Goutam Nayak

Drama Romance Thriller

3.2  

Goutam Nayak

Drama Romance Thriller

তোমার ছোঁয়ায় (তৃতীয় পর্ব)

তোমার ছোঁয়ায় (তৃতীয় পর্ব)

3 mins
1K


 

সাগর তীরে ঐ ঝাউতলে একাই দাঁড়িয়ে , মুষ্টিবদ্ধ তেই সময় যেন থমকে গেছে !

খুব একা লাগছে দাওনা কাওকে সঙ্গী করে।

সাগর্তীরে বলিতে, সমাজ ও ঝাউতলে বলিতে যে সৃজনকারিনির ছত্রছায়ায় বোঝানো হইয়াছে । তাহা যে বর্ণালির একক জীবনের অদৃশ্য ক্যানভাসকে গভীরভাবে পাংশু করিয়াছে, তাহা বলাই বাহুল্য।

রাত্রি হইতেই শরীর অতীব বিমুখী রূপ ধারণ করিয়াছে। ঘন্টায় ঘন্টায় দু একটা শুকনো কাশি শরীরকে যেন পুঞ্জীভূত করে তুলছে। সকাল হইতে কাশিটা মিনিটে নামিয়া আসিয়াছে। শরীরে জ্বরের উপস্থিতি অনুভব হইলো।

কলেজ বন্ধ থাকায় , বাড়িতে পড়াশুনার চাপ বেশ খানিকটাই বৃদ্ধি পাইয়াছিল। মন ঠিক রাখিবার জন্য নিজেকে বেশ ব্যস্ত করিয়া রাখিবার চেষ্টা করিতাম। সেই কারন ভাবিলাম সামান্য ক্লেশ অনুভব হইতেছে। কিন্তু তা সামান্য ক্লেশ ছিল না।

ঘৃণ্য, রাষ্ট্র চীন হইতে আগত করোনার প্রকোপ, পড়িয়াছিল আমার উপর। সন্দেহ প্রথম বেশ জাগিয়া থাকিলেও অতটা গুরুত্বপূর্ণ ভাবে বিষয়টিকে নিয়নি। সুস্থতার বিষয়ে পিতার বেশ গুরুত্ব রহিত, সর্বদা বাড়ির সদস্যদের প্রতি।তিনি অসুস্থতা দেখিয়া যখন ন্যূনতম চিকিৎসা পর্ব শেষ করিলেন, তখনই ডাক্তারি মতে বিভিন্ন রকমের পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু হইলো। বাড়ির সকলের তুলনায় বর্ণালির চিন্তা অতীব অস্থিরতা সৃষ্টি করিয়াছিল। প্রতিনিয়ত ক্লেশ ভারী হইতে লাগিল। ডাক্তারি পরীক্ষার রেজাল্ট আসিতেই বাড়ির প্রতিটি লোকের গোপন সমালোচনা ও গৃহবন্দি থাকিবার পাত্রী হইয়া উঠলাম।সকলেই আমার নিকট হইতে বেশ দূরে দূরেই থাকিতে লাগিল। ইহাতে আমার মনে প্রবল সন্দেহ নিমিত্ত ডাক্তারি খসড়া পত্র দেখিতে লাগিলাম। তাহাতেই জানিতে পারিলাম আমি করোনা আক্রান্ত। কিন্তু সৃজন কারিনি গনের এহেন আচরণ কেন আমার প্রতি। আমাকে সর্বসম্মুখে বলিলে ই হইতো। তাহারা কেন আমার নিকট হইতে দূরে দূরে, এই মানসিকতা যে আমার মনকে দ্বিখণ্ডিত করিয়াছে তাহা গভীর ভাবে অনুভব করিতেছি। তাহারা একটু একটু করিয়া দূরে যাইতেছে, কিন্তু আমার তাহাদের প্রতি ভালোবাসা যেন অতীব দৃঢ় হইতেছে।

কিয়ত দিন গৃহবন্দি করিয়া, আমার মনের আহুতি দিয়া তাহাদের নিকট হইতে দূর করিবার পরিকল্পনা এক মুহূর্তের জন্য আমাকে ক্ষিপ্তবৎ করিয়া তুলিয়াছিলো।তাহাদের সম্মুখ হইতে আমাকে দূরে পাঠিয়া দিলো।

সৃজনকারিণী গনের ভাবনায় ইতি টানিলেও টানিয়া দিতাম কিন্তু তাহাদের মানসিক ক্লেশ আমি সহ্য করিতে পারিব না তাই সমস্ত খুশি, আসা আকাঙ্খা ও সহানুভূতির নির্লজ্জ্ব জলাঞ্জলি দিয়া চলিয়া গেলাম।

অদ্য বিভূতি দাদা জীবিত রহিলে তাহাদের যুক্তি দিয়া বুঝিয়া দিতো।সুদূর প্রান্ত হইতে কর্মজীবন শেষ করিয়া বাড়ি ফিরিয়া আসিয়াছিলো । বড্ড ভালোবাসিত আমায়। আমার একাকিত্বের একমাত্র সঙ্গী ছিল সে। তাহার আসিবার খবর পাইয়া অতীব আনন্দে তাহার সহিত বার্তালাপ করিতে চাহিয়াছিলাম।কিন্তু তাহা হইতে আমাকে বঞ্চিত করিবার কারন আমার কান্না আর থামে নাই। জীবনের অস্বাস্থ্যকর মুহূর্ত গুলোতে যে মানুষের সহিত কথা বলিলে আমার মন ভালো হয় তাহাকে আমার নিকট হইতে বঞ্চিত করিবার অধিকার যে কাহারো নেই তাহা ওই পরম পূজনীয় সৃজন কারিনীগনকে কিভাবে বোঝাইব।সম্পূর্ণ একদিন লাগিয়াছিলো আমার ক্রন্দন রত অবস্থার বিলুপ্তিতে। পরের দিন যখন বেনুদি আর্থিক সহায়তা নিমিত্ত আমাকে ফোন করিয়াছিল তখন দাদার করোনা আক্রান্ত হইবার খবর পাইয়া বড্ড অস্থির হইয়া উঠিয়াছিলাম।

শরীর অত্যন্ত দুর্বল হইয়া পড়িতেছিল, তাহার কারন আমার শারীরিক অবস্থার উন্নতি ও সু স্বাস্থ্য নিমিত্তে মামা বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হলো।

কথাবার্তা, খবর নেওয়া, প্রয়োজনীয় ও কিছু অপ্রয়োজনীয় আলোচনা সাংসারিক জীবনের যেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় তেমনি সমস্ত কিছু আলোচনার বিষয়বস্তু যে তাহাকেই সমুখে রাখিয়া, তাহার আলোচনা সমন্ধে তাহাকে ওয়াকিবহাল না করা, সাংসারিক জীবনে যে কি পরিমান ডামাডোল সৃষ্টি করে তাহা অধরা হইলেও বর্ণালির জীবন যে সেইভাবেই ছিন্নবিচ্ছিন্ন করিয়াছে তা বলায় বাহুল্য।

দূরে চলিয়া গিয়াছি তাহাতে দুঃখ হইলেও তাহার সহ্য ক্ষমতা রহিয়াছে। কষ্ট হইলেই প্রিয়দের নিমিত্ত হাসি ও খুশির সহিত নাটকীয় ভাব দেখাইয়া মনের উন্নত বহিরাকৃতি দেখাইতে বিন্দুমাত্র বিলম্ব হয় নাই আমার নিকট। কিন্তু তাহাদের অনুপস্থিতি ও বার্তালাপের ইচ্ছা থাকিলেও তাহা থেকে বঞ্চিত থাকিবার যন্ত্রনা সহ্য করিবার ক্ষমতা আমার নেই।কিন্তু সেই অনুভূতি যে আমার হৃদয় অভ্যন্তরে আগুন জ্বলাইয়া দেয় তাহা কেহ অনুভব করে নাই।

 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama