Baishakhir Golpo

Horror Tragedy

4.5  

Baishakhir Golpo

Horror Tragedy

শ্লীলতা ২য় পর্ব

শ্লীলতা ২য় পর্ব

41 mins
1.0K


মধুরিমা কে ধরে ঘরে এনে বসালেন মধুরিমার মা-বাবা। মদন কাকা মধুরিমার কপালে হাত দেখে দেখে গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।

তিনি বললেন .."মধুরিমার শরীরটা ভালো নেই। জ্বর এসেছে।"

আমি স্থানীয় এক ডাক্তারকে ডেকে আনে ।ডাক্তার এসেছিলেন। তিনি বলেছেন.." বিশ্রাম করো শরীর ঠিক হয়ে যাবে। আমি কয়েকটা ওষুধ দিয়ে যাচ্ছি, সেগুলো খাবে।".....

ওষুধ খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্বর নেমে যায়। মধুরিমার শরীরটা একটু ভালো হয় । মদন কাকা এসে ওকে জিজ্ঞাসা করেন ..

"মামনি এখন কেমন বোধ করছ সোনা!!"

মধুরিমা বলে...."একটু ভালো।"

তারপর মদন কাকা বলেন..

" রাতে কি খাবে বলো??"..

খানিকক্ষণ চিন্তা করে মধুরিমা বলে..

" আচ্ছা!! এই বাড়িতে কি মাছ মাংস সত্যি হয় না!"..

মদন কাকার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে ওঠে। উনি বলেন..

" এ বাড়িতে মাছ মাংস সবই হতো ;সেসব অনেক বছর আগের কথা। একটা জঘন্য ঘটনার পর থেকে ও সব বন্ধ হয়ে গেছে।"

মধুরিমার ভীষন আগ্রহ ও বলে...." বলোনা কি ঘটনা ঘটেছিল আমি জানতে চাই।"

মদন কাকা একবার মধুরিমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন.." সেই বিষয়ে জানার জন্য তুমি এখনো খুব ছোট!"...

এইবার মধুরিমা রেগে যায়। চোখ দুটোকে রক্তবর্ণ করে কাকা দিকে তাকায়। তারপর বলে..

" তুই আমাকে বলবি না! তুই কি মনে করিস আমি কিছু জানিনা! ওরে পাগল আমি সব জানি!! তুই শুনবি!!"..

মধুরিমার মুখটা দেখে মদন কাকা ভয়ে কাঁপতে শুরু করেন। তিনি বলেন.

" একি!! আমি এটা কি দেখছি?? রাজকুমারী মধু মালতি!! সেই মুখ, সেই চোখ, সেই....!!!"

এবার মধুরিমা বলে." থামলি কেন বল!!সেই নাক??"

মদন কাকা বলে ওঠেন." এটা কি করে সম্ভব?? আজ থেকে প্রায় আড়াইশো বছর আগের কথা.. আমি আমার ঠাকুরদার মুখে রাজকুমারী মধুমালতীর কথা শুনেছিলাম। তিনি তো!!"....

মধুরিমা বলে.." থামলি কেন বল!! রাজকুমারী মধুমালতীর সব ভালো থাকলেও নাকটা ছিল বোঁচা। যে কারণে বয়স হয়ে যাওয়া সত্বেও কোন পাত্রপক্ষ রাজকুমারীকে গ্রহণ করছিল না। মা-বাবা থেকে শুরু করে প্রাসাদ এবং রাজ্যের আশেপাশে সকলেই বদনাম শুরু করে দিয়েছিল আমার। বাবার এত অর্থ প্রতি পত্তি থাকা সত্বেও এই নাক বোঁচা হওয়ায়, প্রত্যেক রাজকুমার তিরস্কার করছিল আমাকে।... সেই কারণেই তো আমি!".

এই বলে হঠাৎ চুপ হয়ে যায় মধুরিমা। মদন কাকা তখনও কাঁপছেন।..

মধুরিমা কিছু বলতে যাবে এমন সময় ঘরে চলে আসেন ওর মা-বাবা। তারা দেখেন মদন কাকা কাঁপছেন। এবং কিছু বলতে চাইছেন কিন্তু পারছেন না। মধুরিমার বাবা ওনাকে ধরে নিচে নিয়ে যায়। মদন কাকা কে একটা ঘরে শুইয়ে মধুরিমার বাবা বেরিয়ে আসছিলেন ঠিক সেইসময় .....

মধুরিমার বাবার হাতদুটো ধরে মদন কাকা বলেন..." আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও। আমার পূর্বপুরুষেরা অনেক অন্যায় করেছেন। এবং তাদের অন্যায় এর ফল দিতে হয়েছিল এই রাজ্যের একমাত্র রাজকুমারী মধু মালতি কে??"..

মধুরিমার বাবা বললেন.." এসব তুমি কি বলছো কাকা! আমি তো ছোট থেকেই বাবার মুখে শুনেছি আমাদের এই রাজবাড়ী অভিশপ্ত!!"..

মদন কাকা বললেন.." অভিশপ্ত হওয়ার পেছনে ছিল আমার পূর্ব পুরুষের হাত। আসলে যে পারিবারিক সূত্রে এই বাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তোমার বাবা আমাকে দিয়ে গেছেন;সেই সূত্র যাচাই করতে গেলে দেখা যাবে;তোমাদের সাথে আমাদের রক্তের কোন সম্পর্ক নেই।...."....

মধুরিমার বাবা এই কথা শুনে ভীষণ অবাক হন। তিনি

বলেন.." তুমি যেসব কথা আমাকে বলছ সেগুলো কি সত্যি!!".

মদন কাকা বলেন.." আজ থেকে প্রায় ৩০০বছর আগে আমার পূর্বপুরুষেরা এই রাজবাড়ীতে আসেন। তারা এসেছিলেন প্রাসাদের অন্তরের ভিতর একটা শীষ মহল তৈরি করতে। সেই সময়কার রাজা ছিলেন মহেন্দ্র প্রতাপ। তিনি যেমন রুপবান ছিলেন তেমনি তার দম্ভ ছিল। আবার সবাইকে আপন করে নিতে ও তার মতো জুড়ি মেলা ভার আর কারো ছিল না। সকল রাজমিস্ত্রিদের সঙ্গে এসেছিলেন একজন মোহময়ী নারী। তিনি রূপে ছিলেন অনন্যা।কেবল একটি খামতি ছিল নাক বোঁচা।

শ্রমিকদের থাকবার জন্য আলাদা কক্ষ বানিয়ে দিয়েছিলেন মহেন্দ্র প্রতাপ। তিনি তখনও অবিবাহিত ছিলেন। শ্রমিকদের রান্না করে দেওয়ার জন্যই ওই মোহময়ী নারী কে আনা হয়েছিল। তার পিতৃপরিচয় জানা ছিলো না কারো। ওই নারী যেমন সবার জন্য খাবার প্রস্তুত করতেন তেমনই সকলকে নিশীথে সঙ্গ দিতেন। প্রত্যেকটি মেয়ের মত ও চেয়েছিল একটা সংসার করতে। কিন্তু সব পুরুষেরাই ভোগ করেছিল ওর শরীরটাকে। রাজা মহেন্দ্র প্রতাপ ও সেইসব থেকে বাদ পড়েননি।..

একদিন পূর্ণিমার জ্যোৎস্না আলোয় ওই নারীকে নদীতে স্নান করা অবস্থায় দেখতে পেয়েছেন মহেন্দ্র প্রতাপ। নারীর রূপে মুগ্ধ হয়ে যায় ওনার মন। প্রতিটি রাত বিনিদ্র হতে শুরু করে। বেশিদিন সেই বিরহ জ্বালা সহ্য করতে পারেনি। ফলশ্রুতিতে একরাতে সেপাই পাঠিয়ে তুলে এনেছিলেন ওই নারীকে শীষ মহল এর স্বর্ণ কক্ষে।

স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বিবাহ করার কিন্তু করেননি। একটি রাতের ফলশ্রুতি হিসেবে বিধাতা ওই নারীর গর্ভে রেখে দিয়েছিল একটি চিহ্ন। মহেন্দ্র প্রতাপ সেই খবর জানার পর থেকেই ওই মেয়েটিকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা শুরু করেন। সেই সময় আমার পূর্বপুরুষ.. রাজমিস্ত্রিদের মধ্যে একজন ছিলেন যিনি প্রকৃত ভালোবাসতেন সেই নারীটিকে।

মহেন্দ্র প্রতাপ খুব তাড়াতাড়ি বিবাহ করে নেন। মাত্র এক মাসের মধ্যে রাজ্যে ঘোষণা করে দেন তিনি বাবা হতে চলেছেন। এদিকে ওই নারীটি হয়েছিল অন্তঃসত্ত্বা। আমার পূর্বপুরুষ বুদ্ধি খাটিয়ে রাজা মহেন্দ্র প্রতাপ এর স্ত্রীর গর্ভে বেড়ে ওঠা কন্যাসন্তানটিকে বদলিয়ে সেই জায়গায় রেখে দিয়েছিল ওই নারীর সন্তান কে। মহাসমারোহে রাজা মহেন্দ্র প্রতাপ সেই কন্যা সন্তানের নাম রেখেছিলেন মধু মালতি।.

ছোটবেলায় কোন শিশুকে বোঝা যায় না সে কেমন দেখতে হবে। তাই রাজকুমারী মধুমালতী শৈশবকাল খুব ভালো কেটেছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে বয়সন্ধির সাথে সাথেই মুখশ্রীর পরিবর্তন হতে শুরু করে এবং রাজা মহেন্দ্র প্রতাপ একদিন অপরাহ্ণে আহার করতে বসে মুখের দিকে তাকিয়ে দেখেন.. ওর নাকটা বোঁচা। তারপর নিজের স্ত্রী নাক টা ভালো করে লক্ষ্য করেন। কাউকে কিছু বলেনি কোনদিন কিন্তু মনে মনে জানতেন সব।

এরপর নির্দিষ্ট বয়সে কন্যার বিবাহের জন্য উপযুক্ত পাত্র খোঁজা শুরু করে দেন। পিতা-মাতার সাথে মুখশ্রীর কোনরকম মিল না থাকায় এবং নাকটা বোঁচা হওয়ার জন্য কোন রাজপুত্র এবং রাজপরিবার মধু মালতিকে স্বীকার করতে পারেনি।

ঠাকুরদার মুখে শুনেছিলাম একদিন মহেন্দ্র প্রতাপ শিকার করতে বেরিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিল রাজকুমারী মধু মালতি। প্রাসাদের বাইরে ও সকলের মুখে এক কথা শুনতে শুনতে মস্তিষ্কের চরম ক্ষতি হতে শুরু করেছিল রাজকুমারীর।

মহেন্দ্র প্রতাপ এর সাথে পশু শিকার করতে গিয়ে জঙ্গলে একটা কুটির নজরে পড়ে ওদের। মহেন্দ্র প্রতাপ এবং মধু মালতি একসাথে প্রবেশ করেন। সেই কুটিরে ছিল একটি যুবতী কন্যা। মুখশ্রী এক্কেবারে মহেন্দ্র প্রতাপ এর সাথে মিলে যায় এমনকি তার নাকটা ও ছিল টিকালো।

মেয়েটির কাছে পিতৃ পরিচয় জিজ্ঞাসা করে, মহেন্দ্র প্রতাপ ও মধু মালতি ওই কুটির এই বসে রইলেন।

সন্ধ্যেবেলায় প্রবেশ করেন সেই নারীটি এবং আমার পূর্বপুরুষ। মহারাজা কে দেখে ভয়ে আমরা সবকিছু স্বীকার করে নেন। তারপর ওই মেয়েটিকে নিয়ে রাজপ্রাসাদে চলে যান। রাজা মহেন্দ্র প্রতাপ মহাসমারোহে ঘোষণা করেন তার কন্যা ফিরে এসেছেন। রাজ্যজুড়ে মহাসমারোহে আনন্দ উৎসব পালিত হয়। মধুমালতী আগেই রাজকুমারীর বিবাহ হয়ে যায়। বেচারা মধুমালতী নাক বোঁচা হওয়ার কারণে জীবনে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়েছে ওকে।

শেষে একদিন আক্রোশের শিকার হয় মধু মালতি। রক্তের নেশা শুরু করে। কোন কিছু ওর ভালো লাগতো। রক্তের গন্ধ সবথেকে বেশি ভালো লাগতো। ছোট থেকে অনেকবার শুনেছে যাদের নাক বোচা তারা নাকি গন্ধ ঠিকঠাক পায়না। কিন্তু রক্তের গন্ধে মধুমালতী বলে দিতে পারতো সেটা কি জিনিস কোন পশু, কোন পাখি। এমন কি কোন মানুষ!!

ছোট থেকে বাবার সাথে শিকারে যাওয়ার অভ্যেস ছিল মধুমালতীর।সেই কারণে পশুর গায়ের গন্ধ সম্পর্কে বেস জ্ঞান ছিল ওর।

ধীরে ধীরে সেই রক্তের গন্ধ গ্রহণ করা স্বাদে বদলে যায় অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় চার থেকে পাঁচটা পশুর রক্ত পান করতে শুরু করে মধু মালতি। বাথরুমে রাখা বড় বাথটাব টাই ওর জন্য রক্তের বন্দোবস্ত করে রাখা হতো। রক্ত দিয়ে স্নান করাও শুরু করে। রক্তের নেশায় , গন্ধে আসক্ত হয়ে মধুমালতী অবাধে পশুহত্যা শুরু করে। জঙ্গলের প্রায় সব পশুকেই মেরে ফেলেছিল ও। রাজা মহেন্দ্র প্রতাপ যেদিন জানতে পারেন সেদিন থেকেই মধুমালতী বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়ে নেন। প্রথমে মধু মালতি কে হাত-পা শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হতো। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। একদিন একটা বড় আয়নার সামনে ওকে দাড় করিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল। ওর গায়ে রক্ত দিয়ে বর প্রতিবিম্ব দেখানো হচ্ছিল। রাজা ভেবেছিলেন হয়তো এতে মস্তিষ্কের বিকৃতি ঠিক হবে। কিন্তু সেটা ভুল ধারণা ছিল। কারণ মধুমালতী আয়নার সামনে দাঁড়িয়েই হাতের ধমনী কেটে , সেই রক্ত পান করতে করতে বলেছিল.

" আমি আবার ফিরে আসবো। এটা দেখার জন্য যে তোমাদের নাক সম্পর্কে ধারণা বদলেছে কিনা!!

একটি মেয়ের নাক টিকলো হোক;বা বোঁচা!!

দুটোই ঈশ্বর প্রদত্ত। সেই ধারণাটা নিজেদের মধ্যে আনো। তাও যদি নিজেদের ধারণা বদলাতে না পারো তাহলে আবার শুরু হবে এই রাজ্যে রক্তের বন্যা।"....

এই কথা বলে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছিল মধু মালতি।

রাজা মহেন্দ্র প্রতাপ কিন্তু কোনদিনও স্নেহের ত্রুটি করেননি ওকে। সেই কারণেই চারতলার চিলেকোঠার ঘরে আজও রয়েছে মধুমালতী মস্ত বড় ছবিটা। আসলে আমাদের বদ্ধমূল ধারণা ওকে মেরে ফেলেছিল। সৌন্দর্য সম্পর্কে আমরা যেটা ভাবি সেটা অপরের মনে কতটা বেদনাদায়ক হতে পারে;সেটা একমাত্র যে অপমানিত হয় সে বেশি বোঝে। হয়তো সবার তিরস্কার মধুমালতীর মস্তিষ্ককে এতটাই ব্যাঘাত ঘটিয়ে ছিল যে ও নিজেকে রক্তপিপাসু তে পরিণত করেছিল।... আর সেই থেকেই এই প্রাসাদে মাছ-মাংস নিষিদ্ধ হয়ে যায়। আসলে রাজ্য পশু হত্যা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ না করলে জঙ্গলের বাস্তুতন্ত্র একেবারে নষ্ট হয়ে যেত। কিছু বছর আগে কয়েকজন এই এলাকায় টুরিস্ট হিসাবে বেড়াতে এসেছিলেন। তারা অনেকেই মাংস আহার করার চেষ্টা করেছেন কিন্তু যতবারই করেছেন ততোবারই তারা দেখেছেন একটি ছায়াকে। তাই তারা মাংস খাননি।...

মামনির নাক বোচা বলে তুমি কিন্তু কোনদিনও ওকে কিছু বলবে না। আড়াইশো বছর আগে যা ঘটেছিল;তখন যে পরিবেশ ছিল এখন সেই পরিবেশ নেই। মানুষ এখন অনেক আধুনিক হয়েছেন। সৌন্দর্য সম্পর্কে তাদের ধারণা অনেক বদলেছে।

তোমরা প্রথম যেদিন এখানে এসেছিলে..সেদিন ই মামনিকে দেখে আমার বুকের ভেতরটা খোঁচা দিয়ে উঠেছিল। কিন্তু আমি কিছু বলিনি। আমি জানতাম মধু মালতি ওর জন্মের পুনরাবাস আগেই দিয়েগেছে।"....

মদন কাকা চুপ করার পর মধুরিমার বাবা একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে মনে মনে চিন্তা করলেন.. সত্যিই তো উনি ও তো ওনার মেয়েকে অনেক কথা শুনিয়েছেন। আমাদের পূর্বপুরুষের পাপের ফল বারবার কি এই প্রজন্মকে দিয়ে যেতে হবে!!..

একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে মধুরিমার ঘরের কাছে এসে দাঁড়ান। তারপর মধুরিমার মাকে উদ্দেশ্য করে বলেন

" তুমি আজকে মধুরিমার কাছে শোবে। ওর শরীরটা ভালো নেই।"....

মধুরিমা মা রাতে ওর কাছেই শুয়ে ছিলেন।....

মাঝরাতে ওর মা ঘুমিয়ে পড়ায় সেই ছবিটা সামনে এসে দাঁড়ায় মধুরিমা। লণ্ঠনর মৃদু আলোয় ও দেখে গতরাতে ছবির মধ্যে যে যে জিনিস ও দেখেছিল! সেই জিনিস গুলো সেই জায়গায় আবার ফিরে এসেছে। দিনের বেলায় ওগুলো কিছুই ছিল না। ভয়ে ভয়ে ছবিটায় হাত লাগায় মধুরিমা।.... কিন্তু ছবিটা দেখি ভয় পায়না ও।কারণ গত রাতে যে যে জিনিস গুলো যেখানে যেখানে ছিল সেখানেই আছে কিন্তু পরিবর্তন ঘটেছে অনেকটা। ছবিটাই থাকা ওই পূর্বপুরুষ টি বসে আছেন একটি চেয়ারেই। উনার হাতে একটা লম্বা রাইফেলও আছে। কিন্তু উনার পায়ের তলায় পাতা আছে একটা কার্পেট। যে স্হানে উনি বসে আছেন সেই জায়গার প্রাকৃতিক শোভা অনিবার্য। সবুজ গাছপালার ভর্তি চারদিক। একটি ঝাউ গাছের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে একটি মেয়ে। সে কান্না করছেনা হাসছে। তার পরনে অপূর্ব রাজকীয় পোশাক। মেয়েটির চোখে মুখে ফুটে উঠেছে এক প্রসন্নতা। বহু বছর আগের মনে লুকিয়ে রাখা অভিমান এর নিষ্পত্তি ঘটেছে আজ।..

পরেরদিনই রানাঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেন মধুরিমার মা-বাবা এবং মধুরিমা। স্কুলের ফার্স্ট বয় অরিন্দম কে পছন্দ করত খুব। কিন্তু কখনো বলতে পারিনি। মধুরিমার গাড়ি রানাঘাটের বাড়ির সামনে দাঁড়ানো সাথে সাথেই প্রায় ৬-৭ জনের একটা দল ওদের কাছে এগিয়ে আসেন। মধুরিমা দেখে ওর সমস্ত বন্ধু-বান্ধবীরা ওর জন্য দাঁড়িয়ে আছে।অপেক্ষা করে আছে অরিন্দম; ওর হাতে একটা টকটকে লাল গোলাপ। মধুরিমার মনে পড়ে মাস ছয়েক আগে ফ্রেন্ডশিপ ডের দিন অরিন্দম কে একটা হলুদ গোলাপ দিতে গিয়েছিল। অরিন্দম সেটা না আমি ওকে বলেছিল.." আগে গন্ধ শুঁকে কেমন গন্ধ!!ও হো!!তোর নাক টাই বোঁচা!! তুই কি করে বুঝবি।"..

সবাই হো হো করে হেসে উঠে ছিল ঠিকই ;কিন্তু মধুরিমার মনে মনে খুব কষ্ট লেগেছিলো সেদিন।

অথচ বর্ধমান থেকে ঘুরে আসার পর এমন কি হলো!!"...

নাকটাকে উঁচু নিচু করে বারবার নিঃশ্বাস নিতে নিতে স্যার বললেন.

"আচ্ছা সমর আমার কি নাকটা বোঁচা!! বলো তো??".

হো হো করে হেসে ওঠে সমর। স্যার বলেন....

" বাপরে বাপ!তোমার গল্প গুলো শুনতে শুনতে আমি এতটাই গল্পের ভেতর ঢুকে পড়ছি ;যে নিজের মধ্যেই যেন ক্যারেক্টারগুলোকে তুলে ধরছি।"...

সমর বলে.." তাহলে স্যার আপনার আমার গল্প গুলো ভালো লাগছে।"..

স্যার বললেন.." আরে ভালো মানে চমৎকার!..

দাঁড়াও একটা সিগারেট ধরিয়ে নি। সিগারেটের গন্ধ শুঁকে দেখি আমি গন্ধ নিতে পাই কিনা। তুমি খাবে নাকি একটা!"....

সমর বলে.. "দিন একটা!"....

দুইজনে মিলে জানালার কাছে গিয়ে লম্বা নিঃশ্বাস নেবার সাথে সাথে সিগারেট গ্রহণ করেন।....

স্যার বললেন." সত্যিই তোমার গল্প অনবদ্য। আমি শুনতে শুনতেই সেই পরিবেশের মধ্যে চলে যাচ্ছি।.

এইবার কি নিয়ে গল্প হবে!!"..

সিগারেটটা টেনে নিয়ে সমর বলে "এইবার নিচ থেকে শুরু করব।"... স্যার বলেন.."তার মানে পা!!"..

সমর বলে.." আমার পরবর্তী গল্প..


"লক্ষী-চরণ"



ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নেমেছে। অফিস থেকে বাড়ি ফেরার বাসটাও আজ চলে গেছে। একা একা দাঁড়িয়ে আছে সীমা। প্রবল বৃষ্টির কারণে পুরো পোশাকটাই ভিজে। লম্বা চুলের বিনুনি থেকে টুকটুক করে জল পড়ছে। বাস স্টপে পৌঁছে ছাতা টা বন্ধ করে সিটটার পাশে গিয়ে বসে সীমা।

দ্রুতবেগে একটার পর একটা বাস,অটো রিক্সা বেরিয়ে যাচ্ছে। ব্যাগ থেকে প্লাস্টিকের মোড়ানো সেলফোনটা বার করে অর্ক কে ফোন করে ও।

." হ্যালো অর্ক!! কোথায় তুমি??".

ফোনের ওপার থেকে অর্ক বলে.." এইতো কাছেই চলে এসেছি, লাভেলা মোর। আসলে এত বৃষ্টির জন্য বাইকটা জোরে চালাতে পারছি না। এই তুমি রাখো আমি চলে এসেছি ফোনটাও ভিজে যাচ্ছে।"....

ফোন রেখে দেয় অর্ক। মিশন গেটের কাছে এসে বাইক থেমে যায়, গেট বন্ধ থাকার কারণে। অর্ক দেখে একটা মাল গাড়ি পাস হচ্ছে। প্রবল বৃষ্টিতে রাস্তায় জনপ্রাণী নেই বললেই চলে। মালগাড়ি টা পাস হতে প্রায় আধঘন্টা সময় নিল ।

বৃষ্টি টা একটু ধরেছে। গেট পাস করিয়ে পকেট থেকে ফোনটা বার করে সীমাকে ফোন করে অর্ক। ৩-৩বার ফোন করার পরও সীমা ফোন রিসিভ করেনা। অর্ক সীমাকে মিথ্যা কথা বলেছিল।আসলে যখন সীমা ফোন করেছিল;তখনই বাইক নিয়ে বাড়ি থেকে রওনা হয়েছে। কিন্তু এখন সীমা ফোন না ধরার জন্য অর্কর চিন্তা হয়।

দ্রুত গতিতে বাইক স্টার্ট করে। সীমা ওকে যখন ফোন করেছিল সেই টাইম দেখে ইন্টারনেট টে সার্চ করে। সিমা বলেছিল চৌমাথা মোড়ে বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছে। সেই মতোই অর্ক বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছায়। বাস স্ট্যান্ড পুরো ফাঁকা ।বাইক দাঁড় করিয়ে এদিক-ওদিক খোঁজে অর্ক।

কয়েকবার সীমার নাম ধরে ডাকে।.....

কিন্তু সীমা সেখানে ছিল না। অর্ক সেই জায়গাটা ভালো করে খোঁজাখুঁজি করে। বৃষ্টির কারণে দোকানপাট সব ছিল বন্ধ। রাস্তাঘাটের লোক চলাচল কম তাই সীমার কথা কাউকে জিজ্ঞাসা করতে পারেনি। বাসস্ট্যান্ডের সিটের ওপরে সীমার হ্যান্ডব্যাগ, মোবাইল,একটা জুতো পড়ে থাকতে দেখে । এবং সিটের তলায় দেখে রক্ত পরে আছে।

অর্কর বুঝতে বাকি রইল না ওর দেরি করে আসার কারণে সীমাকে কত বড় খেসারত দিতে হয়েছে।

তাড়াতাড়ি ফোন করে থানায় ফোন করে অর্ক। পুলিশ কর্তারা ওকে ওই স্থানে থাকতে বলেন এবং মিনিট পনেরোর মধ্যে গাড়ি করে উনারা সেখানে পৌঁছান।

থানার ওসি এস. কুন্ডু জিজ্ঞাসা করেন..

" আপনি এখানে ঠিক কি দেখেছেন??"

অর্ক বলে." আমি যখন এখানে এসে পৌঁছায় তখন দেখি;সীমার হ্যান্ডব্যাগ, মোবাইল ,পায়ের একটা জুতো আর সিটের তলায় পড়ে আছে চাপ চাপ রক্ত।"..

পুলিশ কর্তা লক্ষ্য করেন অর্ক ভয়ে কাঁপছে। পুলিশ কথার সাথে কথা বলতে বলতে ওর গলা কষ্টে ভারাক্রান্ত হয়ে উঠছে।

ওসিএস.কুন্ডু আবার জিজ্ঞাসা করেন..

" উনি আপনার কে হন? আপনি কেনই বা উনাকে এই বৃষ্টি বাদলের মধ্যে ড্রপ করতে আসছিলেন।"..

অর্ক বলে...." সীমা আমার হবু স্ত্রী। সামনের সপ্তাহেই আমাদের আইনগতভাবে বিবাহ হওয়ার কথা।"

পুলিশ কর্তা জিজ্ঞাসা করেন.." লাভ ম্যারেজ নাকি এরেঞ্জ".... অর্ক বলে "না না স্যার, লাভ নয় অ্যারেঞ্জ।"..

ওসি এস.কুন্ডু বলেন.." তার মানে আপনি বলতে চাইছেন দুই পরিবার থেকে মেনে নিয়েই আপনাদের বিয়ে ঠিক হয়েছে তাই তো!"

অর্ক বলে.." হ্যাঁ স্যার!আপনি ঠিকই বলছেন!"...

ওসি এস .কুন্ডু কৌতুকের স্বরে অর্ক কে বলেন.

" দুই পরিবার থেকে মেনে নিয়ে যখন বিয়ে টা ঠিক হয়েছিল;তখন সেই বিয়েতে আপনার মত ছিল তো;নাকি গোপনে কোন গার্লফ্রেন্ড আছে??.."

অর্ক হা করে উনার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে

" এগুলো আপনি কি বলছেন স্যার! সিমা কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না?

সিটের নিচে রক্ত পড়ে আছে,ওর একটা জুতো পড়ে আছে,ওর ব্যাগ পড়ে আছে, মোবাইল পরে আছে, ও কোথায় গেল; আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি ভাবতে ভাবতে!! আর আপনি এসব উল্টোপাল্টা প্রশ্ন করছেন আমাকে??"

ওসি এস.কুন্ডু বলেন.." দেখুন এগুলো জাস্ট ফর্মালিটিস। মানে বুঝতেই পারছেন ;সন্দেহের তালিকা থেকে আপনিও বাদ পড়বেন না।.. ও আপনাকে একটা কথা বলে রাখি।যতদিন না কেসের কোনো সুরাহা হচ্ছে আপনি এই শহরের বাইরে বেরোবেন না।"..

কথা শেষ না করতেই পুলিশ কর্তার মোবাইল ফোন বেজে ওঠে ফোনের ওপার থেকে কে যেন বলে..

" স্যার আপনি এক্ষুনি এখানে আসুন। একটা মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে।"

পুলিশ কর্তা হকচকিত হয়ে জিজ্ঞাসা করেন "আপনি কে??কোথা থেকে ফোন করছেন??"..

ফোনের ওপার থেকে আওয়াজ আসে..

" আমি হ্যাপি ক্লাব থেকে ফোন করছি।"

এই বলেই ফোনটা কেটে যায়....

পুলিশ কর্তা অর্ক কে বলেন.." চলুন আমাদের সাথে একটা মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে। আপনাকেই আইডেন্টিফাই করতে হবে।"..

অর্ক কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে.." ভগবান তুমি আমার সীমা কে রক্ষা করো!"....


ইন্সপেক্টর এর সাথে থানায় পৌছায় অর্ক। কিছুক্ষণ বসার পর এক কনস্টেবল এসে উনাদেরকে মর্গে নিয়ে যান। মর্গে পৌঁছানোর পূর্বেই ইন্সপেক্টর কনস্টেবল কে জিজ্ঞাসা করেন ...

"আপনারা কখন খবর পেলেন ?"

কনস্টেবল ওসিকে জানান..." স্যার বোস লেন থেকে ওনাকে বিবস্ত্র অবস্থায় উদ্ধার করি আমরা। প্রায় ঘন্টা ২আগে এক ভদ্রলোক থানায় ফোন করে জানান রাস্তায় একটি মেয়ে পড়ে আছে।

মেজ বাবুর সাথে আমিও গিয়েছিলাম। যে ভদ্রলোক আমাদের ফোন করেছিলেন তার পরিচয় জিজ্ঞাসা করার পূর্বেই উনি ফোনটা কেটে দেন। মেজ বাবু অজয়, আমি,আরো দুজন লেডি কনস্টেবল গিয়ে বডিটা উদ্ধার করি।"

উনাদের সাথে মেজ বাবু অজয় ও মর্গের দিকে যাচ্ছিলেন। উনি ইন্সপেক্টরকে বললেন..

" স্যার আমরা যখন ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছাই,তখন দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় উপুড় হয়ে পড়ে আছে মেয়েটি। লেডি কনস্টেবল এগিয়ে মেয়েটির হাতের নাড়ি চেক করেন...…

দেখেন মেয়েটি আর বেঁচে নেই।....

যারা মেয়েটির এমন অবস্থা করেছে তারা খুবই নৃশংস। শরীরের এমন কোন জায়গা নেই যেখানে আঘাত করা হয়নি।"....

ইন্সপেক্টর পিছন পিছন আসছিল অর্ক। একটা কথাও বলেনি ও। মেজ বাবু বললেন..

"সন্ধ্যা থেকে প্রবল বৃষ্টির কারণে রাস্তা প্রায় খালি ছিলো। দোকানপাট খোলা ছিল না। যে ব্যক্তি আমাদের ফোন করেছিলেন তার পরিচয় আমরা পাইনি। কিন্তু সেই ব্যক্তির খবর মত ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে আমাদের একটু দেরি হয়ে যায়। কারণ মেইন রাস্তায় একটা বট গাছের বড় ডাল ভেঙে পড়েছিল।...

ওসি বললেন "মেয়েটির কাছে কিছু পাওয়া গেছে কি??"

মেজ বাবু বললেন "না স্যার!কিছু পাওয়া যায়নি।"

ওসি প্লাস্টিকে মোড়া মেয়েটির ব্যাগ, জুতো এবং মোবাইল ফোনটা মেজ বাবু কে দিয়ে বললেন "যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এগুলো লাইব্রেরীতে চ্যাট করতে পাঠান।... সিসিটিভি ফুটেজ চেক করা হয়েছে কি??"..

মেজ বাবু মাথা নিচু করে বললেন..

" ঝড় বৃষ্টির কারণে সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে পড়েছিল। সেই জন্য কিছুই পাওয়া যায়নি।"

মেজ বাবু বললেন....

"স্যার মেয়েটার মুখের অবস্থা যা করেছে হত্যাকারীরা তাতে ওকে চেনা মুশকিল। সারা মুখেই কোন ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটা হয়েছে। আমরা বডিটাকে পোস্টমর্টেম এর জন্য ডাক্তারকে খবর দিয়েছিলাম। ডাক্তার এসে আপাদমস্তক পুরো বডিটা চেক করে জানান...

" আমি যতদূর বুঝতে পারছি অজয় বাবু মেয়েটিকে প্রায় সাত থেকে আটজন মিলে ধর্ষণ করেছে।শুধু তাই নয়.. ওর পেট টা কেমন ফুলে আছে দেখছেন!!

আমি নিশ্চিত হত্যাকারীরা ওর যোনির ভেতর কোন শক্ত জিনিস ঢুকিয়ে দিয়েছে। ইন্সপেক্টর আসার পরে বডি পোস্টমার্টেম করলে জানা যাবে।..

সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় দেখুন মেয়েটির পা দুটি কে বাঁকিয়ে সোজা থেকে উল্টো করে দেওয়া হয়েছে। আর এইসব আঘাতগুলো ওকে করা হয়েছে জীবিত অবস্থায়। যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরেই মেয়েটি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করে।....."...

মেজ বাবু মুখে ডাক্তারের কথাগুলো শোনার পরে ইন্সপেক্টর বলেন..

" অজয় আমরা অনেক রেপ কেস হ্যান্ডেল করেছি।কিন্তু এত নৃশংস হত্যা মামলা এই প্রথম।"

বলতে বলতে উনারা মর্গের সামনে এসে পৌঁছালেন।

দ্বার রক্ষী দরজা খুলে দিল। মর্গের ভিতর বহু মৃতদেহের ভিড়।

প্রত্যেক মৃতদেহ ওর পায়ের কাছে নাম্বারিং করা।

প্রায় খান পঞ্চাশের মধ্যে মেয়েটির লাশ খুঁজে পাওয়া খুব একটা কষ্টসাধ্য হলো না কারণ হত্যাকারীরা ওর পা দুটো বাঁকিয়ে দিয়েছিলো... সে কথা মেজ বাবু আগেই বলেছিলেন। ৮নম্বর নাম্বারিং করা লাশটার কাছে এসে থামলেন ওনারা। সাদা কাপড় ভেদ করে এখনো রক্ত গড়িয়ে পড়ছে । প্রায় 5 ফুট 4 ইঞ্চি লম্বা । মৃতদেহটির মাথার লম্বা চুলের বেনি খুলে মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। বাম হাতটা বাইরে বেরিয়ে ছিল । অর্ক দেখল একটা চকচকে হীরের আংটি অনামিকা টাই পরা। সেই আঙ্গুলটাকে কেউ টপটপ করে রক্ত পড়ছে মেঝেতে ।ইন্সপেক্টর মৃতদেহের মুখের ওপর থেকে সাদা কাপড় টা সরিয়ে দিলেন।....

অর্ক কাঁপা কাঁপা কন্ঠে চিৎকার বলে উঠলো।

মেজ বাবুর কথা মত সত্যি মেয়েটির মুখশ্রী চেনা দায়।

সারা মুখে ভোজালি জাতীয় জিনিস দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় গভীর ক্ষত হয়ে শরীরের হাড় দেখা যাচ্ছে। চোখ দুটো ঠিকরে বেরিয়ে আছে। গলার কাছে কাটা নলি থেকে এখনো চুইয়ে পড়ছে লাল রক্তের স্তোত্র।

পোস্টমর্টেম ডাক্তার ও এসেছিলেন।..

উনি অর্ক কে বললেন..

" নিজেকে শক্ত করুন। আপনি কি চিনতে পারছেন উনাকে??".. অর্ক বলে.." হ্যাঁ আমি চিনতে পেরেছি! ওই আমার সীমা!".. এই বলে চিৎকার করে কান্না শুরু করে অর্ক। ওসি অর্কর পিঠের উপর হাত রেখে বললেন..

" আপনি কি দেখে চিনতে পারলেন?".

অর্ক বলল.." দিন তিনেক আগে আমাদের এনগেজমেন্ট হয়েছে। ঐ হীরের আংটি টা ওনিজে পছন্দ করে কিনেছিল!".

চোখের জল নিয়ে অর্ক শেষবারের মতো সীমাকে দেখে। সিমার পায়ের কাছে এসে ওর চোখ দুটো দাঁড়িয়ে যায়। "কী নৃশংস হত্যা কারী!! আমি 100% নিশ্চিত এটা একটা মার্ডার কেস। জেনেশুনেই ঝড়-বৃষ্টির রাতে মেয়েটি কে হত্যা করা হয়েছে। যারা এটা করেছে তার আগে থেকেই মেয়েটির লোকেশন জানতো। আমি শুধু অবাক হচ্ছি এটা ভেবে; ওর পা দুটোকে ওরা ছাড়েনি!"... বললেন ইন্সপেক্টর।

অর্ক বলল..." না স্যার!!.. সীমার পা দুটো আর স্বাভাবিক পাঁচটি মেয়ের মতো নয়।

পায়ের পাতা দুটো অনেকটা বাঁকা ছিল।

ওই বাঁকা পায়ের কারনেই সিমার প্রথম বিয়ে টেকেনি।".

ইন্সপেক্টর বললেন.." তাই নাকি!! তাহলে পুরো ব্যাপারটা আমাদেরকে খুলে বলুন!"...


সীমা আর আমার পরিচয় হয় আজ থেকে প্রায় বছর দুয়েক আগে। সীমার পুরো নাম সীমা সান্যাল। সান্যাল গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রি মালিক শংকর সান্যাল এর একমাত্র মেয়ে সীমা। আর পাঁচটা সাধারণ ঘরের মেয়ের মত সীমাও বড় হয়ে ওঠে। অত বড়লোক ঘরের মেয়ে হলেও সীমার মধ্যে কোন অহংকার ছিল না। বাড়ির কাজের লোকের সাথে খুব ভালো ব্যবহার করত। আমার সাথে সীমার পরিচয় কলেজ লাইফ থেকে। সীমাকে আমি বরাবরই পছন্দ করতাম। বলতে পারিনি কোনদিন ।

কিন্তু ফাইনাল ইয়ার পরীক্ষা দেওয়ার পর যেদিন আমি ভাবি সীমাকে মনের কথা বলব সেদিন সীমা আমাকে জানায়.

" অর্ক আমি প্রেমে পড়েছি।"

"কে সেই ভাগ্যবান?". আমি জিজ্ঞাসা করি।

সিমা জানায়.." আমাদের কলেজের অংকের প্রফেসর!".

কথাটা শুনে আমার এর আগে সারা শরীর জ্বলে ওঠে।

আমি ওকে জিজ্ঞাসা করি.." কি করে হলো তোদের সম্পর্ক!"

সীমা বলে.." এইতো 7 দিন আগে। সেদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো বুঝেছিস। দোতলার সিঁড়ি ছিল ভিজে। আমি ক্লাস করে যখন নিচে নামছিলাম; হঠাৎ পা টা মচকে যায়। খুব ব্যথা করছিল উঠতে পারছিলাম না। তখনই হঠাৎ পেছন থেকে স্যার আমাকে টেনে তুললেন। তারপর স্টাফ রুমে নিয়ে গিয়ে আমার পায়ে মলম লাগিয়ে দিলেন। সেখান থেকেই হয়ে গেল।"

কথাটা শেষ করেই একটা বিয়ের কার্ড সীমা আমার হাতে ধরিয়ে দেয়।

খুব রাগ হচ্ছিল সেদিন। তবুও প্রিয় বান্ধবীকে উইশ করলাম।

সীমার বিয়ে তো আমি গিয়েছিলাম।

কিন্তু ওর বিয়ের পরপরই শুরু হতে থাকে নানান অশান্তি।

বিয়ে দশ দিন পরে সীমা ফোন করে আমাকে জানিয়েছিল.

" অর্ক আমি অনেক বড় ভুল করেছি। 7 দিনে কখনোই একটা মানুষকে চেনা যায় না।"

আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম "কি হয়েছে??"

সিমা আমাকে বলেছিল.

" বিদায়ের পর যেদিন আমি এই বাড়িতে প্রবেশ করি;তখন দুধে-আলতায় পা রেখে আমায় ঘরে প্রবেশ করতে বলা হয়। ওনাদের কথা মতই আমি দুধে আলতায় পা রেখে;যখন বাম পা ফেলে ঘরে প্রবেশ করি তখন;সবাই চিৎকার করে উঠে বলেন এ বাবা!!এর তো পা বাঁকা! পা বাঁকা বউ কখনো লক্ষী হতে পারেনা!! অর্ক তুই বল শারীরিক গঠন কি আর আমি তৈরি করেছি??

এটা তো ঈশ্বরের দান!"

আমি সীমাকে জিজ্ঞাসা করি

" কে বলেছিল কথাটা চিনতে পারিস নি!"

সীমা বলে" বাড়ী ভর্তি লোকজন এর মধ্যে বোঝা যায় কে বলেছিল? ছেলেমেয়ে সকলেই ছিল ঘরে।".

আমি জিজ্ঞাসা করি." তোর হাজবেন্ড কি বলছেন?"

সীমা বলে.." ও কি বলবে? আমি আগে বুঝতে পারিনি ওর মা বাবার এতটা বাধ্য! উনারা যা বলি ও তাই শোনে।"

আমি সিমাকে জিজ্ঞাসা করি." তোদের মত সবকিছু স্বাভাবিক আছে কি??".

সিমা কাঁদো কাঁদো গলায় বলে

" গৃহ প্রবেশের পর থেকে আমার শাশুড়ি মা আমার স্বামীকে আমার ঘরে আসতে দিচ্ছেন না। আমাদের ফুলশয্যা হয়নি ।

আমি বুঝতে পারছি না যে;ওনারা। কেন এমন করছেন। বিয়ের আগে আমার মা-বাবা আমার সম্পর্কে যাবতীয় কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন।

আমার দুটো পায়ের বুড়ো আঙুলএকটু বাঁকা সেটাও বলে দিয়েছিলেন। তখন ওনাদের কোনো আপত্তি ছিল না।ওনারা বলেছিলেন শারীরিক গঠন এমন হতেই পারে। কিন্তু এখন কেন এরকম করছেন আমি জানিনা।"

সারাদিন আমাকে অলক্ষী অপবাদ সইতে হয়। আমার শ্বশুর মশায়ের ফ্যাক্টরিতে আগুন লেগে গেছে ৩ দিন আগে। তারপর থেকে আমি বাবার কাছে এসে রয়েছি।"..

সীমাকে আস্বস্ত করে ওর বাড়ি যাই। সামনাসামনি ওর মুখ থেকে সবকিছু শুনি।"..

এই বলে চুপ করে অর্ক।

ইন্সপেক্টর বলেন "সামান্য পা বাঁকার জন্য কারো সংসার নষ্ট হতে পারে?সত্যি কেসটা ভীষণ ক্রিটিকাল।

যাইহোক আপনি এখন আসতে পারেন। আর হ্যাঁ এই আংটি টা নিয়ে যান। তবে শহরের বাইরে বেরোবেন না। যখন-তখন প্রয়োজন হতে পারে। আর প্রয়োজন হলে আপনাকে ডেকে পাঠাবো।....

মর্গ থেকে বেরিয়ে অর্ক বাইক স্টার্ট করে। থানা থেকে বেশ খানিকটা দূরে এসে ফোনটা বার করে। একটা নাম্বার ডায়াল করে বলে

" যেমন ভাবে কাজটা করতে বলেছিলাম ;তোরা তো তার থেকে ও খুব ভালো করে করেছিস?? পাওনা টাকা তোদের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিয়েছি চেক করে নে!"

এই বলে বাইক স্টার্ট করে বাড়ির দিকে রওনা হয়। বাড়িতে এসে থামে। পকেট থেকে চাবি বের করে দরজা খুলে ঘরের ভেতরে ঢোকে।

"না! ভীষণ গরম লাগছে। একটু স্নান করতে হবে।" বলে অর্ক। বাথরুমে গিয়ে জামাকাপর ছেড়ে শাওয়ার অন করে। শাওয়ার এর ঠান্ডা জল ধিরে ধিরে অর্কর চুল স্পর্শ করে;কাঁধ হয়ে-কোমর ছুঁয়ে নিচে গড়িয়ে পড়ে।

ঠান্ডা জলের স্পর্শে ওর ক্লান্ত শরীর শীতল হচ্ছিল।...

ঠিক সেই সময়....

হঠাৎই একটা হিমেল হাত অর্ককে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।..

তারপর সে হাতটা ধীরে ধীরে অর্কর পিঠ স্পর্শ করে- কাঁধ ছুঁয়ে-ঘাড় বেয়ে মাথায় উঠে। এবং মাথার চুলের মুঠি ধরে মাথাটাকে আস্তে করে ঘুরিয়ে দেয়।

হতভম্ব হয়ে অর্ক বলে.." একি তুমি!! তুমি এখানে কি করছো!!"..

অর্ক কে ধরে! ঠোঁট টা একবার কামড়ে সে বলে..

"নাটক করো না সোনা!!বেশ বুদ্ধি করেই তো আমাদের পথের কাঁটা সীমাকে সরিয়ে দিলে!!..

তুমি তো দারুন খিলাড়ি!"....

অর্কর হাত ধরে মেয়েটি বেড রুমে নিয়ে যায়।তারপর নিজের দেহের উপর অর্ক কে হাত ধরে টেনে শুইয়ে দিয়ে বলে......"কত বছর,আমি আজকের রাত টার অপেক্ষা করছি।অফিসে যেদিন তোমায় দেখেছিলাম সেই দিন থেকে আমি তোমায় ভালোবাসি।তোমার সুঠাম শরীর টা যত বার দেখতাম ;ততবার আমার শরীরে কামনার আগুন জ্বলে উঠতো। কিন্তু ওই সীমা!বারবার আমার পথে কাটা হয়েছে। দুদিন আগে অফিসে এসে তুমি যখন সকল স্টাফদের উদ্দেশ্য করে জানালে; তোমাদের এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে। তখনই আমি ভেবে নিয়েছিলাম সীমাকে আমি চিরদিনের জন্য সরিয়ে দেবো। কিন্তু তুমি কি করে জানলে আমার প্ল্যান!"....

অর্ক উঠে দাঁড়ায়। বিছানার কর্নারে যেখানে মেয়েটির পা ছিলো সেখানে হাত বোলাতে বোলাতে বলে.....

" তুমি সীমাকে মারবার জন্য যখন লোক ঠিক করছিলে তখন আমি তোমাকে ফোনে কথা বলতে শুনে ফেলেছিলাম। তাই ভাবলাম আমারও যখন ইচ্ছে সীমাকে জীবন থেকে সরিয়ে দেওয়া তখন তোমার সাথে হাতে হাত মেলাতে ক্ষতি কি?... সাপও মরবে লাঠিও ভাঙবে না। জানো তো মেয়েটা বরাবরই ওর পা দুটো জন্য কষ্ট পেয়ে এসেছে।"

কথাটি শেষ করে অর্ক বিছানায় শোয়া মেয়েটির পায়ের আঙ্গুল স্পর্শ করে বলে "একই..টিনা!.. তোমার পায়ের বুড়ো আঙুল দুটো সীমার পায়ের আঙ্গুলের মত লাগছে??"..

উঠে বসে টিনা বলে..." ও..ডার্লিং! এই মুহূর্ত টা নষ্ট করোনা প্লিজ! আমি কতদিন ধরে তোমাকে পাবার জন্য ওয়েট করছি। আমার তৃষ্ণা মেটাও!"..

কথাটা বলে অর্কর হাত ধরে টেনে আনে টিনা। ঠিক সেই সময় লোডশেডিং হয়ে যায়। অর্ক বলে..

" লোডশেডিং হয়ে গেল! আমি ক্যান্ডেল জ্বালিয়ে নিয়ে আসি!"..

টিনা বলে.." এসবের কি দরকার!! শুধু শুধু টাইম ওয়েস্ট হচ্ছে!"..

অর্ক বলে.." দরকার তো অবশ্যই ডার্লিং!! আমি ঘরভর্তি আলোয় তোমায় দেখতে চাই!! তুমি কতটা সুন্দর!"..

এই বলে অর্ক ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

বেশ কিছুক্ষণ পর.......

কারেন্ট চলে আসে। টিনা অর্ক কে ডাকে। অর্ক জানায় বাথরুম থেকে আসছে। টিনা নিজেকে দেখার জন্য আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। নিজেকে দেখে অবাক হয়ে যায়। ওর মুখটা পুরো সীমার মত হয়ে গেছে।সারা শরীর থেকে রক্ত পড়ছে।আয়নার ভিতর থেকে টিনা দেখে পায়ের বুড়ো আঙুল দুটো বাঁকা। ভয় চেঁচিয়ে ওঠে টিনা। এই সময় অর্কর ফোনটা বেজে ওঠে। ফোনের ওপার থেকে ইন্সপেক্টর বলেন.." অর্ক বাবু এখানে সর্বনাশ হয়ে গেছে। সিমার বডিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।"

ফোনটা রাখার সাথে সাথে টিনা ভয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে বাথরুমের কাছে এসে দাঁড়ায়।

" অর্ক দরজা খোলো। অর্ক দরজাটা খোলো শিগগিরই। তোমাকে একটা খবর দিতে হবে অর্ক?"..

দরজাটা খোলে। কিন্তু দরজার ওপাশে অর্ক দাঁড়িয়ে ছিল না। দাঁড়িয়েছিল সীমা। সে বলে..

" কি ক্ষতি করে ছিলাম তোর !কেন মারলি আমায়!!

আমাকে বললেই পারতিস তুই অর্ক কে ভালবাসিস!!..".

টিনা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলে

" তোর একটাই ভুল।অর্কর প্রেমে পড়া!! তাও আবার আমার অর্কের। এরপর তোকে কি করে আর ছাড়তাম বল। সেই কারণে লোক লাগিয়ে মেরে ফেলেছি!ঠিক করেছি!"..

সীমা বলে.." ঠিক করেছিস! একদম ঠিক করেছিস! এবার জেলে গিয়ে জেলের ঘানি টান।!.... অর্ক বেরিয়ে এসো রেকর্ডটা একবার চেক করে নাও।"

টিনা বলে.." অর্ক তুমি আমার সাথে এটা করলে!!"..

অর্ক বলে.." দেখো টিনা কলেজ লাইফ থেকে আমি সীমাকে ভালোবাসি। পায়ের আঙ্গুল সোজা না ব্যাঁকা সেটা এখনকার দিনে কোন গুরুত্ব রাখে না । সীমা আমার জীবনে লক্ষী ।

তুমি হয়তো ভুলে গিয়েছিলে!! তুমি যাদেরকে সিমা কে মারার জন্য ঠিক করেছ, তারা টাকার পিপাসু।যে গুন্ডাদল কে তুমি টাকা দিয়ে কিনে ছিলে; সেই গুন্ডাদল আমি আরো বেশি টাকা খাওয়াই। তবে আমাকে একটু বেশি খরচ করতে হয়েছে। কারণ হাসপাতালের মর্গ থেকে একটা মৃত লাশ নিয়ে আসতে হয়েছে। যে লাশটা আগে থেকেই পোস্টমর্টেম করা ছিল। তারপর পুলিশ প্রশাসনের কাছে সাহায্য চাই আমরা দুজনে। যারা যথাযথভাবে বন্ধুর মত সাহায্য করেন। তার পরের ঘটনা তো তোমার জানা।"....

টিনা বলে..."তাহলে আয়নায় আমি কি দেখলাম!!"

সীমা হাসতে হাসতে বলে..." ওটা কোন আয়নাই নয়। লোডশেডিং করে আয়না সরিয়ে ওইখানে কাঠের পাটাতন টা রাখি আমরা। যার একদিকে তুই দাড়িয়ে ছিলি,আর একদিকে আমি।"...

বিছানার পাশে রাখা কাঠের ফুলদানি টা হাতে নিয়ে টিনা সিমা কে উদ্দেশ্য করে ছুঁড়ে মারতে যায়;কিন্তু সেই সময়ে লেডি কনস্টেবল এসে হাত দুটো ধরে ফেলে।

পুলিশ এসে টিনা কে তুলে নিয়ে যায়।

ঘটনার মাস দুয়েক পর...

সিমা এবং অর্কের শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে।

আজ ওদের 1st night। অর্ক সীমার কাছে গিয়ে বলে..

" খুব সুন্দর লাগছে।"

সীমা বলে.." অর্ক তোর বাড়ির লোক কত ভালো। আমার পায়ের আঙ্গুল বাঁকা বলেও আমাকে কত ভালবাসে।কিন্তু আমি আজও বুঝলাম না কেন......দ্বীপ(সীমার প্রথম স্বামী)এর বাড়ির লোক আমাকে মেনে নিতে পারেননি!!"...

অর্ক বলে.." ছাড় ওসব কথা!! আমার লক্ষী তুমি!..

আমি ধন্য তোর লক্ষী-চরণ আমার গৃহ আলো করেছে বলে!"..

সীমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে অর্ক। একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে ,মনে মনে হাসে। ...

কারণ সীমার প্রথম বিয়ে টা নষ্ট হওয়ার পেছনে ওর হাতে ছিল। বরযাত্রীদের মাঝে অর্কই ছিল যে বাঁকা আঙ্গুল বলে সকলের মধ্যে সন্দেহের তীর ঢুকিয়ে দিয়েছিল।... নিজের ভালোবাসাকে পাবার আশায়।......


"ব্রাভো ব্রাভো!!.. সমর তোমার গল্প খুব সুন্দর হচ্ছে। আমি তো প্রথমে ভাবলাম অর্ক সীমা কে হত্যা করেছে?? বুঝতেই পারিনি যে তুমি গল্পের মোর এমনভাবে ঘুরিয়ে দেবে।।..".. বললেন স্যার।

সমর বলে.." আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। তবে আমি এতটা প্রশংসা পাওয়ার যোগ্যই নই!"

স্যার বলেন.." তুমি কি বলছ? তুমি আরো বেশি প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য!!.. নাও নাও নেক্সট গল্প শুরু করো।"

সমর বলে.." নেক্সট গল্প শুরু করার আগেএক কাপ গরম চা হলে ভালো হয়। সেই সকালে বাবার উপর রাগ করে; ঘর থেকে না খেয়ে বেড়িয়েছি।"

স্যার একটু লজ্জিত হয়ে বললেন.." ইস! দেখেছো এটা আমারই ভুল। তাইতো! আমি তোমায় জিজ্ঞেসাই করিনি তুমি অভুক্ত কিনা!!

ছি!ছি!! আমি সত্যি দুঃখিত!! চলো লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে। চা খেতে হবে না। আমার সাথে ক্যান্টিনে চলো,লাঞ্চটা সেরে নেবে।"....

দুজনে মিলে ক্যান্টিনে পৌঁছালেন। খাবার অর্ডার করলেন। একজন ওয়েটার এসে খাবার পরিবেশন করে গেল। স্যার বললেন.." একি!! এক প্লেট খাবার নিয়ে এসেছো কেন?? আমি তো দুটো অর্ডার করলাম!!".

ওয়েটার খানিকক্ষণ স্যারের মুখের দিকে তাকিয়ে "সরি !"বলে চলে গেলেন।

ভাত,ডাল,মাছ,দিয়ে বেশ ভালোই খাওয়া দাওয়া হল।

তারপর ওনারা দুজনে মিলে রুমে চলে গেলেন।রুমে যেতে যেতে সমর স্যার কে বলে...."স্যার!আপনার জীবনের এমন কোনো ঘটনা নেই;যেটা আপনি কাউকে বলেননি,বা বলতে পারেননি!!"...

স্যার একটু চুপ করে তারপর বললেন..." নেই তা নয়!!"

বলতেই মোবাইল টা বেজে ওঠে স্যার এর।

ফোনের ওপার থেকে একজন ব্যক্তি বলছিলেন..

"স্যার!!ব্যাপারটা মেইন রাস্তায় হয়েছিল।আপনার কপাল ভালো যে; রাস্তার সিসি টিভি ফুটেজে আপনার গাড়ির নাম্বার টা বোঝা যাচ্ছে না। বাড়ি গিয়ে কিন্তু গাড়িটা! বিশেষ করে গাড়ির চাকাগুলো ভালো করে ধুয়ে নেবেন।...

আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন।আমি অফিসার দের সাথে কথা বলে নিয়েছি।"

"আচ্ছা ঠিক আছে!".. বললেন স্যার।

উনারা স্যারের রুম এর কাছে পৌঁছে যান।

সমর বলে..." কে ফোন করেছিল স্যার?"

স্যার বললেন.." আমার প্রাইভেট অ্যাসিস্ট্যান্ট!"..

সময় বলে.." উনি কি বলছিলেন?? সবকিছু ঠিকঠাক আছে তো!!"...

স্যার একটু অন্যমনস্ক হয়ে বললেন....." আসলে আজ অফিসে আসার সময়!!".. বলে চুপ করে গেলেন।

"ছাড় ওসব !তুমি গল্প শুরু করো। আবার তোমার গল্পের অতল সমুদ্রে ঝাঁপ দি।"... বললেন স্যার।

সমর খানিকক্ষণ চুপ করে স্যারের দিকে তাকিয়ে বলল...." এতক্ষণ আমি আমার মনের করে গল্প গুলো বলছি। এবার আপনি আমাকে একটা বিষয় দিন। নারী অঙ্গের সমস্ত বিষয় নিয়ে আমার কাছে গল্প আছে। এখন আপনি সেটা নির্বাচন করুন।"...

"সত্যি বলছো!... এবার আমি বিষয় বলে দেবো!"..

বললেন স্যার।

সমর বলে." হ্যাঁ বলুন!"..

স্যার বললেন...." যে মাতৃগর্ভ থেকে আমাদের জন্ম, সেই গর্ভই হোক গল্পের পরবর্তী বিষয়।"....

সমর বলে.." গর্ভ নিয়ে যখন কথা উঠলো তখন রক্ত থাকবেই??.... আর যেখানে রক্ত সেখানে যোনি। প্রত্যেকটি নারী সেই অঙ্গের যন্ত্রণা সহ্য করে জন্ম দেয় একটি প্রাণ।.....

যোনি হলো স্ত্রী যৌনাঙ্গ, যা জরায়ু থেকে স্ত্রীদেহের বাইরের অংশ পর্যন্ত বিস্তৃত একটি ফাইব্রোমাসকুলার নলাকার অংশ। লাতিন বহুবচনে যোনিকে বলা হয় vaginae উয়াগিনাই । আমরা জানি প্রথম মিলনের পরই মেয়েদের সতিচ্ছেদ ঘটে!!!কিন্তু কেমন হবে যদি সেই কোমল অঙ্গে বারবার রক্তপাত ঘটে!!.."..

"কি বলছ কি সমর!! সে তো মারাত্মক ব্যাপার!!"....

বললেন স্যার।

সমর বলে...."হ্যাঁ স্যার!!.....


সেই কারণে আমার পরবর্তী গল্প-

"উয়াজিনাই"



রনি, চলো না কোথাও বেরিয়ে আসি। কতদিন হল একঘেয়ে ঘরের মধ্যে। অফিসে বলেই কদিন ছুটি নাও না!"..... অভিমানী কন্ঠে অভিযোগ করেন রিয়া।

রনি বলে.." সরি!! এই মুহূর্তে হবে না। পরশুদিন আমায় ইংল্যান্ড যেতে হবে।"..

রিয়া বলে.." ইংল্যান্ড!! মানে ইউনাইটেড কিংডম! আমাকেও নিয়ে চলো না!"....

রনি বলে." দেখো আমি বিজনেসের কাজে যাচ্ছি। ঘুরতে নয়। তাছাড়াও তুমি বিজনেসের কি বোঝো!!".

রিয়ার মুখটা কালো হয়ে যায়। সে বলে....

" তাইতো! তুমি হোটেল ম্যানেজমেন্টে আমেরিকা থেকে ডিগ্রীপ্রাপ্ত। আর কোথায় আমি পাতি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংলিশে গ্র্যাজুয়েট। আমার শিক্ষা তোমার শিক্ষার মধ্যে তুলনা করলে চলে!!"....

খানিকক্ষণ বেশ স্তব্ধতা।

রনি অফিস যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। রিয়াকে বলে

" আমার ব্রেকফাস্ট তৈরি আছে তো! আর হ্যাঁ রাতে ফিরতে দেরী হবে! না খেয়ে আমার জন্য ওয়েট করতে হবে না!"..

রিয়া নিস্পলক দৃষ্টিতে রনির দিকে তাকিয়ে থাকে।

"চলি"..... বলে রনি বেরিয়ে যায়।

চুপ করে খানিকক্ষণ দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে রিয়া। ওর চোখ থেকে গড়িয়ে পড়তে থাকে ফোটা ফোটা জল। বেড রুমের সামনে দেয়ালটায় একটা বড় ছবি টাঙ্গানো। ওদের বিয়ের ছবি। গত বছর এনিভার্সারি উপলক্ষে রিয়ার বড়দিদি রিয়া কে গিফট করেছিল। ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে রিয়া ভাবতে থাকে তিন বছর আগের কথা।

রনি এবং রিয়া ভালোবেসে বিয়ে করে। মাত্র তিন মাসের প্রেম ছিল। তারপর দুই বাড়িতেই সব জানাজানি হয়ে যায়। বাড়ির সকলের মতে বিয়ে করে ওরা। কেবলমাত্র রিয়ার বড়দি একটু আপত্তি করেছিল ।রিয়া যেবার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংলিশে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেছিলো; সেই বছরই রনি বিয়ের জন্য চাপ দেয়। ও জানিয়েছিল বিয়ের পর রিয়াকে পড়াশোনা করাবে। কিন্তু ৩ বছর পেরিয়ে গেছে পড়াশোনার নাম রনি একবার ও তোলেনি।

একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে রান্নাঘরে যায় রিয়া। ফ্রিজ খুলে গত রাতের খাবার বের করে। গতকাল রনির জন্য অনেক কিছু রান্না করেছিল। কিন্তু গতকালও রনি অনেক রাতে বাড়ি ফেরে। এবং রিয়াকে জানায় সে খেয়ে এসেছে।

বিয়ের পর থেকে রনির জন্য খাবার টেবিলে ওয়েট করা রিয়ার অভ্যেস।

কিন্তু ইদানিং রনির মধ্যে একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করেছে রিয়া।

বিয়ের পর পর দিনগুলো ভালোই কাটছিল। প্রতিটি রাতে কাটছিল মধুচন্দ্রিমার ন্যায়। অফিস যাওয়ার আগেই রিয়ার কপালে একটা চুম্বন করে যেত রনি। সন্ধ্যেবেলা তাড়াতাড়ি ফিরত। রিয়াকে নিয়ে ঘুরতে বের হতো। কোন কোন রাত না ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিতে ওরা। বারবার ভেসে যেত ও ভালবাসার অতল সমুদ্রে।

কিন্তু সেই ভালোবাসায় জোয়ারের উচ্ছ্বসিত জলরাশি আর নেই। ধীরে ধীরে ভাটা পড়ছে।

অনেক রাত করে বাড়ি ফিরে প্রতিদিনই ঘুমিয়ে পরে রনি।

আগেই বিছানায় ওয়েট করে থাকতো রিয়ার জন্য।

এক বছর আগে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনায় ওদের দাম্পত্যে একটা অন্যরকম চিড় ধরেছে। গত বছর কনসিভ করে রিয়া। রনি রেগুলার ওকে পিল খাওয়া তো। এদিকে রিয়ার শাশুড়ি মা এবং রিয়ার বাপের বাড়ি থেকে বার বার সন্তান নেওয়ার কথা বলতো। রিয়া ভেবেছিল রনি হয়তো খুশি হবে ;কিন্তু না!

রিয়া কনসিভ করেছে জেনে অত্যন্ত রেগে ওঠে রনি। সে সরাসরি রিয়াকে বলে.." দেখো রিয়া! আমি সন্তান চাইনা। আমি এখনো মানসিক দিক থেকে প্রস্তুত নই। প্লিজ!! আগামীকালই আমরা গর্ভপাত করাতে যাবো।"..

রিয়া কাঁদো কাঁদো স্বরে জিজ্ঞাসা করেছিল..

" কিন্তু রনি!! আমাদের দুই ফ্যামিলির থেকে চায় আমাদের সন্তান হোক!!"...

রনি চেঁচিয়ে উঠে বলে...." ফ্যামিলি চাইলে তো হবে না!! আমি চাইনা!"..

রিয়া বলে..." আমি কি চাই সেটা একবারও জিজ্ঞাসা করবে না!"..

রনি ঠান্ডা মাথায় রিয়াকে বলে.." কেন বুঝতে পারছ না!!

হ্যাপি লাইফ টা আমরা এখন উপভোগ করি, একটা সন্তান হলে সেটা কখনোই পারবোনা।"

রিয়া বলে "কেন?? একটা ফ্যামিলি পূর্ণ হয় একটা সন্তান নিয়েই!"

রনি বিরক্ত হয়ে ওঠে। রিয়ার দিকে আঙ্গুল তুলে বলে

" শোনো তোমাকে ভেঙেই বলি!!... একটা সন্তান হওয়ার পর তার দেখাশোনা করা, দুধ খাওয়ানো, রাত জেগে থাকা... এসবের ফলে একটা মেয়ের মধ্যে মিলনের প্রবৃত্তি নষ্ট হতে থাকে। আর তাছাড়াও... তোমার

উয়াজিনাই এ পরিবর্তন হয়ে যাবে। তুমি তো জানো আমি ঠিক কি পছন্দ করি। সেই কারণেই তোমার খাওয়া-দাওয়ায় আমি এত যত্ন নি। শুধু শুধু কথা না বাড়িয়ে আগামীকালই আমরা গর্ভপাত করিয়ে আসবো।"...

রনির কাছ থেকে এসব কথা একেবারে আশা করেনি রিয়া। সে বলে..." রনি আমি তোমার স্ত্রী!! রক্ষিতা নই। তুমি এসব কি বলছ?? আমি কি কোনদিনও তাই বলে মা হব না!"..

রনি বলে.." আহা আমি তো সেটা বলিনি!! কতই বা বয়স আমাদের। এখন লাইফটা ফুল এনজয় করতে হবে। বাচ্চা-কাচ্চার কথা পরে ভাববো।"

রনির কথা মেনে নেওয়া ছাড়া রিয়ার কাছে কোনো উপায় নেই। বিয়ের পর সে চলে এসেছে দিল্লি। মা-বাবার থেকে অনেক দূরে। ভাগ্যিস সবাইকে ফোন করে সুখবরটা জানায়নি।

পরদিন গর্ভপাত করায় রিয়া। রনিকে ডাক্তারের সাথে কথা বলতে শুনে ফেলে ও। রনি ডাক্তারকে বলছিল

" আপনি প্রয়োজন একটা সেলাই করে দিন। আগের মতই যেন থাকে।"

রনির প্রতি খুব রাগ হচ্ছিল ওর। কিন্তু সারা শহরে ও একা। প্রায় সাত দিন পরে নার্সিংহোম থেকে বাড়ি ফেরে রিয়া। গর্ভস্থ ভ্রূণটি প্রায় সাড়ে তিন মাসের হয়ে গিয়েছিল। গর্ভাশয় থেকে বার করতেই ডাক্তারদের অনেকটা ঝক্কি সামলাতে হয়েছে। মা হওয়ার আগেই সন্তান হারানোর যন্ত্রণা বহন করেছে রিয়া।

সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর......

সেদিন রাত্রে রনি সারা বিছানা জুড়ে ফুল দিয়ে সাজায়।

রিয়া ঘরে ঢুকে অবাক হয়ে যায়। রনি বলে...

" তাড়াতাড়ি এসো! আমি যে আর ওয়েট করতে পারছিনা।আজ আবার নতুন করে তোমায় পাবো।ঠিক ফুলশয্যার রাতের মত!মনে আছে যন্ত্রনায় তুমি কেঁদে উঠেছিলে!!"........

রিয়া কি বলবে বুঝতে পারেনা। মেয়েটা সত্যিই অসহায়। বাড়িতে ফোন করে কি জানাবে?? এসব কথা কাউকে বলার মতো!! দাঁতে দাঁত দিয়ে সহ্য করে রিয়া।

মিলনের সময় রনি আনন্দ উপভোগ করলেও সন্তান হারানোর জ্বালায় রিয়ার চোখে জল আসে। এ কোন রনির সঙ্গে সংসার করছে ও। বিয়ের আগে এসব কিছুই বুঝতে পারেনি। রিয়া ভাবে." সেদিন যদি বড় দিদির কথামতো বিয়ে করতে রাজি না হতাম সত্যি ভালো হতো!

বড়দি বলেছিল...

"আগে প্রতিষ্ঠিত হয়ে; তারপর বিয়ে করবি। একবার বিয়ে করে ফেললেই তো পরাধীন। তার আগে স্বাধীন হয়ে নিজের মত চলতে শেখ!! দেখ রনি ততদিন তোর জন্য ওয়েট করে কিনা!! যে ভালোবাসতে জানে সে ওয়েট করতে জানে!!....

কিন্তু ওসব কথা ভেবে এখন কি হবে? যা হবার তা হয়ে গেছে। বরং যেটা চলছে সেটাকে মেনে নিতে হবে।

মাতৃত্বের স্বাদ উপভোগ করার আগেই শরীরে যন্ত্রণা বইছে রিয়া।

এভাবেই মাস দুয়েক চলে। কিন্তু ইদানিং রনির ব্যবহার বেশ বদলে গেছে। রিয়ার কাছে গিয়ে সে বলে..

"না! আগের মত লাগে না!"...

এই বলেই পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে। রিয়া বারবার বলে

" চলো একটু বেরিয়ে আসি!"..

কিন্তু রনি কিছুতেই রাজী হয়না। আজ রিয়া ওর শ্বশুর শাশুড়িকে ফোন করে জানিয়েছে

" বাবা!! কতদিন হয়ে গেল রনি আমায় বেড়াতে নিয়ে যায় না। একটা অফিসের কাজে ও ইংল্যান্ড যাবে।তোমরা ওকে বলোনা;আমাকে নিয়ে যেতে।আমি দিল্লিতে একা একা কি করব?"..

শ্বশুর-শাশুড়ির বড় আদরের রিয়া। শ্বশুরমশাই তৎক্ষণাৎ রনি কে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছেন

" দুটো ফ্লাইট এর টিকিট বুক করবে। টাকা তোমার একাউন্টে ট্রান্সফার করে দিয়েছি।আমার বৌমার যেন এত টুকু অসুবিধা না হয়।দূর দেশে যাচ্ছ!!ওকে ভালোভাবে দেখেশুনে রাখবে!"....

রাত্রে রনি বাড়ি এসে রিয়াকে বলে..

" মা বাবাকে ফোন করে নালিস না করলেই পারতে। আমাকে বললেই তো নিয়ে যেতাম। দিন দিন তোমার এসব ন্যাকামো আমার একদম ভালো লাগেনা!".....

বেচারী রিয়া..... একটু শারীরিক বদল যেটা সবার হয়।সেটা একটা সম্পর্কের মাঝে এত বড় ছেদ আনতে পারে???... ওই জিনিসটায় কি সব!! রনি তাহলে সাততাড়াতাড়ি এইজন্যেই ওকে বিয়ে করেছিল??😢


অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও রিয়াকে নিয়ে রনি ইংল্যান্ড পাড়ি দেয়। ওখানে আগে থেকেই একটা কটেজ বুক করা ছিল। কোম্পানি থেকেই সেটা করা হয়। ফ্লাইট যখন ইংল্যান্ডের ভূমি স্পর্শ করে,তখন রিয়ার মধ্যে আনন্দের উচ্ছ্বাস দেখে ভীষণ বিরক্ত হয় রনি। ওরা যখন দিল্লি থেকে রওনা হয়েছিল; তখন থেকেই রিয়ার প্রত্যেকটা কথার জবাবে রনি বাকা বাকা উত্তর দিতে থাকে। এয়ারপোর্টে এসে রিয়া রনির হাতটা ধরলে এক ঝটকায় হাত সরিয়ে দেয় রনি। ফ্লাইটে বসেও রিয়ার সাথে একটাও কথা বলেনি। যদিও রিয়ার এসব সহ্য হয়ে গেছে। ওদের নামে গাড়ি আগেই বুক করা ছিল। গাড়িতে উঠে এই শহরের শোভা দেখতে দেখতে রিয়া বলে..

" উফ কতদিন পর একটু বাইরে বেরিয়ে মনটা ভীষণ ভালো লাগছে। নিঃশ্বাসটা নিতেও কষ্ট হচ্ছে না। এতদিন ধরে ঘরে একঘেয়ে জীবনে নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল।"

রিয়ার কথার উত্তরে রনি জবাব দেয়..

" যতসব ফালতু কথা!"

রিয়া কথাটা শুনতে পেয়েও না শোনার ভান করেই থাকে।

গাড়িটা এসে থামে একটা মস্ত বড় কটেজ এর সামনে। "ভীষণ সুন্দর কটেজ টা"...বলে রিয়া। কটেজের বাইরে দাঁড়িয়েছিল একটি মেয়ে।

"আপনাদের সকলকে স্বাগত জানাই".. বললেন এক রমণী।

বিদেশিদের মুখে স্পষ্ট বাংলা শুনে বেশ অবাক হয় রিয়া। সে বলে.." বাহ!! বেশ স্পষ্ট বাংলা বলেন তো!"..

মেয়েটি নিজের পরিচয় দেয় বলে..." আমি মারিয়া!! এই কটেজ দেখাশোনা করছি ৫ বছর ধরে। আপনার যা কিছু প্রয়োজন আমাকে বলবেন। আসুন আপনাদের ঘরটা দেখিয়ে দিই। আর একটা অনুরোধ প্লিজ আমাকে আপনি বলবেন না।"

রিয়া রনির দিকে একবার তাকায়। অনেকদিন পর রনির মুখে একটা হাসি দেখে রিয়ার খুব ভালো লাগে।

কটেজের ভেতরটা ভীষণ সুন্দর। সবি অত্যাধুনিক স্টাইলে করা। কটেজের বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় না, সিঁড়ি দিয়ে দোতলা ঘর আছে। মেয়েটির একটি ঘর দেখিয়ে দেয় রিয়াকে। রনির দিকে তাকিয়ে বলে..

" স্যার আপনি আসুন আপনার ঘরটা দেখিয়ে দিই!"

রিয়া বলে.." সেকি রনি তুমি আলাদা ঘরে থাকবে!"

রনি বলে.." তোমাকে তো আগেই বলেছিলাম, আমি বিজনেস মিটিং করতে এসেছি।হানিমুন করতে নয়!"

রিয়ার মুখটা ভার হয়ে ওঠে।

"তাছাড়াও তোমার কোন অসুবিধা হবে না মারিয়া আছে। তোমার যখন যখন যা কিছু প্রয়োজন মারিয়াকে বললে এনে দেবে।"... বলে রনি।

মারিয়া রিয়ার হাতে একটা নাম্বার ধরিয়ে দিয়ে বলে..

" ম্যাডাম!! আপনার যখনই প্রয়োজন এই নাম্বারে একটা কল করবেন। আমি হাজির হয়ে যাব। আমি থাকতে আপনার কোন রকম অসুবিধা হবে না।"

রিয়া লাগেজ থেকে নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে,লাগেজটা রিয়ার ঘরে রেখে, রনি মেয়েটির সঙ্গে অন্য একটি রুমের উদ্দেশ্যে চলে যায়।

খানিকক্ষণ চুপ করে বসে রিয়া দেখে রনি শেভিং ক্রিম নেয়নি। রেজারটা ও রেখে গেছে।

শেভিং ক্রিম এবং রেজার টা হাতে নিয়ে রিয়া ঘর থেকে বের হয়। রনির নাম ধরে ডাকতে থাকে। দোতালায় প্রায় চারটে ঘর। তার মধ্যে একটা ঘরে রিয়ার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাকি তিনটে ঘরের দরজায় রিয়া নক করে। কিন্তু কোথাও নেই। এবার রিয়া সিরি থেকে নামে। নিচের একতলা তে বড় ডাইনিং সেট। একটা কিচেন। নিচেও বাথরুমের বন্দোবস্ত আছে। আর আছে দুটো ঘর। ঘরের বাইরে বিশাল বড় বাগান। রিয়া দুটো ঘরেই যায়। একটি ঘরের দরজায় তালা বন্ধ। আরেকটি ঘরের দরজা খোলা থাকায় রিয়া গিয়ে দেখে রনির জামাকাপড় সেখানে রয়েছে। কিন্তু মানুষটা নেই!

বেশ চিন্তা হয় রিয়ার।একে তো নতুন জায়গা!! তার ওপরে বিদেশ!!

ঘর থেকে বাইরে বের হয় রিয়া। চারিদিক একটু চোখ বুলিয়ে রিয়ে বুঝতে পারে;জায়গাটা ভীষণ নির্জন!জনবসতি গোনাগুনতি। বাড়িগুলোও বেশ দূরে দূরে। সামনে পাকা রাস্তার দুধারে বড় বড় গাছ।প্রায় জঙ্গলের ন্যায়।

রিয়ার একটু একটু ভয় হয় সে জোরে জোরে রনিকে ডাকতে থাকে। তারপর হাতে রাখা চিরকুট টায় মারিয়া নাম্বারটার কথা মনে পড়ে। তাড়াতাড়ি দোতালায় গিয়ে নিজের ফোনটা বার করে নাম্বার ডায়াল করতে যাবে!!!অমনি কাচের জালনা দিয়ে বাইরের জঙ্গলটায় রিয়ার নজর আটকে যায়। পড়ন্ত বেলার সূর্যালোকে, দূর থেকে দেখে রিয়ার মনে হয়; রনি জঙ্গলে রয়েছে। কারণ রনির গায়ের হলুদ রঙের শার্ট টা রিয়াই কিনে দিয়েছিল।

আরেকটু ভাল করে দেখে ও বুঝতে পারে!!

রনির সঙ্গে রয়েছে মারিয়া!কি করছে ওরা ওখানে??? নিজেকেই প্রশ্ন করে রিয়া। তারপর হাতে টর্চটা নিয়ে জঙ্গলের দিকে হাঁটতে থাকে।একটা বড় ঝাউগাছের পিছন থেকে রনির শার্টটা দেখা যাচ্ছিল। মারিয়ার পরনে ছিল একটা ব্ল্যাক টপ, আর লাল রঙের স্কার্ট। সেটাও দেখা যাচ্ছিল। নির্জন জঙ্গলে ওদের দুজনের কথাবার্তার মধ্যেই কিছুটা শুনতে পেয়েছিল রিয়া। রনি বলছিল

" এতদিন ধরে যে ক্রিমটা ইউজ করতে বলেছি ওটা করেছ?? আজ রাতে কিন্তু তোমার ক্লাস নেব! কতটা ফিট করতে পেরেছে নিজেকে!"

মারিয়া বলে..." কে কার ক্লাস নেয় দেখা যাবে??"..

মারিয়া আরো কিছু বলতে গিয়ে ছিল কিন্তু থেমে গেল।



রিয়া পুরো কথাটা শুনতে পেল না কারণ মারিয়া ওকে দেখে ফেলেছিলো। "আরে ম্যাডাম আপনি এখানে কি করছেন!! কিছু প্রয়োজন থাকলে আমাকে বলতে পারতেন??".. বলে মারিয়া।



রিয়া বলে.." না কিছু না আসলে ঘরে একা ছিলাম তো; আর রনি ওর শেভিং ক্রিম আর রেজার টা ভুল করে আমার ঘরে রেখে এসেছিল।সেটা দেবার জন্য রনিকে খুজছিলাম!"... শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতেই রনি সামনে এসে বলে.." হুট করে এভাবে আসবে না!! আমি বিজনেস সেটিং করছিলাম!! তোমার জন্য সব পন্ড হয়ে গেল?"।

রিয়ার কিন্তু বুঝতে বাকি রইল না;রনি কি মিটিং সেট করছিল। সব বুঝতে পেরেও কিছু বুঝতে দিলো না রিয়া। চুপ করে চলে গেল ঘরে।আর মনে মনে রাতের অপেক্ষা করতে থাকলো।..



রাত্রি দশটা নাগাদ এক গ্লাস গরম দুধ নিয়ে মারিয়া হাজির হয় রিয়ার কাছে।

" ম্যাডাম!! স্যার বলে দিয়েছেন আপনাকে প্রতিদিন রাতে এক গ্লাস করে দুধ দিতে। আমি এনেছি আপনি খেয়ে নিন!"

রিয়া জানালার দিকে তাকিয়ে ছিল। রাতে পূর্ণিমার জ্যোৎস্না আলোয় জঙ্গল টাকে ভারি সুন্দর লাগছিল। মারিয়া দিকে একবার তাকিয়ে রিয়া দেখে মারিয়া একটা সাদা রঙের গাউন পরেছে। পোশাকটা ভীষণ পাতলা। ভিতরে অন্তর্বাসটা পর্যন্ত বোঝা যাচ্ছে। বেশ বিরক্তির সঙ্গে রিয়া বলে." এটা কি ধরনের পোশাক!! ভদ্র সমাজের ভদ্র মেয়েরা এমন পোষাক কখনো পড়ে!"

মারিয়া হেসে ওঠে, সে বলে

" তাহলে ধরে নিন আমি অভদ্র! দুধ থাকলো খেয়ে নেবেন। আর হ্যাঁ দরজা ভেতর থেকে লক করে শোবেন।"

মারিয়া ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর আবার জঙ্গলের দিকে তাকায় রিয়া। যে ঝাউ গাছটার পিছনে গোধুলিবেলায় রনি এবং মারিয়া অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখতে পেয়েছিল রিয়া; সেই ঝাউ গাছ টা কেই ভালো করে লক্ষ্য করে। কে যেন দৌড়িয়ে ঝাউ গাছ টার পিছন দিক দিয়ে পালায়। "কেমন হল ব্যাপারটা?? কে ছিল !!এত রাতে??" ভাবে রিয়া। চোখের মধ্যে দুই তিনবার হাত বুলিয়ে ভালো করে আবার দেখে।

"ওখানে তো কিছুই নেই?? শরীরের ক্লান্তিতে উল্টোপাল্টা দেখছি!! ঘুমালে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে?? কিন্তু আমারতো ঘুমালে চলবে না!! রনি মারিয়াকে কি বলেছিল সেটা দেখার জন্য রাতে আমায় জেগে থাকতে হবে!!".. মনে মনে কথাটা ভেবে গ্লাসের গরম দুধ খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় রিয়া। বিছানায় শোয়ার আগে মোবাইলে এলার্ম দিয়ে রাখে।যদি ঘুমিয়ে পড়ে সেই কারণে। কিন্তু শরীরের ধকলেই হয়তো এলার্মের শব্দে ঘুম ভাঙে না। রিয়া গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে পড়ে। সারা দিনের জার্নির কারণেই ।

সকালে রিয়ার ঘুম ভাঙ্গে অনেক লোকের চিৎকারে। জানালার বাইরে রিয়া তাকিয়ে দেখে প্রায় ৩০-৪০জন লোক ওদের দরজার সামনে জটলা পাকিয়ে আছেন।

"কি হয়েছে??"জিজ্ঞাসা করে রিয়া। একজন বয়স্ক বিদেশি লোক বলেন.." মারিয়া মার্ডার হয়েছে??"

রিয়া চিৎকার করে বলে ওঠে "কি বলছেন কি??"

তারপর তাড়াতাড়ি সিড়ি দিয়ে নেমে দরজার কাছে এসে দাঁড়ায়। যে মারিয়াকে গতরাতে একটা সাদা গ্রাউন পড়া অবস্থায় দেখেছিল সে গ্রাউন পড়ায় রক্তাক্ত শরীরে মারিয়া নিথর দেহে পড়ে আছে। কোমরের ঠিক নিচে ওর উরুর কাছ থেকে পা পর্যন্ত রক্তে ভিজে আছে গ্রাউন্ টা।

রিয়ার মাথার ঠিক নেই ওর চিৎকার করে কেঁদে ফেলে। ভিড়ের মধ্যে থেকে একটা বাচ্চা ছেলে বেরিয়ে আসে। সে রিয়ার হাত ধরে বলে.."lt's my mother!Why is'nt my mother getting up!!"..

ছোট শিশুটা। বয়স দুই কি তিন হবে। কয়েকজন লোক বলে ওঠেন" মারিয়ার একমাত্র ছেলে। কি হবে এখন ওর!"

রিয়া বলে.." ওর বাবা কোথায়??"

হঠাৎ রনির গলা পায় রিয়া। বাইরের দরজার সিঁড়ির কাছে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল রনি।

রনি বলে......

" ওর বাবা কোথায়!!! জেনে তুমি কি করবে!! তাছাড়া;এখনই লাশটাকে সরানোর চেষ্টা করছি। পাড়া-প্রতিবেশী কি করে জেনে গেল কি জানি??".. রনির কাছ থেকে এমন কথা আশা করেনি রিয়া। সে বলে

" তুমি কি মানুষ!! ছোট বাচ্চা ছেলেটার মা মারা গেছে!! যে তোমারে কটেজ দেখাশোনা করতো!! তোমার কি কোন দায়িত্ব জ্ঞান নেই!! আমাদের এখন উচিত পুলিশকে খবর দেওয়া! কি করে হলো এসব??"

রনি বলে" কি করে হলো আমি কিভাবে জানবো?? তোমার মত আমিও সকালবেলায় দেখলাম। রাত একটা চিৎকারের শব্দ পেয়েছিলাম কিন্তু শরীর খুব ক্লান্ত ছিল তো;তাই ঘুম ভাঙেনি!!"

হঠাৎ রিয়ার মাথায় খেলে "তাই তো!!রাতে তো আমি মোবাইলে এলার্ম দিয়ে রেখেছিলাম ঘুম কেন ভাঙেনি আমার???"

পুরোপুরি সন্দেহটা যায় রনির প্রতি। কিন্তু ওর কাছে কোন প্রমাণ নেই। তাই সব লোকজনের সামনে কিছু বলতে পারেনা রিয়া। বাচ্চা ছেলেটা রিয়ার হাত ধরে ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদতে থাকে। রিয়ার এবার মনে পড়ে গত রাতে ঝাউ গাছ টার পিছনে এই বাচ্চাটাকে দৌড়িয়ে যেতে ও দেখেছিল। জঙ্গলের আসে পাশে নিশ্চয়ই কোথাও মারিয়ার বাড়ি।সেখানেই মারিয়া থাকে এই বাচ্চাটাকে নিয়ে। রিয়া মনে মনে স্থির করে যেভাবেই হোক মারিয়ার মৃত্যু রহস্য ও সামনে আনবেই। আর তার সাথেই এই বাচ্চার পিতৃপরিচয়।

বাচ্চা ছেলেটার নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে রিয়া ওকে কোলে নেয়।

"একি!!তুমি ওকে কোলে নিচ্ছ কেন?? কোল থেকে নামাও!".. ধমকে ওঠে রনি।

রিয়ার বুকে এখন ভরা সাহস। এই বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে ওর সাহস আরো বেড়ে গেছে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রনির দিকে তাকিয়ে রিয়া বলে

" ওকে নিয়ে আমি ঘরে যাচ্ছি। আপাতত ওকে খাওয়াবো। তারপর ওকে নিয়ে ওর বাড়িতে যাব।আর এখন পুলিশে একটা খবর দেব!!"

রিয়ার কথা শেষ হতে না হতেই একজন বয়স্ক ভদ্রমহিলা বলেন....." মারিয়া প্রথম থেকেই দুঃখী। এক বিধবা মায়ের মেয়ে ছিল। ওর মা মারা যাবার পর হোটেলে কাজ করে দিন কাটাতো। একদিন আমরা জানতে পারি ও প্রেগনেন্ট। কিন্তু সেই সন্তানের বাবার নাম মারিয়া কোনদিন বলেনি।"

রিয়ার রনির দিকে তাকিয়ে দেখে.... রনি একটা বিকট চাহনিতে চেয়ে আছে বাচ্চা টার দিকে। রিয়ার বুঝতে বাকি রইল না;এই বাচ্চাটার বাবা রনি। আর মারিয়াকে রনি মেরেছে। কিন্তু রনির মুখ থেকে সেটা স্বীকার করাতে হবে। আজ রাতের মধ্যেই করাতে হবে। মারিয়ার যেখান থেকে রক্তপাত হয়েছে, সেই স্থান দেখে রিয়া নিশ্চিত রনি কোন ধারালো অস্ত্র দিয়ে সেখানে আঘাত করেছে।আর আঘাতটা করেছে সন্তান জন্ম দেবার জন্য। যে কারণে রনি রিয়াকেও মা হতে দেয়নি। কিন্তু মারিয়া রনির কথা রাখেনি। সে সন্তান জন্ম দেয়। সেই কথা রনিকে সে বলেনি। কিন্তু গত রাতেই ফিজিক্যাল রিলেশনের সময়ই রনি টের পেয়ে যায় মারিয়ার শরীরের পরিবর্তনটা। রিয়া নিজে ভুক্তভোগী। তাই মারিয়ার কষ্টটা বুঝতে ওর সময় লাগেনা।



মারিয়ার নিথর দেহ টার দিকে তাকিয়ে থাকে রিয়া।

মারিয়া চোখ দুটো এখনো বিস্ফারিত। কতটা যন্ত্রনা লেগেছে বলেই মারিয়া নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে।

উফফ কি যন্ত্রনা!! গোপন অঙ্গে আঘাত লাগলে কতটা কষ্ট লাগে রিয়া জানে; কারণ মা হওয়ার আগেই গর্ভপাত করিয়েছে ও। সে গর্ভপাতের জ্বালা যে কতটা মারাত্মক একটা মেয়েই বোঝে। কি পরিমান বেদনা যে সহ্য করতে হয়!যখন একটা ছোট্ট প্রাণকে কেটে কেটে বার করা হয়! আর সেটা ও সজ্ঞানে!!! মারিয়া কে আঘাত করতে করতেই মেরে ফেলেছে রনি। কতটা ব্যথা লেগেছে মারিয়ার!!! কিন্তু আর নয়!! রনির মত পাপিষ্ঠদের এবার উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার সময় এসেছে। রিয়া ভাবে

" গতকাল রাতে দুধের গ্লাসে; নিশ্চয়ই ঘুমের বড়িটা মিশিয়ে দিয়েছিল বলেই ওর ঘুম ভাঙেনি!!.. যদি ঘুমটা ভেঙে যেতো তাহলে রনির আসল পরিচয়টা রিয়া সামনে চলে আসতো। সেই কারণেই রনি হয়তো রিয়াকে ইংল্যান্ডে আনতে চাইছিল না!!".....



রিয়া ঘরে গিয়ে থানায় ফোন করে ।পুলিশ এসে মারিয়ার বডিটা নিয়ে যায়। রিয়াকে পুলিশ জিজ্ঞাসা করে

" আপনি কখন বডি টা দেখেছেন??"

রিয়া অতি সন্তর্পনে ভদ্র ভাষায় জানায়

" আমার সকালে ঘুম ভাঙ্গে কয়েকজন মানুষের চিৎকারে। সেখানে একজন ভদ্রলোক আমায় জানান মারিয়া মারা গেছে। আমি সিড়ি দিয়ে নেমে দেখি মারিয়ার রক্তমাখা লাশটা।"

পুলিশ জানিয়ে গেছেন ...." শুনুন ম্যাডাম! আপনি এবং আপনার হাসবেন্ড আপাতত ইংল্যান্ড ছাড়তে পারবেন না ।যতদিন না মারিয়া মার্ডার কেসের কোনো সুরাহা হয়। আমরা বডিটা এক্ষুনি পোস্ট মাটাম করতে পাঠাবো। দেখা যাক সেখান থেকে কি রিপোর্ট আসে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে আপনার ঘর ভালো করে তল্লাশি করবে কয়েকজন অফিসার। প্লিজ আমাদের সাথে সহায়তা করবেন।"

রনি রিয়ার ওপরে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। পুলিশ চলে যাওয়ার পর রিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে.." শোনো তোমার যদি এই দেশেই থাকতে ইচ্ছা করে তুমি থাকতে পারো। কিন্তু আমি এক্ষুনি ইমারজেন্সি টিকিকে ভারতে ফিরবো।আমার পক্ষে এখানে থাকা সম্ভব নয়?"

প্রথম থেকেই রিয়া রনিকে সন্দেহ করছিল। এই মুহূর্তে রনির মুখে এই কথাটা শুনে রিয়া পুরোপুরিভাবে স্থির হয়ে যায় মারিয়াকে রনি মেরেছে।

ইংল্যান্ড এয়ারপোর্টে ফোন করে জরুরী টিকিট কাটতে যায় রনি। সেখান থেকে রনিকে জানানো হয়......

" সরি স্যার!! আগামীকাল সকালের আগে একটা টিকিট ও কনফার্ম করা যাবে না!সমস্ত টিকিট বুক হয়ে গেছে।"

যদিও টিকিট পেলেন রনি দেশ ছাড়তে পারতো না। কারণ এই দেশে আইন ব্যবস্থার খুব কড়াকড়ি।

অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কটেজের বারান্দায় বসে থাকে রনি। মারিয়ার ছোট্ট ছেলেটা একটা বল দিয়ে খেলা করছিল। খেলতে খেলতে বল তার পায়ের কাছে এসে লাগে। সামান্য একটা বল পায়ের কাছে লাগার জন্য রনি ও শিশুটাকে সজোরে একটা চড় মারে। বাচ্চাটা ডুকরে ডুকরে কেঁদে ওঠে। রিয়া ছুটে এসে কোলে নিয়ে ওর ঘরে চলে যায়।

রাত হয়ে আসে। সারা বাড়িতে একটা দমবন্ধ নীরবতা। কিছুক্ষণ আগে থানা থেকে রিয়াকে ফোন করেছিল। সেখান থেকে রিয়া জানতে পেরেছে....

মারিয়ার গোপনাঙ্গে সুতো জাতীয় একটা কিছু পাওয়া গেছে। ভেতরে কোন ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। সম্ভবত ওই যন্ত্রণাতেই নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে মারিয়া। পোস্টমর্টেম ডাক্তার অনুমান করছেন.. "শারীরিক মিলনের আগে মারিয়ার গোপনাঙ্গে সুই সুতা দিয়ে সেলাই করা হয়েছিল। এবং তারপরে জোড় করে ওর সাথে ফিজিক্যাল রিলেশন করা হয়। যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে মারিয়া মারা যায়।..."...

আরো একটা কথা রিয়া জানতে পেরেছে।

জিওর সাথে এটা করেছে সেই ব্যক্তি গোপনাঙ্গে সুতোর ঘর্ষনে নিশ্চয়ই কেটে গেছে। কারণ মারিয়ার শরীরে দুটো ব্লাডের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। একটা রিপোর্ট মারিয়ার এবং অন্য ব্লাড সেই ব্যক্তির;যে ওর সাথে ফিজিক্যাল রিলেশন করেছে। রিয়া পুলিশকে বলে...

" স্যার!!!! ব্লাড গ্রুপ টা জানা যাবে??"

পুলিশ জানান এবি পজেটিভ।

রিয়া একটা দীর্ঘ নিঃস্বাস ফেলে বলে..

"স্যার!!আজ রাতেই দোষী ধরা পড়বে!!আপনাদের সহায়তা দরকার।"

পুলিশ অফিসার পূর্ণ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।এবং কিছুক্ষনের মধ্যেই পুরো বাড়ি ঘিরে ফেলার আশ্বাস দেন।

রিয়া মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।

রাতে বাচ্চাটাকে নিয়ে নিজের ঘরে দরজা বন্ধ করে চুপ করে শুয়ে পড়ে রিয়া। মোবাইলে রাত দেড়টা নাগাদ এর এলার্ম দিয়ে রাখে। কারণ রনিকে ধরতে গেলে গভীর রাত ছাড়া সম্ভব নয়। কিন্তু বাচ্চাটাকে ঘুম পাড়াতে পারাতে কখন যেন নিজেও ঘুমিয়ে পড়ে রিয়া।

ঘুমটা ভাঙ্গে দরজার শব্দে। রনি চিৎকার করে রিয়াকে ডাকছে.." রিয়া দরজা খোলো!! দরজা খোলো রিয়া! মারিয়া আমাকে মেরে ফেলবে, রিয়া দরজা খোলো!!"

ধচমচিয়ে উঠে বসে রিয়া। রনির আর্তনাদ শুনে রিয়া ভয় পায়। যতই হোক রনি ওর স্বামী। মনের মধ্যে তোলপাড় করতে থাকে সেটা আদৌ খোলা উচিত হবে কিনা। দরজা খোলার জন্য যেই উঠতে যাবে; তখন দেখে ছোট শিশুটা ওর কাপড় হাত দিয়ে ধরে রেখেছে। ঘুমন্ত অবস্থায় হয়তো মা ভেবে! বাচ্চাদের কপালে আলতো করে একটা চুম্বন করে রিয়া দরজাটা খোলে। দরজা খোলার সাথে সাথে রনি ঘরে ঢোকে।রিয়া বলে....."কি হয়েছে রনি??রনি তুমি এমন করছ কেন?? কি হয়েছে??"

রনি মাথা নীচু করে ছিল। এইবার একটা হাসি হেসে ওঠে; বলে.." বোকা মেয়ে!! এভাবে কেউ দরজাটা খোলে?? তুমি জানো না আমি মারিয়াকে মেরেছি! জানোতো আমি না বলা সত্ত্বেও মারিয়া বাচ্চাটাকে জন্ম দিলো। আমি বলেছিলাম..... অনেকবার বারণ করেছিলাম। একটা ভালো ডাক্তার কে বলে অ্যাপয়নমেন্ট করে দিয়েছিলাম। কিন্তু হতচ্ছারী, মা হবে শখ কত?? আমার কাছে এসব বাচ্চাকাচ্চার কোন মূল্য নেই। তুমি তো জানো বলো... আমি সমস্ত কিছুই টাইট ফিটিং পছন্দ করি। সেই কারণেই যখন বুঝতে পারতাম বাচ্চা জন্ম দিয়েছে তখন ওকে বললাম...." ঠিক আছে ভালোই করেছো মা হয়েছ!কিন্তু আমার তো ভালো লাগছে না??এরকম ভাবে আমি ঠিক শান্তি পাচ্ছি না!! এক মিনিট দাড়াও!...".. আমি ব্যাগ থেকে সুই আর লাইলনের সুতো দিয়ে তিনটে স্টিচ দিয়ে দিলাম। মারিয়ার তো যন্ত্রনায় সে কি চিৎকার!! মারিয়া বিছানায় শুয়ে ছিল আমি আচমকা এমন করায়; ও চিতকার করে ওঠে। কিন্তু তুমি তো জানো আমার কত ভাল লাগে মেয়েদের কন্ঠে চিৎকার শুনতে। মারিয়ার কন্ঠে চিৎকার শুনে আমার ফিজিক্যাল রিলেশন এর ইচ্ছেটা প্রবল ভাবে জেগে ওঠে। ওই অবস্থাতেই আমি.......;আর কি যা করার করি। কিন্তু কি বলতো!!! সুতো খুব শক্ত থাকায় আমার গোপনাঙ্গ কেটে যায়। যাইহোক তোমাকে সব বলে কি হবে!! আমিতো এখন এখানে এসেছি ওই বাচ্চাটাকে মারবো বলে। তোমাকে মারবো না। এই দেশে রেখেই চলে যাব। আমি জানি... ওই শাস্তিটাই তোমার পক্ষে যথেষ্ট!! অগ্নিসাক্ষী করে বিয়ে করা স্ত্রী তুমি তোমাকে কি মারতে পারি!!

রিয়া রনির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছু বলার আগেই রনি ঝাঁপিয়ে পরে বিছানার ওপর। একটা ছুরি দিয়ে বাচ্চাটার টুটি যেই কাটতে যাবে অমনি পিছন দিক থেকে কে যেন বলে ওঠে...." খুব সাবধান!! আমার বাচ্চার এতোটুকুন আচর লাগলে আমি তোর কি অবস্থা করব তুই জানিস না!!"

রনি পিছনে না তাকিয়ে বলে.." রিয়া এসব ফালতু ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। এর থেকে আমাকে সাহায্য করো। আমি কথা দিচ্ছি; দেশে ফিরে গিয়ে তোমার সাথে আবার ঘর বাধবো। এটাও কথা দিচ্ছি যে; তুমি সন্তানের মা হবে।"....

রিয়া রনি র মুখের সামনে এসে বলে...." আমি কিছুই বলিনি!! যা বলা হয় মারিয়া বলেছে!"

রনি হেসে উঠে পিছন দিকে তাকায়...ও দেখে

শূন্যের উপর ভাসছে মারিয়া।রক্তে ভিজে যাওয়া গ্রাউন এর পাতলা অংশ ভেদ করে একটা সুতোর উপস্থিতি এখনো বোঝা যাচ্ছে।

রনির মুখটা অস্বাভাবিক ফ্যাকাসে হয়ে ওঠে। সে বলে

" এটা কি করে সম্ভব!! কে তুমি??"

মারিয়ার ঝুলন্ত দেহটা বলে...."যাকে গত রাতে এত ভালোবাসা দিলে!!যে কারণে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলাম! সেই মারিয়া কে ভুলেও গেলে!!!"...

রনি বলে..."আমি বিশ্বাস করি না।তুমি ঠিক পুলিশের লোক।"

মারিয়া হেসে ওঠে।তারপর হাতে সেই লাইলনের সুতো আর সুঁই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে রনির উপর।

রনিকে বলে..."দেখতো কেমন লাগে;কোমল অঙ্গে আঘাত করলে!!!"...

রনি চিৎকার করতে থাকে। মারিয়ার দেহটা পাগলের মত হয়ে একটার পর একটা সিলাই করে যেতে থাকে। আর বলতে থাকে.." আমাকে মেরে শান্তি হয়নি!!! এখন আমার বাচ্চাটাকে মারবি!!"

রিয়া নিস্পলক দৃষ্টিতে পুরো ব্যাপারটা দেখতে থাকে।

রনি মারা যায়। পুলিশ আসে..

রনির লাশ নিয়ে যায়। কিন্তু অত্যাশ্চর্য ভাবে রনির দেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। পুলিশের কাছে রিপোর্ট আসে;রনি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে। রিয়া দেশে ফিরেছে বাচ্চাটাকে নিয়ে। এখন এই সন্তান কে আগলে বেঁচে থাকবে ও। রিয়া জানে রনিকে শাস্তি দিয়েছে রনির বিবেক!!!!...

"স্যার!!স্যার"...

"আপনি কি কিছু ভাবছেন??"...বলে সমর।

কিছুক্ষণ পর স্যার বলেন..." সত্যি সমর!! তোমার এক একটা গল্প এক এক রকম ভাবে শিক্ষণীয়। দারুন প্রচেষ্টা করছো।.... তোমার মত করে যদি কেউ ভাবতো তাহলে এত গর্ভপাত হতো না।

বেশ খানিকক্ষণ দুই জনের মধ্যে নীরবতা চলে।

সমর বলে.." পরবর্তী গল্প শুরু করি স্যার!!"

স্যার বলেন..." আজ আর নয়! অফিস বন্ধ হওয়ার সময় হয়েছে। তুমি আগামীকাল এসো। আর এই গল্পটা শোনার পর আমিও মানসিক দিক থেকে একটু ভেঙ্গে পড়েছি। আজ এই অবদি থাক।"....


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror