সত্ত্বা
সত্ত্বা
আরাধনা যখন বাংলো বাড়িটার গেট খুলে বেরিয়ে এলো, তখন রাত প্রায় এগারোটা। বাংলোটা এমনিতেই শহর থেকে বেশ কিছুটা দূরে একদম নির্জন একটা জায়গায় অবস্থিত। তার ওপর রাত বেশি হয়ে যাওয়ায় চার পাশটা একদম নিঝুম নিস্তব্ধ হয়ে আছে। সামনে পেছনে কোথাও একটা জীব জন্তুরও দেখা নেই। সামনের চওড়া রাস্তাটা বাংলোর থেকে বেরিয়ে সোজা গিয়ে রাজপথের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রায় দু কিলোমিটার দূরে। অত দূর এই রাত্রিবেলায় একা একা হেঁটে যাওয়া খুব একটা সুবিধের হবে বলে মনে হচ্ছে না। রাস্তাটার দু পাশে দেবদারু আর ইউক্যালিপটাস গাছের সারি। মাঝে মধ্যে কয়েকটা অশ্বত্থ আর বট গাছ আছে। আরাধনা আজকে এখানে প্রথম বার আসেনি অবশ্য। তবে এত রাত এর আগে বোধহয় কখনও হয়নি। মনের মধ্যে সাহস সঞ্চয় করে ও রাস্তা ধরে এগিয়ে চলল । বাংলোর আলোগুলো যাও বা একটু আধটু আলোর রেখা ফেলছিল কিছুদূর পর্যন্ত, এখন আর তার কোনো রেষ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। এখন চার দিকটা নিশ্ছিদ্র অন্ধকারের মায়াবী জালে ঢেকে গেছে।
সমীর বিদেশ থেকে ফিরেই ওকে ফোন করেছিল আসতে। তাই ও ওর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল বিকেল বেলায়। সমীরের সঙ্গে ওর ঘনিষ্ঠতা অনেক দিনের। তাই, সমীর যখন বিদেশে চলে গেল, আরাধনা হৃদয়ে খুব কষ্ট পেয়েছিল। ওরা একে অপরকে ভীষণ ভালবাসে। দুজনেই এত দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানের জন্য আলাদা থাকার পর যখন এসে মিলিত হয়, তখন ওদের শরীর ও মন দুয়েরই মিলন হয়। সত্যি কথা বলতে, আরাধনা শারীরিক মিলনের খিদে মেটাতেই আজ এখানে এসেছিল। ওর খিদে মিটিয়েও দিয়েছে সমীর। ও চেয়েছিল আরাধনা কে গাড়ীতে করে ওর ঘরের কাছাকাছি ছেড়ে দিতে, কিন্তু আরাধনাই মানা করে। ঘরে ও নিজের ছোটো ভাইকে বলে এসেছে শহরে যাচ্ছে বলে। এখন সমীরের সঙ্গে ওকে ফিরতে দেখলে পাছে ও কিছু সন্দেহ করে, তাই এই ব্যবস্থা। কিন্তু রাস্তা দিয়ে একা একা এগোতে গিয়ে, এখন মনে হচ্ছে, সমীরের সঙ্গে কিছু দূর অবধি গাড়ীতে করে গেলেই ভালো হত।
এখন ও বাংলো আর রাজপথের প্রায় মাঝা মাঝি জায়গায় এসে পৌঁছে গেছে। রাতের অন্ধকার যেন আর গাঢ় হয়ে গেছে। একটু শীত শীত মতন লাগছে। কাছের কোনো গাছের থেকে একটা রাতচোরা পাখি হটাত করে কর্কশ শব্দে ডেকে উঠল। সেই ডাকে আরাধনা একদম চমকে উঠল। তখনই একটা ছোট্ট কালো মতন জন্তু ওর সামনে দিয়ে রাস্তাটা পার করে চলে গেল। ওটা বেড়াল ছিল কিনা সে বিষয় নিশ্চিত হতে পারল না আরাধনা । যাই হোক! ও কয়েক পা পিছিয়ে আবার হাঁটতে লাগল। কিছুদূর এগোনোর পর আবার সেই রাতচোরা পাখিটা ডেকে উঠল।
বেড়ালের মতন দেখতে প্রাণীটা আবার ওর সামনে দিয়ে রাস্তা পার করে চলে গেল। প্রাণীটা এবার উলটো দিক থেকে রাস্তা পার করল। আরাধনা র জানা আছে একটু আগে একটা শ্মশান আছে। ওটা পার করলে গিয়ে রাজপথে পড়া যাবে। কিন্তু, এখন ওকে শ্মশানটা পার করতে হবে। দু দুবার সেই বেড়ালের মতন দেখতে প্রাণীটাকে রাস্তা কাটতে দেখে আরাধনা র এমনিতেই একটু ভয় লাগতে শুরু করেছে। তার ওপর আবার শ্মশানটার কথা মনে পড়তেই ওর সারা শরীরে লোমগুলো খাড়া হয়ে পড়ল। হটাত করে ঠাণ্ডাটাও যেন বেশি মনে হতে লাগল। ঠিক তখনই ওর কানে এলো ভয়ঙ্কর কোনো প্রাণীর চিৎকারের আওয়াজ। একটু খেয়াল করতেই বুঝতে পারল, ওটা অন্য কিছু না; শ্মশানের কুকুরগুলোর ডাক। কথাটা মনে হতেই ওর শির দাঁড়া দিয়ে একটা ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে গেল। এমনিতেই ও কুকুর দেখলে ভীষণ ভয় পায়। তার ওপর এগুলো আবার শ্মশানের কুকুর। এগুলো নাকি খুবই হিংস্র ধরণের হয়। ও একবারের জন্য চার দিকে চেয়ে দেখার চেষ্টা করল যদি বোঝা যায় কুকুরগুলো কোন দিক থেকে আসছে। কানের পেছনে হাত রেখে বোঝার চেষ্টা করল, জন্তুগুলোর আওয়াজ কোন দিক থেকে আসছে। প্রথম বারে ঠিক ভাবে জানা গেল না, তবু আরেকটু নিরীক্ষণ করেই বুঝতে পারল, কুকুরগুলো ওর রাস্তার ডান দিক থেকে আসছে। ও সঙ্গে সঙ্গে রাস্তার বাঁ দিকের গাছগুলোর ভেতরে গিয়ে ঢুকে এগতে লাগল। এতে কুকুরগুলো হটাত করে ওকে দেখতে পাবে না, আর যদি কাছাকাছি এসেও পড়ে, তবুও ওর পক্ষে কাছের কোনো গাছের ওপর চড়ে যাওয়ার সুবিধে থাকবে। রাস্তার মাঝখানে থাকলে কুকুরগুলো ওকে নিশানা বানাতে দেরি করবে না। সে ক্ষেত্রে নিজের প্রাণ বাঁচানোও মুস্কিল হয়ে যাবে। ঐ কুকুরের দল এক বার যার পেছনে ধাওয়া করতে আরম্ভ করবে, তার পক্ষে আর বাঁচা সম্ভব নয়।
কুকুরগুলোর ডাক এখন বেশ স্পষ্ট ভাবে শোনা যাচ্ছে। তার মানে ওরা ওর গন্ধ শুঁকে ওর দিকেই এগিয়ে আসছে। এটা খুবই বিপদের ব্যাপার। ও গাছগুলোর মাঝখান দিয়ে ছুটতে শুরু করল। গাছগুলো ওকে লুকোতে সাহায্য করলেও ওখান দিয়ে ছোটা ওর পক্ষে খুব একটা সুবিধার হচ্ছে না, কারণ, গাছগুলোর মাঝখানটা অজস্র ঝোপ ঝাড়ে ভর্তি হয়ে আছে। ঝোপের কাঁটাতে লেগে ওর পরনে লেগিন্সটাও চিরে চুরে যাচ্ছে। এক এক জায়গা থেকে রক্তও ঝরতে আরম্ভ করেছে। এখন কিন্তু ওসব নিয়ে মাথা ঘামানোর উপায় নেই। কোনোরকমে এই জায়গা থেকে পালিয়ে বাঁচতে হবে। কুকুরগুলোর আওয়াজ আরও স্পষ্ট হয়ে এলো। ওরা নিশ্চয় এখন অনেক কাছে এসে পড়েছে। ওদের পায়ের শব্দও এখন শোনা যাচ্ছে। শুকনো পাতাগুলোর ওপর পা ফেলে ওরা দ্রুত গতিতে ওর পেছনে ধেয়ে আসছে। এবার আর রক্ষে নেই। ওকে জোরে ছুটতে হবে। আর গাছের আড়ালে থাকলে হবে না। এখন কুকুরগুলো দেখা না গেলেও ওদের পায়ের শব্দ আর জোরে জোরে ছুটে আসার ফলে ঘন ঘন নিশ্বাসের শব্দও যেন ওর কানে এসে লাগছে। বাধ্য হয়ে ও রাস্তার ওপর এসে ছুটতে আরম্ভ করল। কুকুরগুলো এখন একদম ওর পেছনেই ছুটছে। ওদের হিংস্র জিভের লালাগুলোও বুঝি টপ টপ করে মাটিতে পড়ে আওয়াজ তুলছে। আরাধনা বুঝতে পারল, ওর শেষ সময় ঘনিয়ে এসেছে। যে কোনো মূহুর্তে কুকুরগুলো ওর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে আর ওকে কামড়ে ছিঁড়ে ফেলবে।
হটাত, পেছন থেকে একটা গাড়ীর আলো সামনের রাস্তায় এসে পড়ল। ওর ছায়াটা লম্বা হয়ে রাস্তার ওপরে পড়ল। ছুটতে থাকা কুকুরগুলোর ছায়াও ওর কাছাকাছি এসে পড়ল। ছায়া দেখে বোঝাই যাচ্ছে ওরা ঊর্ধ্বশ্বাসে ওর পেছনেই ছুটতে ছুটতে আসছে । পেছন ফিরে তাকিয়ে দ্যাখে, একটা কার রাস্তা দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। ও জোরে জোরে পা ফেলে এগোতে লাগল, যাতে এই আলোটাকে পেছনে রেখে তাড়াতাড়ি রাস্তাটা পার হয়ে যাওয়া যায়। কুকুরগুলো যখন ঠিক ওর পাশেই এসে পৌঁছে গেল, তখনই গাড়ীটা ওর পাশে এসে থামল। এইখানে কোনো গাড়ী এসে ওর পাশে দাঁড়ানো মানেও আরেক বিপদের আশঙ্কা। ও তাড়াতাড়ি পা চালাতে চেষ্টা করল। তখনই শুনতে পেল, কেউ ওর নাম ধরে ডাকছে। তাকিয়ে দ্যাখে, সমীর গাড়ীর চালকের আসনে বসে ওকে ডাকছে।
ওকে দেখে আরাধনা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল, নাহলে ওর পক্ষে বাকি রাস্তাটুকু পার হওয়া মুস্কিল হয়ে পড়ত। হয়ত ও আর পার হতেই পারত না। কুকুরগুলোই হয়ত ওর জীবনটাকে এখানে শেষ করে ফেলত। সমীর ওর জন্য গাড়ীটার দরজা খুলে দিল, আর ও সমীরের সঙ্গেই সামনের সিটে গিয়ে বসল। কুকুরগুলোর কাছ থেকে রক্ষা পেয়ে আরাধনা কিছুটা ধাতস্থ হতে পারল। এখনও ওর বুকের ধুকপুকুনি বেশ জোরেই চলছে। সমীরকে বলল, “তুমি আরেকটু দেরি করলেই আমি শেষ হয়ে যেতাম”। সমীর কিছু না বলে বাঁ হাতে ওর গলা জড়িয়ে ধরে সামনের রাস্তায় চোখ রেখে গাড়ী চালানোয় মননিবেশ করল। আরাধনা একবারের জন্য পেছন ফিরে কুকুরগুলোকে দেখতে চাইল। কুকুরগুলো অন্ধকারে আর দেখা যাচ্ছে না। তবে লম্বা লম্বা ডাক দিয়ে ওদের কান্নার আওয়াজ ওর কানে এসে ঠেকল।
রাজপথে পড়ার পর সমীর গাড়িটাকে বেশ জোরে চালাতে শুরু করল। রাজপথে তখনও অনেক গাড়ী ঘোড়া যাওয়া আসা করছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা আরাধনা র ঘরের কাছে এসে পৌঁছে গেল। গাড়ীটা থামতে আরাধনা সমীরকে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য ওর দিকে তাকাল। কিন্তু, কোথায় সমীর? গাড়ির চালকের আসন তো খালি। তাহলে এতক্ষণ গাড়িটা চালাচ্ছিল কে? সমীর তো ওদিকের দরজাটাও খোলেনি, যে নেমে গিয়ে থাকবে। তাহলে গেল কোথায় ও? গাড়ির ভেতরে এদিক ওদিক তাকিয়ে ও খুঁজতে লাগল সমীরকে। কিন্তু, কোথাও আর দেখতে পেল না। মোবাইলের টর্চটা জ্বালিয়ে খুঁজতে আরম্ভ করল পাগলের মতন। আর তখনই ওর নজর চলে গেল গাড়ির অ্যাক্সিলারেটর আর ব্রেক প্যাডেলের দিকে। ওখানে একটা সরু চেন পড়ে থাকতে দেখল। আলোটা আরও কাছে নিয়ে দেখতে যেতেই বুঝতে পারল, ওটা সমীরের গলায় থাকা সোনার চেন। ওটা ওই দিয়েছিল ওকে ভালবাসার উপহার হিসেবে। হাতে করে ওটাকে ধরে তুলতে গিয়ে দেখল, জিনিসটা ঠিক চেনের মতন আর নেই। যেন গরমে গলে গিয়ে চ্যাপ্টা মতন হয়ে গেছে। হটাত ওর হাত থেকে চেনটা সরে গেল। কেও ওটাকে ধরে টানলে যেমন হয়, ঠিক তেমন। এখানে তো ভেতরে কেউ নেই! তাহলে ওটাকে টানল কে? এই ভেবে যেই ও সামনের কাঁচের দিকে তাকিয়েছে, অমনি দেখতে পেল একটা ধোঁয়ার কুণ্ডলীর মতন একজন মানুষের আবছা একটা মুখ কাঁচের বাইরে ভেসে উঠল। আস্তে আস্তে মুখের আদলটা স্পষ্ট হতে বুঝতে পারল ওটা সমীর। ওর মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল, “তুমি ওখানে কি করছ, সমীর?” সমীর কোনো কথা না বলে, শুধু হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে রাতের অন্ধকারের মধ্যে মিলিয়ে গেল। আরাধনা এইসব দেখে একটু ভয় পেয়ে গেল। গাড়ীর দরজা খুলে বেরতে চাইল, কিন্তু দরজাটা কিছুতেই খোলা যাচ্ছে না। শক্ত ভাবে এঁটে বসে আছে। হাজার ঝাঁকুনি দিয়েও আর ওটা খুলতে পারল না। ধীরে ধীরে গাড়ির ভেতরের হাওয়াটা ভারী হয়ে এলো। ও আর নিশ্বাস নিতে পারছে না। তারপর একটা পোড়া গন্ধ আসতে থাকল। গন্ধটা বড়ই উৎকট। শ্মশানে মানুষকে পোড়ালে যেরকম অন্ধ হয়, সেই রকম। এরপর গাড়ীটাতে হটাত করে আগুন ধরে গেল। গাড়ির কাঁচগুলো এক এক করে ফেটে চৌচির হয়ে গেল। কাঁচগুলো ফেটে যেতেই গাড়ির ভেতরে এক হল্কা বাইরের ঠাণ্ডা হাওয়া ঢুকে পড়ল। সেই সুযোগে ও কোনোরকমে নিজেকে গাড়ির সামনের বনেটের ওপরে টেনে তুলল। বনেটটা তখন ভীষণ ভাবে গরম হয়ে আছে। ওর গা পুড়ে গেল সেই গরমে। তবু কোনোরকমে ও গাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো। বাইরে এসে মাটিতে পড়তেই ওর চৈতন্য লোপ পেয়ে গেল।
পরের দিন সকালে আরাধনা র ভাই কয়েকজন পুলিশের সঙ্গে এসে সেই গাড়িটার সামনে এসে উপস্থিত হল। গাড়িটাতে একটা হাই ভোল্টেজ তার লেগে আছে তখনও। তারটা কোনোরকমে ওপর থেকে তলার দিকে ঝুলে পড়ে ছিল। গাড়িটাতে লাগতেই আগুন ধরে গেছিল বলে পুলিশ বলল। তবে, আরাধনা যে কোনো ভাবেই হোক, ওটার থেকে বেরতে পেরে বেঁচে গেছিল। ও অক্ষত ছিল না ঠিকই, তবে বেঁচে গেছিল।
প্রায় সাত আট দিন পরে যখন হাসপাতালে আরাধনা র শরীর কিছুটা সুস্থ হল, তখন চোখ খুলেই ও চার পাশে কাউকে খুঁজতে লাগল। নার্স ওর কাছেই ছিল। ওকে জিজ্ঞেস করল, “কি চাই?” আরাধনা র মুখ থেকে শুধু বেরিয়ে এলো, “সমীর! সমীর কই?” নার্স ওকে বলল, “তুমি অচৈতন্য থাকার সময়েও বেশ কয়েকবার অল্পক্ষণের জন্য হুঁশ আসতেই তুমি ঐ নামটা ধরে ডেকেছিলে। তোমার ভাইকে জিজ্ঞেস করায় জানতে পারা গেল, যে সমীর তোমার কোনো আত্মীয় নয়। কে ও?” আরাধনা অস্তব্যস্ত হয়ে শুধু বলতে পারল, “ও আমাকে এখান পর্যন্ত নিয়ে এসেছিল গাড়িতে করে। তারপর আমি আর কিছুই জানি না”। নার্স তখন ওকে একটা খবরের কাগজ এগিয়ে দিয়ে বলল, “দ্যাখো তো এই কি তোমার সমীর?” কাগজের তৃতীয় পৃষ্ঠায় একজনের ছবি সহ ছোটো একটা প্রতিবেদন ছিল, যাতে লেখা ছিল- বিরাট ধনী পরিবারের এক মাত্র সন্তান শ্রীমান সমীর দত্তরায় গত ১লা অক্টোবরের দিন রাত এগারোটার সময় বিমান বন্দরে অবতির্ণ হয়ে, সেখান থেকে নিজের বিলাসবহুল গাড়িতে করে ঘরে ফেরার সময় একটা হাই ভোল্টেজ তার ওপর থেকে নেমে এসে গাড়িটাতে লেগে যায়। ফলে গাড়িটাতে আগুন লেগে যায় আর ঘটনা স্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
বিস্ফারিত নেত্রে এই খবরটা পড়ে পর আরাধনা মনে মনে হিসাব করতে থাকে; ও তো ২রা অক্টোবরের বিকেলে সমীরের বাংলোতে গেছিল। তাহলে, তার আগে ওর মৃত্যু কি করে হয়? তারপর ওকে নিজের বাংলোতে ডেকে সশরীরে মিলিত হয়……ফের রাত্রিবেলা ওকে ওর বাড়ির কাছে এনে ছেড়ে দেওয়ার পরই ওকে আর দেখতে পায়নি। একই রকম ভাবে ঐ গাড়িটাতেও হাই ভোল্টেজ তার লেগে আগুন ধরে যায়!......এসব কি হল ওর সঙ্গে? ওর মাথা আর কাজ করতে চায় না। ও আবার হিসাব করতে শুরু করে, কিন্তু বারবার একই হিসাব করেও ও কোনো কূল কিনারা করতে পারে না। শেষে মনে মনে ভাবে; তবে কি ওর সঙ্গে দেখা করার জন্যই মৃত্যুর পরেও সমীর ওকে ডেকে ছিল। ও নার্সটাকে বলে ওর মোবাইলটা দিতে। নার্স বলে, “তোমার মোবাইল তোমার ভাই এসে নিয়ে গেছে। ওর থেকেই চেয়ে নিও”। কিছুটা হতাশ হয়ে পড়ে আরাধনা । বারবার একই প্রশ্ন ওর মনটাকে নাড়া দিতে থাকে।

