UMME ATIA

Drama Others

3  

UMME ATIA

Drama Others

সেরা উপহার

সেরা উপহার

3 mins
207



মিতু অনেক ভালো একটা মেয়ে।



তার গুনাগুন বলতে গেলে, এককথায় কোনো কমতি নেই তার মাঝে, যেমন মেধা তেমন নরম মনের মানুষ একটা।

এত্ত ভালো মেয়ে বুঝি এই সময়ে সচরাচর মেলেনা বললেই চলে।


সে সব কাজই করতে পারে, তার রান্নার হাতও অনেক ভালো।

সুস্বাদু সব রান্নায় সে পারে আর করে ও। তার বাবার খুব আদরের।

ছোট্ট বয়সে মা হারা মিতুর বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেনি একমাত্র মেয়ের ভালোর জন্য। 

কে আসবে এই বাসায় তার মেয়েকে দেখবে কিনা কেমন ব্যবহার হবে এই ভেবে তিনি আর বিয়েই করেননি।

আর মেয়েও এই বয়সেই সব কাজ করে বাসার। 

কিন্তু সমস্য এক জায়গায় সেটা হলো মিতুর গায়ের রং টা কালো। 

এইজন্য তার বিয়ে হয়না।

দেখতে আসে আর কালো দেখে ফিরে চলে যায়। তার গায়ের রংটা একমাত্র কারন তার বিয়ে না হওয়ার। তাছাড়া আর কোন কিচ্ছু নেই যা দেখে অপছন্দ করবে।


মিতু কালো হলে কি হলো তার চেহারায় একটা আলাদা মায়াবী ভাব আছে। যা কেউ খেয়াল না করলে বুঝবেনা।

কিন্তু এইটাই কেউ খেয়াল করেনা। আগেই গায়ের রংটা দেখে চলে যায়। তার চেহারার মায়া আর খুজেই দেখা হয়না। দেখলে হয়তো তারা আর যেতো না ফিরে।


এখন তো কেউ আর মায়া খুজে না উপরের আবরন টাই দেখে শুধু। ভেতরের মনের অনুভূতি টা কেউ আর অনুভব করতে চাইনা।

এভাবেই দিন কাটাতে থাকে, বিয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে কারন ফ্যামিলির ব্যাকগ্রাউন্ড ভালো। কিন্তু মেয়েকে দেখে আর মনে থাকেনা সেসব।

এভাবে মিতুরও অসস্তি লাগে বিনা কারনে সেজে গুজে সবার সামনে পুতুলের মতো বসে থাকা আর তাদের বিভ্রান্তিকর প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া।

তার বাবাও খুব কষ্ট পায়, কিন্তু একমাত্র মেয়ের ভালোর জন্য কিছু বলতে পারেনা। চুপচাপ সহ্য করে যায়।


মিতু ভাবে এইবার আর যাবেনা কারো সামনে। তার বাবাকে না করে দেবে সে।


যেই ভাবা সেই কাজ। যখনই জানতে পারে যে দেখতে আসবে। আবার তাকে প্রতিবারের মতো পুতুল সাজতে হবে হেঁটে দেখাতে হবে কতো কি শুনতে হবে। 

সে আর ভাবতে পারেনা, বাবাকে বলে বাবা আমি আর যাবোনা কারো সামনে, আমার আর ভালো লাগেনা। তুমি ওদেরকে না করে দিও।


তার বাবা মেয়ের এরুপ কথা শুনে মেয়ের দুঃখ বুঝে যায় আর নীরবে চোখের জল ছেড়ে দেয়।


মিতু দেখে দৌড়ে আসে বাবার কাছে, পায়ের কাছে বসে পড়ে আর হাত দুটো ধরে বলে বাবা আমি যাবো

ওদের সামনে তুমি আর কেঁদোনা।


এর পর আগে থেকে বলে দিও। এবার যেহেতু ওরা আসতেই চেয়েছে তাই আর তো না করা যাবেনা।

কেনো বাবা আমিকি থাকতে পারিনা তোমার কাছে। আমারতো কষ্ট হয় তোমায় ছেড়ে যাবো ভাবতে। 


বাবা মেয়ের কান্না পর্ব শেষ হলে তারা উঠে নিজ নিজ কাজে যায়।

সন্ধ্যে বেলা ছেলে আসে দেখতে তবে মাত্র দুজন ছেলে আর ছেলের বাবা।

দেখে তেমন কিছু বলেনা। যাওয়ার আগে ছেলে আলাদা কথা বলতে চাই মেয়ের সাথে। 

তাদেরকে আলাদা রুমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মিতু ভাবে আগের মতোই বিভ্রান্তিকর প্রশ্ন করা হবে তাকে। তাই আগেই বলে দেয় যে কি বলবেন আমি ভার্জিন কিনা তাইতো! 

ছেলে বলে আরে নানা আপনি এসব বলছেন কেনো? আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন, আমি এরকম কিছুই বলবোনা। 

আসলে আমি এইটা বলতে চাচ্ছিলাম যে আমার মা খুব অসুস্থ তাকে একটু দেখবেন শুধু নিজের মায়ের মতো। আর কিছু যাওয়ার নেই আপনার কাছে আমার।


মিতু চুপ করে যায়। এই প্রথম সে অন্য রকম কথা শুনে। কোনো আবদার সমৃদ্ধ কথা। আবেগ মিশ্রিত কথা। এর আগে সে কখনোই শুনেনি এরকম কিছু।


এযে তার পরম পাওয়া। সে এতোটা খুশি হয়ে যায় যে কেঁদে ফেলে। যা ছেলের চোখ এড়ায়না।

সে বলে কি! পারবেননা আমার কথা রাখতে।

মিতু কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলে হুম পারবো।

খুউব পারবো।


এবার ছেলে চলে যায়। তারা চলে যায় কিছু না বলেই। তার বাবা ভাবে হয়তো এবারও আগের মতোই হয়েছে। 







কিছুদিন পর,

আজ মিতুর জন্মদিন। 

মিতু ঘরে একা একা বসে ছিল। তার বাবা বলে একটা পার্সেল এসছে তার নামে। 

মিতু তো অবাক, হঠাৎ কেইবা পাঠালো। সে নিয়ে এসে খুলতে বসলো। 

প্রথমে একটা র‍্যাপিং পেপার দিয়ে মুড়ানো। 

র‍্যাপিং পেপার খুলে একটা বাক্স। বাক্সের ভেতর একটা চিঠি। আর একজোড়া চটি। 

সে অবাকের পর অবাক  হয়। ভাবে সেতো কতো দিন থেকে কোন চটি জুতো পড়েনা। কার এগুলা। 

চিরকুট টা নিয়ে খুলতে থাকে। 

আর খুলে দেখে প্রথমেই লিখা। 

শুভ জন্মদিন। আমার এই ছোট্ট উপহার আপনার কেমন লাগবে জানিনা। আমি কি কিনবো ভেবে পায়নি। মেয়েদের জন্যে কি কিনা উচিত আমি সেসব তো জানিনা। 


আর সেদিন দেখলাম আপনার উঁচু জুতো পরতে অনেক কষ্ট হয়। তারপরও মানুষের জন্য এসব পরেন আপনি। আর এসব পড়া লাগেবেনা।

আপনাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। সত্যি বলতে কি আপনার মায়ায় পড়ে গেছি আমি। খুব শীঘ্রই আপনার বাসায় কথা বলবে আমার বাবা। 

আমার বউ হয়ে এলে আপনাকে আর কোন প্রকার কষ্ট করা লাগবেনা। সব নিজ সুবিধা মতো করবেন। 


অনেক কিছু লিখে ফেললাম। উপহার পছন্দ না হলে বলিয়েন। পরবর্তীতে চেষ্টা করবো ভালো কিছু দেওয়ার। 


আজ এখানেই আমার লিখার সমাপ্তি ঘটাচ্ছি। 

          নিজের খেয়াল রাখবেন। ভালো থাকবেন।




পড়া শেষ করেই মিতু আর চোখের জল ধরে রাখতে পারেনা। হোক না এগুলো জুতো তবু তার কাছেযে খুবই মুল্যবান এক উপহার। 

সেগুলোকে বুকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে। তার সুখের কান্না......




----------★ সমাপ্ত★------



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama