Avijit Roy

Children Stories

4.8  

Avijit Roy

Children Stories

সহানুভূতি

সহানুভূতি

7 mins
716


ইঁদুরটি কিন্তু গুনাক্ষরেও ভাবতে পারেনি তাকে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে। তার দুটি সন্তানের জন্য খাবার খোঁজার তাগিদটিই ছিল, নিজের খুদার চাহিদা অপেক্ষা ঢের বেশি। রোজকার নিয়ম মাফিক সে বেড়িয়েছিল খাদ্যের সন্ধানে, তবে আজকের উৎসাহটা ছিল অন্য আর দশটি দিন অপেক্ষা বেশি। সান্যাল বাড়িতে তখন ঘর ভর্তি লোক, উৎসবের মেজাজে। খাদ্য আর সুরার সমাবেশে যাকে বলে রাজভোজ।

আর হবে নাইবা কেন? নামজাদা ব্যবসায়ী অতনু সান্যালের একমাএ মেয়ে পারমিতার একাদশতম জন্মদিন বলে কথা। অসংখ্য গণ্যমান্য ব্যক্তিঅতিথিদের ভিড়ে ইঁদুরটি ছিল অনিমন্ত্রিত। তা হোক। নিজের সন্তানের মুখে একটু সুস্বাদু খাবার তুলে দেওয়ার ইচ্ছে শুধু মাত্র যে মানবজাতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, তা বলাইবাহুল্য। আজকের রাজভোজের পর, কাল আস্তাকুঁড় থেকে মিলবে আরো খাদ্যের ভান্ডার। এমন একটি উজ্জ্বল আশা তার শরীরে যেন শিহরণ বইয়ে দিল।

ইঁদুরটি সকলের নজর বাঁচিয়ে এবং জীবনের ঝুকি নিয়ে ঘরময় খাদ্যের খোঁজে ঘুরতে থাকে। খাবারের প্লেটগুলি ছিল হয় উঁচু টেবিলের উপর রাখা, না হয় অতিথিদের হাতে, তার নাগালের বাইরে। তবে ইঁদুরটি ও হাল ছাড়ার পাত্র নয়। প্রথমে সে একটি পর্দার আড়ালে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নিল, যেখান থেকে সে তার গন্তব্য স্থির করতে পারবে।

সঠিক সুজগের অপেক্ষায় সে বেশ কিছুক্ষণ অতিবাহিত করার পর তার ধৈর্য কিছুটা শিথিল হয়ে এলো। ইঁদুরের পেটেও যে খিদের ইঁদুর ছুটতে পারে তা বোধহয় সে প্রথমবার বুঝতে পারল।


অদূরেই তার নজরে পড়ল রান্নাঘর। একটি অস্বচ্ছ , কালো কাচের দরজা বারংবার খুলছে আর বন্ধ হচ্ছে আর সাদা রঙের বিশেষ পোশাক পরিহিত পুরুষরা সুগন্ধ ছড়িয়ে খাবার নিয়ে প্রবেশ করছে এবং অতিথিদের পরিবেশন পূর্বক সেই দরজার পেছনে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। খাদ্য-ভাড়াড়ের এহেন হদিশ পেয়ে ইঁদুরটি উত্তেজিত হয়ে ওঠে। তার স্মৃতি রোমন্থন করেও এমন একটি নিমন্ত্রণ বাড়ির ভুরিভোজ তার মনে পরল না।

সতর্ক ও মন্থর গতিতে ইঁদুরটি এগিয়ে চলে রান্না ঘরের উদ্দেশ্যে। ভেতরে প্রবেশ করতে তাকে খুব একটা বেগ পেতে হলনা। তখন সে খাদ্যের স্বর্গ রাজ্যে। সমস্যা বাধলো খাদ্য নির্বাচন করতে। তবে আরও একটি বড় সমস্যা ছিল। খাদ্য গুলি এবারও তার নাগালের বাইরে। তবে এবার ইঁদুরটি নাছোড়বান্দা। তার সন্তানের অভুক্ত মুখে খাদ্য তুলে দেওয়ার প্রশ্ন। হাল ছাড়লে চলবে না।

ইঁদুরটি প্রাণপণে চেষ্টা করে টেবিলের উপরে ওঠার। যত প্রকারের অবলম্বন তার পক্ষে উপযোগী মনে হয়েছিল সেগুলি কে ব্যবহার করে অবশেষে সে খাদ্যের দ্বারে পৌঁছায়। তখন তার চোখে মুখে এক বাঁধনহারা আনন্দ। চোখের সামনে খাদ্যের সারি, আর জিভে লালসা। খাদ্যের পাত্র গুলি অর্ধউলঙ্গ। পেট পুরে খেয়ে নেয় সে। হঠাৎ তার নজরে পড়ে টেবিলের উপর শোয়ানো একটি বোতলের উপরে, যার ভেতরে লাল একটি তরল পদার্থ মুখের খুব কাছে এগিয়ে এসেছে।

বোতলের মুখটি খোলা। বোঝা গেল সদ্য কেউ পান করে বোতলটিকে ওই অবস্থায় রেখে গেছে। তখনো ইঁদুরটি জানে না সেটি তার মত একটি নগণ্য প্রাণীর কাছে নিষিদ্ধ পানিও—সুরা। তৃষ্ণার্ত ইঁদুরটি সেটি থেকেই চুক চুক করে কিছুটা সুরা পান করে নেয়। খাদ্যের পর পানীয়টি হল পরিপূরক।

তরলটির কটু স্বাদ যেন তার পেটের নাড়ি গুলিকে টেনে বার করে আনতে চাইল। মানুষের ক্ষেত্রেও যে এমনটা হয় না, তা কিন্তু নয়। প্রথমবার সুরা পানে মানুষের পরিস্থিতি যেমনটি হয়, এই ইঁদুরটির ক্ষেত্রেও কিন্তু তার ব্যতিক্রম হল না। এবার ইঁদুরটির মাতাল হওয়ার পালা। তরলটি আরেকবার পান করার অদম্য ইচ্ছে তাকে পেয়ে বসল। সাহস করে আরও খানিকটা পান করে তার মাথাটি ঝিম হয়ে গেল। চোখের সামনে সবকিছু আবছা হতে শুরু করল। যেন মনে হলো জীবনের তার অনেক লড়াই সহজ হয়ে গেছে।

এমনই একটি বিশেষ আনন্দ নিজের মধ্যে গুপ্ত রেখেই ইঁদুরটি ধীরে ধীরে নেমে এল টেবিলের উপর থেকে। পতনের গতি বেশ কিছুটা বেশি হলেও তার যেন শরীরে কোন আঘাতে লাগলো না, এমনই ছিল তার নেশা। সে রীতিমতো টলতে লাগলো। যদিও চার পায়ের প্রাণীটি ঠিক মুখ থুবড়ে পড়ল না, তথাপি তাঁর চলার গতি অনেকটাই বেপরোয়া হয়ে উঠলো। বারংবার খোলা এবং বন্ধ হওয়া রান্নাঘরের দরজা থেকে তাকে বেরিয়ে আসতে কোনো অসুবিধের মুখে পড়তে হলো না। তারা ক্ষুদ্র আকারটিও তার পক্ষে এক প্রকারের নিরাপত্তার কারণ ছিল। টলতে টলতে চলতে সে এগিয়ে চলতে লাগলো। 

ইঁদুরটি একটি টেবিলের নিচে এসে হাজির হলো যার চারপাশে অসংখ্য পা দেখে বোঝা গেল সকলেই তখন খেতে বসেছে। ইঁদুরটির মধ্যে কিন্তু খাবারের ইচ্ছে অনেকটাই কমে গেছে, তবে তার সন্তানের জন্য খাবার নিয়ে যেতে হবে এই সচেতনতা তখনও উবে যায়নি। 

সন্তানের চিন্তা তারমধ্যে একটি দ্রুততার তাগিদ এনে দিল। তাকে খাবার খুঁজতে হবে। এই বাড়িতে তার আরেকটি ভয়ঙ্কর প্রতিদ্বন্দ্বী ও আছে—হুলো। প্রতিদ্বন্দ্বি অপেক্ষা সে অনেক বেশি শত্রু। হুলো এ বাড়ির পোষা আদরের বেড়াল। সবথেকে বেশি প্রিয় বাড়ির মেয়েটির, পারমিতার। বেশ স্বাস্থবান এবং ইঁদুর খেকো হুলো। তবে একটি বাস্তব হল বিড়াল কিন্তু ইঁদুর খায় না, শুধু খেলার ছলে হত্যা করে।

মালিকের নজরে মূল্যবান হয়ে ওঠার মোক্ষম অস্ত্র।হুলোর মধ্যে ইঁদুরের গন্ধ শোকার এক অসাধারণ ক্ষমতা আছে, যেমনটা সব বিড়ালের থাকে। হুলোর ভয়টি এতক্ষণ এতটা প্রকট ভাবে ছিলনা ইঁদুরটির মধ্যে, তবে এখন যেন তা চড়াও হয়ে উঠল। “যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে সন্ধ্যা হয়”-- প্রবাদটি বোধহয় খুব একটি মিথ্যে নয়। 

হুলোকে অদূরেই আবিষ্কার করা গেল। আকারে ইঁদুরটির তুলনায় প্রায় পাঁচ গুণ বড় বেড়ালটি এতই ভয়ানক যে ইঁদুরটির প্রাণ শুকিয়ে এল। তার বৃহৎ আকারের গোঁফগুলি যেন এক একটি রেডার যা দিয়ে সহজেই ইঁদুররের গতিবিধি সে নির্ধারণ করতে পারে। এক্ষেত্রেও তার ব্যাতিক্রম হলো না। হুলো ঘরে প্রবেশ করেই যেন আন্দাজ করতে পারল ঘরের ভেতর একটি ইঁদুরের উপস্থিতি।

ইঁদুরটির এদিকে প্রাণ ওষ্ঠাগত। খুব সাহস করে পালানোর পথও সে খুঁজে পেল না। নিজের দুর্বল পাগুলির উপরেও তার আর বিশ্বাস নেই। তবে কি বেড়ালের ভয়ানক আক্রমনের কাছে তাকে আত্মসমর্পণ করতে হবে? আপাতত সেটির সম্ভাবনাই বেশি। ইঁদুরটির কিন্তু নেশা কেটে গেছে ভয়ের দাপটে। এবার তার বাঁচার লড়াই।

হুলো ইঁদুর থেকে দেখতে পেয়েছে। যুদ্ধের সৈনিকের মতন ধীরে ধীরে সে এগোতে লাগল ইঁদুরটির উদ্দেশ্যে। ইঁদুরটির চারিদিক পা দিয়ে ঘেরা, যেন সে বন্দী আসামি। হুলোর উদ্দেশ্য স্থির। সে ইঁদুরটিকে ধরবে বলে এগোচ্ছে।

প্রাণপণে ছুটতে গিয়ে ইঁদুরটি একটি পায়ে গিয়ে আঘাত করল। তার বিপত্তি আরো ঘনিয়ে এলো। খাবার টেবিলে চিৎকার আর হুলুস্থুলু পড়ে গেল। সকলে উঠে দাঁড়িয়ে ছোটাছুটি শুরু করল। ইঁদুরটি বিভ্রান্ত। হুলো সুযোগ বুঝে আরো এগিয়ে এসেছি ইঁদুরটির কাছে। সে যেন এক চোর পুলিশের খেলা। 

ইঁদুরটি এবার সকলের নজরে এল। এমন একটি আনন্দ মহলে ইঁদুরটি যেন এক রোমাঞ্চের সৃষ্টি করল। ইঁদুরটি ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পরল। তার ইচ্ছেশক্তি যতই তীব্র হোক না কেনো, তার শরীর এবং নেশাগ্রস্ত পাগুলি তাকে সঙ্গ দিল না।

“বাড়িতে কি ইঁদুর ধরার কল আছে?” কেউ একজন বলে উঠলো। 

সান্যাল ভিড় ঠেলে সামনে এগিয়ে এসে বলল, “না কখনো দরকার পড়েনি। তবে আমাদের হুলো ওই কলের কাজটি করে দিতে পারে। হুলো ওওওওও।”

“না না এখানে আবার রক্তাক্ত কোন কান্ড ঘটাবেন না।” একজন মহিলা ভীড় থেকে বলে উঠলো।

“ভরসা করতে পারেন। হুলো খুবই বিচক্ষণ বেড়াল। ও খুব ভালো করেই জানে কখন কোথায় কী করতে হয়। হুলোওওওও”, মালিক আরেকবার ডাক ছাড়ে।

মালিকের তলব পেয়েই হুলো এক তীব্র ‘মিআওওওউ’ শব্দ করে তার উপস্থিতি জানান দিল। তার ভয়ানক নখগুলিতে তখন যেন সে শান দিতে শুরু করেছে। তার চোখ খুলি লালসায় চকচক করছে। তার দাঁতগুলি যেন আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে রক্তের নেশায়।“

“হুলো, গো এন্ড ক্যাচ দা রাট, বাট ডোন্ট কিল ইট হিয়ার, সান্যাল হুংকার দিয়ে আদেশ দিলো।

ইংরেজিটি বুঝতে না পারলেও হুলো নির্দেশটির উদ্দেশ্য ভালই বুঝতে পারলো। ঝাঁপিয়ে পড়ল সে ইঁদুরটির উদ্দেশ্যে। ইঁদুরটি যেন বিনা লড়াইতেই আত্মসমর্পণ করে দিল। তার কাছে সবকিছু যেন কালো হয়ে গেল। মুহুর্তের মধ্যে সে অনুভব করল দাঁতের আলতো কামড়ের মাঝে সে নিবন্ধ। জীবন আর মৃত্যুর মধ্যে তখন চলছে টানাপোড়েন। হুলোর মুখে ব্যাঙ্গের হাসি। ইঁদুরটি হৃৎস্পন্দন ভয়ে যেন তীব্র হয়ে উঠল।

ইঁদুরটি কিন্তু তখনো জীবিত, তবে শেষ প্রহর গুনছে। তার জীবন এখন শুধুমাত্র গহুলোর দয়ার উপর নির্ভরশীল। কেনই বা সে দয়া দেখাবে? বৃথা আশা যে মরিতে মরিতেও মরে না। 

হুলো খুব ভালো করেই জানত ইঁদুরটির ঘরে সে একা বাস করে না, তার সঙ্গীও থাকে। তবে কখনো চাক্ষুষ করতে পারেনি। এবার সুযোগ এসেছে। সান্যাল বাড়িতে রাজত্ব কায়েম করার উদ্দেশ্যে তাকে ইঁদুরের বংশকে সম্পূর্ণ শেষ করতেই হবে, তবেই এবাড়ির খাদ্যে শুধুই থাকবে তার অধিকার।

ইঁদুর টিকে নিয়ে সে চলল তার ছোট্ট গর্তটির উদ্দেশ্যে, যা ছিল বাড়িটির সিঁড়ির নিচে একটি অন্ধকার কোনায়। গুমোট গন্ধে ভরা স্যাঁতস্যাঁতে জায়গাটি হুলোর খুবই অপছন্দের। 

আগেও বেশ কয়েকবার সে চেষ্টা করেছে ইঁদুরটিকে ধরতে, কিন্তু সক্ষম হয়নি তার ধূর্ততার কাছে। আজ সে স্বর্গ হাতে পেয়েছে। ইঁদুরটির প্রায় নিস্তেজ হয়ে যাওয়া শরীর টিকে নিয়ে হুলো গিয়ে পৌঁছলো তার আস্তানায়। 

ইঁদুর টির ছোট্ট দুটি সন্তান যাদের চোখগুলো তখনো ফোটেনি, চিক চিক করে উঠলো। তাদের সমস্ত শরীরে ক্ষুধার তারণা স্পষ্ট। হুলো ঠিক যেমনটা ভেবে এসেছিল তেমনটা কিন্তু হলো না। ছানা ইঁদুর গুলোকে দেখে তার মনের কোথাও একটু বেদনা দেখা দিল। ছানা ইঁদুরগুলি খাদ্যে তাড়নায় অস্থির হয়ে উঠেছে। খাদ্য ও খাদকের সম্পর্কটি বড়ই অদ্ভুত। সে ভেবে এসেছিল ইঁদুরটির সঙ্গীদের আজ হত্যা করে তবেই সে ঘরে ফিরবে। কিন্তু এত ছোট নিরীহ ছানাগুলি কে মারতে তার মন সায় দিল না।

হুলো আলতো করে ইঁদুরটিকে অক্ষত অবস্থায় তার মুখ থেকে নামিয়ে দিল মেঝের ওপর। ইঁদুরটির তখন ধীরে ধীরে জ্ঞান ফিরেছে। তার নিজেরই হৃদ-স্পন্দনটি তার কাছে অবিশ্বাস্যকর মনে হল। অনিবার্য মৃত্যু থেকে এভাবে রেহাই পাওয়া তার বোধহয় স্বপ্নেরও অতিত। তার সন্তান দুটি তার শরীরের খুব কাছে এসে গন্ধ এবং উষ্ণতা পেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরেছে। পিতা সন্তানের এহেনো ভালোবাসা দেখে হুলো আপ্লুত হল। না তার চোখে হয়তো মানুষের মতন অশ্রু আসেনি। মায়া মমতা যে হুলো কখনোই পায়নি তা নয়। সেওতো তার পিতামাতার থেকে বিচ্ছিন্ন। সান্যাল বাড়ি যতই আদর, খাদ্য, বিলাসিতা পাক না কেন, নিজের পিতামাতার স্নেহর রস থেকে সে বঞ্চিত। তবে কোথাও তার মধ্যে একটি বিবেকবোধ আজকে জেগে উঠেছে। হিংসে কে ছাপিয়ে গেছে মমত্ববোধ ও ভালোবাসা। পিতা-মাতাকে ফিরে পাওয়ার আনন্দে ইঁদুর ছানা দুটি যেনো খাদ্যের কথা একপ্রকার ভুলেই গেছে। তারাও যেন বুঝতে পেরেছে তাদের পিতা কোন এক ভয়ানক বিপদের ফাড়া কাটিয়ে ফিরে এসেছে। তবে সবার অলক্ষ্যে হুলোর আনন্দটাই কিন্তু ছিল সবথেকে বেশি, একটি পরিবারকে এক করে দেওয়ার আনন্দ। এই পারিবারিক সুখের দৃশ্যে সে যেন নিজের পিতা মাতার আশীর্বাদ অনুভব করতে পারল


Rate this content
Log in