Mysterious Girl "মিশু"

Abstract Classics Inspirational

3.8  

Mysterious Girl "মিশু"

Abstract Classics Inspirational

সালঙ্কারার শারদীয়া

সালঙ্কারার শারদীয়া

5 mins
354


মাস তিনেক হতে চলল নিজের এমবিএ শেষ করে ঘরে বসে আছে সালঙ্কারা। পড়ার ইচ্ছা ও‌ ঝোঁকের বসে বছর দুই আগে বাবার ফিক্স ডিপোজিট ভেঙে ও এডুকেশন লোন নিয়ে এমবিএ-তে ভর্তি তো হয়ে গেছিল কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এটা করা একেবারেই উচিত হয়নি। পড়াশোনা শেষ করে নিলেও চাকরি জোটাতে পারেনি সালঙ্কারা, এদিকে কিস্তিতে মাসের পর মাস এডুকেশন লোনের সুদ গুণে যেতে হচ্ছে। বাবার চাকরিটাও তো টানা পোড়নে চলছে। শুভেন্দু বাবু চিন্তায় আছেন, যেভাবে অফিসে কর্মচারী ছাঁটাই করে দিচ্ছে তাতে করে উনার চাকরি না চলে যায়! এই ভয়ের আঁচ সালঙ্কারার গায়ে এসেও লাগছে। ও‌ জানে বর্তমান পরিস্থিতি কি। বাড়ির ভাড়া, এডুকেশন লোনের সুদ, রোজকার মূল্যবৃদ্ধি সব যেন ওর বেকারত্বকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে। আগামীকাল আবার পঞ্চমী, পুজো শুরু হতে চলেছে। পুজো নিয়ে মানুষের যে আনন্দ উৎসব তা সালঙ্কারার কাছে এখন বিলাসীতা। ওর এখন একমাত্র ভাবনা উপার্জনের পথ খোঁজা, বাবার উপর এত চাপ দিতে ওর বুকে বাঁধছে। এভাবে ঘরে বসে থাকলে কিছু হবে না, কিছু একটা করতেই হবে এটাই ভাবছে সালঙ্কারা নিজের ঘরের জানলার পাশে বসে। 

সূর্য অস্তাচলের পথে পাড়ি দিয়েছে, সন্ধ্যার আগমণের শঙ্খ ধ্বনি বাজছে তবে এসব কিছুতেই ধ্যান নেই সালঙ্কারার, সে আপন ভাবনায় মত্ত। ওর ধ্যান ভাঙলো রাস্তার এক ফেরিওয়ালার হাক শুনে। চোখ চলে গেল সেই ফেরিওয়ালার দিকে, সে ঝালমুড়ি বিক্রি করছে পথে পথে। তার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কি যে মাথায় এলো কে জানে, সালঙ্কারা ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে এসে মায়ের পাশে বসল। বকুল দেবী সন্ধ্যার পুজো সারছিলেন, মেয়েকে দেখে বললেন, "ঘরে যা, একটু পরেই চা করে দেবো"। 

"মা আমি চা চাইতে আসিনি। বলছি এবার পুজোয় ব্যবসা করলে কেমন হয়?" সালঙ্কারা অনেক আশা নিয়ে বলল। 

- ব্যাবসা? কিসের! 

- তুমি আর আমি যেটা পারি সেটাই করবো। মানে বাঙালি পদ রেঁধে খাওয়াবো মানুষকে। পুজো বলে কথা, ঘরোয়া পদ্ধতিতে তৈরি বাঙালি খাবার খেতে মানুষের ভালো লাগবে নিশ্চিত! 

- কি আজেবাজে বকছিস কি! আমাদের কি হোটেল আরে আছে নাকি যে তুই খাবার সেল করবি? 

- মা তুমি কেন বুঝতে পারছো না, পুজোর সময় তো স্টল পাওয়াই যায় কিনতে, আমরা বরং আমাদের পাড়ার পুজো কমিটির সঙ্গে কথা বলে একটা স্টল নেবো। 

- অনেক ভাড়া নেয় সালু, তাছাড়া কাল থেকে তো পুজো শুরু, এত তাড়াতাড়ি তুই সব ব্যবস্থা করতে পারবি না। 

- সব পারবো। মা গো চলো না চেষ্টা করি, হতেই পারে ভবিষ্যতে একটা রেস্তোরাঁ খুলতে পারবো। 

- উফফ মাঝে মাঝে কি সব ঝোঁক চাপে তোর মাথায় কে জানে! আগে যা গিয়ে দেখ স্টল পাস কি না! আমার মনে হয় এত দিনে সব বুক হয়ে গেছে। 

"আমি দেখছি" বলে ওড়নাটা নিয়ে ছুটে চলে গেল সালঙ্কারা। ভাগ্য বোধহয় সঙ্গী হলো আজ, একটা স্টল আছে যেটা কেউ নেয়নি, সেটা সালঙ্কারা পেতে পারে তবে ভাড়া প্রচুর চাইছে। এই মূহুর্তে অনেক টাকা দিয়ে স্টল নেওয়াটা একপ্রকার অসম্ভব তাই সালঙ্কারা হতাশ হয়ে যখন আশা ছেড়ে দেবে ভাবছিল তখন পুজো কমিটির একজন সদস্য সালঙ্কারাকে কম টাকায় স্টলটা দিয়ে দেয়, যদিওবা তার অন্যতম কারণ সে শুভেন্দু বাবুর ছোটো বেলার বন্ধু। 

রাতে শুভেন্দু বাবু ফিরে আসতে সালঙ্কারা বাবাকে জানায় সে কি উদ্যোগ নিতে চলেছে। শুভেন্দু বাবু বুঝতে পারছেন মেয়েটা এসব করতে চাইছে বাবাকে সাহায্য করতে, তাই তিনি বাঁধা দেননি। মেয়ে হয়ে যদি সে বাবার পাশে দাঁড়াতে চায়, সংসারের দায়িত্ব নিতে চায় তাহলে নিক না, বাঁধা দেওয়ার কি আছে!! 


সারারাত জেগে নিজের খাবারের দোকান খোলার সকল ব্যবস্থা করে ফেলল সালঙ্কারা। কিছু টাকা বাবার থেকে নিয়ে ও বাকিটা টিউশন পড়িয়ে পাওয়া টাকা দিয়ে করেছে সালঙ্কারা। সঙ্গে সাহাযার্থে তো ছিলই ওর মা ও বাবা। মানুষ দুটো সবসময় মেয়েকে সবেতে সাহায্য করেছে, উৎসাহ দিয়েছে। আজও তার কমতি হয়নি। 

আজ তো পঞ্চমী, ভয়ে ভয়ে দুরুদুরু বুকে সালঙ্কারা মা'কে নিয়ে দোকান দিয়েছে, মানুষজনের খাবার খেয়ে ভালো লেগেছে দেখে সালঙ্কারার মধ্যেকার ভয় ও ব্যকুলতা কেটে গেছে। পঞ্চমীর দিন ভীড় কম, লোকজন কম ছিল তবে প্রথম দিনের উপার্জনটা সালঙ্কারার কাছে অনেক। 

আজ ষষ্ঠী, লোকজনের ভালোই ভিড় আছে। মা মেয়ে মিলে দোকান সামলাচ্ছে, শুভেন্দু বাবুও আছেন কারণ উনারও পুজোর ছুটি পড়ে গেছে। হঠাৎ কিছু মানুষের আগমণে সালঙ্কারা হতবাক হয়ে গেল। দোকান ছেড়ে বেরিয়ে এসে নিজের বিস্ময় প্রকাশ করে বলল, "সোমা, দিয়া, আকাশ, মৃন্ময় তোরা এখানে!!" 

সালঙ্কারার তো বিশ্বাস হচ্ছে না ওর এমবিএ কলেজের বন্ধুরা এখানে এসেছে, ওদের সঙ্গে তো কলেজ শেষ হওয়ার পর থেকে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছিল। যদিওবা তার অন্যতম কারণ হলো ওরা বড়লোক মানুষ। ওদের মাঝে নিজেকে সবসময় ছোটো মনে হতো সালঙ্কারার, তবুও বন্ধুত্বের খাতিরে মিশতো। কিন্তু কলেজ শেষ হওয়ার পর আর যোগযোগ রাখেনি। ওদের মতো ঘুরে বেরিয়ে টাকা ওড়ানোর পরিস্থিতি নেই কি না, তাই সেই দল থেকে বেরিয়ে এসেছিল। 

"অবাক হচ্ছিস কেন? তোর কাছেই এসেছি। আরো সবাই আসছে তোর হাতের খাবার খাওয়ার লোভে" মৃন্ময় একগাল হেসে বলল। 

দিয়া প্রশংসা করে বলল, "সত্যি তুই দারুন রান্না করিস। টিফিনে যখন কষা আলুরদম, ক্ষীরের পাটিসাপটা, পোলাও এসব আনতিস তখন তো হাত চেটে খেতাম"। 

"আর আজ তো পুরো দোকান দিয়েছিস, অনেক খেয়ে পেট ফুল করে যাবো" আকাশ মুচকি হেসে বলল। 

সালঙ্কারা অবাক হয়ে বলল, "তোরা কি করে জানলি আমি দোকান দিয়েছি?" 

"আরে কাল আমি ড্যাডের সঙ্গে শপিং করে ফেরার পথে তোদের পাড়ার প্যান্ডেলে ঢুকেছিলাম ঠাকুর দেখতে। তখন তো দেখি তুই দোকানে বসে তোর মমের সঙ্গে। ব্যাস বাকিদের খবর দিয়ে দিলাম, সবাই আজ জমিয়ে খাবো" সোমা বলল। 

"সবাই মানে বুঝতে পারছিস তো! আসছে পুরো ব্যাচ" আকাশের কথা শুনে সালঙ্কারা চমকে উঠল, "পুরো ব্যাচ মানে?" 

"মানে আমাদের গোটা ক্লাস, যদিওবা সবার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে বেশিরভাগ আসবে" বলে দিয়া এগিয়ে চলে গেল দোকানের দিকে। 

সালঙ্কারা নিজের আশ্চর্য দশা কাটিয়ে ছুটে গিয়ে বন্ধুদের পছন্দের খাবার তাদের পরিবেশন করলো। দেখতে দেখতে সময় যত এগোতে লাগলো তত সালঙ্কারার ব্যাচমেটরা আসতে লাগল। সালঙ্কারা তো হতবাক, সত্যি সবাইকে ডেকে এনেছে এরা!! কিন্তু যখন তারা খাবার খেয়ে টাকা দিতে চাইলো তখন সালঙ্কারা এবং ওর মা'ও নিতে চাইলো না। 

সোমা বলল, "তুই এত ভালো খাবার সার্ভ করেছিস, আর টাকা নিবি না! নিতেই হবে"। 

"তোর আমার বন্ধু হস সোমা" সালঙ্কারা একথা বলতেই মৃন্ময় বলল, "এই পড়লি এমবিএ কলেজে! বিজনেসের টাইমে বিজনেসের রুলস আগে, বন্ধু আত্মীয় এসব ভাবলে চলবে না"। 

"তাছাড়া যদি বন্ধুর কথা মাথায় রাখিসও। তাহলে আমরা বলবো আজ আমরা সবাই এসেছি আমাদের এক বন্ধুর নতুন বিজনেসকে সমর্থন করতে, তাকে উৎসাহ দিতে। শুধু মুখের কথায় উৎসাহ নয়, তাকে আর্থিক দিক থেকেও এগিয়ে নিয়ে যেতে" আকাশের কথা শুনে সালঙ্কারার চোখ জোড়া ভিজে উঠল। 

"বন্ধু হয় কি জন্য বলতো! দেখবি তোর বড় রেস্তরাঁ হবে, আমরা কথা দিচ্ছি, তোর সঙ্গে আছি" সোমা জড়িয়ে ধরলো সালঙ্কারাকে। সালঙ্কারার চোখ হতে আবারও জল গড়িয়ে পড়ল, এ অশ্রু আনন্দের। এবছরের পুজো যে এত আনন্দ বয়ে আনবে তা তো কল্পনাও করেনি সালঙ্কারা। 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract