Samir Das

Abstract Romance Action

3  

Samir Das

Abstract Romance Action

রঙ্গ

রঙ্গ

3 mins
312


আজকে রাহেলার মাথায় তেল দেবে রত্না। রাহেলার অপর তিন বৌমা এই সপ্তাহে তিনবার তেল দিয়েছে। আজকে রত্নার পালা। তার আশ্চর্য লাগে প্রায় সবার কথাবার্তা একই ধরণের। সব বৌমা-ই শেষ পর্যন্ত আলাপচারিতা টেনে নিয়ে যায় তার ভাই রহমানের বাড়ি পর্যন্ত। সংসারে চার ছেলে তার হাতে মাসের হাতখরচ দেয়। সেই টাকা সে কিভাবে খরচ করে, কাকে কত টাকা দিয়ে সাহায্য করে- এইসব জানার কৌতূহল বৌমাগুলোর সীমাহীন। সবাই সন্দেহ করে রাহেলা তার বৃদ্ধ ভাই এর সংসারে অধিকাংশ টাকা দিয়ে দেয়। তবে রাহেলা বোকার মতো ব্যবহার করলেও আসলে সে সম্পূর্ণ সজাগ। সবার চতুরতা মোকাবেলা করে খুব সুক্ষভাবে। 

.

রাহেলা পিঁড়ি পেতে বসেন। সে বৌমাদের চালচলন, কথাবার্তায় বেশ অভ্যস্ত। তাই কে কি প্রশ্ন করবে আর তিনি কিভাবে উত্তর দেবেন সব কিছু আগেভাগে প্রস্তুত করে রাখেন। আর অনেক কিছুই না বুঝার ভাণ করেন। তবে তার ভাই সম্পর্কে কেউ কিছু অসম্মানের ইঙ্গিত দিলে সেগুলোও মোকাবেলা করেন চৌকষভাবে। পাছে তার ছেলে আবার তাকে কিছু না বলে বসে, হাজার হলেও বৌ বলে কথা। 

.

বর্তমান ইস্যু হলো রাহেলা তার ভাইকে একটা গাভী কিনে দিয়েছে। সবাই জানে রহমতের গাভী কেনার সামর্থ্য নাই। এটা নিয়ে বৌমাদের মধ্যে চলছে ব্যাপক কানাঘুষা। সবার একই ধাঁচের কথাবার্তা থেকে সেটা আরো সুস্পষ্ট হয়েছে। 

.

রত্না বেশ শান্তশিষ্টভাবেই তেল দেওয়া শুরু করে। তার ছেলেদের নিয়ে অতিরঞ্জিত প্রশংসা করতে থাকা রত্নার কথাবার্তা রাহেলাকে আরও সতর্ক করে দেয়। প্রশংসা করার ইঙ্গিত মানেই চাটুকারিতা করে তার কাছ থেকে কথা আদায়ের ধান্ধা । কাজের মানুষ, রান্নাবাড়ি, ঘর পরিষ্কার করা ইত্যাদি থেকে আস্তে আস্তে আলাপের বিষয় যেতে থাকে তার মামাশশুড়ের বাড়ির দিকে। 

.

মামার জন্য আমাদের কিছু করা উচিত আম্মা- বলতে থাকে রত্না । আপনার ছেলেরা সবাই মিলে কিছু কিছু করে টাকা দিলেও মানুষটার অনেক বড় সাপোর্ট হতো। 

-[রাহেলা চুপ করে থাকে]

- তাছাড়া একটা গরু দিয়ে আসলে কিছুই হয়না। কয়েকটা গরু থাকলে লাভের মুখ দেখতে পেতেন মামা। 

.

রাহেলা শুনে যেতে থাকে। সে জানে, আসলে রত্নার মনে আছে ভিন্ন বাসনা, আর বাইরে বাইরে লোক দেখানো। গরু সম্পর্কে তথ্য নেয়াটাই তার আসল উদ্দেশ্য। এই ধরণের আদিখ্যেতা দেখানো কোন কথায়ই রাহেলা টোপ গেলেনা। বড্ড অপছন্দ করে। ওদিকে অতি ধুরন্ধর মামা-মামীর কাছ থেকে এক বিন্দু তথ্যও কেও জানতে পারেনাই। তারা সবসমই পাতায় পাতায় চলে। 

.


রাহেলা বুঝতে পারে তার বৌমার তেল দেবার ধরন পাল্টিয়ে যাচ্ছে । প্রথমে যেমন অনেক যত্ন করে আলতো ছোঁয়ায় খুব মোলায়েমভাবে ডলে ডলে তার মাথায় তেল দিচ্ছিলো। সেখানে এখন বেশ ছন্দপতন ঘটছে। মাথার চুলে বেশি টান পড়ছে। নখে আঁচড় লাগা শুরু হয়ে গেছে। 

.

হয়েছে মা। অনেক আরাম পেলাম- বলে সে উঠে যায়। তারপর রান্নাঘরে রাখা কাঁঠালের খোসা আর বিচিগুলোএকটা পলিথিনে সব একসাথে করে বলে, বৌমা বাসায় কি কেউ আছে? কাঁঠালের চুচাগুলো রহমতের গরুকে যদি কেউ দিয়ে আসত ভালো হতো। এসব খেলে গরুর দুধ বেশি হয়। 

.

"আমাকে দেন মা"- বলে পলিথিনের ব্যাগটা নিয়ে রত্না তার মামাশুশুরের বাড়ির দিকে হাটা ধরে। 

.

রাহেলা এখন অতি যত্নে পানের মশলাগুলো এক করে মিষ্টি জর্দা দিয়ে দারুন দুটো পান বানাবে। তারপর দুই ভাই-বোন মিলে গল্প করতে করতে খাবে। সেখানেও বৌমাদের নানান অজুহাতে আনাগোনা বেড়ে যাবে। রাহেলা শুধুই তামাশা দেখে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract