শূন্য ক্লিকে মৃত্যু।
শূন্য ক্লিকে মৃত্যু।
ডিজিটাল দুনিয়ায় আপনি যা মুছে ফেলেছেন, তা কখনোই মরে না। আর সেই না-মরা ডেটাই আপনার শিকারী। রাইয়ান—ফ্রিল্যান্সার, কিন্তু তার আসল পরিচয় ‘ডিজিটাল এস্কেপিস্ট’। পাঁচ বছর আগে একটি ভুল, যা তার জীবন থেকে সবকিছু ছিনিয়ে নিয়েছিল, সে লুকিয়ে রেখেছিল তার হার্ডড্রাইভের গহীনে। ভেবেছিল, ইন্টারনেটে ক্লিক না করলে সে নিরাপদ। কিন্তু রাতের অন্ধকারে তার বিশ্বাস ভেঙে পড়ে। এক গভীর রাতে, ল্যাপটপের স্ক্রিনে হঠাৎ ভেসে ওঠে একটি নোটিফিকেশন। তার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে পোস্ট হয়েছে সেই ছবি, যা শুধু তার গোপন Google Drive ফোল্ডারে থাকা উচিত ছিল। মুহূর্তেই তার পাসওয়ার্ড কাজ করা বন্ধ করে দেয়, আর তার ডিজিটাল অস্তিত্বের একটি অংশ অদৃশ্য হয়ে যায়। একটি অচেনা ডিসকর্ড আইডি থেকে মেসেজ আসে: "হ্যালো রাইয়ান। তোমার খেলা কেমন লাগছে? এটা মাত্র শুরু। ০ ক্লিকে মৃত্যু। অপেক্ষা করো।" রাইয়ানের হাত কাঁপতে থাকে। কীভাবে কেউ তার মুছে ফেলা ছবি বের করতে পারল? কিন্তু গভীর আতঙ্কের চেয়ে বড় রহস্য হলো— এটি কেবল একটি খেলা, নাকি সত্যিকারের মৃত্যু তাকে ডাকছে? পরের দিন, তার পরিচিত ফ্রিল্যান্সার বন্ধুরা ফোনে জানায়, একটি হ্যাকার তার সমস্ত প্রজেক্ট ফাইল ফাঁস করেছে। রাইয়ান চেষ্টা করে সবকিছু সুরক্ষিত করতে, কিন্তু তার প্রতিটি ক্লিক, প্রতিটি লগইন, হ্যাকারদের নজরে আসে। রাত হলেই নোটিফিকেশন আসে— ক্লিকের আওয়াজের সঙ্গে তার স্ক্রিন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। মেসেজগুলো ক্রমশ ভয়ানক, শুধু ডিজিটাল হুমকি নয়, কিছুটা যেন বাস্তবেও মৃত্যু নাড়া দিচ্ছে। রাইয়ান সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিরোধের। সে তার হার্ডড্রাইভের গভীরে লুকানো তথ্য বের করে। যে ভুল পাঁচ বছর আগে তার জীবন ভেঙেছিল, এবার সেই ভুলের কারণ খুঁজে বের করতে হবে। তার পেছনে কেউ আছে— না, শুধু কেউ নয়, এক পুরো যন্ত্র, যা তার ডিজিটাল অস্তিত্বকে ভেঙে দিচ্ছে। এক রাতে, সে এক অচেনা সার্ভারে ঢুকে পড়ে। ডিসকর্ডের আইডি থেকে প্রেরিত মেসেজগুলো খুঁজে পায়। যে “০ ক্লিকে মৃত্যু” বলেছিল, সে শুধু একটি প্রোগ্রাম নয়, একটি সিস্টেম, যা মানুষের ডিজিটাল ছায়া অনুসরণ করে। রাইয়ান বুঝতে পারে— যদি সে হেরে যায়, শুধু তার ফাইল নয়, তার পরিচয়, তার সব স্মৃতি, সবকিছু অনলাইনে হারিয়ে যাবে। শেষ রাত, তার ল্যাপটপের স্ক্রিন জ্বলজ্বলে। একটি মেসেজ আসে— "আজ তোমার পালাবার দিন। কিন্তু মনে রেখো, ভুলগুলো কখনো মরে না।" রাইয়ান একটি গভীর নিশ্বাস নেয়। সে তার পুরনো ভুলের প্রমাণ সংগ্রহ করে, এবং হ্যাকারদের ট্র্যাক করতে শুরু করে। প্রতি ক্লিক, প্রতি লিংক, প্রতিটি পাসওয়ার্ড, সব কিছু যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। অবশেষে, সে হ্যাকারদের অবস্থান চিহ্নিত করে। একটি বিপজ্জনক রাত্রি, রাইয়ান নিজের ডিজিটাল অস্তিত্ব রক্ষা করতে এবং পাচ বছরের পুরনো ভুলের বিচার করতে প্রস্তুত। ডিজিটাল দুনিয়ায় কেউ কখনোই নিরাপদ নয়। এবং রাইয়ান বুঝল, শূন্য ক্লিকে মৃত্যু কেবল একটি শুরুর নাম— যে খেলা কখনো শেষ হয় না।

