STORYMIRROR

Neha Ruidas

Thriller Others

4.5  

Neha Ruidas

Thriller Others

কলাবতী

কলাবতী

4 mins
295

***কলাবতী***

   *প্রথম পর্ব*

  **রনজিত রুই দাস**


কলাবতীর গরীবের সংসার ,স্বামী শ্রীরাম বাবুদের মাঠে জন খাটে বলে বাবুরা দুমুঠো চাল দেয় তারপর তাদের চুলো জ্বলে। এদিকে বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি পড়ছে ,ঘরে একমুঠো দানা নেই , শ্রীরামের দুদিন ধরে কোন কাজ নেই ।একমাত্র মেয়ে কমলী সেও খিদে সহ্য করতে পারে না, কাজ বলতে এখন একটাই বাবুদের ঘরে গরুর গোয়াল পরিষ্কার করে , ওতেই দুমুঠো শুকনো মুড়ি পায় সেই মুড়ি তিনজন মিলে ভাগ করে খায় ।


কলাবতী বুঝতে পারে ,তার মেয়ে কমলি দুটো শুকনো মুড়িতে পেট ভরে না । সেও চেষ্টা করে অন্য কোন বাড়িতে কাজের জন্য । কিন্তু কলাবতীর একটায় ভয় তার সম্ভ্রম বাঁচানো।

গতবার মল্লিক বাড়ীর ছোটবাবু কলাবতীকে কু প্রস্তাব দেয় ,সে মনে মনে ভাবে জান খোয়াবে তবু মান খোয়াব না ,তার সন্মান মানে স্বামীর সন্মান ।

ছোটবাবু অনেক চেষ্টা করেও তার অভিপ্রায় পূর্ন করতে পারেনি কারণ বলতে ওই একটা , কলাবতী মল্লিক বাড়ি যাওয়া বন্ধ করে দেয় ।


শ্রীরাম রা হল ছোট জাত, তাই মায়ের মন্দিরেও প্রবেশের অধিকার নেই ,কলাবতী ও তার মেয়ে কমলি, অনাদী কালী মাকে খুবই ভক্তি শ্রদ্ধা করে। মন্দিরে ঢুকে পুজো করতে না পেলেও, দুবেলায় বাড়িতে বসে ভক্তি ভরে মাকে ডাকে। হে মা অনাদি কালী আমার স্বামী সন্তান যাতে দুবেলা দুমুঠো খেতে পায় মা । এই টুকুই শুধু চাওয়া তাদের মায়ের কাছে 

 

মায়ের মদিরে যখন পুজো হয় ,কমলি মন্দিরের মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে । সেও ভাবে , মন্দিরের প্রসাদ সবাইকে বিতরণ করা হয় , ঠাকুর দাদু তাকে কেনো প্রসাদ দেয় না ,সেও কিন্তু ভেবে পায় না । দু মুঠো মুড়ি আর একটু জল খেয়ে বাড়ি থেকে চলে আসে সে , মন্দিরে পড়ে থাকে সে একটু প্রসাদের অপেক্ষায় ।বাবা কাজে থেকে ফিরলে বিকাল বেলায় তবেই হাড়ি চড়বে ও একমুঠো ভাত খেতে পাবে সে। নয় তো উপোস ,এইসব ভাবতে ভাবতে কমলির চোখ দিয়ে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে ।


কমলীর আজ একমুঠো মুড়িও জোটেনি , সকাল বেলায় দেখলো মা গালে হাত দিয়ে বসে আছে আর চোখ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ছে । এটা কমলির জানা আছে , তার মানে বুঝতে পেরে চলে যায় মুখুজ্যে পুকুরে । সাঁতরে ডুব দিয়ে এক আঁচল গেরি গুগলি তুলে এনে ,গাছ তলায় বসে খেয়ে তারপর একটু জল খেয়ে নিল সে । চলে গেলো মন্দিরে , আজকেও প্রসাদ না পেয়ে মন্দিরের বাইরে গাছ তলায় খিদের জ্বালায় ঘুমিয়ে পড়ে কমলি । পুজোর শেষ হয়ে গেলে মন্দির প্রাঙ্গণ ফাঁকা হয়ে যায় ,হটাত কমলি মাথায় হাতের স্পর্শ পেয়ে ঘুম ভাঙ্গে । 


কমলি! " ওঠ মা ওঠ " একদম তার মায়ের মতন হুবহু লাল চেলি পরে ফল মিষ্টান্ন প্রসাদ নিয়ে তাকে ওঠালো ঘুম থেকে । কমলি খিদেয় তখন দিশেহারা হয়ে খেতে লাগলো , ছোট্ট মেয়ে কতটুকুই বা তার বুদ্ধি সে ভাবলো তার মা এসেছে খাবার নিয়ে । সে পেট ভরে তৃপ্তি করে খেয়ে নিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ল। এদিকে বেলা হয়ে গেছে দেখে কলাবতী মেয়ের খোঁজে এসে দেখে কমলি গাছ তলায় শুয়ে আছে । কমলিকে উঠিয়ে নিয়ে আসে কলাবতী, খাবার দেয় কমলি কে । কমলি বলে তুমিতো কিছুক্ষণ আগেই খাওয়ালে মা ,একদম আমার খিদে নেই এখন ।যা খেয়েছি আজকে আমায় আর না খেলেও চলবে মা ।


কলাবতী কিছুক্ষণ ভেবে দেখে বুঝতে পেরে বার বার প্রণাম করে , মা স্বয়ং অনাদি কালী অন্নপূর্ণা রূপে এসে আমার মেয়েকে খাইয়ে দিয়েছেন । মা তোমার অসীম কৃপা মা ,তুমি আছো মা তুমি সত্যি গরীবের সহায় থেকো মা । কলাবতী কাঁদতে কাঁদতে চোখের জল ফেলে ভক্তি ভরে প্রণাম করলো । 


শ্রীরামের দুদিন ধরে কোন কাজ পাচ্ছে না , রাত্রে একবেলা ভাত খেতে পেত বউ আর মেয়েকে নিয়ে সেটাও আর দু দিন ধরে জুটছে না । সে মনে মনে ভাবে ছেলে মেয়েকে নিয়ে শহরে চলে যাবে ,সেখানে কলে কোন কাজ পেলে তাহলে ভালই হবে, নয় ত মুটেগিরি করবে সেও ভালো ।

 এই গ্রামে আর নয় । এইদিকে বাড়িতে শোচনীয় অবস্থা দেখে কলাবতী মল্লিকবাড়ী গিয়েছিল বড়গিন্নি কদিন থেকেই ডেকে পাঠাচ্ছিলেন ।


বড়গিন্নি দুটো চাল বেশি করেই দিয়েছেন , আর কামায় করতে বারণ করেছেন । প্রত্যেক দিন সকাল সকাল মল্লিক বাড়ি চলে যেত কলাবতী ,সঙ্গে কমলিকেও নিয়ে যেত । বড়ো গিন্নি কমলিকে দুটো কলাই সিদ্ধ মুড়ি খেতে দিত ,কমলি খুশি হয়ে খেত । কাজ শেষ করে কলাবতী যখন বাড়ি যেত তিনজন কার খাবার একটা বড়ো জায়গায় সাজিয়ে দিত বড়ো গিন্নি ,এর ফলে দিনেও দুটি ভাত খেতে পেত কলাবতীরা ।


এই রকম ভাবে চলে দিনগুলি কলাবতীর । তারপরেই এলো সেই অভিশপ্ত দিন , শকুনির ছায়া পড়লো কলাবতীর উপর । ছোটবাবু কলাবতী কে আজ কদিন থেকেই বিরক্ত করছে , কলাবতী এতে খুব একটা গা করেনি সংসারের কথা ভেবে । ছোটবাবু দেখলো এইতো মোকা , সুযোগও পেয়ে গেলো ।


কলাবতী কাজ শেষ করে বাড়ি যাবার জন্য ছটফট করছে ,আর সেইসময় নামলো তুমুল বৃষ্টি । কমলি বারান্দায় বাইরে আনমনে খেলছিল । সেইসময় ছোটবাবু কলাবতীকে মুখে চাপা দিয়ে বাড়ীর ভেতরে নিয়ে গেলো জবরদস্তি করলো । সম্ভ্রম রক্ষা করতে পারলো না কলাবতী । যেটার জন্য এতদিন থেকে মল্লিক বাড়ি যাওয়া বন্ধ করে ছিল কলাবতী আজ সেই জিনিসই ঘটে গেলো তার সাথে । ছোট বাবুর কলাবতী কে অনেক বুঝিয়ে সুজিয়েও কোন কাজ হলো না ।


শেষে ছোটবাবু কোন উপয়ান্তর না পেয়ে কলাবতী র নাকেমুখে বালিশ চাপা দেয় । কলাবতী তার শেষ নিশ্বাস যাবার আগে অনাদি মাকে স্মরণ করলো । হে মা করুণাময়ী আমার যা হবার তো হলোই , আমার পরিবার কে দেখো মা । আর আমার নির্যাতনের বিচার করো মা , তবেই হবে আমার শান্তি , "কথা দাও,কথা দাও, মা কথা দাও মা".............

তখনই মন্দির চত্বরে অদ্ভুত ভাবাবেগের সঞ্চার হলো , হঠাৎ মদিরের কাসর ঘণ্টার বেজে উঠলো । মায়ের ত্রিনয়নী অগ্নি বর্ষিত চোখের উদয় হলো , মা অনাদি কালী প্রস্তর খন্ড থেকে ছিটকে বেরিয়ে এলো । শুরু হলো রুদ্রনৃত্য ,গোটা কালী মন্দির কম্পিত হল , একটা আলোক বিন্দু উড়ে এসে মায়ের হৃদয়ে আশ্রয় গ্রহণ করলো , তার কিছুক্ষনের পড়ে মা শান্ত হলো..........

To be continued,....


(কেমন লাগছে গল্পটি বলবেন) আপনাদের মতামত পেলে তবেই দ্বিতীয় পর্ব শুরু করবো


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller