STORYMIRROR

Riya Singh

Classics Crime

4  

Riya Singh

Classics Crime

শেষ ঠিকানা তুমি (১)

শেষ ঠিকানা তুমি (১)

6 mins
319

গাড়িতে চলতে চলতে হুট করে থেমে গেল ব্রেক করার পর গাড়িটা স্টার্ট নিলেও আর চললো না।ঠিক বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে অরিন্দম বলে উঠলো "হলো কি আবার?"


"গাড়িটা আর চলছে না স্যার, হুট করেই স্টার্ট নিচ্ছে না। মনে হয় আরেকবার সার্ভিসিং এ দিতে হবে আগেরবার ঠিকঠাক সার্ভিসিং হয়নি", ড্রাইভার বলে উঠলো। 


"একি কথাবার্তা বলছো? আর দশ মিনিট পর আবার মিটিং আছে রতন। আর তুমি এখন বলছ গাড়িটাকে সার্ভিসিং হয়নি ভালো করে! বোধহয় গাড়ি সার্ভিসিং এ দিতে হবে? একটা কাজ ঠিক করে করতে পারো না তুমি",


এত গুলো কথা বলে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল অরিন্দম। ম্যানেজারকে কল করে ক্লায়েন্টদের একটু ওয়েট করার নির্দেশ দিয়ে , অরিন্দম তারপর ফোন খুলে একটা ক্যাব বুক করে ড্রাইভার কে গাড়িটা নিয়ে চলে যেতে বলল। এই ভ্যাপসা গরমে এইভাবে আহাম্মকের মতো! ভেবেও ওর মাথাটা কেমন রাগে ক্ষোভে ভরে গেল।


 ক্যাবটা আসতে এখনো অনেকটা দেরি এই গরমের মধ্যে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে শুনে অরিন্দম এর বিরক্তিতে গা জ্বলে ওঠার সাথে রাগের পারদ টাও বাড়ছে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর ক্যাব এসে দাঁড়ালো , উঠতে গিয়ে দেখলো আগে থেকেই একজন বসে আছে।


ক্যাব ড্রাইভার বললো," উনি সেম লোকেশনে একটু আগে নেমে যাবেন তাই শেয়ার করে নিতে হবে।"


  মুখের স্কার্ফ জড়িয়ে চোখে সানগ্লাস পড়ে ফোনে মুখ বুজে থাকতে দেখে পাশের সঙ্গীকে অরিন্দম মনে মনে বিড়বিড় করে উঠলো আজব পাবলিক এই গরমের মধ্যে এত কিছু জড়িয়ে বসে আছে ,যদিও এসি চলছে। এদিকে আমাকে দেখো আমি ঘামে নাজেহাল হচ্ছি ,এনার জন্য ই এতোটা দেরি হলো আমার। আধঘন্টা লেট করে অফিসে ঢোকার পরে অরিন্দম নিজের কেবিনে গিয়ে বসলো।এতো দেরিতে তাকে অফিসে ঢুকতে দেখে অলটাইম টাইম মেইনটেইন করা বসের অবাক কান্ড ভেবে সব এমপ্লয়িগুলো অদ্ভুত ভাবে অরিন্দম কে পিছন থেকে দেখে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিল ।


  মিটিংটা মিটে যাওয়ার পর ফরেন ক্লায়েন্টগুলো যখন প্রেজেন্টেশন দেখে খুশি হয়ে ডিলটা অর্ধেক কনফার্ম করে ,আইডিয়াগুলোকে অ্যাপ্রিশিয়েট করলো। আর বাকিটা মেল এর মাধ্যমে জানিয়ে দেবে বললো। ঠিক তখনই এতোক্ষণ এর ঘেঁটে যাওয়া অরিন্দমের মুডটা একটু ফুরফুরে হয়ে হাসিটা চওড়া হলো , আগের বিরকভাবটা মুখের মধ্যে মিলিয়ে গেল নিমিষেই যেন কিছুই হয়নি । ভালোয় ভালোয় সবটা মিটে গেছে ব্যস...


  কিন্তু এই ব্যাপারটা অরিন্দমের জন্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না , কারণ সেই মুহূর্তে অরিন্দম এর ফোনটা বেজে উঠলো। বাড়ির সবকিছুর দেখাশোনা করার লোক রামুকাকা ফোনের ওপাশ থেকে বলে উঠলো,


"ছোট মা মনি কেমন করছে আপনি তাড়াতাড়ি আসেন ছোট সাহেব, ঘরদোর বন্ধ কইরা ভিতর থিকা সব ভাঙতাসে। সবকিছু ভাঙচুর ফেলতেছে আপনি জলদি জলদি আসেন একটু। ওদিকে থেকে শুধু কিছু কাঁচের জিনিস চুরমার হওয়ার শব্দ আর ফোনটা কেটে গেছে ততক্ষনে। অরিন্দম যে কিছু বলবে তার আগেই এলোমেলো হয়ে গেছে,তাই সময় নষ্ট না করেই তড়িঘড়ি ম্যানেজার কে বাকি সবটা সামলানোর কথা বলে ঘরের দিকে ছুটলো ট্যাক্সি ডেকে। এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে রাস্তা এতো বড় কেন? ওকে জলদি পৌঁছাতে হবে যে কোন মূল্যে!


অরিন্দম স্যানাল,স্যানাল গ্রুপ ইন্ড্রাস্টিজ সিইও ,গত দু বছর আগে মা বাবার হত্যাকাণ্ডের পর এই মুহূর্তে বোন ছাড়া কেউ নেই আপন। কাউকে বিশ্বাস করেনা চোখ বুজে,ফর্মালিটি রেখে সবকিছু হ্যান্ডেল করে। বোন কে আগলে রাখে সুস্থ করাই ওর কাছে বিজনেসের পর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ।


বেলা একটা বেজে দশ মিনিট,


সিটি লাইফ নার্সিংহোমের সেকেন্ড ফ্লোরে অল্প বয়সী একজন মানুষ নিজের টেবিলে বসে কিছু একটা আঁকছে, কপালের চুলগুলো এলোমেলো হাওয়ায় উড়ে বেড়াচ্ছে তাকে বিরক্ত করছে , কিন্তু সে বিরক্ত না হয়ে বরং কানের পাশে চুল গুলো গুঁজে দিচ্ছে। সে হলো মিস অয়ন্তিকা বসু, এই নার্সিংহোমের সবথেকে কম বয়সী সাইকোলজিস্ট সাথে খুব মিষ্টি চেহারার মানুষের মধ্যে পড়া কেউ।

ইন্টার্নশিপ শুরু করার পর এখানে ই জয়েন করেছে, এখনো অবধি কোন পেশেন্ট কে আর ডিপ্রেশনের শিকার হতে হয়নি। যে পেশেন্ট ই এসেছে তাকে তার মতো মিশে খুব সুন্দর করে সহজ স্বাভাবিকভাবে জীবনে ফিরিয়ে আনতে পেরেছে বলেই এতো পপুলার পেশেন্টদের মধ্যে। অয়ন্তিকার মিষ্টি হাসি টাই ওর প্রথম স্টেপ সবাই কে ভালো রাখার জন্য। খুব নিপুণ ভাবে ও সবার সাথে মিশতে পারে যে কারণে ওর কাছে থাকলে মনখারাপ গুলো নিমিষেই হারিয়ে যায়।


ঠিক কিছুক্ষণ পর একজন নার্স এসে অয়ন্তিকাকে বললো এখনো কটা পেশেন্ট আছে, তাদের সব ডিটেলস গুলো দিয়ে গেল আর অয়ন্তিকা তাকে পরের পেশেন্ট কে ডাকার পারমিশন দিলো।


অয়ন্তিকা বসু এই মুহূর্তে কলকাতার জনপ্রিয় সাইকোলজিস্ট,গড়িয়ায় থাকে মা বাবার সাথে। অল্প বয়সেই সাফল্যের কারণে অনেকে হিংসা করে, সব ই জানে বোঝে এইসবে কান না দিয়ে অয়ন্তিকা নিজের কাজে নিজেকে ডুবিয়ে রাখে। চুপচাপ থাকলেও নিজের কাজের প্রতি খুব কনসার্ন অয়ন্তিকা। ওর জীবনের মূলমন্ত্র কাজ করা। , নিজের কাজে সৎ থাকার চেষ্টা।


বেলা দুটো,


কলিংবেল বাজানোর পরে রামুকাকা ঘরের দরজা খুলতেই কোনদিকে না তাকিয়ে অরিন্দম সোজা চলে গেল নিজের বোনের ঘরে, তারপর দরজা ঠেলে দেখলো ভিতর থেকে বন্ধ করা আছে। তাই দেরি না করে ডুপ্লিকেট চাবি নিয়ে ঘরে ঢুকে দেখল অনু একধারে থরথর করে কাঁপছে আর নিজের মাথার চুলগুলো দু হাত দিয়ে টেনে টেনে ছিঁড়ছে আর কি সব বিরবির করছে। এইরকম অবস্থায় বোনকে দেখে কোনরকমে ভাঙা সবকিছু পাশ কাটিয়ে বোনের পাশে গিয়ে ওকে জড়িয়ে শান্ত করার চেষ্টা করলো অরিন্দম। অজানা আশঙ্কায় অরিন্দম এর বুকটা ধড়াস করে উঠলো।


কি হয়েছে বনু? এরকম করছিস বাবু? (অরিন্দম)


 ওরা আসছে দেখ দাদা,ওরা আমাকে মারবে। এই দেখ আমাকে ছুঁয়ে দিচ্ছে ইশশ কি নোংরা দেখেছিস ,দেখ দেখ আমাকে ওরা নোংরা করে দেবে ইয়াক... (অনু)


শান্ত হো বনু আমার কেউ আসবে না দাদাই আছে তোর জন্য , কেউ আসবে না বাবু।(অরিন্দম)


ওরা দেখ, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে,দেখ না বলেই কেঁদে উঠে অনু অরিন্দমের গায়ে ঢলে পড়লো। কোনরকমে নিজেকে সামলে ডক্টর ডেকে বোনের চেকাপ করানোর পর ডক্টর অরিন্দম কে বললেন,


দেখো অরি এইমুহুর্তে একটাই কথা বলবো অনুর মেন্টাল হেলথ কেয়ার খুব জরুরি, যত দিন যাচ্ছে ও আরো ট্রমার মধ্যে চলে যাচ্ছে। তোমাকে আগেই বলেছি তোমার মা বাবার খুনের দিন ও সবটা দেখেছে নিজের চোখে। এছাড়া তারপর ওর সাথে মলেস্টেশন ও হয়েছে সবটার হার্মফুল এফেক্ট ওকে আরো ট্রমাটাইজড করে দিয়েছে। যতদিন যাবে ও আরো ট্রমার মধ্যে চলে যাবে আর যাচ্ছেও। তখন শেষ অপশন মেন্টাল অ্যাসাইলমে ওকে পাঠানো। প্লিস একজন ডক্টর কনসাল্ট করো পারলে, আমি নরমাল ফিজিশিয়ান এর বেশি তো আর আমার পক্ষে সম্ভব নয়।


কিন্তু বাড়িতে এসে পার্সোনাল ভাবে ওকে টেক কেয়ার করতে হবে বুঝতেই পারছেন ও ছাড়া আমার আপন বলতে আর কেউ নেই। আমার ভরসা করার মতো এমন মানুষ কি আছে? আমি কাউকে বিশ্বাস করতেই পারি না একমাত্র আপনি বাদে। আপনি যদি একটু...(অরিন্দম)


আমার চেনা একজন আছে মেয়েটা খুব ভালো।এতো অল্প বয়সে কি সুন্দর করে কেস গুলো হ্যান্ডেল করে, আই থিঙ্ক ও পারবে কিন্তু... ( ডক্টর)


দেখুন ডক্টর সেরকম হলে যত টাকাই লাগুক, আমি ওনাকে বাড়ি তে আনতে রাজি। এতে আমার বোনের ভালো থাকাটা জড়িয়ে কোনরকম কম্প্রোমাইস করছি না। আপনি ওনাকে একটু জানাবেন তারপর বাকিটা আমি দেখছি। ( অরিন্দম)


কথাটা টাকার নয় অরি, এখানে মেয়েটার পপুলারিটি অনেক এতো সহজে পাওয়া মুশকিল ওকে। আমি কথা বলে দেখবো ওর সাথে,আমাকে সিনিয়র হিসেবে খুব রেসপেক্ট করে,দেখবো কথা বলে রাজি করাতে পারি কিনা! যদিও আমার মনে হয় রাজি হবে। সবকিছুর মধ্যে টাকা আনা অভ্যাস করে ফেলেছো। এটা বিজনেস নয় অরি, মানুষের ইমোশানের ও কিছু গুরুত্ব থাকেই ।( ডক্টর)


কিন্তু আঙ্কেল, বোনের ব্যাপারটা খুব সেন্সেটিভ জানেন তো, কিভাবে সবটা সামলাতে হচ্ছে আমাকে? ওকে এইভাবে দেখতে একটু ভালো লাগে না আমার,মা বাবা তো চলে গেল ওকে সেইদিন ওই অবস্থায় দেখতে আমি নিজেই ভেঙে পড়েছিলাম। ( অরিন্দম)


আমার অজানা কিছু নেই,আমি তোমার ফ্যামিলি ডক্টর ছাড়াও তোমার বাবার বন্ধু। তুমি আমার ছেলের মতো ঠিক তেমনটাই অনু আমার মেয়ের মতোই। সব ঠিক হয়ে যাবে চিন্তা করো না কেমন? আমি কথা বলে দেখছি ওকে পাঠানোর কিন্তু তুমি হুটহাট কিছু বলে ফেলো না ওকে যেন। ( ডক্টর )


আমি একটু নিশ্চিন্ত হতে পারবো তাহলে, আপনি এই বিষয়টা দেখলে । আমি কথা বলবো রাজি থাকলে,ওর ব্যাপারটা তো দেখছি ডিটেলসে বললে ওনার ও সুবিধা হবে। (অরিন্দম)


আচ্ছা আমি আসি তাহলে, খেয়াল রাখো অনুর। খুব জলদি সব ঠিক হয়ে যাবে, টেক কেয়ার। (অরিন্দম)


(চলবে)



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics