শীত আসে শীত যায়-১
শীত আসে শীত যায়-১
এবার ঠান্ডাটা একটু বেশিই পড়েছে। ফুটপাতের বিছানায় হার হিম করা ঠান্ডায় কিছুতেই ঘুম আসছেনা। কাঁদুনি ওর মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়েছে। মদন গ্লিসারিন সাবানের ফ্লেক্সটা সরিয়ে বাইরে উকি মেরে দেখে, রাতের পাহারাদারেরা রাস্তার এক পাশে আগুন ধরিয়ে বসে গল্পগুজব করছে।
আগুন পোহানোর লোভ সামলাতে না পেরে, গুটি গুটি পায়ে পৌঁছে যায় আগুনের কাছে, ওই রাতের পাহারাদারদের মাঝে, মদনকে ওরা সবাই চেনে, তাই হাত বাড়াতেই একজন মদনকে একটা নীল সুতোর কড়া বিড়ি দেয়। বিড়ি ধরিয়ে আগুন পোহানোর আমেজ নিতে নিতে ভাবে, কাঁদুনি আর ওর মাকে ডাকলে ভালো হত, ওরা শরীরটাকে একটু তাতিয়ে নিত আর ঠান্ডার হাত থেকেও বাঁচত।
ভাবতে ভাবতে চোখটা বুজে আসছে, এমন সময়,
প্রচন্ড গতিতে একটা লাল রঙের গাড়ি এসে মদনের ফুটপাতের বিছানার উপরে গিয়ে উঠে পড়লো, শুধু বউটার একটা মরণ চিৎকার শোনা গেল, মদন আর সাথের পাহারাদাররা ছুটে গেল ফুটপাতে, ততক্ষনে গাড়িটা ফুটপাত থেকে নেমে দুরন্ত গতিতে দূরে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।
গ্লিসারিন সাবান মাখা হাসি মুখের মেয়েটার ফ্লেক্সটা
সরাতেই দেখা গেল রক্তাক্ত বউটা তখনো জড়িয়ে রেখেছে কাঁদুনিকে। সব শেষ। এরপর পুলিশ আসে, ডোম বডি তুলে নিয়ে যায়, প্রাতঃভ্রমনে যারা ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিল সবাই উৎসুক হয়ে দেখে, মোবাইলে ছবি তোলে, নাকে রুমাল দিয়ে চলে যায়।
এই সব কোনো কিছুরই খবর রাখেনা মদন।
মদন এখন উন্মাদ পাগল, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা, সব সময় খালি গায়ে ঘুরে বেড়ায় আর কোথাও খোলা জায়গায় আগুন দেখলেই বিড়বিড় করে বলে, " আমি আর আগুন পোহাবনা, আমার একদম শীত করে না......."