**কলাবতী**
**কলাবতী**
**রনজিত রুই দাস**
শেষ পর্ব
বিপদতারন দাস ঐ গ্রামের বাসিন্দা ,আজ থেকে পনেরো আগে নিঃস্ব হয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়ে ছিলো । দেশের মাটির টানে গ্রামে ফিরছে সে, আজ মস্ত বড়ো সাধক । সে নানা তীর্থ ঘুরে সিদ্ধি লাভ করে আজ সে মস্ত কালী সাধক । বিপদতারন বুকে বহু কষ্ট নিয়ে গ্রাম ছেড়ে ছিল ,এর পেছনে একটা করুন কালো ইতিহাস আছে যেটা না জানালেই নয়।
বিপদ তারণ খুব অতিকষ্টে ছেলে বউ নিয়ে সংসার করত তখন ,বিশ্বনাথ আচার্য , ও তার পরিবারের তিনচার ভাই ছিল তারা ছিলো খুব অত্যাচারী , আচার্য্যরা সবাই ছিলো দোর্দণ্ড প্রতাপশালী, মুখে যেটা বলতো সেটা করত । এই যেমন নকুলের একটা নধর বিশাল পাঠা বা খাসি ছিল , বিশু আচার্য্য দেখে বললো ",খাসা দেখতে রে হয়েছে পাঠা টা নকুল" ,নকুল দেখলো কিছু না বললেই নয় ,হা ঠাকুর মশাই । পরেরদিন পাঠাটা গায়েব ছিল , সবার বুঝতে বাকি রইলো না এত বড় নধর পাঠা টা গেলো কোথায় ।কারো কিছু বলার সাহস হতো না । বলতে যাবেই বা কে , কার ঘাড়ে কটা মাথা ।
আরো অনেক নিদর্শন আছে যেমন ,কেউ যদি কোন ছোট জাতের লোক ভালো প্যান্ট বা চপ্পল পড়ে ওদের সামনে দিয়ে পেরিয়ে যেত ,তাকে দশ হাত নাক খত দিতে হতো ,নয়তো তাকে প্যান্ট খুলে উলংগ করে চাবকাতো ,নয়তো চপ্পল মাথায় দিয়ে গ্রাম ঘোরাতো । যাক পরের কথায় আসি।
বিপদতরণ ছিল সাধাসিধে লোক ,তবে কোন অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করত সে , তার বুকের এটুকু পাটা ছিল । নকুলের পাঠাটা যখন খেল বিশু আচার্য্য, তখন বিপদ তারন প্রতিবাদ করে ছিল ,তার জন্য তাকে জরিমানা করে বিশু আচায্য ।
বিপদতারন নিয়মিত কালী সেবা দিতেন ভক্তি ভরে পূজা করতেন । তার ইচ্ছা ছিল মায়ের মন্দিরে গিয়ে মাকে সাস্টান্গ্ প্রণাম করবে ।একদিন ভোরে ওঠে মন্দিরে ঢুকে মাকে দর্শন করে পুজো দেয় বিপদ , খবর যায় বিশু আচার্য্যর কাছে । ছোটলোকের এত সাহস মন্দিরে ঢোকে ,বাড়িতে বিপদতারণ কে না পেয়ে তার বউকে তুলে নিয়ে যায় । নাটমন্দির রে থাম্বার সাথে বেধে চাবকায় ,বিপদ খবর পেয়ে দৌড়ে ছুটে যায় ,তারাও তিনভাই ছিল হাট্টা গাট্টা। তারাও লাঠি নিয়ে বের হয় বামুন পাড়া ,মল্লিক পাড়া, দাপিয়ে বেড়াই, কিন্তু বিশু আচার্য্যরা ভয়ে বাড়ি থেকে কেউ বের হয়নি সেদিন ।
বিপদতারনের বউ তার পরের দিনই মারা যায় , স্ত্রীর শোকে পাগল হয়ে বাপ বেটা গ্রাম ছাড়ে ।ছেলেকে তার মামার বাড়িতে রেখে যায় । কোথায় হারিয়ে গেছিল বিপদতারন যা আজ পর্যন্ত কেউ জানত না । পনেরো বছর পর গ্রামে ফিরছে সে ,সোজা গ্রামে ঢোকার আগে শ্মশান পড়ে ,শ্মশানে আশ্রয় নিল বিপদতারন,গ্রামের কিছু লোক বলাবলি করছে , শ্মশানে মস্ত বড়ো অঘোরী এসেছে ।
বিপদতারণ রাতের বেলা মায়ের মন্দিরে প্রবেশ করল , ধীরে ধীরে মায়ের সম্মুখে বসে মা মাগো ,তোকে ছেড়ে থাকতে পারলাম না মা । তবে তোর মুখ ভার কেনো মা ,মনে হচ্ছে রেগে আছিস ।কার উপর এত রেগে আছিস ?
সেই সময় মূর্তির ভেতর থেকে দৈব বাণী হলো , তোকে একটা কাজের জন্য এখানে ডাকা হয়েছে , গ্রামের সবাই আমার সন্তান ,সবাই আমার কাছে কিছু না কিছু আশা করে । যারা আমায় ভক্তি ভরে ডাকে তাদেরকে আমি সাড়া না দিয়ে থাকতে পারি না । আমি তোকে একটা দায়িত্ব দিলাম, আমি কলাবতী কে কথা দিয়েছি , তার ইচ্ছে মানে আমার ইছে । আমি গ্রাম সমাজের কিছু অসুর দের বিনাশ করে আমার মন্দির সবার জন্য উন্মুক্ত করতে চাই এটাই আমার শেষ ইচ্ছা । তাই হবে মা ,বিপদতারণ মাকে কথা দিলো ।
শ্মশানে রাতের বেলা বিপদতারণ ধুনি জ্বালিয়ে মন্ত্র পড়ছে , কলাবতীর পবিত্র আত্মাকে আহ্বান করেন ,এরপর আশ্বাস দিলেন ,কিছুদিন পর ...
মল্লিক বাড়ীর সব কাজ সক্কাল সক্কাল করে বাড়ি চলে আসতো পার্বতী ,ছোটবাবু সুযোগ খুঁজছিল কিভাবে পার্বতী কে ভোগ করা যায় , মনে মনে ফন্দি আটলো ছোটবাবু। টাকার লোভ দেখায় ,পার্বতী রাজি হয়ে যায় । বিকাল বেলায় পাথর কোন্দার মাঠে যেতে বলে পার্বতী । যথারীতি ছোটবাবু বিকেলবেলায় মাঠ যাবার নাম করে বেরিয়ে পড়ে পার্বতীর উদ্যেশ্যে ।
ছোটবাবু দুর থেকে দেখলো পার্বতী বসে আছে গাছের নিচে ,পিছন থেকে পার্বতী কে জড়িয়ে ধরলো ছোটবাবু । অমনি পার্বতী যেই মুখটা ঘুরিয়েছে ,ছোটবাবু দেখে থ হয়ে গেলেন ।হৃৎপিণ্ড অসাড় হবার জোগাড় , ।
দেখলো কলাবতী তার দিকে তাকিয়ে আছে আর হাসছে, ছোট বাবু একবার ভাবলেন দৌড়ে পালাবেন কিন্ত পা টা মনে হলো অবশ হয়ে গেছে ,এতটুকু শক্তি হলো না পা টা তোলার । কলাবতী কিছুক্ষণ পর তার ভয়ানক রূপ ধরলো । ত ছোটবাবু নিজেকে বাঁচাতে পারলো না ।কলাবতী ছোটবাবু র দেহ থেকে মুন্ডুটা আলাদা করে দিলো । গর্দন থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে সেই রক্ত কলাবতী পান করে পিপাসা মেটাচ্ছে ।এমনি করে কলাবতী তার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিল
শেষ ......
