গোপন অভিসারে
গোপন অভিসারে
এই দশদিন হলো আমার কুড়ি বছর পূর্ণ হয়েছে। আর জন্মদিনের পর থেকেই কিসব অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে আমার সঙ্গে, শুনলে হয়তো সবাই ভাববে আমি স্বপ্ন দেখি। তবে আমার মনে হয় না আমি স্বপ্ন দেখছি। মনে হয় সত্যি কেউ আসে আমার কাছে, আমার সঙ্গে সারারাত থাকে। আমি তার উপস্থিতি অনুভব করতে পারি তবে কিছু করতে পারি না। শরীর অসাড় হয়ে থাকে, চোখ খুলে তাকাতেও পারি না। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর নিজেকে খুব ক্লান্ত মনে হয়। খুব ঘুম পায় যেন সারা রাত জেগে ছিলাম, হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা হয়। প্রথম প্রথম মা'কে বলতে মা বলতো আমি হাত পা ছড়িয়ে ঘুমাই তাই গা হাত পা ব্যথা, আর আমি ঘুমকাতুরে বলে ঘুম পাচ্ছে। তবে আমি এই কথা গুলো কিছুতেই মানতে পারছি না।
গতকাল রাতে আমি প্রায় মাঝরাত অবধি জেগে ফেসবুক চালিয়েছি আর সেই জন্য রাতের আগন্তুক খুব রেগে গেছিল। আমি ঘুমানোর পরেই অনুভব করছিলাম আমার গলায় কেউ কামড় বসিয়ে দিয়েছিল তবে সকালে উঠে কোনো দাগ পেলাম না।
আজও রাতে আমি খেয়ে দেয়ে শুয়ে থাকার কিছুক্ষণ এর মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লাম, আবার সেই ঠান্ডা বাতাসটা ছুঁয়ে দিল আমাকে। আমি চেষ্টা করেও চোখ খুলতে পারছি না। হঠাৎ মনে হলো আমাকে কেউ শোয়া থেকে তুলে বসিয়ে দিল বিছানায়, আমি ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকাতে অবাক হয়ে গেলাম। এই ছেলেটা কে? একে তো আমি চিনি না!! আমি কথা বলার চেষ্টা করছি তবে গলা থেকে আওয়াজ বের হচ্ছে না আমার।
আমার কানে ভেসে এলো মধুর পুরুষালী কন্ঠস্বর, "ভয় পেয়ো না মল্লিকা, আমি যে তোমার মেঘালয়", ছেলেটা হেসে বলল।
"মল্লিকা!!! আ... আমার নাম তো সঙ্গমিত্রা" আমি মনে মনে বললাম।
"এটা তোমার পুনর্জন্মের নাম মল্লিকা, গত জন্মে তুমি আমি একে অপরকে ভালোবাসতাম তবে আমাদের দুজনকে মেরে ফেলা হয়েছিল। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি জানো, তুমি আবার জন্ম নিয়েছো দেখে তোমার কাছে চলে এসেছি। তোমাকে ছাড়া থাকতে পারি না তো" মেঘালয় আবেগের সুরে বলল।
"পুনর্জন্ম!!! এও সম্ভব? আর তুমি যদি সত্যি আমাকে ভালবাসো তাহলে রাতে আসো কেন? আর আমার এমন অদ্ভুতই বা লাগছে কেন?" আমি ভয়ে ভয়ে নিজের মনে বললাম।
"আমি তো তোমার মতো মানুষ নই, আমি শুধু মাত্র তোমার জন্য এই পৃথিবীতে আসি। যেদিন তুমি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করবে, সেদিন তোমাকে নিয়ে আমি বহুদূর চলে যাবো" মেঘালয় হেসে বলল।
"তার মানে আমি মরে যাবো? তুমি আমাকে মেরে ফেলবে?" আমি আবার নিজের মনে বললাম।
"না মল্লিকা, তুমি এখানেই থাকবে যতদিন না তোমার আয়ু শেষ হচ্ছে। আমি শুধু রোজ রাতে তোমার কাছে আসবো" মেঘালয় বলল।
এরপর ধীরে ধীরে সব আবছা হয়ে যেতে লাগল, আর আমি তলিয়ে যেতে লাগলাম গভীর ঘুমে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি দেখলাম আমি বিছানায় শুয়ে আছি আর কোথাও কেউ নেই, ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। না, না, এটা স্বপ্ন ছিল না।
সারাদিন টা দিন নানান চিন্তা ভাবনার মধ্যে কাটলো, রাত হতে আমি আবার ঘুমিয়ে পড়লাম আর কিছুক্ষন পর মেঘালয়ের আগমন অনুভব করলাম। সে আমার গলায় ঠোট ছোঁয়াচ্ছে, আমি দুহাত মুঠো করে বিছানার চাদর খাঁমচে ধরলাম। চোখ খোলার চেষ্টা করতে আজ চোখ খুলে তাকাতেও পারলাম, কোনো সমস্যাই হয়নি। তবে আজ আমি সত্যি চোখের সামনে মেঘালয়কে দেখতে পাচ্ছি।
"আর ঘুমের মধ্যে জ্বালাতন করবো না, এবার সরাসরি দেখা হবে" মেঘালয় মুচকি হাসলো।
সে কি সুন্দর তার হাসি, আর মুখটাও অসম্ভব সুন্দর যেন কোনো এক রাজপুত্র। আমি হাত বাড়িয়ে ছোঁয়ার চেষ্টা করলাম, সত্যি আমি ওকে ছুঁতে পারছি।
প্রায় একমাস হয়ে গেছে মেঘালয় প্রতিরাতে আসে আমার কাছে। আমার সঙ্গে কথা বলে, আমাকে ছুঁয়ে দেখে, ভালোবেসে। আমি ধীরে ধীরে ওর মায়ায় জড়িয়ে পড়েছি, ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। আমি জানি না আমি মল্লিকা কি না!! তবে এই সঙ্গমিত্রা মেঘালয়কে খুব ভালোবাসে।
কেউ হয়তো কখনো বিশ্বাস করবে না আমার কথা। ভাববে আমি মানসিক ভাবে অসুস্থ, সবই হয়তো আমার কল্পনার ফসল, তাই আমি কাউকে কখনো বলবো না আমার ভালোবাসার কথা। মনের কোণে গোপনে আমার হয়ে থাকবে মেঘালয়। ওর কথা মতোই আমি ওর সঙ্গে বহুদূর চলে যাবো যখন আমার পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় আসবে। ততদিন না হয় এইভাবেই প্রতিরাতে ওর সঙ্গে আমার গোপন প্রেমালাপ চলুক।