অবিনাশ পুরের রহস্য সন্ধানে
অবিনাশ পুরের রহস্য সন্ধানে
Ranjit Ruidas
তৃতীয়পর্ব
শেষ পর্ব ও মহাপর্বো
কাঞ্চনের পাশের গ্রামে টিউশন
পড়ানো ,কাঞ্চনের নিখোঁজ হওয়া ,কাঞ্চন কে পোড়ো বাড়িতে আচৈতন্য অবস্থা পাওয়া ,এই সবের মানে দাঁড়াচ্ছে কি যে ,কপালিকের আত্মা ফিরে এসেছে। এদিকে মন্দিরে রাত্রে আলো জ্বলতে দেখা গেছে ।বুড়ার কাছে খবর পেয়েছে বিশাল , কাপালিক রোজ রাত্রে মন্দিরে পূজা করে ।
আদিবাসীরা আবার দেবীর পূজা নতুন শুরু করবে বলে পরি কল্পনা করে । কিন্তু কপালিকের ভয়ে মন্দিরে কেউ আসতে পারে না ।কেউ কেউ ভাবে দেবী অভিশপ্ত হয়ে গেছে ।
সুনিল বললো, আমি সব আগের মতো সব ঠিক করে দেব ,আবার আপনারা দেবীর পূজা ভালো ভাবে করতে করতে পারবেন ।শুধু আমি যেমন টি বলবো আপনারা তেমনটি করবেন । আদিবাসীরা সুনীলের কোথায় রাজি হল ।
কাঞ্চন দিনকে দিন পাগলের মতো হয়ে যাচ্ছে , শুধুই বলে যাচ্চে নরবলি চাই নরবলি চাই কাঞ্চন মাঝে মধ্যে রাতে জঙ্গলে মন্দিরে দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেছে । তাকে কোনরকম আটকে রাখা হয়েছে । খাওয়া দাওয়া প্রায় ছেড়ে দিয়েছে । কাঞ্চনের বাবা মাও চিন্তায় জর্জরিত,নাওয়া খাওয়া সব এক করে ফেলেছে ।
সুনীল বিশালকে বললো ,তোমার মামাদের সবাইকে ডাক ,একটু আলোচনা করার দরকার আছে ! আমি যেটুকু বুঝতে পারছি ,সেটা সবাইকে বলে আলোচনা করা দরকার । বড়মামা এসে বললো ভুলবশত যা করার করেছি বাবা ,ছেলেটা আমার বংশের প্রদীপ যেকোন উপায়ে আমার ছেলেটাকে বাঁচাও বাবা।
সুনীল বললো ,আপনি চিন্তা করবেননা মামা বাবু সব ব্যাবস্থা করা আছে ,আদিবাসীদের বলা আছে তারা থাকবে আমাদের পাশে ।তারা মন্দিরের আশে পাশে ই থাকবে আমাদের সাহায্য করার জন্য।
শুধু আজকের রাত টা একটু কাঞ্চন কে চোখে চোখে রাখবেন ।
বড়মামা.......তুমি কি করে নিশ্চিন্ত হচ্ছো ,আমার ছেলেটা বাঁচবে তো ! আমি তো ভয়ে অস্থির ,যদি আমার ছেলেটার কিছু ........
সুনীল.......আমিতো আছি মামাবাবু ,আপনার ছেলের কোন ক্ষতি আমি হতে দেব না ।
বড়মামা......... তুমিই তো আমার একমাত্র ভরসা সুনীল ।
সুনীল.......তারপর ,কোন মায় চাই না সন্তানের বলি নিতে ।দেবী কোনদিন সন্তানের বলি চান না ,কিছু দুষ্টু লোকের স্বার্থ সিদ্ধির কারণে এইসব হয় ,যেমন কাপালিক ।
শুধু আজকের রাতটা ,আজকের রাত বছরে একবার আসে ,আজকের দিনে আদিবাসীরা দেবীর পুজো করে আসতো ,মন্দির অভিশপ্ত হওয়ার কারণে পুজো বন্ধ হয়ে যায় কাপালিকের
ভয়ের কারণে।
রাত হবার পর থেকেই কাঞ্চনের চঞ্চলতা শুরু হয়ে গেছিল ,সুনীলের বলা ছিল পরিবারের সবাইকে সজাগ থাকতে ।রাত তখন গভীর ,কাঞ্চন তখন নিজের মধ্যে নেই ।সে বিভোর হয়ে ঘরের বাইরে বেরিয়ে এলো ,সঙ্গে কাপালিকের দুই শিষ্য অবয়ব।এদিকে পরিবারের সবাই কাঞ্চনের ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়া থেকে সব কিছুই লুকিয়ে দেখছিল ।কাঞ্চন পথে নামলো পেছনে শিষ্য অবয়ব দুটিও চললো
তার কিছুটা দুরত্ব রেখে আমরাও পিছু নিলাম যাতে ওরা বুঝতে না পারে ।চলতে চলতে প্রায় আধ ঘণ্টা পর সেই বট গাছটি এলো ,তারপর ডানদিকে মেঠো পথ।
আমরাও পিছু চলেছি ,আমাদের দেখে কিছু কুকুর ঘেউ ঘেউ করে উঠলো ,তখনই অবয়বদুটি পেছনে ঘুরে তাকাল ,যাতে আমাদের দেখতে না পায় তারজন্য আমরা লুকিয়ে পড়ি।
কিছুক্ষণ পর চাতালে মন্দির চত্বরের পোড়ো বাড়িটা দেখলাম ।তারপরে মন্দির দেখা গেলো ।
আমারা লুকিয়ে পড়ি ,তারপরে আদিবাসীদের সঙ্গে ও দেখা হয়ে গেল ।তারাও লুকিয়ে ছিল কাপালিকের শেষ দেখার জন্য ।
অবয়ব দুটি কাঞ্চন কে মন্দিরের কাছে নিয়ে গেলো ,মন্দিরে কাপালিকের পুজো চলছে।
এই বলি দেওয়ার পর সে নতুন জীবন ফিরে পাবে এবং অমরত্ব লাভ করবে।
সুনীল বুঝতে পারছে দেবী ক্রধিত ও অসন্তুষ্ট কাপালিকের উপর অতএব সে সফল হবে না
কাপালিক পূজা শেষ করে বলে উঠলো হে দেবী আমার উপর সন্তুষ্ট হও মা ,আমার অর্ঘ্য আমার বলি স্বীকার কর মা ।পঁচিশ বছরের সাধনা সফল করো মা ।
অবয়ব দুটি আদেশের অপেক্ষায় আছে প্রভুর ,কাপালিক মন্দির থেকে বেরিয়ে এলো কাঞ্চনের কপালে তিলক কাটলো ।
মা, হে দেবীমা আমার বলি স্বীকার করো মা,
এই বলে যেইনা কাপালিক বলি দেবার উদ্যত হলো অমনি ,মা করোলাবদনী দ্রাক্ষানী রূপে আবির্ভূতা হলেন ।তার ত্রিনয়নী দ্বারা অগ্নি বর্ষিত করে কাপালিক কে ভস্মিত করলেন।
এদিকে কাঞ্চন মূর্ছিত হয়ে পড়ে আছে ।সুনীল, মামা ,বিশাল, তাড়া তাড়ি তুলে মুখে জল দিয়ে জ্ঞান ফেরালো। আদিবাসীরা দেখলো দেবীর সাষ্টঙ্গ স্বরূপ, যে দেবী কত জাগ্রত ।
সবাই সুনীল কে ধন্য ধন্য করলো ,মামবাবু বললো তুমিই আমার ছেলের প্রাণ বাঁচালে । বেঁচে থাকো বাবা ,দীর্ঘ জীবি হও ,আর এইভাবে মানুষের মঙ্গল করো।
