপাতালের সার্বিক উন্নয়ন হবে। একটু জটিল অস্ত্রপ্রচারের জন্য আর অন্য হাসপাতালে রেফার করতে হবে না। আর এই রেফারের দৌলতে বারবার কৈফিয়ৎ দিতেও হবে না। 

সব ওয়ার্ড ঘুরে দেখে, প্রায় কোনো খুঁত খুঁজে পেলেন না স্বাস্থ্যমন্ত্রী। শেষমেশ সুপারের ঘরে বসলেন সপারিষদ। চলতে লাগল নানারকম জটিল হিসেব- নিকেশ আয়-ব্যয়ের। হঠাৎই সুপারের পার্সোনাল কম্পিউটারটা বিগড়ে গেল, অতিরিক্ত জটিলতায়। উপায়ান্তর না দেখে সৌরিনবাবু ডেকে পাঠালেন অগতির গতি সূর্যকে। সূর্য এসে মিনিট পনেরোর মধ্যেই কম্পিউটারকে বশে নিয়ে এলো। কিন্তু যতোক্ষণে সে তার কাজ সাঙ্গ করলো, ততোক্ষণ ধরে তাঁর সুইপারের পোষাকের সঙ্গে ক্ষিপ্র হাতে কম্পিউটার সারাইয়ের দক্ষতাকে কোনোমতেই মেলাতে পারছিলেন না মন্ত্রীমশাই। তাই, ঘর থেকে বেরোনোর আগেই মন্ত্রীমশাই বললেন,"তুমি কি কাজ করো হাসপাতালে? তোমার কাজের সঙ্গে, পোষাকটা মেলাতে পারছি না ঠিক।" সূর্য কিছু বলার আগেই সুপার সৌরিন উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে উঠলেন, "সূর্য আমাদের এখানে সুইপারের কাজ করে স্যার। তবে, ও ভীষণ কোয়ালিফায়েড স্টুডেন্ট। ইঞ্জিনিয়ারিং- এ ভালো রেজাল্টও

করেছিল। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে আজ সুইপারের কাজই করতে হচ্ছে ওকে।" স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভুরু কুঁচকে বললেন, "আপনারা তো ডাক্তার, সায়েন্সের স্টুডেন্ট, তারপরও সব ব্যাপারে এতো ভাগ্যকে দোষেণ কেন? এখন তো উন্নয়নের জোয়ার চলছে। আমি নিজে এসেছি, আপনাদেরও সেই উন্নয়নে সামিল করতে। ও নিজের লাইন ধরে এগোলেই উন্নতি করতে পারতো।" সূর্যর এই প্রথম ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল। সে শান্ত স্বরে বলল,"ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার অনেক খরচ স্যার, ডোনেশন মেটাতে পারিনি। আয়ের থেকে ব্যয় বেশির জটিল অঙ্কটা মেলাতে পারলাম না স্যার। তারপরও চেষ্টা করে যাচ্ছি, কিন্তু জেনারেল কাস্ট তো, রিজার্ভেশনের গণ্ডি টপকে এগোতে পারছি না। রোজগার না করে পেট চালানো দায়, তাই যা পেলাম, অগত্যা..." 

শেষ কথাটা বলার সাথেই অস্ফুটে বেরিয়ে আসে তার দীর্ঘদিনের চাপা দীর্ঘঃশ্বাস। যে দীর্ঘঃশ্বাসের তপ্ত বাতাসে মন্ত্রীমশাইয়ের উজ্জ্বল চেহারাটা যেন এক মুহুর্তেই অস্থি কঙ্কাল সারের এক ভঙ্গুর কাঠামোয় পরিণত হয়। যেন সূর্য সত্যিই তার সত্যের প্রখরতায় উন্নয়নের রঙিন ফানুসটাকে নিশ্চিহ্ন করে দিল এক লহমায়।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics