রঙিন আভা
রঙিন আভা
সুভাষবাবুর গলা শুকিয়ে আসছে। জল খেলেও আবার গলা কাঠের মতো শুষ্ক। আজ পাত্র পক্ষ আসছে মেয়েকে দেখতে। স্বাভাবিকভাবেই, মেয়ের বাবা বলে কথা চিন্তা তো আছেই। এক বড়ো দায়িত্বের পরিণতি হতে চলেছে আজ। সুভাষবাবুর মেয়ে শ্যামবর্ণ, সাজগোজের তেমন বাহার নেই। সাধারণভাবেই সে থাকতে ভালোবাসে। কিন্তু বাবা সব সময় বলে কিছু না হোক লিপস্টিকটা যাতে বাইরে বেড়োলে ঠোঁটৈ দেয়। একবার হয়েছিল কি! গানের পরীক্ষা ছিলো সেদিন। যাওয়ার জন্য মেয়ে আর বাবা দুজনেই তৈরি, বেড়োবে ঠিক এমন সময় দেখল মেয়ের ঠোঁটৈ লিপস্টিক নেয়। ঘরে এসে বলল - " লিপস্টিক হাল্কা করে দাও তারপর যাব"।
আজ মেয়ে আট পৌড়ে শাড়ি পড়েছে। ঠোঁটৈ হাল্কা লিপস্টিক বাবার পছন্দের। পাত্র পক্ষ এক এক করে প্রশ্ন করছে। মেয়ে একটুকুও দ্বিধা বোধ না করে সঠিক উত্তর দিচ্ছে। এদিকে তো মেয়ের বাবা - মা এর ইন্টারভিউ-এর মতো অবস্থা। হাত পা ঠান্ডা। হঠাৎ ছেলের মা বললেন -" এই শাড়ির সঙ্গে তো লাল লিপস্টিক পড়তে পারতে বা আরও একটু ঘন রঙ"। মেয়ে বলল-" বাবার হাল্কা লিপস্টিক পছন্দ। আমার এটা অভ্যাস। আমি এটা বদলাতে চাই না"। সুভাষবাবু এদিকে মেয়ের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে।
বিয়ের দিন ঠিক। সব জোগাড় শেষ। কাল সন্ধ্যা লগ্নে বিয়ে। সুভাাষবাবু ছাদে একা বসে আছে। মেয়ের গলার আওয়াজ পেয়ে হাত থেকে আঁধ খাওয়া সিগারেটটা ফেলে দিলো। মেয়ে সেটা টের পেয়ে বলল -" কাল থেকে আর নিশ্চয় লুকিয়ে খেতে হবে না!"মেয়ের গলা যেন অভিমানে ভরে গেল। বাবা মেয়ের এই নিস্তবদ্ধ বিচ্ছেদের আশ্বাস কেবল তারাই অনুভব করতে পারবে, উপলব্ধি করতে পারবে।
ইতিমধ্যে বিয়ের সব আচার-বিচার শেষ। বিদায়ের সময়ও চৌকাঠে এসে কড়া নাড়ছে। সবার ডাক পড়েছে কনে বিদায়ের বেলায়। বাবা মেয়ে চুপচাপ কোনো কথা নেই। শূধু শরীরে ক্লান্তি আর মুখে মেঘলা বৃৃষ্টির আভাস। পাশ থেকে নতুন বর বলে উঠল -"হাল্কা লিপস্টিকের সাথে ঠৌঁটের হাসিটাও ধরে রাখব বাাবা"। কেউ আর কোনো কথা না বলে জড়িয়ে ধরে অঝড়ে কাঁদতে লাগল। কারোর কান্না থামে না। শূধু মেয়ে বাবাকে বলল - "তোমার কথা রাখব বাবা। বাইরে বেড়োনোর সময় লিপস্টিক মনে করে দিব। কিন্ত তোমার সেটা আর দেখা হবে না। মা মিষ্টি লাগছে তোকে শোনাও হবে না"। বাবা - মেয়ের আর হয়তো এতটা কাছে হয়ে ওঠা হবে না। আর হয়ে উঠবে না।