অবিনাশ পুরের রহস্য সন্ধানে
অবিনাশ পুরের রহস্য সন্ধানে
দ্বিতীয় পর্ব
বড়মামা , বলতে শুরু করলেন, আমি সস্ত্রীক পরিবার সমেত চাকরি সূত্রে চলে আসি অবিনাশ পুরে।বয়স তখন পঁচিশ কি তিরিশ হবে ,আমার ডিউটি আদিবাসী জঙ্গলে তখন । ভালো ভাবে ডিউটি করতাম ।
সেইসময় শাল সেগুন এর কাঠও চুরি হতো পুরোদমে । ছেদিলাল রিপোর্ট দিলো ,আজ কিছু চোরা শিকারি দেখা গেছে উত্তরের জঙ্গলে।কিছু ট্রাকের ও দেখা পেয়েছে ।
তারপর আমি দুটো কনস্টেবল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি ।, জঙ্গলে রাউন্ড দেবার সময় দেখি আমার গাড়িটি রাস্তায় খারাপ হয়ে যায়। জঙ্গল টা অনেক বড় তাই হেঁটে তো আর গোটা জঙ্গল রাউন্ড দেওয়া সম্ভব নয়।তো হেঁটে হেঁটে যতটুকু পারলাম ঘুরলাম । শরীর টাও ক্লান্ত , ছেদিলাল কে বল্লাম চল, আর নয় এবার ফেরা যাক ।
এদিকে রাত ও হয়ে গেছে অনেক । অমাবশ্যার রাত হওয়ার কারণে ঘুটঘুটে অন্ধকার ।জঙ্গল তখন নিকঝুম ,খালি ঝি ঝি পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে।জঙ্গলে আমরা তিনটি মাত্র প্রাণী । আমাদের চলার পায়ের শব্দ ছাড়া রাত চরা পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে ।
বাড়ি ফিরতে আমরা জঙ্গলের পথে হেঁটে হেঁটে আসার জন্য আমরা যখন অনেক বেশি ক্লান্ত , তখন একটু জিরিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছি । সেইসময় দূরে একটি বাড়ির দেখা পেলাম । আলো জ্বলছে ,মনে করলাম হয়তো কোন আদিবাসী ঘর হবে হয়তো । সামনে গিয়ে দেখলাম ,সেই নাম নাজানা দেবীর মন্দির । সেই মন্দিরের হাড়িকাঠে একজন পনেরো ষোলো বছরের কিশোর কে বলি দেওয়ার উপক্রম চলছে ।
একজন ভয়ঙ্কর চেহরার আদিবাসী কাপালিক ,গলাতে তার নর্মুণ্ড মালা পরিহিত ।আদিবাসী ভাষায় মন্ত্র পড়ে চলেছে ,সঙ্গে দুই জন তার শিষ্য । মনে হচ্ছে পূজা শেষ এবার বলি দেওয়ার পালা, আমি তারা তারি পিস্তল টা বার করে বললাম খবরদার,,
বড়মামা......, খবরদার ,একটু নড়লেই তোমার মাথার খুলি টা উড়ে যাবে।
কাপালিক....., আপনারা আপনাদের নিজের কাজ করুন গিয়ে ,আমাদের পূজার ব্যাঘাত ঘটাবেন না ,নইলে আপনারই বিপদ হবে ।
বড়ো মামা,,,... আমি যেমন জঙ্গলের রক্ষাকর্তা তেমনি এই জঙ্গলে বসবাসকারী মানুষেরও রক্ষা করার দায়িত্ব আমারই ।হাতের খড়গ ফেলে দাও নইলে গুলি চালাতে বাধ্য হবো ।
কাপালিক.....দেখুন সাহেব এই বলি যদি আমি না দিতে পারি তবে আমি মরেও শান্তি পাবনা ,এটাই আমার শেষ বলি ।অন্তত গ্রামের মঙ্গলের জন্য এই বলিটা দিতে দিন ।
বড়মামা,,,,,,চুপ কর বেয়াদব, মানুষের জীবন নিয়ে ছিনমিনি খেলা ,এতে আবার কিসের মঙ্গল।
কাপালিক .... এই বলি আমাকে দিতেই হবে ,
বড়মামা ......তাহলে এবার তুই গুলি খা বলে বড়মামা কাপালিক কে গুলি করলো ।
কাপালিক .....আমি আবার ফিরে আসবো, বলি সম্পূর্ণ হবে তোমার ই পরিবারের কারুর রক্ত দিয়ে । যতদিন না আমি এই বলি দিতে পারছি ততদিন আমার মুক্তি নেই বলে কাপালিক মারা যায় । এই বলে মামা শেষ করলো ।
সকাল বেলায় আদি বাসী গ্রামে গেলাম ,দেখলাম গোটা গ্রামের জরাজীর্ণ অবস্থা , গ্রামের লোক বলতে বলতে দু থেকে তিন ঘর । তাও ওরা বয়স্ক বুড়ো বুড়ি । সঙ্গে বিশাল ছিল ,বিশালকে বললাম একটা আদিবাসী বয়স্ক লোক কে রাজি করাও এবং ডেকে আনো, কিছু কথা জানার আছে ।
গ্রামে ঢোকার সময় দেখলাম গ্রামে যে কটা লোক তারা বেশিরভাগ আড় চোখে তাকিয়ে বাড়ীর ভেতরে ঢুকে গেলো ।ওরা হচ্ছে এমনি সাধারণ জনজীবনে মিশতে কম চাই ।জঙ্গল্টাই ওদের সব থেকে পছন্দের জায়গা । তবুও বিশাল পটিয়ে পটিয়ে একটা বুড়োকে টাকার লোভ দেখিয়ে রাজি করানো গেলো । ওদের একটাই ভয় আছে যেটা হলো কাপালিকের আত্মা ।ওরা মনে করে কাপালিক এর ঘটনা যদি কাউকে বলি তাহলে কাপালিক এর আত্মা ওদেরকেও মেরে ফেলবে।তাই তারা নতুন লোকের সাথে কথা কম বলে।
সুনীল......আচ্ছা এই গ্রাম আপনাদের কত বছর পুরনো ,মানে কতবছর আপনারা এখানে বাস করছেন?
বুড়ো......কমসে কম দেড়শ বছর হবে।
সুনীল ......আপনাদের গ্রামটা এইরকম অবস্থা হবার কারণ কি ?
বুড়ো .....আমাদের গ্রামে অভিশাপ লেগেছে গো কাপালিক এর অভিশাপ ।
সুনীল ......কিরকম অভিশাপ একটু ভালো করে খুলে বলুন।
বুড়া,.....অনেকদিন আগে আমাদের গ্রামে একের পর এক বাচ্চা গায়েব হয়ে যাচ্ছিল। ,তাই গ্রামের লোক ভালো ভাবে মায়ের ভক্তি ভোরে পুজো অর্চনা করলো ।কিন্তু কিছুতেই কোন লাভ হলো না ।
সুনীল...... তারপর কি হলো!
বুড়া ....... পূজারী দ্বারা পূজা করে যখন কোন লাভ হলো না ,তখন গ্রামবাসীরা কপালিকের কাছে গেলো । কপালিক যদি কোন সুরাহা করতে পারেন।
সুনিল.........কপালিক কি বললো
বুড়া .......কপালিক বললো "একান্ন জন কে মায়ের পায়ে নর বলি দিতে হবে তবেই মা ক্ষান্ত হবেন ।
গ্রামের মোড়ল ও গ্রামবাসীরা এতে রাজি না হওয়াই কপালিক গোটা গ্রাম বাসীর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে ।গ্রামের মোড়ল ও আদিবাসীরা কপালিকের অভিষন্ধি বুজে ফেলে।
সুনীল.......তারপর বলে যান ,
বুড়া......একদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠে শুনি রামুয়া বেটা কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ,তারপরে লক্ষীরামের বেটা ,এমনি করে যত আদিবাসী কিশোর একে একে নিখোঁজ হতে শুরু হয় ।
আদিবাসীরা মোড়ল্ কে নিয়ে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত নেয় ,তাদের সন্দেহ কপালিক একাজ করছে ।তাকে হাতে নাতে ধরবে বলে তারা জঙ্গলে অন্ধকারে ওত পেতে ছিলো । ধরাও পরে যায় কপালিক ও তার শাগরেদ রা । কপালিককে মারা ধরাও করা হয় ।কপালিক কোনরকম বেঁচে যায় ওদের হাত থেকে এবং গভীর জঙ্গলে গিয়ে আশ্রয় নেয়।।
এই ঘটনার পরেও একের পর এক বাচ্চা নিখোঁজ হতে থাকে ,তার পরে একদিন শোনা যায় মন্দিরে কপালিকের গুলিবিদ্ধ লাশ মেলে ।
গ্রামের লোক মনে করলো ,কপালিক মরেছে ঠিক ই তবুও তার আত্মা আমাদের ছাড়বে না । আদিবাসীরা মনে করলো ই গ্রামে না থাকায় ভালো । ,তাই বেশিরভাগ লোক অনত্র চলে যায় । তার ফলে গ্রাম জনহীন হয়ে পড়ে।
কপালিক মারা যাওয়ার পর চব্বিশ পঁচিশ বছর পর।
কাঞ্চন পাশের অবস্থা পাওয়া
পড়ানো ,কাঞ্চনের নিখোঁজ হওয়া ,কাঞ্চন কে পোড়ো বাড়িতে আচৈতন্য অবস্থা পাওয়া ,এই সবের মানে দাঁড়াচ্ছে কি যে ,কপালিকের আত্মা ফিরে এসেছে । চলবে ......
(আর একটা পর্বের মধ্যে শেষ হবে আসা করছি)
,

