Sharmistha Mukherjee

Drama Romance Others

3  

Sharmistha Mukherjee

Drama Romance Others

সময় প্রবাহমান🧭দ্বিতীয় পর্ব

সময় প্রবাহমান🧭দ্বিতীয় পর্ব

18 mins
181



রাজদীপ গিনিকে বলে , " কিরে মন খারাপ করে নিজের শরীরকে আর মনকে কষ্ট না দিয়ে হাসি - খুশি থাক । তুই জানিস না তোকে গম্ভীর মুখে একদম মানায় না । আর তোর হাসি মুখটা দেখার জন্য সারাদিন কেউ অপেক্ষা করে থাকে । তার কাছে তোর হাসি মুখ, তোর আনন্দ , তোর ভালো থাকা very much important । So please please don't be sad keep smiling . " এতোক্ষণ চুপ করে কথাগুলো শুনছিল হঠাৎ লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো " মানে ? আমার হাসিমুখ , আনন্দ আর কি কি বললি ? কে সেই ব্যক্তি ? তুই যখন বললি, তার মানে তুই জানিস । " রাজদীপ আমতা আমতা করে বললো , " আরে ! নানা আমি তোর মনটা ঠিক করার জন্য বললাম । এমন কেউ নেই । আর তোর মতো পাগলীর জন্য appropriate কোনো পাগল নেই । " এই বলার সাথে সাথেই গিনির চড় - ঘুষির আক্রমণ শুরু হয় । এভাবে কিছুদিন ধরে গিনির পাশে থেকে রাজদীপ গিনিকে স্বাভাবিক করে তোলে । কিন্তু সাগ্নিক আর গিনি একই ক্লাস হওয়ায় রোজ দেখা হোতো , তাই গিনি নানা অছিলায় মাঝে মাঝে স্কুল যেতো না । যেদিন যেদিন গিনি স্কুল যেতো না সেদিন গুলোতে রাজদীপ স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে গিনির বাড়িতে গিয়ে সব পড়া জানিয়ে বুঝিয়ে দিয়ে আসতো । কিন্তু এইভাবে তো প্রায়শই স্কুল বন্ধ করা সম্ভব নয় তাই রাজদীপ গিনিকে বললো , " এভাবে কারো জন্য নিজের ক্ষতি করিস না । আমি সবসময় তোর পাশে আছি , থাকবো । তুই এবার থেকে রোজ স্কুলে যাবিৎ। আমার সাথে যাবি , আমার সাথে থাকবি আর আমার সাথেই ফিরবি । কিরে কথাগুলো কানে গেল ? " গিনি উপর - নীচে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো । গিনি স্কুলে যেতে রাজি হওয়ায় রাজদীপ আনন্দে গিনিকে জড়িয়ে ধরেই সরে গিয়ে " Sorry " বলে লজ্জায় মাথা নীচু করে থাকে । পরেরদিন থেকে এক মূহুর্তের জন্যেও রাজদীপ গিনির সঙ্গ ছাড়ে নি । গিনির প্রতি রাজদীপের ভালোবাসা সবার চোখে ধরা পড়লেও গিনি যেন কিছুটা ইচ্ছে করেই না বোঝার ভান করতো । রাজদীপ যে গিনিকে ভালোবাসে সেটা গিনি জেনেও রাজদীপকে সাগ্নিকের পরিবর্তে মনে জায়গা দিতে নারাজ । রাজদীপ খুব ভালো করেই বুঝতে পারতো গিনির মনের সবটুকু জুড়ে শুধুই সাগ্নিক তবুও গিনির পাশ থেকে এক মূহুর্তের জন্যেও সরে যায় নি রাজদীপ । দেখতে দেখতে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়ে যায় শুধু রেজাল্ট বেরোবার অপেক্ষা । গিনি, সাগ্নিক, রাজদীপ, শাঁওলি, প্রত্যুষ আর উজান প্রত্যেকেই ঠিক করে নেয় কে কী

 করবে । সাগ্নিক চলে যাবে মোম্বাই নিজের মামার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করবে । পরীক্ষার পরেই প্রিয়ম কাউকে কিছু না জানিয়েই উধাও হয়ে যায় , এমনকি শাঁওলিকেও কিছু জানায় নি । চলে যাবার পর নিজের ফোন নাম্বারটাও পরিবর্তন করে ফেলে প্রিয়ম । কাজেই প্রিয়মের উপর সবাই খুব রেগে যায় । 


 ২০০৭ সাল , রেজাল্ট বেরোবার পর রাজদীপ একদিন গিনিকে স্কুলের পাশের ক্যাফেতে দেখা করতে বলে । রাজদীপ সেদিন মনে মনে ঠিক করেই নিয়েছিল গিনিকে নিজের মনের কথা জানাবে । সময় মতো গিনি পৌঁছে যায় ক্যাফেতে । রাজদীপ নানা কথা বলতে বলতে হঠাৎ করে বলে , " গিনি আজকে তোকে এখানে ডাকার কারণ আছে । আমি তোকে কিছু বলতে চাই কিন্তু কথা দে তুই রাগ করবি না । Please please . " গিনি আলতো একটা হাসি দিয়ে বলে, " না না রাগ করবো না তুই নিশ্চিন্তে বল । " গিনির কথায় আশ্বস্ত হয়ে রাজদীপ নিজের মনের কথা জানায় , " গিনি মনে আছে তোকে একবার বলেছিলাম তোর মুখের হাসি , তোর আনন্দ , তোর ভালো থাকা একজনের কাছে খুব দামি । তোর হাসি মুখটা দেখার জন্য কেউ অপেক্ষা করে থাকে । তখন তুই কে সেই ব্যক্তি জানার জন্য আমাকে প্রায় মেরেই ফেলছিলি । আচ্ছা এতোদিনেও কি তুই বুঝতে পারিস নি কে সেই ব্যক্তি ? সবার চোখে তোর প্রতি তার ভালোবাসা চোখে পড়েছে কিন্তু তোর চোখেই সেটা কেনো জানি না ধরা পড়লো না । আমি সত্যিই তোকে খুব ভালোবাসি , তোর মনে শুধু সাগ্নিক ছাড়া কারো অস্তিত্ব নেই জেনেও তোকেতোকে

 ভালোবাসি । " রাজদীপকে মাঝপথে থামিয়ে গিনি বলে , " Please রাজ অন্য কিছু বলার থাকলে বলতে পারিস আমি শুনবো but এইসব কথা.......... " । রাজদীপ বলে , " আমি জানি তোর আমার মনের কথা জানার কোনো ইচ্ছে নেই তবুও আমি জানালাম । আমি next week লন্ডন চলে যাচ্ছি বাবার কাছে । আমার হাতে আর তোর কাছে মাত্র এক সপ্তাহ সময় আছে । তোর উত্তরটা ফোনে হোলেও জানাস আর দেখা করে যদি ............... । " গিনি রাজদীপের কথা কেটে বলে ওঠে , " আচ্ছা ঠিক আছে , তাহলে আজকে যাই , পরে কথা হবে " এই বলে উঠে চলে যায় । গিনির এই আচরণে রাজদীপ খুব কষ্ট পেলেও এক সপ্তাহ গিনির উওরের আশায় অপেক্ষা করতে থাকে । কিন্তু না, গিনির কোনো ফোন এলো না । রাজদীপ কলকাতা ছেড়ে যাবার আগে শাঁওলির সাথে দেখা করে বলে , " শাঁওলি আমি কয়েকদিন আগে গিনির সাথে দেখা করে আমার মনের কথা জানিয়েছিলাম , আর বলেওছিলাম এক সপ্তাহ পর আমি লন্ডন চলে যাচ্ছি । জানিস ভেবেছিলাম গিনি হয়তো ফোন করবে, উত্তর হ্যাঁ বা না যাইহোক । গিনি না বললে কষ্ট পেতাম ঠিকই কিন্তু রাগ করতাম না । আমি পুরো ছয়দিন গিনির উওরের অপেক্ষায় ছিলাম কিন্তু গিনি কোনো যোগাযোগ করে

 নি । তাই আমি ঠিক করেছি গিনির সাথে আর কোনো যোগাযোগ রাখবো না , ওর সাথে যোগাযোগ রেখে ওকে বিরক্ত করবো না । আজকে তোকে সব জানালাম শুধু এইজন্য যাতে তোর থেকে আমি গিনির খবর নিতে পারি । কালকে আমি চলে যাচ্ছি , আজকে আমি আমার ফোন নাম্বার বদলে নেবো । তোকে রাতে ফোন করে আমার নতুন নাম্বার দিয়ে দেবো কিন্তু আমাদের এতোদিনের বন্ধুত্বের দিব্যি আমার নাম্বার কোনোদিন গিনিকে দিবি না । Promise me you will never give my number to Gini . আর আরেকটা কথা , আমার কোনো খবর কোনোদিন গিনিকে জানাবি না । Please, promise me . " রাজদীপের কথা শুনে শাঁওলি বলে , " আমি কথা দিচ্ছি কোনোদিন আজকের promise ভাঙবো না । তুই যতোদিন সব কিছু গোপন রাখতে বলবি ততোদিন সব গোপন থাকবে । " হাত দিয়ে ঠোঁটের zip বন্ধ করার অভিনয় করে হেসে বলে , " রাজ তুই নিশ্চিন্তে যা , গিনির প্রত্যেক দিনের খবর তুই পেয়ে যাবি । আমি গিনির খেয়াল রাখবো , তুই শুধু ভালো থাকিস । তোর কোনো খবর গিনি জানবে না কথা দিলাম । " রাজদীপ শাঁওলিকে বললো , " তুই ও ভালো থাকিস । তাহলে আজকে উঠি , পরে ফোনে কথা হবে । Bye Bye . " ক্যাফে থেকে বেরিয়ে শাঁওলি আর রাজদীপ দুজন যে যার মতো চলে যায় । 


কথামতো রাজদীপ রাত্রে শাঁওলিকে ফোন করে নিজের নতুন নাম্বার দিয়ে দেয় আর বারবার শুধু একটাই অনুরোধ করে , 

" Shaoli please give me daily news of Gini . Otherwise I can't live in peace . " রাজদীপের বারবার একই অনুরোধ শুনে শাঁওলি বলে " you stay safe . I will give all the news every day. You just be careful and come back on time . Ok, Good Night . " এই বলে শাঁওলি ফোন ছেড়ে দেয় । 


পরেরদিন রাজদীপ চলে যাবার আগে গিনিকে একবার ফোন করে । নিজের মনকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে রাজদীপ কিন্তু পারে না গিনির গলার স্বরটা একবারের জন্য না শুনে দেশ ছেড়ে যেতে । গিনি ফোনটা ধরতেই রাজদীপ বলে , " গিনি রাগ করিস না , আমি তোকে আর কোনোদিন বিরক্ত করবো না । আমি জানি তোর মনের কোথাও আমার জন্য কোনো জায়গা কোনোদিনও ছিল না আর হয়তো ভবিষ্যতেও হবে না । Ok never mind. I don't think I can ever give your place to anyone. By the way আজকে আমি চলে যাচ্ছি , জানি না কবে ফিরবো বা আদৌও ফিরবো কিনা । তুই ভালো থাকিস কিন্তু তুই.......... নাঃ থাক্ আর কিছু বলে তোকে বিব্রত করবো না । Good Bye Dear . " এই বলে গিনিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রাজদীপ ফোন কেটে দেয় । 


দিন দুয়েক পর শাঁওলি গিনিকে ফোন করে , " কিরে কেমন আছিস ? আমি ফোন না করলে তুইও ফোন করিস না , পচা মেয়ে একটা । জানিস রাজ দুদিন আগেই লন্ডন চলে গেছে ওর বাবার কাছে । আমার সাথে ফোনে কথা বলেছিল যাবার আগে । তোকে ফোন করেনি ? রাজকে খুব miss করছি , তুই miss করছিস না ? ওতো তোর সাথে সবসময় ছায়ার মতো থাকতো । " গিনি বললো , " হ্যাঁ, ফোন করেছিল । এই শাঁওলি একদিন দেখা করতে পারবি ? আসলে তোর সাথে কিছু কথা আছে । এই সপ্তাহে হবে না পরের সপ্তাহে দেখা কর । পরের বুধবার বিকেল চারটের সময় স্কুলের পাশের ক্যাফেতে দেখা কর । " শাঁওলি বললো , " Ok, ok dear, I will come on time . Bye . "  


জানলার ধারে চুপ করে গিনিকে বসে থাকতে দেখে গিনির মা বলে , " কি হয়েছে তোর ? কয়েকদিন ধরেই দেখছি তুই ভীষণ অন্যমনস্ক । আমি কতক্ষণ ধরে ডেকে ডেকে গলা ব্যাথা হয়ে গেল । তোর কোনো সাড়া না পেয়ে বাধ্য হয়ে ডাকতে আসতে হোলো । চল খেতে চল । " গিনি মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো, " মা তুমি যাও, আমি এক্ষুনি যাচ্ছি । " গিনির মা চলে গেলে গিনি পড়ার টেবিলের উপর রাখা সাত বন্ধুর একসাথে তোলা ছবিটার দিকে তাকিয়ে থেকে একটু অন্যমনষ্কভাবে নিজের মনেই বলে ওঠে , 

" আমি সত্যিই তোকে খুব miss করছি 

রাজ । জানি না কেন আজকাল তোর কথা সবসময় মনে পড়ে , খুব দেখতে ইচ্ছে করে তোকে । তোর নাম্বারে ফোন করেছিলাম কিন্তু বারবার বলছে This number does not exist . আচ্ছা আমার উপর এতো রাগ যে নাম্বারটাও বদলে ফেললি । যাইহোক ভালো থাকিস । " এই বলে চোখের জল মুছে গিনি খেতে চলে যায় । এভাবে দেখতে দেখতে চলে আসে বুধবার , শাঁওলির সাথে দেখা করার দিন । সাড়ে তিনটে নাগাদ স্কুলের গেটের কাছে গিয়ে অনেকক্ষণ স্কুলের দিনগুলোর কথা ভাবে তারপর পা বাড়ায় পাশের গলির ক্যাফের দিকে । ক্যাফের সামনে যেতেই শাঁওলি দৌড়ে এসে গিনির গলা জড়িয়ে ধরে । ক্যাফেতে ঢুকে দুকাপ কফি অর্ডার করে গিনি । শাঁওলি বলে , " তোকে এরকম লাগছে কেনো ? কেমন যেন নিস্তেজ লাগছে , শরীর খারাপ নাকি ? " গিনি বলে , " না, না শরীর ভালোই আছে তবে........... " এই বলে চুপ করে থাকে । শাঁওলি বলে , " তবে কী ? গিনি সত্যি করে বলতো কি হয়েছে তোর ? Any problem ? " গিনি বলে , " আমি সব বলছি কিন্তু তুই সব শুনে হাসবি না , promise কর । " শাঁওলি বলে , " আরে হাসবো কেনো ? কি হয়েছে সব খুলে বল । "  গিনি বলে , " জানিস শাঁওলি আমার কয়েকদিন ধরে কি যেন হয়েছে , কিছুই ভালো লাগে না । আমি একজনকে ভীষণভাবে miss করছি । তুই জানিস রাজ লন্ডন যাবার এক সপ্তাহ আগে এই ক্যাফেতে আমার সাথে দেখা করেছিল । " গিনির কথা শুনে একটু অবাক হওয়ার ভান করে শাঁওলি বললো , " তাই নাকি ! তা তোরা একা একা আড্ডা দিলি অথচ আমাকে একবারও ডাকলি না । তা কি গল্প করলি তোরা ? " গিনি বলে , 

" Actually that day Raj proposed

 me . " তারপর গিনি সেদিনের সব কথা খুলে বলে শাঁওলিকে । সব শুনে শাঁওলি বলে , " আচ্ছা গিনি , তোর মনে কি রাজের জন্য সত্যিই কোনো fillings নেই ? রাজ তোর সবরকম problem - এ সবসময় তোর পাশে ছায়ার মতো ছিল । আমরা সবাই অনেকদিন আগেই রাজের মনে তোর অস্তিত্ব টের পেয়েছি কিন্তু তুই কি সত্যিই এখনো কিছুই বুঝতে পারিছিস না ? Are you deliberately trying to remove Raj ? "  


শাঁওলি কথা শুনে চোখদুটো ছলছল করে ওঠে গিনির । কোনোরকমে নিজের আবেগ সামলে নিয়ে গিনি বলে , " না , আসলে সাগ্নিক আমার মনটাকে এমনভাবে দখল করে ছিল যে আমি আর কারো ব্যাপারে কিছু ভাবতেই পারছিলাম না । কিন্তু রাজ সত্যিই চলে যাবার পর ওর কথা ভীষণ মনে পড়ছে । In fact আমি রীতিমতো রাজকে miss করছি প্রত্যেক মূহুর্তে । Every time I feel the Raj in front of me. I know it's my illusion . " গিনির কথা শুনে শাঁওলি বলে, " গিনি আমার মনে হয় তোর মনে রাজ সত্যিই জায়গা করে নিয়েছে । তুই রাজকে ভালোবাসিস । " গিনি বলে , " Impossible , i think it's just a obsession . Actually we're best friends so maybe I miss his presence a lot . I think it's not love . " শাঁওলি এবার সত্যিই খুব জোরে হেসে উঠে বললো , " আচ্ছা , আচ্ছা বুঝতে পেরেছি । তুই সময় নিয়ে মাথা খাটিয়ে ভালো করে ভেবে দ্যাখ তারপর তোর মনের উপর কার রাজত্ব হবে সেই ভার মনের উপরেই ছেড়ে দিয়ে মাথাটাকে বিশ্রাম দে । আমার মনে হয় তুই সঠিক উত্তর পেয়ে যাবি । আমি আছি তোর পাশে । From now on we will talk on the phone every day . Ok ? " গিনি একটু মনমরা হয়ে বললো , " Ok " । সেদিন অনেকক্ষণ গল্প করে দুজন যে যার বাড়িতে ফিরে যায় । রাতের দিকে রাজ শাঁওলিকে ফোন করলে শাঁওলি ক্যাফেতে বসে গিনির সাথে হওয় হওয়া সব কথা বলে । রাজ একটু অবাক হয়ে বলে , " কি বলছিস বলতো ? বানিয়ে বানিয়ে বলছিস নাতো ? আমার সত্যিই বিশ্বাস হচ্ছে না । " শাঁওলি বলে , 

" 100℅ সত্যি বলছি । তুই অপেক্ষা কর , আমার মন বলছে গিনির মনে তোর জন্য একটা permanent জায়গা কিছুদিনের মধ্যেই হয়ে যাবে । তোকে গিনি খুব miss করছে । Just wait and watch . "  

এভাবে গিনির সাথে শাঁওলির আর শাঁওলির সাথে রাজের রোজ কথা হতে থাকে ।


 দিন কাটতে কাটতে পেরিয়ে যায় আটটি

বছর । শাঁওলি আর গিনি মাস্টার্স করে দুজন দুটো বেসরকারি স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষিকা । গিনির একমাত্র কাকা মারা যাবার পর কাকার Wedding Management Office - টার স্থায়ী দায়িত্ব গিনির উপর । কাকা অবিবাহিত ছিলেন তাই ওনার সবকিছুই গিনির । অন্যদিকে Brunel Medical College and University থেকে MBBS শেষ করে রাজ একজন প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার । 


গিনির হৃদয় - মন জুড়ে এখন শুধুই 

রাজদীপ । গিনি একদিন শাঁওলিকে বলে , " আটটা বছর আমি শুধু রাজের অপেক্ষায় বসে আছি । আট বছর ওর কোনো খবর কোনোদিনও পাই নি । জানি না হয়তো নতুন করে জীবন গুছিয়ে নিয়েছে কারো সাথে । তা একদিকে ভালোই , আমি বোকা বলেতো আর সবাই বোকা হবে না । " গিনির কথাগুলো শুনে মনে মনে হাসে শাঁওলি কিন্তু মুখে বলে , 

" ডার্লিং , আট বছর যখন অপেক্ষা করতে পেরেছিস আরও কিছুদিন অপেক্ষা করে

 দ্যাখ । রাজ যদি সত্যিই তোকে মন থেকে ভালোবেসে থাকে তাহলে একবার হলেও তোর সাথে ঠিক দেখা করবে । আরে সময় প্রবাহমান বুঝলি ? সবকিছুই সময়ের খেলা dear । " শাঁওলির কথা শুনে গিনি একটু হেসে বললো, " Yes ma'am I understand. Why only eight years, I am willing to wait eighteen years . " শাঁওলি হেসে বলে , " তুই পারিস বটে , যখন রাজ কাছে ছিল পাত্তাও দিস নি আর এখন শুধু ওর পথ চেয়ে বসে আছিস । সত্যি দেখতে দেখতে আট বছর পেরিয়ে গেল । By way darling আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে । ডিসেম্বরে তবে এখনও exact date ঠিক হয় নি । Date ঠিক হলেই আগে তোকে জানাবো । বিয়ের সব ব্যবস্থার দায়িত্ব কিন্তু তোর । " দেখতে দেখতে কেটে যায় আরও কয়েকটি মাস । ডিসেম্বর মাসের কুড়ি তারিখে শাঁওলির বিয়ে । শুরু হয় বিয়ের তোড়জোড় । শাঁওলির বিয়ের কেনাকাটা থেকে শুরু করে বিয়ে বাড়ির ডেকোরেশন এমনকি তত্ত্ব সাজানোর সব দায়িত্ব প্রিয় বান্ধবী গিনির কাঁধে । কাজেই ভীষণভাবে ব্যস্ত গিনি যেন নিঃশ্বাস ফেলার সময়টুকুও নেই ।


 নভেম্বর মাসের পঁচিশ তারিখ রবিবার ছুটির দিন তাই দুপুরে বিছানার উপর গিনি শরীরটা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে ।ঘরে তখন বাজছে অতুলপ্রসাদ সেনের গান ----


" এসো হে, এসো হে প্রাণে, প্রাণসখা।

 আঁখি তৃষিত অতি, আঁখিরঞ্জন,

 আঁখি ভরিয়া মোরে দেহো দেখা।

খুলিয়া প্রাণের আধো লাজবসন

জীবনমন্দিরে পেতেছি আসন;

বোসো হে বিরহক্লেশনাশন,

কন্ঠে লহো মম মালিকা।

উন্মাদ এ তরঙ্গ,

উথলিছে ভীষণ ভঙ্গ,

ঘোর তিমির ঘেরি দশ দিক,

এসো হে নবীন নাবিক।

জীবন-তরী মাঝে নাহিক কাণ্ডারী;

প্রেম পারাবারে আমি একা। "


 আঠাশে নভেম্বর , বুধবার শাঁওলির বিয়ের কেনাকাটা করতে ব্যস্ত গিনি সেসময় অফিস ( weeding Management Office ) থেকে হঠাৎ অ্যাসিস্ট্যান্ট - এর ফোন আসে । ফোনটা ধরতেই অ্যাসিস্ট্যান্ট বলে, " ম্যাম একজন বিদেশী ক্লায়েন্ট এসেছেন weeding arrangement এর ব্যাপারে কথা বলতে । " গিনি বলে , " সেতো ভালো কথা , তুমি সব কথা বলে নাও । Wedding Destinations, Decorations, Reception সব কিছুই আমাদের প্ল্যান অনুযায়ী ক্যাটালগ দেখিয়ে ভালো করে বুঝিয়ে কথা বলে নাও । পরে আমি দেখে নেব । " গিনির কথা শুনে অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্যস্ত হয়ে বলে, " না ম্যাম , উনি আমাদের সাথে কোনো কথা বলবেন না । মালিকের সাথেই কথা বলবেন বলে বসে আছেন । আপনি তাড়াতাড়ি ফিরে 

আসুন । " এই কথা শুনে গিনি শাঁওলিকে বিদেশী ক্লায়েন্টের কথা বলতেই শাঁওলির একটু মুচকি হাসি দিয়ে বলে , " যা , এক্ষুনি যা , বিদেশী ক্লায়েন্ট হাতছাড়া করিস না । পরে আমি সময়মতো ফোন করে নেব । "  গিনি তড়িঘড়ি একটা ট্যাক্সি নিয়ে অফিসে চলে যায় । অফিসে গিনির চেম্বারে অপেক্ষারত বিদেশী ক্লায়েন্টের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য অ্যাসিস্ট্যান্ট বলে ,

" Mr Chatterjee, This is our owner Arena Ganguly . " চেয়ারে পিছন ফিরে বসে থাকা মিস্টার চ্যাটার্জী সামনের দিকে ঘুরতেই গিনি একরাশ বিস্ময় নিয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে । দীর্ঘ আট বছর পর চোখের সামনে দাঁড়িয়ে একজন পরিণত চেহারার সুপুরুষ , গিনির ভালোবাসার মানুষ রাজদীপ । রাজদীপ হ্যান্ডসেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দেয় কিন্তু গিনি যেন পাথরের মূর্তি , কোনো প্রতিক্রিয়াই নেই । গিনির অবস্থা দেখে অ্যাসিস্ট্যান্ট " ম্যাম , ম্যাম " বলে গিনির হাত ধরতেই গিনির সম্বিত ফেরে । রাজ গিনিকে দেখে এমন ভান করে যেন গিনি একেবারে অপরিচিত কোনো ব্যক্তি । গিনি অ্যাসিস্ট্যান্টকে চলে যেতে বললে রাজদীপ বলে , " It's ok. You can stay . " রাজদীপের কথামতো গিনির অ্যাসিস্ট্যান্ট সবরকম ক্যাটালগ আর কাগজপত্র নিয়ে বসে । রাজদীপকে গিনি জিজ্ঞাসা করে , " কেমন আছিস এতোগুলো বছর ? কোনোরকম যোগাযোগ রাখিস নি কেনো আমার সাথে । " রাজদীপ বলে , " আমি ভালোই আছি । তুই কেমন আছিস ? " গিনি বলে , " এইতো চলে যাচ্ছে কোনোরকম । স্কুলের চাকরি আর এই ব্যবসা নিয়েই আমি দিন - রাত ব্যস্ত । যাইহোক, কার বিয়ের arrangement হচ্ছে শুনি । " রাজদীপ বলে , " কার আবার হবে , আমার বিয়ে । "  


রাজদীপের মুখে রাজদীপের নিজের বিয়ের কথা শুনে গিনির মুখটা শুকিয়ে পাংশুটে হয়ে যায় , তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে গিনি বলে, " আরে বাহ্ ! এতো দারুণ খবর । কবে তোর বিয়ে ? মানে তোর তো হবে বৌভাতের অনুষ্ঠানের আয়োজন তাইতো ? তাহলে এক এক করে বল কিভাবে কি হবে । " গিনির মুখটা দেখে আর এক নিঃশ্বাসে এতোগুলো কথা বলতে দেখে রাজদীপের হাসি পেয়ে যায় কিন্তু তাও নিজেকে গম্ভীর করে রাখে গিনির সামনে । রাজদীপ বলে , " আমার বিয়ে জানুয়ারি মাসে । তবে তারিখ এখনো ঠিক হয় নি , আসলে আমার গার্লফ্রেন্ডের রিসেপশনের অনুষ্ঠানের জন্য কিরকম জায়গা পছন্দ হবে সেটার উপর সব নির্ভর করছে । মানে কোনো বাগানবাড়ি, না বড়ো হোটেল , না বড়ো কোনো বিয়ে বাড়ি সেটা কিছু বলে নি এখনো । একটা কাজ কর গিনি , তুই তোর পছন্দ মতো কিছু জায়গা দ্যাখা । তারপর আমি সেই জায়গাগুলোর ছবি তুলে আমার গার্লফ্রেন্ডকে পাঠিয়ে দেবো ইমেইল মারফৎ । তুই বরং কালকে থেকে জায়গা দেখানো শুরু কর নয়তো দেরী হয়ে যাবে । By the way I am a general physician now. I am going to join two private nursing homes in Kolkata from next week. এখন থেকে আমি পাকাপাকিভাবে কলকাতাতেই থাকবো । আমার হাতে মাত্র একটা সপ্তাহ সময় আছে জয়েনিংয়ের আগে । তাই দেরী করা যাবে না । " গিনির বুকের বাঁদিকের ধুকপুকানি যন্ত্রটা ফেটে বেরিয়ে আসতে চাইছে রাজদীপের এই কথাগুলো শুনে তাস্বত্ত্বেও মুখে কৃত্রিম হাসি এনে গিনি বলে , " বাপরে ! তোর তো দেখছি আর তর সইছে না , বিয়ের জন্য এতো তাড়া ? ঠিক আছে কালকে সকাল দশটায় দ্যাখা কর , তারপর সব জায়গাগুলো ঘুরিয়ে দেখিয়ে দেবো তোকে । " রাজদীপ বলে , " Ok, কালকে ঠিক দশটায় আমি তোর বাড়ির সামনে অপেক্ষা করবো । তাহলে আজকে আসি । Bye bye . " এই বলে রাজদীপ একটু আলতো হাসি দিয়ে চলে যায় । রাজদীপ বেরিয়ে যেতেই গিনি অ্যাসিস্ট্যান্টকে চলে যেতে বলেই শাঁওলিকে ফোন করে ।


 শাঁওলি ফোন ধরতেই গিনি বলে , " আমি মরতে চাই । আমি এক্ষুনি মরতে চাই । " শাঁওলি বলে , " কি বলছিস পাগলের মতো , কি হয়েছে সেটা বলবি তো । মরার মতো কি এমন হয়েছে শুনি ? "  


গিনি বলে , " একটু আগে আমার অফিসে রাজদীপ এসেছিল নিজের বিয়ের আয়োজনের জন্য । রাজদীপ বিয়ে করতে চলেছে , এবার আমার কি হবে ? আমি আট বছর ধরে শুধু ওর অপেক্ষায় বসে আছি । আর দীর্ঘ আট বছর পর এসে আমাকে বলছে ওর বিয়ের সমস্ত arrangements আমাকে করতে হবে । আমার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব না , আমি যে রাজদীপকে ভীষণ ভালোবাসি । আমি এখন কি করবো শাঁওলি ? " ফোনে গিনির কথাগুলো শুনে শাঁওলি ফোনের স্পীকারটা চেপে ধরে হেসেই অস্থির , অন্যদিকে শাঁওলির সাথে conference call - এ থাকা রাজদীপও সব শুনে মুখটা চেপে হাসছে । কথায় বলে " কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ " , গিনির বুক ফেটে যাচ্ছে কষ্টে আর বাকি দুজন হাসছে গিনিকে বোকা বানিয়ে । যাইহোক কোনোরকমে নিজের হাসি থামিয়ে শাঁওলি বলে , " বোকার মতো কথা বলিস না গিনি । তুই তো রাজদীপকে না করে দিয়েছিলি , তারপর রাজ লন্ডন চলে যায় । চলে যাবার পর থেকে আমাদের কারো সাথেই রাজদীপের কোনো যোগাযোগ নেই । তাহলে তোর মনের কথা রাজদীপ জানবে কি করে ? তুই ওকে ভালোবাসিস সেটা শুধু আমি জানি , রাজ তো এই ব্যাপারে কিছুই জানেনা । আর তুই রাজকে দোষ দিতেও পারবি না কারণ তুই ওকে reject করে দিয়েছিলি তাই ও এখন অন্য কাউকে বিয়ে করতেই পারে । " শাঁওলির কথাগুলো শুনে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলে গিনি , তারপর ফোন কেটে দিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা বাড়িতে চলে যায় । সারা রাত অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমের দেশে পাড়ি দেয় গিনি নিজেই জানেনা , সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে । চোখটা কোনোরকমে খুলে ঘড়ির দিকে তাকিয়েই লাফ দিয়ে উঠে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে গিনি । " এই মরেছে ! দশটার সময় রাজ আসবে আর এখন already নয়টা বেজে পনেরো মিনিট । উফ্ ! এখন যে কি করি । মা, মা তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট দাও । আমি এক্ষুণি স্নান করে আসছি । " কোনোরকমে স্নান সেরে, ব্রেকফাস্ট করে তৈরী হয়ে নীচে গেটের কাছে চলে যায় গিনি । গিনি জানতো রাজ দশটা বলেছে মানে হয়তো দশ মিনিট আগেই এসে পড়বে কিন্তু পাঁচ মিনিটও দেরীতে আসবে না । এটা রাজদীপের পুরানো অভ্যাস তবে এখনও তা আছে কিনা সেটা অবশ্য জানেনা গিনি । তাই দশটা বাজতে দশ মিনিট আগেই গেটের সামনে গিয়ে গিনি দ্যাখে সেই পুরানো অভ্যেসটা এখনও আছে রাজের । দশ মিনিট আগে থেকেই গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে গিনির জন্য , ঠিক যেমন আট বছর আগে স্কুলে যাবার সময় অপেক্ষা করতো । গিনি গেটের সামনে আসতেই রাজদীপ বলে , " তুই বুঝলি কি করে যে, আমি এসে গেছি ? " গিনি একটু হেসে বলে , " This is a very old habit of yours which no one knows better than me . " গিনির উত্তরটা শুনে গিনিকে একটু বুকে জড়িয়ে ধরার জন্য হাতটা নিসপিস করে ওঠে রাজদীপের তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে , " চল, তাহলে যাওয়া যাক । তুই তোর খুব পছন্দের জায়গাগুলোতে নিয়ে চল । " কথামতো গিনি নিজের খুব পছন্দের মাত্র ছয়টা জায়গা দেখায় আর রাজ সেই জায়গাগুলোর ছবি তুলে নেয় ক্যামেরায় । তারপর একটা ক্যাফেতে গিয়ে বসে দুজনে । রাজ দুটো কফির অর্ডার দিয়ে গিনিকে বলে, " গিনি তুই তো ছয়টা জায়গা দেখালি, এই ছয়টা জায়গার মধ্যে তোর সবচেয়ে বেশি পছন্দের জায়গা কোনটা ? " গিনি বলে , " আমার তো বাইপাসে সায়েন্স সিটির বিপরীতে P. C. Chandra Garden টা ভীষণ পছন্দ । একদম খোলামেলা , মনের মতো করে দারুণ সুন্দর সাজানো যাবে । কিন্তু আমার পছন্দ জেনে তো লাভ নেই , দ্যাখ তোর হবু বৌয়ের কোন জায়গা পছন্দ হয় । " রাজদীপ বলে , " না আসলে আমি ভাবছিলাম তোর পছন্দ করা জায়গাটাই আমার হবু বৌকে বলবো ভালো করে খুটিয়ে দেখতে । দেখা যাক তোর পছন্দ আর আমার হবু বৌয়ের পছন্দ মেলে কিনা । গিনি তোর উপর পুরো ডেকোরেশনের দায়িত্ব থাকবে এই ব্যাপারে আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করার দরকার নেই । তুই তোর মনের মতো করে ডেকোরেশন করবি তাতে যতো খরচ লাগবে আমি দিতে রাজি । আর একটা কথা আমাদের মানে আমার আর আমার হবু বৌয়ের জন্য হানিমুনের জায়গাও তুই ঠিক করবি কারণ তুই আমার খুব কাছের বন্ধু তাই তোকে এই দায়িত্ব নিতেই হবে । আমার এতো সময় হবে না তাই তোকে বলছি , please help me . " রাজদীপের কথা শুনে কিছুক্ষণের জন্য স্তম্ভিত হয়ে যায় গিনি তারপর বলে, " ঠিক আছে , আমি কিছু জায়গা দেখে তোকে জানাবো । তবে তোর হবু বৌয়ের কিরকম জায়গা পছন্দ ? মানে, পাহাড় না সমুদ্র নাকি অন্য কিছু ? ভারতবর্ষের মধ্যে না বিদেশে কোথাও ? সেগুলো জানতে পারলে আমার একটু সুবিধা হোতো । "





Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama