Mysterious Girl "মিশু"

Classics Inspirational Children

3.9  

Mysterious Girl "মিশু"

Classics Inspirational Children

সুশিক্ষা

সুশিক্ষা

3 mins
471


সুমন দুপুরবেলা মা বাবা ও ঠাকুমার সাথে খেতে বসেছে। উমা দেবী খাবার পরিবেশন করলেন সবার জন্য, ছেলের পাতে ডিমটা দিয়ে বললেন, "কিছুটা কুসুম ভেঙে ঠাম্মুকে দেবে"।

সুমন বিরোধীতা করে উঠল, "ঠাম্মুকে দেবে কেন! আমি একা খাবো ডিমটা"।

কথাটা শোনা মাত্রই উমা দেবী হাত থেকে থালাটা নামিয়ে রেখে চটাস করে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিলেন ছেলের গালে। ধমক দিয়ে বললেন, "এখন থেকে একা খেতে শিখে গেছিস!! একটু ভাগ করে খেলে কি তোর পেট খালি রয়ে যাবে?" 

ফুল্লরা দেবী বাঁধা দিয়ে বললেন, "আহ বউমা মেরো না ভর দুপুরে। আমি খাবো না নাতির ভাগের খাবার, ওকে দিয়ে দাও ডিমটা"।

"মা তুমি একদম আস্কারা দেবে না। ওর একা খাওয়া বের করছি আমি, না খাইয়ে রাখবো আজ সারাদিন। অভদ্রের মতো আচরণ একেবারে ছুটিয়ে দেবো" উমা দেবী গর্জে উঠতে সুমন বসা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। রাগ দেখিয়ে বলল, "খাবো না তোমার খাবার, তুমি একাই খাও"।

সুমন দৌড়ে বেরিয়ে চলে গেল। ফুল্লরা দেবী নাতিকে আটকানোর জন্য ডাক দিলেন তবে লাভ হলো না। এবার উনি রেগে গেলেন, "দেখলি স্বপন তোর বউয়ের ব্যবহার দেখলি! নিজের পেটের ছেলেকে কেমন না খাইয়ে উল্টে মারলো! আরে কি হয়েছে যদি একা ডিমটা খায়! ওতো বাচ্চা মানুষ"।

"বাচ্চা!! আজ এই বাচ্চাটাকে শাসন না করলে ভবিষ্যতে সেই অসভ্য হবে। আজ ডিমের ভাগ দিচ্ছে না, আগামীতে আমাদের ভাগ করে ভিটে মাটি কেড়ে আমাদের ফকির করবে। আমি এটা হতে দেবো না, ওকে মানুষের মতো মানুষ হতেই হবে। ওর ভুলগুলো আমি চোখে আঙুল দিয়ে দেখাবো, মারবো প্রয়োজন পড়লে। দেখি ও কত অবাধ্য হতে পারে" উমা দেবী রাগ দেখিয়ে ঠাঁয় বসে রইলেন।

"থাকো তুমি রাগ নিয়ে, আমি গিয়ে দেখি আমার নাতি কই গেলো" ফুল্লরা দেবী উঠে চলে গেলেন।

স্বপন বাবু স্ত্রী'কে বললেন, "আমিও দেখি যাই, তুমি আর রাগ করে থেকো না"।

ফুল্লরা দেবী ও স্বপন বাবু মিলে সারা পাড়া, লোকের বাড়ি বাড়ি খুঁজে ফেললেন তবে সুমনের দেখা পাওয়া গেল না। তারা ভয়ে ভয়ে বাড়ি ফিরলেন, ছেলেটা যে কই গেল!

উমা দেবী এখনও ঠাঁয় বসে আছেন খাবারগুলো নিয়ে। ওদের আসতে দেখে বললেন, "পাওনি তো খুঁজে?"

দু'জনে মাথা নেড়ে না জানালো। উমা দেবী এবার উঠে গিয়ে বাড়ির পিছনের বাগানের আম গাছের সামনে এসে দাঁড়ালেন। সুমন গাছের উপর বসে পা দোলাচ্ছে। স্বপন বাবু ও ফুল্লরা দেবী তো হাঁ; ছেলেটাকে সারা পাড়া খুঁজে এলো, আর এ এখানে বসে আছে?

উমা দেবী তো বিনা মেহনতে ছেলেকে পেয়ে গেছেন, উনি তো জানেন ওনার ছেলের দৌড় কত অবধি। এই ভর দুপুরে সে বাড়ির বাইরে একপা'ও যাবে না এ বিশ্বাস উমা দেবীর ছিলই। ছেলেকে শিখিয়েছেন নিজেই।

"গাছ থেকে নেমে আয় দাদুভাই, খাবি চল" ফুল্লরা দেবী আদর করে ডাকলেন।

সুমনের নজর ওর মায়ের উপর স্থির, উমা দেবীও কঠিন দৃষ্টিতে ছেলেকেই দেখছেন।

"নেমে আয় এখুনি, নয়তো সারাদিন না খাইয়ে রাখবো বলে দিলাম" উমা দেবী আবারও সাবধান করলেন।

ফুল্লরা দেবী এতে বিরক্ত হলেও স্বপন বাবু মিটিমিটি হাসতে লাগলেন।

সুমন আর সময় নষ্ট না করে সুরসুর করে নেমে এলো মায়ের সামনে। উমা দেবী ছেলের হাত ধরে নিয়ে এসে বসালেন। খাবারটা নিজে মেখে খাইয়ে দিতে দিতে বললেন, "ডিম খাওয়া তোর ভাগ্যে নেই, আজ নিরামিষ খা"।

"বউমা..." ফুল্লরা দেবীর কথা শেষ হতে না দিয়ে উমা দেবী বললেন, "মা তুমি কথা বাড়াবে না। ও যখন ভাগ করে খেতে শিখবে না, তখন ওর না খাওয়াই ভালো"।

সুমন মুখ চুন করে মায়ের দিকে তাকিয়ে রইল। স্বপন বাবু এবার বললেন, "কি রে ডিমটা ভাগ করে খাবি নাকি খাবি না?"

"ঠাম্মুকে অর্ধেক দিয়ে দাও" সুমন মাথা নিচু করে বলল।

"কথাটা সবসময় মাথায় রাখবি। একা খাবো, একা পরবো এসব অভ্যাস একদম ভালো নয়। তোকে ভালো মানুষ হতে হবে। ঠিক আছে?" উমা দেবী বলার সঙ্গে সঙ্গে সুমন মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। উমা দেবী বাটির চাঁপা সরিয়ে দুটো ডিম বের করে ছেলের থালায় দিলেন।

ফুল্লরা দেবী তা দেখে বললেন, "এই তো এতগুলো ডিম রান্না করেছো, অকারনেই এত ঝামেলা করলে কেন?"

স্বপন বাবু মুচকি হেসে বললেন, "কি রে বাবু কি বুঝলি?"

সুমন মায়ের হাতে ভাত খেতে খেতে বলল, "খাবার বেশি হোক বা কম, ভাগ করে খেতে হয়"।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics