না বলা কথা (অসমাপ্ত ভালোবাসা)
না বলা কথা (অসমাপ্ত ভালোবাসা)
অন্বেষা ও রনির না বলা কথা।
প্রতিদিনের মতো আজও ছেলেটি ব্যাগ কাঁধে, এপ্রন পরে বাস স্ট্যান্ড এ দাঁড়িয়ে বাস এর জন্য ওয়েট করছে।
অন্বেষা আজও তাকে দেখল। ছেলেটি একটু অন্যরকম সবার থেকে। সে মেডিকেলের স্টুডেন্ট। এই ছেলেটাকে একটু অন্য রকম লাগে তার। মেডিকেলের ওপর অন্বেষার খুব রাগ কারণ, সে নিজেই মেডিকেলে ভর্তি হতে চেয়েছিল কিন্তু হতে পারেনি।
কিন্তু এই ছেলেটিকে দেখলে তেমন বিরক্তি আসে না তার। বরং ওকে দেখার জন্যই অন্বেষা প্রতিদিন একাই বাস স্ট্যান্ড এ আসে। অন্য কোন পথ দিয়ে যাতায়াত না করে এই পথ দিয়েই আসে সে।
অন্বেষা একটু অন্যরকম ছিল।
অন্যরকম বলতে, সে এমন ভাব করে যেন প্রেম-ভালবাসার ধারে কাছে সে নেই। কিন্তু মনে মনে সে এক ধাপ এগিয়ে।
বাস স্ট্যান্ড এর ওই ছেলেটার নাম ছিল রনি। রনিও অন্বেষা কে চুপচাপ লক্ষ করত। মাঝে মাঝেই তাদের একে অপরের সাথে চোখাচোখি হত। বাস এ রনি যখন দেখত অন্বেষা দাড়িয়ে আছে আর সে বসে আছে তখন নিজের সিটটাও ছেড়ে দিত। কিন্তু তারা কখনও একে অপরের সাথে কথা বলেনি। এমনকি তারা নিজেরা নিজেদের নাম টাও জানতোনা।
অন্বেষা প্রতিদিনই হাজারও বুদ্ধি বের করত রনির সাথে কথা বলার কিন্তু কাজের সময় আর বুদ্ধিকে কাজে লাগাতে পারতোনা।
প্রতিদিনের মত আজও অন্বেষা চিন্তা করতে লাগল ব্যাপারটি নিয়ে।
যেহেতু অন্বেষা একটু চাপা স্বভাবের, তাই সে এই ব্যাপারে কারও কাছে পরামর্শও চায়নি।
দুদিন বাদেই ১৪ই ফেব্রুয়ারী।
সে ঠিক করল ওই দিনই ছেলেটিকে সব বলবে ও।
যেই অন্বেষা জীবনে কখনও ফুল কেনেনি, সেই ১৪ই ফেব্রুয়ারী সকালে নিজে ফুল কিনতে গেল। নিজের পছন্দের ফুল হাতে নিয়ে সে বাস স্ট্যান্ড এ দাড়িয়ে আছে টির অপেক্ষায...
বেশিরভাগ সময় বাস স্ট্যান্ড এ ছেলেটিকেই আগে আসতে দেখা যেত। আগে দেখা না গেলেও ১০-২০ মিনিটের মধ্যে চলে আসত। কিন্তু আজ ৪০ মিনিট দাড়িয়ে থাকার পরেও রনির কোন খবর নেই।
আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল অন্বেষা। কিন্তু এর পরেও ওর কোন দেখা নেই। নিজেকে খুব বোকা মনে হল অন্বেষার।
মনে মনে ভাবলো,“ছেলেটির হয়তো প্রেমিকা আছে। না, হয়তো কেন হবে। অবশ্যই আছে। মেডিকেলে এ পড়ে, দুই দিন বাদে ডাক্তার হবে। দেখতেও তো খারাপ নয়।
প্রেমিকা থাকবেনা কেন?? ১৪ই ফেব্রুয়ারীতে প্রেমিকাকে ছেড়ে সে এই বাস স্ট্যান্ডেই বা আসবে কেন???”
ওই দিন অন্বেষা অপেক্ষা করে তারপর দুঃখী মনে চলে গেল। ঠিক করল আর কোন দিন ওই বাস স্ট্যান্ড এই যাবেনা।
না সে আর যায়নি। গেলেও অনিচ্ছাকৃত ভাবে।
তবে যখনই সে ওই বাস স্ট্যান্ড পার হয়েছে তখনই বাসের অপেক্ষায় দাড়িয়ে থাকা মানুষ গুলোর দিকে তাকিয়ে থেকেছে।
কিন্তু রনিকে কে দেখেনি।
প্রায় দুই বছর কেটে গেছে। অন্বেষার বিয়ে ঠিক হল। বিয়েটি ঠিক করল তার মা। সে কোনো আপত্তি করে নি। যদিও সে রনি কে ভুলতে পারেনি।বিয়ের পর কিছুদিন ভালই কাটল। তারপর একদিন অন্বেষা তার বরের ঘরে একটি ছবি খুঁজে পেল। ছবিটি দেখে আঁতকে উঠল সে।
এটি সেই ছেলের ছবি অর্থাৎ রনির।
অন্বেষা তার বরের কাছে জানতে চায়,
“ছেলেটি কে?? ”
জবাবে তিনি জানান..
“ছেলেটির নাম রনি।
মেডিকেল এ পড়ত। বছর দুই আগে ১৪ই ফেব্রুয়ারী তে সে রোড এক্সিডেন্ট এ মারা যায়। মারা যাওয়ার সময় তার হাতে ফুল ছিল আর ছিল একটি চিঠি। তার সাথে নাকি প্রতিদিন এক মেয়ের দেখা হত বাসস্ট্যান্ড এ।
সে তাকে প্রপোজ করার জন্যই ওই দিন বাস স্ট্যান্ড এ যাচ্ছিল। দুঃখের বিষয় সে মেয়েটির নাম বলতে পারেনি।
কোন ঠিকানাও দিতে পারেনি।"
অন্বেষা সবটা শোনার পর বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। তার বলার বা ভাবার আর কিছুই রইলো না। রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো দুঃখী অন্বেষা।
সমাপ্ত।।
