হবে হবে জয়
হবে হবে জয়
কিছু না বলা কথা ভিড় জমিয়েছে বিপাশার মন জুড়ে কবে থেকেই। জমতে জমতে আজ তারা যেন বিদ্রোহী হয়ে ঝড় তুলেছে। বুঝি আজই যাবে ভেসে তার আর অর্পণের ভালোবাসার ডিঙিটা মাঝ নদীতেই, কোনো তীরে ভেড়ার আগেই।
সত্যিই অর্পণের, রোজের এই অপমান আর সহ্য হচ্ছে না বিপাশার। আট বছরের দীর্ঘ সম্পর্কে, ওরা ঠিক করেছিল, দুজনেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে তবেই সংসার পাতবে সসম্মানে। অর্পণ দুবছর হলো চাকরি পেয়েছে। বিপাশা তার লেখার জগতে আজও সেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি, বা বলা ভালো স্থায়ী উপার্জন করতে শুরু করেনি। তাই অর্পণ প্রায়ই হেয় করে তার এই সাহিত্যপ্রেমকে। অথচ, একদিন এই সাহিত্যপ্রীতিই তাদের দুটি হৃদয়কে এক করেছিল। বিপাশা ভাবে, সে কি সত্যিই দুকূল হারিয়ে, নিজেই হারিয়ে যাবে এই সংসার সমুদ্রে?
ঠিক তখনই কলার টিউনে বেজে উঠল, "নাই নাই ভয়, হবে হবে জয়, খুলে যাবে এই দ্বার...."। দোনামনা করে ফোনটা ধরতেই, অর্পণ বলে উঠল, "আজ সন্ধ্যায় গ্র্যান্ড সেলিব্রেশন। আর ঠিক এক মাস পরে, এই দিনেই রেজিস্ট্রি করবো আমরা। রাইটার বিপাশা মজুমদার, আর ইউ মেরি মি?"
"বিদ্রূপ করছিস? তাও এভাবে?"
" একেবারেই না। তোকে ফোনে না পেয়ে, আমার নাম্বারে ফোন করে আজ এজিপির অগ্নিদা বললেন, তোর সঙ্গে ওঁরা এগ্রিমেন্ট করবেন, আর প্রতি মাসে, সব সংখ্যায় তোর লেখা ওঁরা চান। ওদের সম্পাদক মণ্ডলীর বড় বড় সাহিত্যিকরা তোর লেখার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। উনি আগামী কাল, ওনাদের অফিসে আমাদের ডেকেছেন। তোর আজন্মের স্বপ্ন এবার সত্যি হতে চলেছে, এবার তুই সেলিব্রিটি হয়ে যাবি।
জানি, তোর মনে আমার প্রতি অভিমান- অনুযোগের পাহাড় জমা হয়ে আছে। আর সেটাই স্বাভাবিক। আমি সাহিত্য জগত ভুলে, যান্ত্রিক জগতে দিকভ্রষ্ট হয়েছিলাম রে। প্লিজ ক্ষমা করে দে আমায়। আজ তোর কথার বাণ, হাতের কিল, চড়, সব হজম করার জন্য প্রস্তুত হয়েই আসছি আমি। সবটা বের করে দিস। কিচ্ছু রাখিস না আর মনের মধ্যে।
কাল থেকে আমাদের জীবনে একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে, জীবনের সব মলিনতাকে পিছনে ফেলে।"
হাতে ধরা গীতবিতান থেকে রবিঠাকুর যেন তার দিকে চেয়ে মিটিমিটি হাসছেন, আর নিরুচ্চারে বলছেন, " আমার যে গানকে ভালোবেসে গ্রহণ করে, নিজের মুঠোফোনে জুড়েছিস, তার প্রতি বিশ্বাস টলতে দিতে কি আমি পারি? তোর গল্পটা তাই মিলনাত্মকই রাখলাম।" বিপাশার দু ফোঁটা খুশির অশ্রু বোধহয় শ্রদ্ধার অর্ঘ্য রূপে পড়ল তার প্রাণের ঠাকুরের ছবিতে, তাই তখন।
