স্বস্তির নিঃশ্বাস
স্বস্তির নিঃশ্বাস
অফিসের একটা কাজে বেশ কয়েকদিনের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া গিয়েছিলাম। যখন ট্রেনে করে বাসায় ফিরছিলাম তখন খেয়াল করি ট্রেনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে একটা ২৪-২৫ বছরের ছেলে ফোনে কথা বলছে আর অনবরত একটার পর একটা সিগারেট টানছে। ওর এইভাবে সিগারেট খাওয়া দেখে কেন জানি অনেক বছর পর আমার পুরোনো অভ্যাসটা জেগে উঠলো। ছেলেটার কাছে গিয়ে একটু লাজুক ভঙ্গিতে বললাম,
-- একটা সিগারেট হবে?
ছেলেটা আমার কথা শুনে কিছু না বলে পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা বের করে একটা সিগারেট আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো
আমি সিগারেটে আগুন ধরিয়ে নিকোটিনের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে ছেলেটাকে প্রশ্ন করলাম,
-- কোন কারণে কি টেনশনে আছো?
ছেলেটা শুকনো হাসি হেসে বললো,
-" প্রথমবার মেয়ে নিয়ে পালাবো টেনশন তো একটু হবেই"
হঠাৎ এমন একটা কথা শুনে আমার একটু অবাক হওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু আমি একটুও অবাক হলাম না বরং সিগারেটে একটা লম্বা টান দিয়ে বললাম,
-- মেয়ে কোথায়?
ছেলেটা বললো,
-"অর্পিতা, ময়মনসিংহ রেলস্টেশনে বসে অপেক্ষা করছে। আমি ময়মনসিংহ পৌছালে তারপর দুইজনে একসাথে রংপুরে আমার এক বন্ধুর কাছে চলে যাবো"
আমি হেসে ছেলেটাকে বললাম,
-তোমার অনেক সাহস আছে দেখছি। ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে সব মানুষ পালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে না। কিন্তু এই সাহসটা যদি নিজের পরিবারের মানুষদের সামনে দেখাতে তাহলে কিন্তু আজ পালিয়ে যাওয়া লাগতো না
ছেলেটা তখন বললো,
-" আমাদের কারো পরিবার রাজি হচ্ছিলো না তাই পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি"
আমি তখন সিগারেটের বারতি অংশটা ফেলে দিয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললাম,
--আজ পালিয়ে বন্ধুর কাছে যাবে। বন্ধু তোমায় ৫দিন কিংবা বেশি হলে ১০দিনের দায়িত্ব নিবে। ১১দিনের মাথায় ঠিকিই তোমায় বলবে অন্য ব্যবস্থা করতে। দুজনে সাথে যা টাকা পয়সা নিয়ে যাবে তাতে বড়জোর ১৫-২০দিন বিভিন্ন হোটেলে থেকে আর খাওয়া দাওয়া করে খরচ করে ফেলবে। তারপর বন্ধু বান্ধবের থেকে চেয়ে অনুরোধ করে টাকা ধার করে আরো না হয় ১০ দিনের মতো থাকলে। তারপর কিন্তু তোমার সব পথ বন্ধ হয়ে যাবে। তখন ভালোবাসার মানুষটাকে সাথে নিয়ে না খেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হবে। আর তোমার ঠিক ঐ মুহুর্তে মনে হবে বাসা থেকে পালিয়ে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি। বাবা মাকে আরেকটু বুঝালে হয়তো তারা রাজি হতো
আমার কথাগুলো ছেলেটা শুনে মাথা নিচু করে বললো,
-"তাহলে এখন কি করবো?"
আমি ছেলেটার কাঁধে হাত রেখে বললাম,
--তোমার পছন্দের মানুষটা শতভাগ পারফেক্ট হলেও তোমার পরিবারের লোকজন তার কিছু না কিছু দোষ খুঁজে বের করবে। ওরা নানা ভাবে বুঝাতে চেষ্টা করবে তোমার পছন্দের মানুষটার মাঝে অনেক ক্রুটি আছে। তখন তুমি হাল ছেড়ে না দিয়ে বরং তুমিও তোমার পরিবারের লোকদের বুঝানোর চেষ্টা করতে হবে তোমার জীবনে তোমার পছন্দের মানুষটা কতটা দরকার। তোমার জীবনে তাকে লাগবেই। তখন আবেগে কথা না বলে বুদ্ধিমানের মতো পয়েন্টে পয়েন্টে কথা বলতে হবে
তোমাকে আমার জীবনের একটা ঘটনা বলি,
আমার পরিবারের লোকজন যেদিন জানতে পারলো আমার নিজের পছন্দ করা মেয়ে আছে সেদিনের পর থেকেই সবাই আমার সাথে অন্য রকম ব্যবহার করা শুরু করলো। আমি বাবার চোখের সামনে পড়লেই বাবা অন্যদিকে চোখ সরিয়ে বলতো,
- " নিজে নিজে যেহেতু মেয়ে পছন্দ করে ফেলেছিস তা বিয়েটাও নিজে নিজে করে ফেললেই হয়। আমাদের জানানোর কি দরকার? "
মা আমাকে দেখলেই দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলতো,
-" আমার কি আর সেই ভাগ্য আছে, যে দশটা মেয়ে দেখে একটা মেয়েকে ছেলের বউ হিসাবে পছন্দ করবো। সেই কপাল তো আমার নাই। আমার ছেলে আগে থেকেই প্রেম করে বসে আছে"
আর আমার ভাবী আমাকে দেখলেই আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে কাজের মেয়েটাকে বলতো,
-" শোন, আর কয়েকদিন পর বাসায় রাতে লাইট জ্বালাতে হবে না। আমার দেবর এক হুরপরী পছন্দ করেছে। হুরপরীর রুপের ঝলকানিতে সারাঘর এমনিতেই আলোকিত থাকবে"
আমি তখনো কিন্তু কাউকে কিছুই বলি নি৷ শুধু দাঁতে দাঁত চেপে রেখে সহ্য করেছি সঠিক সময়ের জন্য
একদিন সকালে পরিবারের সবাই মিলে যখন নাস্তা করছিলাম তখন আমি সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলি,
-- তোমরা সবাই আগে আমার পছন্দ করা মেয়েটাকে গিয়ে দেখো। দেখার পর তোমাদের কারো যদি অপছন্দ হয় কিংবা তোমরা যদি মেয়ের কোন দোষ খুঁজে পাও তাহলে আমি কথা দিচ্ছি আমি এই মেয়েকে বিয়ে করবো না।
আমার কথা শুনে সবাই মেয়ে দেখতে যেতে রাখি হলো।
পরদিন আমার সাথে সবাই আমার পছন্দ করা মেয়েকে দেখতে যায়। সবাই দেখে আসার পর যখন আমি জানতে চাই মেয়ে পছন্দ হয়েছে কি না, তখন আমার ভাবী আমার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাকিয়ে বলেছিলো,
-" শুধু ফর্সা হলেই মেয়ে সুন্দর হয় না। চেহারার গঠনও সুন্দর হতে হয়। কলাগাছের মতো লম্বা মেয়ে আর পাটকাঠির মতো শরীর। আমার একটুও ভালো লাগে নি"
আমি ভাবীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলেছিলাম,
--খুব জ্বলে তোমার তাই না? তোমায় যেন একটু লম্বা দেখায় সেজন্য তো ৩ ইঞ্চি উঁচু হাইহিল জুতা পরে সারাক্ষণ ঘুরে বেড়াও। আর একটু ফর্সা হওয়ার জন্য বাজার থেকে আনা ১৪০ টাকা কেজি দরের মুসুরের ডাল, ৫০টাকা কেজি দরের শশা আর ৪০টাকা কেজি দরের আলু সব মুখে ডলতে থাকো সারাদিন। আসলে যার যেটা নাই সেটা যদি সে অন্যের মাঝে খুঁজে পায় তাহলে একটু জ্বলবে এটাই তো স্বাভাবিক তাই না বলো? আর চেহারার দিক দিয়ে যদি বিবেচনা করো তাহলে আমার পছন্দ করা মেয়ের চেহারার মাঝে কিছুটা হলেও বাঙালি ভাব আছে। কিন্তু তোমায় চেহারা তো পুরাই চায়নাদের মতো। ভাইয়া তো আর এমনি এমনি তোমাকে উপজাতি বলে ডাকে না, কারণেই ডাকে
আমার কথা শুনে ছেলেটা হেসে বললো,
-" তারপর কি হলো ভাইয়া?"
তারপর আমি মা'র দিকে তাকিয়ে বললাম,
-- মা, তুমি তো ভাবীকে নিজে পছন্দ করে এনেছিলে। এখন তো দেখি সপ্তাহে ৭দিনের মধ্যে ৫দিনেই তোমরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে বউ-শ্বাশুড়ি ঝগড়া করো। তুমি আমার জন্য যে মেয়েটা পছন্দ করবে সেও যে ভাবীর মতো তোমার সাথে ঝগড়া করবে না তার কি গ্যারান্টি আছে বলো? কিন্তু আমি তোমায় গ্যারান্টি দিচ্ছি আমার পছন্দ করা মেয়ে আমি বেঁচে থাকতে তোমার মুখের উপর কখনো কথা বলবে না
মা আমার কথা শুনে ঐ সময় একদম চুপ হয়ে গিয়েছিলো পাশে তাকিয়ে দেখলাম বাবা গোমড়া মুখে চুপচাপ বসে আছে। আমি বাবার কাছে গিয়ে বলেছিলাম,
-- বাবা, তুমি আমায় জন্ম দিয়েছো। সেই তোমাকে ছাড়া আমি একা কিভাবে বিয়ে করি বলো? বাবা মায়ের শতভাগ অধিকার আছে সন্তানকে নিজেদের পছন্দের পাত্র-পাত্রীর সাথে বিয়ে দেওয়ার। কিন্তু সন্তানের কি অধিকার নেই, যার সাথে সে সারাটা জীবন পার করবে তাকে নিজে পছন্দ করার?
আমার কথা শুনে বাবা আমার মাথায় হাত রেখে হাসি মুখে বলেছিলো,
-" অবশ্যই সন্তানের সে অধিকার আছে। মেয়ে আমার পছন্দ হয়েছে। আমি রাজি"
আমি কথাগুলো বলে যখন ছেলেটার দিকে তাকালাম তখন খেয়াল করি ছেলেটা চোখে পানি টলমল করছে। আমি তখন ওর হাতটা ধরে বলি,
--সবার অভিশাপ নিয়ে নতুন জীবনটা শুরু করো না বরং সবার আশীর্বাদ নিয়ে নতুন জীবনটা শুরু করো....
----
--------
রেলস্টেশনে বসে শ্রাবণী যখন ফেসবুকে সময় পার করছিলো তখন ওর সামনে ২১-২২ বছরের একটা মেয়ে এসে দাঁড়িয়ে ভয়ার্ত কন্ঠে বললো,
-"আপি, আপনার ফোনে একটু কথা বলা যাবে? আমার ফোনের ব্যালেন্স শেষ "
শ্রাবণী ফোনটা দিলে মেয়েটা একটু দূরে গিয়ে ফোনে কথা বলতে লাগল। কথা বলা শেষে মেয়েটা যখন শ্রাবণীকে ফোনটা দিলো তখন শ্রাবণী খেয়াল করলো মেয়েটা কাঁদছে
শ্রাবণী মেয়েটাকে প্রশ্ন করলো,
--কি হয়েছে তোমার?
মেয়েটা চোখের জল লুকানোর চেষ্টা করে বললো,
-"কিছু হয় নি আপি"
শ্রাবণী তখন বললো,
-- তুমি আমাকে তোমার নিজের বড় বোন ভাবতে পারো। বলো তোমার কি হয়েছে? আমার যদি ক্ষমতা থাকে আমি অবশ্যই তোমায় সাহায্য করবো
মেয়েটা তখন কাঁদতে কাঁদতে শ্রাবণীকে বললো,
-"আপি, আমি খালিদ নামের একটা ছেলেকে ভালোবাসি। কিন্তু আমাদের পরিবার রাজি হচ্ছিলো না। তাই আমি বাসা থেকে পালিয়ে ময়মনসিংহ এসেছি আর খালিদও বাসা থেকে পালিয়ে ময়মনসিংহ আসছে। তারপর আমরা দুইজনে অনেক দূরে কোথাও চলে যাবো। কিন্তু এখন বাবা মা'র জন্য খুব খারাপ লাগছে"
মেয়েটার কথা শুনে শ্রাবণী মেয়েটাকে বললো,
--পালিয়ে যাবার আগে আরেকটা বার ভেবে দেখো কাজটা ঠিক করছো কি না। তুমি পালিয়ে গেলে তোমাকে নিয়ে গলির মোড়ের চায়ের দোকানে সমালোচনা হবে। তোমার বাবাকে দেখে মানুষ আড়ালে-সামনে নানা রকম খারাপ মন্তব্য করবে। তুমি ভালো থাকার জন্য ভালোবাসার মানুষটাকে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছো কিন্তু তারজন্য তোমার পরিবারকে সবার চোখে ছোট করে রেখে যাবে এটা তো ঠিক না
শ্রাবণীর কথা শুনে মেয়েটা তখন বললো,
-" তাহলে আমি কি করবো আপি"
শ্রাবণী তখন মেয়েটার হাত ধরে বললো,
--তোমার বাবা মা তোমায় জন্ম দিয়েছেন। ছোট থেকে বড় করেছেন। তাদেরও একটা ইচ্ছে আছে দেখে শুনে ভালো একটা ছেলের হাতে তোমাকে তুলে দেওয়ার। কিন্তু তুমি যদি হুট করে তাদের বলো তুমি অন্য একজনকে ভালোবাসো তখন তোমার পছন্দের ছেলেটা শত ভালো হলেও তাদের রাজি না হওয়াটাই স্বাভাবিক ব্যাপার
তোমাকে আমার জীবনের একটা ঘটনা বলি। আমার পছন্দের মানুষটাকে আর তার পরিবারের সবাইকে দেখে আমার বাবা যখন চিন্তায় পরে যায় সেখানে আমায় বিয়ে দিবে কি না তখন আমার এক ফুফাতো বড়ভাই বাবাকে বলেছিলো,
- "মামা, এই ছেলে আমার পছন্দ হয় নি। আমি বুঝতে পারছি না শ্রাবণী কি করে এমন একটা বেয়াদব ছেলেকে পছন্দ করলো।"
আমি অবাক হয়ে বলেছিলাম,
--ভাইয়া, তুই কাকে বেয়াদব ছেলে বলছিস? পিয়াস তোর সাথে কি এমন করেছে যে বেয়াদব হয়ে গেছে?
তখন আমার ফুফাতো ভাইটা বলেছিলো,
-" ছেলের চুলের কাটিং দেখেই বুঝা যায় ছেলেটা বেয়াদব। লম্বা চুল রেখেছে। তাছাড়া মেয়ে দেখতে এসেছে একটু ফরমাল শার্ট-প্যান্ট পরে আসবে তা না পরে এসেছে টিশার্ট আর কাটাছেঁড়া জিন্স। আরে পোশাক-আশাক দেখেও তো বুঝা যায় কে ভদ্র আর কে অভদ্র "
আমি তখন বলেছিলাম,
--দেখ ভাইয়া কারো চুলের স্টাইল আর জামা কাপড় দেখে চরিত্র বিবেচনা করতে যাস না । সব ফরমাল ড্রেস আর চুল ছোট করে রাখা ছেলে যেমন ভদ্র হয় না তেমনি সব কাটাছিড়া জিন্স পরা আর চুল লম্বা রাখা ছেলেরা অভদ্র হয় না। তাছাড়া তুই তো চুল ছোট রাখিস আর সবসময় ফরমাল ড্রেস পরিস তাহলে তোর বিরুদ্ধে কেন অফিসের মেয়ে কলিগেকে হ্যারাসমেন্টের অভিযোগ উঠেছিলো?"
এই কথা শুনে আমার ফুফাতো ভাই মাথা নিচু করে চলে গিয়েছিলো । কিন্তু তখন আমার ছোট চাচা বাবাকে বলেছিলো,
-"ভাই, আমার কাছেও ছেলেটাকে খুব একটা পছন্দ হয় নি। ছেলে বেসরকারি একটা ফার্মে জব করে। বেসরকারি চাকরির কোন গ্যারান্টি নেই। চাকরি এই আছে আবার এই নেই৷ আমি বলি কি তারচেয়ে বরং তুমি যে ছেলেটাকে আগে পছন্দ করেছিলে তারসাথেই নিজের মেয়ের বিয়ে দাও। ছেলেটা সরকারি জব করে আর বড় ঘরের ছেলে।"
আমি তখন শান্ত গলায় চাচাকে বলেছিলাম,
-"যেখানে রাতে ঘুমানোর পর সকালে ঘুম ভাঙবে কি না সেই গ্যারান্টি আমরা কেউ দিতে পারি না সেখানে চাকরির গ্যারান্টি কে দিবে?
এই কথা শুনে চাচা কিছুটা রেগে গিয়ে আমাকে বলেছিলো,
-" বড়রা কথা বলছে সেখানে তুমি কেন কথা বলছো? তোমার বাবা এখনো বেঁচে আছে। তোমার ভালো মন্দ তোমার বাবা দেখবে। তোমার সেখানে কথা বলতে হবে না"
আমিও তখন চাচার মুখের উপর বলে ফেলেছিলাম,
-" চাচা, কিছু মনে করবেন না, জীবনটা আমার তাই ভালোমন্দ সিদ্ধান্ত আমাকেই নিতে হবে। তাই দয়া করে আপনাদের সিদ্ধান্ত আমার উপর জোর করে চাপিয়ে দিবেন না "
এই বলে আমি আমার নিজের রুমে চলে গেলাম
রুমে বসে যখন একা একাই কাঁদছিলাম তখন মনে হলো কে যেন আমার মাথায় হাত রাখলো। মুখ তুলে তাকিয়ে দেখি বাবা। আমি চোখের কোণে জমে থাকা জলটা মুছে বাবাকে বললাম,
--কিছু বলবে বাবা?
বাবা তখন বলেছিলো,
-" তুই কেন ঐ ছেলেকে এতো ভালোবাসিস?"
আমি সেদিন বাবার চোখে চোখ রেখে বলেছিলাম,
-" কেন এতোটা ভালোবাসি জানি না বাবা। তবে আমি তোমার কাছে থাকলে যতটা নিরাপদ বোধ করি ঠিক ততটাই নিরাপদ বোধ করি পিয়াসের কাছে থাকলে"
আমার কথা শুনে বাবা হেসে বলেছিলো,
-" আমি রাজি মা। তোকে ঐ ছেলের সাথেই আমি বিয়ে দিবো"
শ্রাবণীর কথাগুলো মেয়েটা অবাক হয়ে শুনছিলো। শ্রাবণী তখন মেয়েটারকে বললো,
-- দুইজন দুইজনকে যদি সত্যিকারে ভালোবাসো। আর দুইজন দুইজনকে পাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করো তাহলে দেখবে দিন শেষে তোমরা এক হবেই....
|
|
ট্রেন থেকে নেমে দেখি প্লাটফর্মের এক কোণে শ্রাবণী দাঁড়িয়ে আছে। আমি শ্রাবণীকে দেখে অবাক হয়ে ভাবতে লাগলাম, এই মেয়ে কি নায়িকা পূর্ণিমার লাইন ভার্সন নাকি। দিন যতো যাচ্ছে ততই সুন্দর হচ্ছে
আমি শ্রাবণীর কাছে যেতেই শ্রাবণী বললো,
-" আরো কাছে আসো"
আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে বললাম,
-- কি যে বলো না। এইখানে এইসব কিছু করা যাবে না। আগে বাসায় যায় তারপর
শ্রাবণী রাগে লাল হয়ে বললো,
-" কতোবার বলেছি সিগারেট খাবে না তারপরও আমার আড়ালে সিগারেট খাও? মুখ দিয়ে সমানে সিগারেটের গন্ধ বের হচ্ছে। বাসায় যায় আগে তারপর মজা দেখাচ্ছি".
আমি বুঝে গেছি আমার কপালে আজ দুঃখ আছে। সত্যি বলতে প্রেম করে বিয়ে করলে প্রতিটা পুরুষ হয়তো আমার মতো বউ দ্বারা নির্যাতনের স্বীকার হয়...
|
|
দুইমাস পর....
অর্পিতার ফোন পেয়ে খালিদের সারা শরীর কাঁপতে লাগলো। ভয়ে ভয়ে খালিদ ফোনটা রিসিভ করে হ্যালো বলতেই অপর প্রান্ত থেকে অর্পিতার স্বস্তির নিঃশ্বাস শুনতে পেলো। অর্পিতা অনেক কষ্টে কান্না চেপে রেখে খালিদকে বললো,
" বাবা মা আমাদের বিয়েতে রাজি হয়ে গেছে"
কথাটা শুনার পর খালিদ ফোনটা বুকের মাঝে চেপে ধরে আকাশে দিকে তাকিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো..
আজ সারা শহর জুড়ে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। সেই বৃষ্টিতে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে অনবরত কান্না করছে অর্পিতা। আর বেলকনির সামনের রাস্তাটায় দাঁড়িয়ে আছে খালিদ
অর্পিতা দিকে তাকিয়ে খালিদ ভাবছে,
"প্রিয়, ভালোবাসা আজ কান্না হয়ে ঝড়ে পড়ুক তোমার ঠোঁটে"
খালিদের দিকে তাকিয়ে অর্পিতা ভাবছে,
"প্রিয়, ভালোবাসা আজ বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়ুক তোমার গায়ে"