অন্ধকারের ডাক।
অন্ধকারের ডাক।
গল্প :
রাত গভীর।
শহরের ল্যাম্পপোস্টগুলো নিঃশব্দে ঝলসে উঠছে।
বাতাসে যেন একটা অদ্ভুত চিৎকারের মতো নীরবতা ভেসে আসে।
নবীনা তার ফোন চেক করল।
একটি অজানা নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে:
“তুমি যা খুঁজছো, সেটা তোমারই কাছে এসেছে।”
হৃদয় দৌড়াতে লাগল।
কীভাবে কেউ জানল সে কোথায়?
এমন অজানা নাম্বার থেকে মেসেজ আসার আগে সে কখনও এমন ভয় পায়নি।
রাস্তায় বের হলেই মনে হচ্ছিল কেউ তার পিছু নিচ্ছে।
প্রতিটি ছায়া যেন জীবন্ত, প্রতিটি দেয়াল যেন তাকে ঘিরে রেখেছে।
ফোনে আবার মেসেজ এল—এবার আরও সরাসরি:
“দেখো আয়না।”
নবীনা দৌড়ে তার ঘরে গেল।
আয়নার দিকে তাকাল।
কিন্তু আয়নায় তার নিজের প্রতিচ্ছবি নেই—
সেখানে দাঁড়ানো এক অপরিচিত মুখ তার দিকে হাসছে।
হঠাৎ ঘরের বাতি ঝলসে উঠল।
ফোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে রিং করতে শুরু করল।
কণ্ঠ ভেসে এলো, গা ছমছমে স্বরে:
“প্রত্যেক প্রশ্নের জন্য একটি দাম আছে, আর তুমি তা দিতে পারবে?”
নবীনা বুঝল—এই রাতের পর আর কোনো শান্তি নেই।
সব ছায়া যেন জীবন্ত, প্রতিটি দেয়াল যেন তাকে ঘিরে রেখেছে।
সে ধীরে ধীরে ফোনটি ধরল এবং বলল:
“আমি প্রস্তুত। তুমি কে?”
কিন্তু জবাব এলো না।
নিস্তব্ধতা ঘরে ভেসে গেল।
হঠাৎ একটি দরজা নিজে থেকেই খুলে গেল,
আর ভেতর থেকে ঠাণ্ডা বাতাস ঢুকতে লাগল।
নবীনা এক ধাপ পিছনে সরল।
কানের কাছে হাত তুলে শুনল—
কাউকে যেন ধীরে ধীরে তার নাম ডাকছে।
“নবীনা…”
কিন্তু ঘরে কেউ নেই।
কেবল ছায়া নাচছে।
তার চোখে ধীরে ধীরে ছায়ার আকৃতি মানুষের চেহারার মতো হয়ে উঠল।
রহস্যময়ভাবে, তার ফোনে আবার একটি মেসেজ এল:
“প্রথম ধাপ সফল। এখন দ্বিতীয় ধাপ, তবে সাবধান—তুমি একা নয়।”
নবীনা বুঝল, তার চারপাশের প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি ছায়া, প্রতিটি নিঃশ্বাস—সবই এই খেলায় অংশ।
আর খেলার নিয়ম একটাই: কোনো ভুল করলে, শেষ।
হঠাৎ তার ঘরের বাতি ম্লান হয়ে গেল।
ঘরের প্রতিটি কোণে অন্ধকার ভরে গেল।
নবীনা যেন অনুভব করল—
কেউ বা কিছু তার সঙ্গে হাঁটছে, প্রতিটি ধাপের ছায়া মিলে তার সঙ্গে খেলছে।
রাত কাটতে লাগল, কিন্তু সময় যেন থেমে গেছে।
প্রতিটি মিনিট যেন শতাধিক বছর হয়ে গেছে।
তার ফোনে আবার মেসেজ এল:
“তুমি বেঁচে থাকতে চাও? তবে চোখ খুলে রাখো এবং যা দেখছো তা বিশ্বাস করো না।”
নবীনা এক ফোঁটা সাহস জোগালো।
সে ধীরে ধীরে বলল:
“আমি যা খুঁজছি তা দেখব, আর জবাব পাব।”
হঠাৎ আয়নার মধ্যে আলো জ্বলল।
ছায়ার আকৃতি ধীরে ধীরে মিলেমিশে তার নিজের মুখে পরিণত হলো।
মেসেজ আবার এল:
“প্রথম ভয় কাটিয়ে উঠেছো। সত্যিকারের অন্ধকার এখন শুরু। তুমি প্রস্তুত।”
নবীনা ধীরে ধীরে গভীর নিঃশ্বাস নিল।
অন্ধকার চারপাশে ঘিরে রেখেছে, কিন্তু এবার সে একদম ভয় পেল না।
তার চোখে জ্বলল দৃঢ়তা, আর তার হৃদয়ে জন্মালো এক অটল সাহস।
তিনি ফোন ধরল, আয়নার দিকে তাকাল, এবং কণ্ঠস্থভাবে বলল:
“আমি ভয় পাইলাম না। এখন আমি চাই সত্যিই জানতে কি লুকিয়ে আছে।”
ঘরের প্রতিটি ছায়া ধীরে ধীরে হেলে গেল, বাতি জ্বলল—
কিন্তু রহস্য এখনো পূর্ণ শেষ হয়নি।
অন্ধকার ডাকল, তবে নবীনা এবার ভয়কে জয় করল।
