তোমার ছোঁয়ায় ( দ্বিতীয় পর্ব)
তোমার ছোঁয়ায় ( দ্বিতীয় পর্ব)


হীন, পরিবেশে কেহ যে কঠোর বাস্তবের সম্মুখীন হইবে তাহা বর্ণালীর অগোচরেই ছিল। সকলেই সময়ের বিভিন্নতায় বাস্তবের বহিরাকৃতি দেখিয়া থাকে। সৃজনকারিনি গন যখন কঠোর রূপ ধারণ করিয়া থাকে, তখন যে বাস্তব কি রূপ ধারণ করে তাহা বর্ণালির নিমিত্ত না জানিলে, কেহ তাহা যে সহজে বুঝিতে পারিবে না।
সময় কিছুতেই যে পশ্চাৎগমন করেনা। বড্ড বিরক্ত করিয়া তুলে।মুহুর্মুহু তাহার ভ্রুকুটি নৃত্য প্রতিবিম্বের মত নয়ন সম্মুখে ভাসিয়া উঠে। অঙ্গপ্রত্যঙ্গ স্থির হইয়া তাহার কৌতুক হাসির উপহাস, অচল মস্তিষ্কে সহ্য করিতে হয়। অতীব কষ্ট হয়। ইহাকেই বোধহয় বিষণ্নতা বলিয়া থাকে অনেকেই। বর্ণালী যে ইহার তুলনায় অনেক গুন যন্ত্রনা সহ্য করিয়া চলিতেছে তাহা কেহ বুঝিয়া উঠিতেছে নাই । তাহার জীবন সম্পর্কিত বক্তব্য গুলিতে ইহারি প্রমান মিলিয়াছে। কি মনে করিয়া সে অবলীলায় তাহার সুবিশাল,হৃদয়ের যন্ত্রনা আমার নিমিত্ত তুলিয়া ধরিল তাহা আজও অধরা।
গল্প সংক্রান্ত তথ্যাদি সম্পূর্ণ রূপে পাঠন করিয়া তাহার প্রশ্নের উত্তর সম্প্রতি সমাপ্ত করিলাম। ইহাতে বর্ণালী খুব খুশি হইয়া ছিল। তাহার ভাষাতে খুশির ঝলক ফুটিয়া উঠিয়া ছিল। হঠাৎ কাহারো শুন্য মনে একঝলক খুশি আনিতে পারিলে,ছোট ছোট অনুভূতি গুলি একত্রিত হইয়া, যেমন নাচিয়া উঠে আমার মনের অবস্থা সেইরকমই হইয়া ছিল তখন। তাহা ভাষায় প্রকাশ করিবার সাহস আমার হয় নাই।বর্ণালী বলিয়া ছিল,
আমি আজ খুবই আপ্লুত।
অগাধ একাগ্রতা ও কঠোর বুদ্ধি, তাহার পরিসর যে কি রূপে বৃদ্ধি করিয়াছে; ইহা সৃজনকারিনি গনের বোধগম্য না হইলে, তাহারা যে অতীব নির্বোধ ও অপগন্ড চরিত্র ধারণ করিয়াছে, তাহা বলাই বাহুল্য। অভ্যন্তরীণ সমস্যা হইতে, আমি ক্রোশ খানেক দূরে থাকিলেও, একতরফা যতটুকু বুঝিয়াছি ; তাহাতে বর্ণালির স্বপ্ন মুছিয়া দিয়েছে।
জন্মলগ্ন হইতে যেখানে শিক্ষার অতীব কদর ছিল, সেখান হইতে মুহুর্মুহু কেন, বিবাহের জন্য বিরহ ও বিরক্তির প্রবল প্রলুব্ধ বার্তা আসি
তে লাগিল।ইহাই কি বর্ণালির পুঁথিগত শিক্ষার প্রধান মর্যাদা।
বার্তালাপ চলিতে চলিতে, আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আমার বার্তার উত্তর আসিতে বেশ সময় লাগিতেছিলো।ইহার কারন যখন জানিবার প্রবল ইচ্ছা প্রকাশ করিলাম, তখন বর্ণালী বলিয়া ছিল,
একটুকু কাঁদিয়া লইলাম, অতীত বড্ড যন্ত্রণাময়।ভুলিবার শত চেষ্টাও আজ বৃথা হইলো। কিছুটা ধামাচাপা দেবার চেষ্টা করছিলাম। তাহাই উত্তর দিতে বেশ বিলম্ব হইলো।
বড্ড মনক্ষুণ্ণ হইলাম। যথোপযুক্ত উত্তর পাইলাম না।অতিতপূর্ব, উপযুক্ত উত্তর শুনিবার বাতিকগ্রস্ত হইয়াছি।কান্না যে কঠিন হৃদয়কেও পিছু হাটতে বাধ্য করে তাহা অধিকের গোচরে থাকেনা। এইসব নিয়েও কল্পনায় বেশ ব্যস্ত, পুনরায় বার্তা আসিল,
শত চেষ্টা করিয়াও আটকাইতে পারছি না। কাহাকেও বোঝাইতে পারছি না। আর কেহ বুঝিবার চেষ্টাও করছে না। তাহাদের নিকট আমি যেন একটি বিয়ের পুতুল।বিবাহ সম্পন্ন হইলেই তাহারা যেন শান্তি পাইবে।ইহাতে আমার সুখ কোথায় বুঝিয়ে দিন। তাহাদের খুশি করিতে হইলে আমার সমস্ত কিছু জলাঞ্জলি দিতে হইবে।
খুব কঠিন প্রশ্ন তুলিয়া ধরিল বর্ণালী। সৃজনকারিনি গণকে বারংবার বুঝিয়ায় যখন তাহাদের উত্তর একই আসছিল; তখন এতটাই হতাশার মেঘ তাহার নয়ন সম্মুখে ভাসিয়া উঠিল, যে চারিদিক যেন শুধু অন্ধকার আর নৃশংস মানুষের স্বার্থপরতার ক্ষুধা পরিলক্ষিত হতে লাগিল।
তাহাকে লড়াই করিবার পরামর্শ দিলাম।ইহা যতটা প্রিয় মানুষদের সহিত লড়াই করিতে হইবে তাহার তুলনায় অত্যাধিক নিজের সহিত লড়াই করিতে হইবে।
বাস্তবের কঠিন উত্তরপর্ব সমাপ্ত করিলাম ঠিকই, কিন্তু ইহাতে বর্ণালির যে লড়াই করিবার ইচ্ছা প্রবল হইয়াছে তাহাতে সন্দেহ নাই।বার্তালাপে এই কথা শুনিবার কিছুক্ষণ সময় কাটিবার পর, তাহার সৃজনশীল পিতামাতার নিকট হইতে প্রদেয় পীড়ার বিলাপ শুরু হইলো।ইহা যে বাস্তবের থেকে কত কঠিন তাহা কিভাবে বলিব,,,,
তাহারাই যে ভালোবাসার একমাত্র পাত্রপাত্রী।