শুভদীপ (রাতপাখি)

Horror Tragedy Others

4.0  

শুভদীপ (রাতপাখি)

Horror Tragedy Others

সত্যি কি সে আছে...?

সত্যি কি সে আছে...?

7 mins
300


ঘটনাটি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি সত্য কাহিনী অবলম্বনে রচিত। ভূত আছে কি নেই সেই তর্কে যেতে চাইনা। তবে সেটা আপনরাই বিচার করবেন। (বিশেষ কারণবশত ব্যাক্তির নাম এবং স্থান কাল উল্লেখ্য নয়)


সেদিন ছিল শনিবার। হঠাৎ করেই আশেপাশের চেঁচামেচি আর কান্নার আওয়াজে আমার ঘুম টা ভেঙে গেলো। বারান্দা থেকে দেখি ঠিক আমাদের বাড়ির দুটো বাড়ি পরেই অনেক লোকজন সেখানে জমা হয়েছে ওই বাড়িটার সামনে। এরপর আমি ফ্রেশ হয়ে প্রাতঃরাশ সেরে আমার বাড়ির দুতলার সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এলাম। কৌতূহল বশত ব্যাপারটা দেখার জন্য। এসে দাঁড়ালাম ওই বাড়িটার সামনে। বাড়িটার একতলার জানলার দিকেই চোখ পড়তেই আমার হৃদকম্প হতে শুরু করলো। সেই ঘরের ওপরের সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলে রয়েছে একটি মৃতদেহ। আমি ওকে খুব ভালো করে চিনি। ও আমার পাড়ার একটা দাদা। ছোটবেলায় মাঝে মাঝে খেলাধুলাও করেছি ওর সাথে। ও একটু বদমাশ ছিল সবার সাথে ঝগড়া করতো মারামারি করতো। খুব রাগ ছিল ওর একটু কথায় কথায় খুব রেগে যেত। 

এখানে আর একটা কথা বলে রাখি। ও দাদা ছিল ঠিকই কিন্তু ওর বিয়ে হয়েছে প্রায় দুইবছর হলো।


যাইহোক, আমি ওই দৃশ্য দেখে একবারে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। ভাবলাম ওর মতো ছেলে এটা কিকরে করতে পারে। যে কিনা অন্যকে একসময় মারতো এতো রাগ ছিল ওর। আর সেই কিনা...


আমি আর ভাবতে পারলাম না চলে এলাম দ্রুত সেখান থেকে। তারপর প্রায় অনেক্ষন আমি বারান্দা থেকে দেখছিলাম ওখানে কি হচ্ছে। পুলিশ মিডিয়া এবং আরো অনেক লোক সেখানে জড়ো হয়েছে। পুলিশ আসার পর সেখান থেকে ওই লাশ তারা উদ্ধার করে। তারপর যা হবার সেটাই হলো আমাদের হিন্দুমতে। এরপর কত কি হবে একটা মৃত্যুকে ঘিরে। কেনো মৃত্যু হলো?, কিসের জন্য সে আত্মহত্যা করলো? এইসব, যা হয়ে থাকে আরকি বাস্তবে।




ওই দাদাটার মৃত্যুর পর কেটে গেলো প্রায় একটা সপ্তাহ। এই ঘটনার পর ওর বাড়ির লোক সবাই ভেঙে পড়েছিল সেটাই স্বাভাবিক। একটা যৌবন ছেলে মাত্র ২৮ বছর বয়সে যদি এভাবে ছেড়ে চলে যায় তাহলে তার পরিবারের অবস্থা কি হয় সেটা ভাবতেই পারছেন। এদিকে ওর বউ ছিল পোয়াতি। সে আর এখানে থাকেনি। তার বাপের বাড়ির লোক তাকে নিয়ে যায় তাদের কাছে। সেখানেই সে থাকে এখন।


এবার একটু ফ্ল্যাশব্যাক করা যাক অর্থাৎ মৃত্যুর আগে কি হয়েছিল তার, কেনোই বা সে নিজেকে বলি দিল সেই ঘটনটা তুলে ধরছি।


দাদা টা বিয়ে করে ওই ফ্ল্যাট বাড়িটায় থাকতো। সাধারণ ভাবেই ফ্ল্যাটে আরো অনেক লোক থাকতো এবং তার সাথে কিছু ভাড়াটিয়া। 

বিয়ের আগে ওর আর একজনের সাথে সম্পর্ক ছিল এমনকি বিয়ের পরেও তার সাথে কথা হতো দাদাটার। একদিন ওর বউ জানতে পারে ওদের দুজনের সম্পর্ক। তার ফোনের মেসেজ চেক করে। এরপর মাঝে মাঝেই অশান্তি লেগে থাকতো এটা নিয়ে তাদের মধ্যে। তো সেইদিন অশান্তি চরম পর্যায় পৌঁছে যায়। বউটা তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। সেদিন সে অশান্তি করে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ে। পরদিন সকালবেলা তার বউ খাবার করতে গিয়েছিল শশুর বাড়িতে। তার শশুর বাড়িটা ওই ফ্ল্যাট থেকে খুব কাছেই। আমার বাড়ির ঠিক পাশে। তখন দাদাটা ঘরের মধ্যে একা। ঘরে কেউ ছিলনা। সেই ফাঁকে সে ঘরের দরজা বন্ধ করে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে। তারপরের ঘটনা আগেই বলেছি।

এই হলো মূল ঘটনা।



কি ভাবছেন এখানেই কাহিনী শেষ। এতে এমন আর কি ভয় হলো। কিন্তু এবারেই ঘটনার শুরু। যাকে বলা যায়, শেষ থেকে শুরু। সেই দাদাটা তো মরে গিয়ে শেষ হয়ে গেলো কিন্তু আদেও কি শেষ হলো! জানতে হলে পড়তে থাকুন...


আমাদের এই বিংশ শতাব্দীতে দাড়িয়ে হয়তো এসব অনেকে আজগুবি মনে করতেই পারেন। কিন্তু যার সাথে বা যাদের সাথে সেটা ঘটে তারাই জানে তার আসল রহস্য কি।

একটা মৃত্যু তাতে এমন কি আর আসে যায়। এতো এখন রোজকারের বস্তাপচা খবর হয়ে দাঁড়িয়েছে তাইনা।


তো যাইহোক, ঘটনায় প্রবেশ করা যাক...



এই ঘটনার পর থেকে রাতের বেলা নাকি কিছুর একটা আওয়াজ শুনতে পায় ফ্ল্যাটের লোকেরা। বাথরুমে যেতে গিয়ে আচমকাই কেউ যেনো ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় তাকে। দুমদাম নাকি ছাদের ওপর থেকে শব্দ শুনতে পায় তারা। যেনো মনে হয় কেউ দৌড়াদৌড়ি করছে সেখানে। তার ঘরের সামনে থেকে যেতে গেলেই কেউ কেউ আবার হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়। 


অনেকের মনেই একটা আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। আবার কেউ কেউ এটাকে হাসির ছলেই এড়িয়ে যায়। তো এই জিনিষ গুলোর কথা আমারও কানে গেল। আমারও একটু ভয়ের থেকে বেশি কৌতূহল হলো আদেও কি সত্যি নাকি মিথ্যে।


এখানে বলে রাখি আমি ছোট থেকেই কোনো কিছু রহস্যের উন্মোচন করতে ভালোবাসি। সব জিনিসেই কৌতূহল টা চরম মাত্রায় থাকে। আর সেটা যদি এই ভুতুড়ে কাণ্ড নিয়ে হয় তাহলে তো আর কথাই নেই। আদেও কোনোদিন কেউ গোয়েন্দা আখ্যা দেয়নি বটে তবে আমি নিজেকে মনে মনে অল্প বিস্তার সেটা মনে করি।


তো আমি একটা প্ল্যান ঠিক করলাম। খবর দিলাম আমার বন্ধু ও দাদাদের। প্ল্যানটা হলো এই যে, আমরা কয়েকজন মিলে সেই ঘরটায় থাকবো একদিন, দেখবো সেখানে কি হয়। স্বভাবতই কেউ কেউ রাজি হতে চাইলনা ভয় তে। অবশ্য আমারও যে ভয় একটুও হচ্ছিলনা তা নয়। এই বলে তিনজনকে রাজি করানো গেলো। 


কোনরকম ফ্ল্যাটের সবাইকে মোটামুটি রাজি করিয়ে ওখানে একটা রাত থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম।

সেদিনও ছিল শনিবার, মোটামুটি ঘরটা ফাঁকাই সব আসবাব সরিয়ে ফেলা হয়েছিল আগেই। বেশি বড়ো নয় ঘরের পরিধি তাও আমাদের চারজনের গা টা একটু ছমছম করছিল। আমরা একসাথে মোটামুটি রাত দুটো পর্যন্ত ফোন নিয়ে সময় কাটিয়েছি গল্প করেই সময় টা অতিবাহিত হলো। এদিকে বলা ভালো ততক্ষণ পর্যন্ত তেমন কিছুই অস্বাভাবিক আমরা শুনতে বা দেখতে পাইনি। কিন্তু ঘটনাটা ঘটলো ঘুমানোর আধঘণ্টা পরেই।


হঠাৎ বাথরুমে টুপটাপ জল পড়ার শব্দে সোনাই অর্থাৎ আমার এক বন্ধুর ঘুম ভেঙে গেলো। মোবাইলের আলো টা জ্বালিয়ে সে দেখে ঘড়িতে তখন রাত ২.২০। তারপর সে সেটাকে পাত্তা না দিয়ে আবার শুয়ে পড়ে। আবার কিছুক্ষণ পর একটা শব্দে ঘুম ভেঙে যায় ওর তার সাথে আমারও। সেই জল পড়ার শব্দটা যেনো বেড়েছে অর্থাৎ জোরে কেউ কল টা খুলে দিয়েছে। আমরা ভাবলাম ওদের মধ্যে কেউ হয়তো বাথরুমে গেছে তাই আওয়াজ হচ্ছে। কিন্তু পাশে তাকিয়ে দেখলাম ওরা এখনো ঘুমিয়ে ওদের ঘুমই ভাঙেনি কোনো আওয়াজে।


এবার আলো টা জ্বালিয়ে আসতে আসতে বাথরুম এর দিকে গেলাম এখনও আমরা শুনতে পাচ্ছি আওয়াজ টা। দরজাটা আসতে করে খুললাম। কিন্তু কেউ নেই সেখানে শুধু কল থেকে জল পড়ছে ভিতরে। কলটা বন্ধ করে দিলাম।

হঠাৎ একটা চিৎকারে আঁতকে উঠলাম। আবার ঘরের কাছে এসে দেখি সৈকত উঠে বসে আছে আর খুব জোরে জোরে হাঁপাচ্ছে আর সেই চিৎকার শুনে বলটুদাও উঠে পরেছে।


এসে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে? বল্টুদা জানালো "সৈকত মনে হয় ভয়ের স্বপ্ন দেখেছে কিছু একটা তার জন্য চিৎকার করে উঠেছে। আর ওর চিৎকার শুনে আমিও জেগে গেছি।"


এবার সৈকত একটু জল খেয়ে ভয় ভয় আমাদের জানালো, "সে নাকি একটা ভয়ের স্বপ্ন দেখেছিল। আর সেটা খুব ভয়ানক একটা স্বপ্ন। সৈকত দেখেছিল তাকে কেউ একজন গলায় দড়ি দিয়ে টেনে ধরার চেষ্টা করছে। শ্বাসনালী বন্ধ হয়ে এসেছিলো তার। তারপরেই সে চিৎকার করে ওঠে অভাবে।"


আমাদের এবার সত্যি একটু ভয় ধরে গেলো সমস্ত ঘটনা গুলো বিচার করার পর। 

সৈকতও খুব ভয় পেয়েছে ও বাড়ি যেতে চাইলো আর বলল "এই রাতের মধ্যেই যদি কারুর একটা কিছু হয়ে যায় আমাদের তখন কি হবে?"

আমরা তাকে আশ্বাস দিয়ে জানালাম এত রাতে আর বাড়িতে না যাওয়ার জন্য। কিছুক্ষন পর এমনিতেই ভোর হবে তখন সবাই উঠে চলে যাবো।


রাত প্রায় অনেকটাই গভীর চারদিক নিস্তব্ধ। আমরা একটা বুদ্ধি বের করলাম আমরা। শুনেছি নাকি যেকোনো অস্পষ্ট কিছু ক্যামেরা অথবা সিসি টিভিতে ধরা পড়ে। সেটা ভেবেই আমাদের মধ্যে একজনের মোবাইলটা বের করে তার ভিডিও ক্যামেরাটা চালু করে দিলাম।তারপর আমরা সবাই বোতল থেকে একটু জল খেয়ে আবার শুয়ে পড়ার চেষ্টা করলাম। অনেক রকম বাজে চিন্তা মাথায় আসতে লাগলো। নিজেরা কথা বার্তা বলতে বলতেই কখন ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল নেই।


ভোরবেলা ঘুম ভাঙলো একটা দরজার ধাক্কায়। একজন কাকিমা আমাদের খোঁজ নিতে এসছে আমরা ঠিক আছি কিনা। আমরা বললাম সবাই ঠিক আছি। তারপর উনি চলে গেলেন।

মোবাইলটা দেখলাম সুইচ অফ হয়ে গেছে। হয়তো সারারাত ক্যামেরা চালু থাকার জন্য চার্জ শেষ হয়ে গেছে।

সকাল হওয়ার পর সবাইকে সবটা বললাম। তারাও সেটা শুনে ভয় পেয়ে গেলো অনেকে। সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো ওই ঘরে যজ্ঞ করে শুদ্ধিকরণ করানো হবে এবার।


সবশেষে আমরা ঘরে এসে মোবাইলটা চার্জ হয়ে যাওয়ার পর সেটা নিয়ে বসলাম। ফোন টা অন করে চেক করলাম কিছু রেকর্ড হয়েছে কিনা।

তারপর আমরা যা দেখলাম সেটা দেখে বুকের রক্ত হিম হয়ে গেলো সবার। ভিডিওতে রেকর্ড হয়েছে একটা অস্পষ্ট অবয়ব তার মুখ চোখ কিছু বোঝা যাচ্ছেনা শুধু অন্ধকারে কালো ছায়ার মতো কিছু একটা। সে খাটের ঠিক একটা পাশে টুলের ওপর প্রথমে দাড়ালো তারপর ফ্যানের সাথে একটা কাপড় বাঁধলো।

হঠাৎ সেই কাপড়ে ফাঁস লাগিয়ে সে ঝুলে পড়লো সিলিং ফ্যান থেকে। কাতরাতে কাতরাতে একসময় তার নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেলো। তারপরেই আর কিছু নেই পুরোই অন্ধকার ঘর।


আমরা এটা কাউকে আর দেখায়নি শুধু চারজনেই দেখেছি সেই দৃশ্য। সেই সকাল বেলাতেও ওই রেকর্ড করা ভিডিওটা দেখার পর আমাদের ভয় কাটলো না। তারপর ফোন থেকে সেটা ডিলিট করে দেওয়া হয়।


পরিশেষে একটাই কথা বলার সে সত্যি এখনও আছে কি নেই আমি জানিনা। তবে যেটুকু আমরা দেখেছি, তার অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট। 





Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror