শেষ ইচ্ছে
শেষ ইচ্ছে


“মা, আমরা দার্জিলিং যাচ্ছিনা? তুমি যে বলেছিলে আমায় পাহাড় দেখাবে”, অমল অশ্রুসিক্ত গলায় বললো।
বুক চিরে হাহাকার বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল সরলার। তার মৃত্যুপথযাত্রী সন্তানের ইচ্ছেটুকু পূরনের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে স্বয়ং ঈশ্বর। করোনাতো শুধু অজুহাত মাত্র।
যেদিন ডাক্তারবাবু দীর্ঘনিঃশ্বাসের সাথে জবাব দিয়ে বলেছিল, “আমরা দুঃখিত মিসেস বোস। লাস্ট স্টেজ। অমল আর বড় জোর মাস দুয়েক...”
প্রতিটি শব্দ যেন অদৃশ্য ছুরিকাঘাতে সরলার হৃদয়কে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিল। তার একমাত্র সন্তান অমল। বয়স মাত্র সাত। তিন বছর আগে যখন স্বামী হারিয়ে সর্বস্বান্ত হল সে, তখন থেকেই অমল তার একমাত্র বাঁচার সম্বল। দূরারোগ্য ক্যান্সার যে একদিন অমলের উপর আঘাত হানবে তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি সরলা।
অমলের অনেক দিনের ইচ্ছে সে পাহাড় দেখবে। একটা নীল পাহাড় আর তার উপরে আটকে থাকা একটা লাল সূর্য। ছবি আঁকতে ভালোবাসে অমল। পাহাড়ের সেই ছবি আঁকতে আঁকতে সে পাড়ি দিতে চাইত সেই দূর দেশে বিহঙ্গের মতো ডানা মেলে।
সরলাও মরিয়া হয়ে উঠেছিল ছেলের এই ইচ্ছেটা পূরণ করতে। হয়তো এটাই তার শেষ ইচ্ছে। এমনটা ভেবেই আঁতকে উঠেছিল সে।
চারিপাশ এখন শ্মশানভূমি। প্রান রক্ষার্থে মানুষ গৃহবন্দী, আর সরলার উদ্বিগ্নতা তার সন্তানের একটি স্বপ্ন বাঁচাতে। নিরুপায় সে। জীবনে অনেক লড়ায়ে হার মেনে নেওয়াটাই দস্তুর।
সমাজ একদিন তার ব্যাধি থেকে সেরে উঠবে। বৃহৎ মানবজাতির জয় হবে। কিন্তু অমলের পাহাড়টা বোধহয় আর দেখা হবে না।