মনের ফাগ
মনের ফাগ
অণুগল্প- মনের ফাগ
✍সুমিতা চৌধুরী
ষোড়শী মৌ, ডাফলির তাল কানে যেতেই কোন অমোঘটানে ছুটে এলো জালনায়। মৌ ছোটো থেকেই দোল খেলা পছন্দ করে না। জোর -জার, হুড়োহুড়ি, তার না- পছন্দ। তবু মনের টানকে অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা তার নেই। সেই টানেই এক সদ্য যুবকও নানা রঙে রঙিন হয়ে, ঠিক তখনই মৌদের জালনার উল্টোদিকের রাস্তায় থমকে দাঁড়ালো, নিশ্চল মূর্তির মতোই। দুজনের অপলক দৃষ্টির ঘোর কাটতে যুবক ঠাট্টার ছলে যেন আপনমনেই বলে উঠলো, "রঙের দিনে এমন বেরঙা দেখতে ভালো লাগে না। যদি পারতাম রাঙিয়ে দিতাম।" মনের মানুষের ঐ কটা কথাই মৌকে ফাগুনের ফাগে রাঙিয়ে দিয়ে গেল। মৌয়ের লজ্জা রাঙা নত মুখ দেখে যুবক সোৎসাহে অনুরাগের সুরে বললো, "রঙ না দিতেই যে কেউ রাঙা হতে পারে, এই প্রথম দেখলাম! তাহলে আর আবীরের কি প্রয়োজন?"
এই গল্পের শেষটা মিলনান্তক না হলেও, মৌয়ের জীবনে আর সত্যিই কোনোদিন আবীরের প্রয়োজন হয়নি। বহুবছর কেটে গেছে, হয়তো কখনো কদাচিৎ গালে, কপালে আবীর লেগেছে, কিন্তু মনে লাগেনি। মন রাঙেনি। মনের আবীরে একবারই রেঙেছিল সে, এক ফাল্গুনের মিষ্টি সকালে। সে রঙ আজও লেগে আছে মনের গভীরে। আজও তার আভাস দেখা দেয় কখনো মনে, কখনো মুখের আয়নায়। যেমন, আজ বসন্তের মাতাল বাতাসে সুর ভেসে এলো জানি কোথা থেকে, "লজ্জা জড়ানো তোমার মুখের হাসি, আমারই এ প্রাণে যায় যে বাজিয়ে বাঁশি....." আর মুহুর্তে চল্লিশোর্ধ মৌয়ের মন ও মুখে যেন ফাগের রেখা দেখা দিল আর চোখের কোণে স্মৃতির অশ্রুবিন্দু।

