শেষ পরিনতি
শেষ পরিনতি
মিঠুন আমার খুব ভাল বন্ধু । আমরা খুব ঘনিষ্ঠ ছিলাম ,ছোট থেকে একসঙ্গে হেসে খেলে বড়ো হয়েছি ।আমরা দুজন একে অপরকে ছাড়া একদম থাকতে পারতাম না ।পরস্পর আমরা যেকোন সমস্যা একে অপরকে শেয়ার করতাম । এখন সে ভালো চাকরি পেয়ে ভালো জায়গায় চলে গেছে ,আমি এখন গ্রামে ছোট্ট ব্যাবসা করি ।
মিঠুন ফোন করে আমায় কথায় কথায় বললো ,আমি অনেকদিন থেকে একজনকে ভালো বাসি তার নাম জ্যোতি ।
তোকে বলবো বলবো করে বলা হয় নি, কাজের সুত্রে যখন বাঁকুড়ায় ছিলাম তখন জ্যোতির সঙ্গে আলাপ হয় । রাতদিন আমার ফোনে কথা হতো। হঠাৎ আমাদের বিয়ে ঠিক হয় ,আমি কাজে ব্যস্ত থাকায় কটা দিন ফোন করতে পারিনি
একদিন সময় করে জ্যোতিকে ফোন করলাম ,তখন আমি বর্ধমানে । ভাবলাম এই পথে আমি যখন যাচ্ছি তখন একবার দেখা করে যায় । জ্যোতির ফোনে তখন ছেলের গলার আওয়াজ পেলাম , "জ্যোতিকে আর কোন দিন ফোন করবি না " আর যদি দেখি ফোন করিছিস এর ফল খারাপ হবে " ,ভুলে যা জ্যোতিকে!
ভুলে যা ,"জ্যোতি এখন আমার" । এই ঘটনার পর আবার আমি ফোন লাগায় জ্যোতিকে। জ্যোতি আমার ফোন রিসিভ করে বলে , ও বলে আমার কোন কলই ঢোকে নি নাকি তার নম্বরে । আমি তো হতবাক হয়ে যায়।
তারপর জ্যোতির নম্বর থেকে ফোন আসে একদিন আমার কাছে ,আবার পুরুষ কণ্ঠে বলে ওঠে, তোকে আমি বারণ করে ছিলাম জ্যোতির সঙ্গে কোন যোগাযোগ না রাখতে কিন্তু তুই আমার কথা শুনলি না । এইবার দেখ আমি তোর কি করি , ব্যাস, আমি রাতে শুতে যায় ,ঘুমিয়ে ছিলাম রাত তখন দুটো ।হঠাৎ শ্বাসকষ্ট অনুভব করলাম ,কোনমতে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি খাটের বিছানা থেকে দুটো হাত বেরিয়ে আমার গলা টিপে ধরেছে ।এই জন্যই আমি শ্বাস নিতে পারছিলাম না । আমি হনুমানজীর স্তোত্র মন্ত্র মনে মনে পাঠ করলাম ,দেখলাম হাত দুটো গায়েব হয়ে গেছে।সে রাত টায় আর ঘুম হলো না।
সকালে আবার ফোন করি জ্যোতির নাম্বারে ,খবর পাই জ্যোতির খুবই শরীর খারাপ । এই বলে ফোনটা তখনকার মত কেটে যায় , কিছুক্ষন পর...
সেদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো ,দোকান বন্ধ করে আমি বাড়িতেই ছিলাম আমি। হটাত মিঠুনের ফোন এলো বললো আমাকে, তুই রেডি হয়ে থাক ,এখনি বাঁকুড়া যাবো জ্যোতি কে দেখতে । এখনি আসছি আমি ,তোকে পিকআপ করে নেব । ভোর দুপুরে এলো মিঠুন, আমি খেয়ে দেয়ে রেডি হয়ে ছিলাম ।
জ্যোতির বাড়ি এসে দেখি বাড়িতে হুলুস্থুলস কাণ্ড । শালাটা দরজা খুললো আর কেদে উঠল মিঠুনকে দেখে ।জামাই বাবু আমার দিদিকে বাঁচাও ।
দেখলাম জ্যোতি খাটে দড়ি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে, পুরুষালি কণ্ঠে বলছে "জ্যোতি আমার" । কাছাকাছি একজন পুরোহিত মশাই ছিলেন , কালীমন্দিরের পূজারী উনি । মিঠুনের শ্বশুর উনাকে ডেকে আনেন , ভালো ভাবে দেখে বললেন, শক্তি শালি পিশাচ ভর করেছে জ্যোতির উপর । জ্যোতিকে আগের জন্মের প্রেমিকা ভেবে তার উপর ভর করেছে ।তারপর আরও বললেন, অনেক দেরিও হয়ে গেছে । পিশাচ খুবই শক্তিশালী,একে তাড়ানো আমার সাধ্যের বাইরে ।
কোন উপায় আছেত বলুন পুরোহিত মশাই !
উপায় একটা আছে ,তবে খুব তাড়াতাড়ি কাজ টা সেরে ফেলতে হবে । খুব বেশিক্ষণ হাতে সময় নেই,পুরোহিত মশাই বললেন । এখন থেকে একশ কিলোমিটার দূরে বাবা ব্রজেন্দ্র নাথের আশ্রম ,উনি খুবই সিদ্ধ পুরুষ । ওনার অসীম ক্ষমতা ,পারেন তো উনিই পারবেন । আজকের রাতেই রওনা দিতে হবে আর হ্যা, যে একমাত্র খুবই কাছের মানুষ সেই শুধু সঙ্গে যাবে । আপাতত: পুরোহিত মশাই জ্যোতির কপালে হাত রেখে কিছু সময়ের জন্য তাকে শান্ত করে, বললেন বেশিক্ষণ জ্যোতিকে শান্ত করে রাখা যাবে না। ও আবার ফিরে আসবে, তাড়া তাড়ি আশ্রমে পৌঁছান । নয় তো জ্যোতিকে বাঁচানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে,
মিঠুন ততক্ষণ রেডি হয়ে ছিল ,রাত দুটো সময় তারা বেরিয়ে পড়লো । তারপরের দিন খবর পেলাম কার অ্যক্সীডেন্টে দুজনেরই চরম পরিণতি মৃত্যু হয়েছিল ।
খবরটা পাওয়া মাত্র তার পরিবার শুদ্ধ আমি খুবই দুঃখ পেয়েছিলাম , কান্না পাচ্ছিল আমার ।আমার খুবই কাছের বন্ধু ছিল মিঠুন।
-- সমাপ্ত--

