Ashis Guha

Tragedy Crime

3  

Ashis Guha

Tragedy Crime

সেই শীতের রাতে...

সেই শীতের রাতে...

2 mins
270



কনকনে ঠান্ডায় ফুটপাতের বিছানায়, কাঁদুনি ওর মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়েছে। মদন গ্লিসারিন সাবানের বিজ্ঞাপনের ফ্লেক্সটা সরিয়ে বাইরে উকি মেরে দেখে, রাস্তায় পাহারাদারেরা আগুন ধরিয়ে বসে গল্পগুজব করছে।

আগুন পোহানোর লোভে, গুটি গুটি পায়ে পৌঁছে যায় পাহারাদারদের মাঝে, মদনকে দেখে একজন একটা নীল সুতোর কড়া বিড়ি দেয়। বিড়ি ধরিয়ে আগুন পোহানোর আমেজ নিতে নিতে ভাবে, কাঁদুনি আর ওর মাকে ডাকলে ভালো হত, ওরাও শরীরটাকে একটু তাতিয়ে নিত।

ভাবতে ভাবতে চোখটা বুজে আসছে, এমন সময়,

প্রচন্ড গতিতে একটা লাল রঙের গাড়ি এসে মদনের ফুটপাতের বিছানার উপরে গিয়ে উঠে পড়লো, শুধু বউটার একটা মরণ চিৎকার শোনা গেল, মদন আর সাথের পাহারাদাররা ছুটে গেল ফুটপাতে, ততক্ষনে গাড়িটা ফুটপাত থেকে নেমে দুরন্ত গতিতে দূরে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। 

গ্লিসারিন সাবান মাখা হাসি মুখের মেয়েটার ফ্লেক্সটা

 সরাতেই দেখা গেল রক্তাক্ত বউটা তখনো জড়িয়ে রেখেছে কাঁদুনিকে। সব শেষ। পুলিশ আসে, বডি তুলে নিয়ে যায়, প্রাতঃভ্রমনে যারা ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিল সবাই উৎসুক হয়ে দেখে, নাকে রুমাল দিয়ে মোবাইলে ছবি তোলে।

 আজ মদন আর এই সব কোনো কিছুরই খবর রাখেনা।

মদন এখন উন্মাদ পাগল, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা, সব সময় খালি গায়ে ঘুরে বেড়ায় আর কোথাও আগুন দেখলেই বিড়বিড় করে বলে, " আমি আর আগুন পোহাবনা, আমার একদম শীত করে না......."

মদন পাগলা দিনের বেলা পার্কের এক কোনে একটা গাছের তলায় ঘুমায় আর সারারাত জেগে থাকে।

কোথা থেকে একটা বাঁশি জোগাড় করে সারারাত রাস্তায় টহল দেয় আর গাড়ি দেখলেই সমানে বাঁশি বাজাতে থাকে, ফুটপাতে যারা ঘুমিয়ে থাকে, তাদের সাবধান করে দেয়, চিৎকার করে বলে " সাবধান... গাড়ি আসছে......"

শীত আসে শীত যায়, মদনের রাত পাহারা চলতেই থাকে......


মদনের অনেক বয়স হয়েছে, আগের মতো আর জোরে জোরে বাঁশি বাজাতে পারেনা। ফুটপাতের এককোনে হাতে একটা লাঠি নিয়ে সারা রাত বসে থাকে, রাত পাহারার অভ্যেসটা এখনো রয়েছে।

এক রাতে একটা লাল রঙের দামি গাড়ি এসে ফুটপাতের পাশে দাঁড়ায়, গাড়ি থেকে মাঝ বয়সী ভদ্রলোক নেমে এসে মদনকে বলে, " আপনি তো এখানে অনেক কষ্টে থাকেন, চলুন আমার সাথে, আমার বাড়িতে, ওখানে আপনি থাকবেন, আপনার কোনো অসুবিধা হবেনা"। মদন মুচকি হেসে বলে, আমি পাগল হলেও, আপনার এই লাল গাড়িটা চিনতে পেরেছি, এত যুগ পর আমায় ক্ষতি পূরণ দিতে এসেছেন? আমি তো এখন জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছি, আমার কিছুই লাগবেনা, সেদিনের অপরাধের জন্য যদি মনে একটুও কষ্ট অনুভব করেন, তবে কাঁদুনি আর ওর মায়ের আত্মা শান্তি পাবে। দয়া করে এবার আপনি যেতে পারেন, ওদের স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে, আমাকে জীবনের বাকি দিন গুলি কাটাতে দিন।

আমি চাই ওই রকম শীতের রাত যেন, কারোর জীবনে কখনো না আসে…....



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy