সময় যখন থমকে দাঁড়ায়(৪থ পর্ব)
সময় যখন থমকে দাঁড়ায়(৪থ পর্ব)
আবেগী যন্ত্রণার জন্য নিজেই নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করতে আর বেশিক্ষন সময় লাগলো না। বন্ধুদের কাছে কথাগুলো লজ্জায় বলতে পারিনি। তারা যে আমার দুর্বলতা খুঁজে পেয়ে যাবে, তাতেই ভয় হয়। কিন্তু আমি বর্তমানে বড্ড হতাশ হয়ে পড়েছি।কি করি বা কি না করি সেই জ্ঞানটা পর্যন্তই হারিয়ে ফেলেছি। রাত্রের ঘুম অনেকটাই দূরে সরিয়ে গেছে চোখ থেকে। চোখ বন্ধ করলে যন্ত্রনা আরো বেড়ে যায়, তাই বাধ্য হয়েই চোখ খোলা রাখি।
সকালের টিফিন শেষ করে সবে ক্লাস করতে শুরু করেছি, ফোনে রিং বেজে উঠলো। তাকিয়ে দেখি নলিনী। নলিনী ফোন করেছে।তার প্রতি অনীহা আমাকে ফোন থেকে দূরে ঠেলছে। ফোন না তুলে ফোনের রিং অফ করে দিলাম। নলিনীর ফোন এলে যন্ত্রণাটা আরো বেড়ে যায়। কিন্তু মন মানে না। নির্বাক চিত্তে ফোনের দিকেই পুনরায় তাকিয়ে রইলাম। পুনরায় মিনিট দুয়েক বাদে আবার নলিনীর ফোন এলো। ফোন না তুলতেই কিছুখন বাদে বার্তা এলো,,
- একবার কথা বলবে? ফোনটা তুলবে?
মনে মনে উত্তর এলো, না। কিন্তু কি যে করি। ফোনটা হাতে নিলাম। বার্তা উইন্ডো তে গিয়ে ব্যস্ত আছি তা জানালাম।কিন্তু পুনরায় বার্তায় তার অনুরোধ এলো,
- একবার বলো।
- ব্যস্ত আছি।
জানানোর পর সমস্ত ঝামেলার যেন সমাপ্তি হলো। ফোন বন্ধ করে নিজের কাছ থেকে দূরে রাখলাম ও ক্লাসে মণসংযোগের চেষ্টা করলাম।
প্রিয় মানুষ, নলিনী ,অদৃশ্যে চেতনাহীন ভাবে আমার মনে আঘাত করেছে।ভালোবাসার মেলবন্ধনে কত ওতপ্রোতভাবে জড়িয়েছিলাম দুজনে। প্রথম দেখা থেকে শুরু করে ভালোবাসার গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তর অনুভব আজ স্মৃতি হয়ে ভেসে উঠছে চোখের সামনে। বহু সাবধানতা ও মানসিক নানা দ্বন্দ্ব কাটিয়ে নলিনিকে যে ভালোবাসি তা জানিয়েছিলাম। প্রত্যুত্তরে মিষ্টি বার্তালাপের সহিত এক উষ্ণ আলিঙ্গন মনকে আজও শিহরিত করে। সমস্ত ক্লান্তি যেন এক লহমায় আরাম পেয়েছিল ও মুহূর্তটা কে অনুভব করছিল। বর্তমানে তা অনেকটাই বদলে গেছে।
ছোট্ট একটা হাসি দিয়ে প্রথম আলাপ হয়েছিল । নলিনীর মুখে সেই আলতো মিষ্টি হাসি আমার মনে কৌতুহল গড়ে তুলেছিল। মনে হয়; সেদিন হইতেই মনের মিলনের প্রথম সূত্রপাত হয়েছিল। দিগন্তরেখার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তার মুখমন্ডলের বহিরাকৃতি যখন দেখলাম, মন মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাকে তখনই বড্ড ভালো লাগছিল কিন্তু নিজের সম্মানবোধ সামনে আসার জন্য তাহার আদেশ পালন করতে বাধ্য করলো। শিক্ষাদানে মনঃসংযোগ দিলাম।যদিও বা প্রথম দিনের সেই আলাপা, আমার মনকে বড্ড উত্তেজিত করে তুলেছিল; পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন রকম মুহূর্তের অনুভবে। তা আমাকে এখনো গোপন করে রাখতে হয়েছে।
সাদামাটা ভাষায় হাসির সহিত সেদিন যখন আমাকে বলেছিল, স্যার আজ আপনাকে পড়াতে হইবে না। আপনি আজকের সময় টুকু গল্প করে কাটান, তখন বেশ অবাক হয়েছিলাম। বড্ড উৎসাহের সহিত অপেক্ষায় ছিল আমার মুখ থেকে তাকে খুশি করার উত্তর শোনার । তার মুখের দিকে নির্বাক চিত্তে তাকিয়ে শান্ত মনে তাকে দেখছিলাম।মজা করে বেশ কিছুক্ষণ বাদে যখন বললাম ঠিক আছে আপনি যখন চাইছেন তাহলে গল্প করুন। তখন সে কত খুশিই না হয়েছিল। সেদিন বোধহয় তার কাছে আমি পৃথিবীর একমাত্র শ্রেষ্ঠ শ্রোতা হয়ে উঠেছিলাম। তার ছোট থেকে বড়ো হয়ে ওঠা থেকে শুরু করে আজ অবধি সমস্ত সুখ দুঃখহের লম্বা চওড়া কাহিনী সে ওই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করলেও, কিছু কথা তার মনেতে অধরা রয়ে গিয়েছিল, তা তার থেমে থেমে কথাবার্তায় অনুভব করেছিলাম।
গালে হাত দিয়ে একমনে যখন তার সমস্ত কথা শুনছিলাম তখন তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি মাঝে মাঝেই আমার দিকে পড়ছিলো। বড্ড মজাদার সে দৃষ্টি। অত কথার মধ্যেও যেন হৃদয় থেকে কিছু বলার জন্য উদগ্রীব ছিল। শুধুমাত্র মনের দরজাটা খুলে রাখলেই বোধহয় অনুভব করতাম। তবুও তার কিছু অধরা কথাবার্তার উদ্যেশ্যে তাকে যখন নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলেছিলাম,
- কিছু কিছু বিষয় থাকে সকলের মনে যেগুলো প্রকাশ্যে নিয়ে আসলে মনটা হালকা হয় ঠিকিই কিন্তু বিপদ অনেকখানি বেড়েও যায়।
কথাটি শুনে সে বড্ড খুশি হইলো ঠিকই, কিন্তু তাহার চক্ষু অবিরত রহিল না। তাহার দুই চক্ষু হইতে কয়েক ফোঁটা লবনামবু নির্বিঘ্নে বেরিয়ে এলো।