SAYANTANI DHAR CHAKRAVARTI

Horror Classics Children

3  

SAYANTANI DHAR CHAKRAVARTI

Horror Classics Children

রেল লাইনের ধারে

রেল লাইনের ধারে

4 mins
361



অনেকদিন ধরে ভাবছিলাম লিখব লিখব, কিন্তু ওই চাকরী বাকরির চক্করে আর হয়ে ওঠেনি আর কি, তবে বর্তমানে আমি ফ্রি, রিটায়ার করে এখন আমার সুখের জীবন,মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে, আমি আর গিন্নি বহাল তবিয়তে দিন কাটছে আর গিন্নির আবার এই সব দিকে খুব একটা ঝোঁক নেই, তিনি পেশায় শিক্ষিকা, মানে খুব স্ট্রিক্ট শিক্ষিকা। তা সে যাই হোক , এবার কাজের কথায় আসি, আমি শ্রী প্রতাপ চন্দ্র ভট্টাচার্য,থাকি তারাপুর গ্রামে,তবে কলকাতার একটি সরকারী আপিসে পরিবহন বিভাগের কর্মকর্তা ছিলাম, তাই বুঝতেই পারছেন একদম নিচের লেভেল থেকে একদম ওপর পর্যন্ত সব রকম লোকজনদের সাথেই আমার ওঠাবসা। তা সে যাই হোক, এবার আসি গল্পে, সেই ছোটবেলা থেকে এখন অবধি আমার সাথে নানা ছোট বড় ঘটনা ঘটেছে তেনা দের নিয়ে, মা বলতেন আমার তুলা রাশি, রাশ হালকা তাই নাকি আমি এই সব বুঝতে পারি বা অনুভূতি করতে পারি। 


আজ সেগুলোর মধ্যেই একটা গল্প লিপিবদ্ধ করছি। সেদিন ছিল শুক্রবার,এমনিতে আমি প্রতি শুক্রবার আমি বাড়ী ফিরতাম রাতে, তারপর আবার সোমবার ভোরে ফিরে যেতাম কলকাতা,সন্ধ্যে বেলায় আমার স্ত্রী ফোন করে জানালো ওখানে ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়েছে, আমি যেনো পারলে আগের ট্রেনে ফিরে আসি।তবে খুব বেশি আগে না হলেও আগের ট্রেনটা ধরব বলে শিয়ালদায় এসে পৌঁছলাম। বাড়িতে গিন্নিকে জানিয়ে দিলাম আমি আগের ট্রেনে ফিরছি সে যেন বেশি চিন্তা না করে। যদিও ট্রেন শিয়ালদা থেকে আমাদের বাড়ি পৌছাতে সময় লাগে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক, তবে সেদিন একটু বেশি দেরী হয়ে গেছিল, ট্রেনে শুনলাম বৃষ্টির জন্য দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চলছে। যাইহোক, যখন পৌঁছলাম তখন বৃষ্টি থেমে গেছে, তবে কারেন্ট আছে, সেটাই ভালো, তাই ভাবলাম আজ রেল লাইন দিয়েই চলে যাই। সেদিন বলে নয়, আমি সেই ছোটবেলা থেকেই রেল লাইন দিয়ে বাড়ি চলে যেতাম,শর্ট কার্ট হত আর কি, আর তাছাড়া তখন রক্ত গরম,বেশ তাড়াতাড়ি পৌঁছেও যেতাম। 


 


বেশ খানিকটা যেতে, মোটামুটি যখন বাড়ি আর স্টেশনের মাঝখানে পৌঁছেছি, হথাত বিদ্যুতবিভ্রাট। সপ্তাহান্তে ফিরতাম তাই একটু বাজার দোকান করে আনতাম কলকাতা থেকেই, তাই হাতে ব্যাগ, টর্চ টাও বের করতে পারছি না। বাধ্য হয়েই “ জয় মা তারা” বলে এগিয়ে যাচ্ছি।কিছুটা দূরে আমার সামনে এক ভদ্রলোক যাচ্ছে, তিনিও বোধকরি এই ট্রেনেই নামলেন। তবে ওনার বোধহয় কিছু একটা সমস্যা আছে, কেমন একটা থেমে থেমে যাচ্ছেন। অচেনা লোকের সাথে কথা বার্তা আমি সেরকম বলতে ভালবাসি না, তাই আমিও নিজের মত মায়ের নাম জপতে জপতে চলেছি। এমন সময় পিছন থেকে একটা আওয়াজ পেলাম, মনে হল যেন ঠিক আমার পিছন পিছন কেউ আসছে, ভাবলাম আমার মতই কেউ হয়ত ফিরছে বাড়ি, খুব একটা পাত্তা দিলাম না, বেশ কিছুটা পথ যাওয়ার পর, হঠাত পিছন থেকে আওয়াজ এল,


প্রতাপ দা নাকি? 

কেমন জানি খ্যানখ্যানে একটা গলার স্বর, তবে চিনতে পারলাম না গলাটা ।আমি বললুম


হুম..


আপিস থেকে ফিরছ বুঝি?


হুম..


তা আজ এদিক দিয়ে..? 


এবার আমি বিরক্ত হলাম… একেই কারেণ্ট অফ, হাত ভরতি ব্যাগ… তার ওপর প্রশ্ন করে চলেছে। বিরক্ত হয়ে বল্লুম  


কে বাবা তুমি… এত প্রশ্নে তোমার কি?


আমি… আমি তো সুজয় গো… রাম পালের ছেলে…

তবে এর মধ্যেই একটা অদ্ভুত জিনিস লক্ষ্য করলাম, সামনের ব্যাক্তিটি কেমন জানি, আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকাচ্ছে আর প্রানপন চেষ্টা করছে আরও জোরে জোরে হাঁটার। হঠাত মনে পড়ে গেল পৈতের সময় বাবা বলেছিল “ এই পৈতে কখনও গা ছাড়া করবি না, এটাই তোকে সুব বিপদ থেকেরক্ষা করবে”, হয়ত এই পৈতেই আজ আমার কিছু একটা হওয়া থেকে বাঁচিয়ে দিল । তা সে যা পারে হোক গে যাক, সুজয় কে আমি ভালোভাবেই চিনি। আমি অঙ্ক করাতাম ওকে… তাই এবার একটু ভালভাবেই বললাম 


ও তুই..? তুইও ফিরলি নাকি?


আমি ফিরবো কি গো… আমি তো এখন…


বলে কিছুক্ষণ চুপ করে, কি যেন একটা ভেবে বলল


তা তোমার ব্যাগে এতো কী গো? বৌদি মেয়েদের জন্য খাবার দাবার নাকি?

এমন সময় একটা অদ্ভুত জিনিস ঘটল, আমার সামনে যে লোকটা যাচ্ছিল, সে কেমন জানি, নিজের গতিবেগ আরও বাড়িয়ে, একরকম প্রায় দৌড়েই যেন অন্ধকারে মিলিয়ে গেলেন। আমি চুপ দেখে সুজয় আবার জিজ্ঞেস করল


বাবা… বাড়ীর জন্য খাবার নিয়ে জাচ্ছ নাকি প্রতাপ দা?


 


এবার প্রশ্নটা শুনে এবার আমি চুপ করে গেলাম, কারন...একবার ছোটবেলায় মা আমাকে বলেছিল পিছন থেকে যদি কেউ কখনও খাবারের কথা জিজ্ঞেস করে, তাহলে উত্তর দিবি না,চেনা গলা হলেও না, কিছু না পেলে বলবি “ছাই আছে, তোর মুখে দেব?”। সুজয়ের প্রশ্নে আমি এই উত্তরটাই দিলাম। ওর সাথে কথা বলতে বলতে বেশ কাছাকাছি পৌঁছে গেছিলাম। সুজয়ের কাছে এই কথার কোন উত্তর না পেয়ে বাধ্য হয়ে আমিই বললাম


দেখ তোর সাথে কথা বলতে বলতে কেমন পৌঁছে গেলাম? 


হু… তুমি যাও.. আমি পরে ফিরবো..

 


কথাটা শুনে “ আসি তাহলে” বলে রেল লাইন থেকে নেবে বাড়ির পথে হাঁটতে শুরু করলাম আমি। কাছাকাছি এসে পাড়ার মোড়ে একটা জটলা পাকিয়েছে দেখলাম, কিন্তু সারাক্ষন ট্রেনে দাঁড়িয়ে আসা, তারপরে রেললাইন দিয়ে হেটে ফেরা, তার ওপর রাস্তা ঘাটে জল, সব মিলিয়ে আর দাঁড়িয়ে শোনার ইছহে হল না। 

।।২।।

হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসতে বসতে এগারটা বাজল, ডালটা দিয়ে ভাতটা মেখে সবে গালে দিয়েছি, গিন্নি বলল


-পাড়ার খবর শুনেছ?


- কি হল আবার… কার মেয়ে পালালো আবার…” মজা করে বললাম আমি


- আরে ধুস!!


- তোমাদের কাছে খবর মানে তো ওই, কে পালালো, কে ফেল করল...এই সব…


- আরে না না...ধুর এই জন্য কিছু বলতে ইচ্ছে করে না…

ব্যাপার বেগতিক দেখে বললাম ..


-আচ্ছা আচ্ছা বলো…তবে আজ আমারও একটা কাহিনি তোমায় বলার আছে… এক জনের সাথে দেখা হয়েছিল আজ.. সে যেসে লোক নয়...তবে আগে তোমার টা?


-সে কি গো… আবার কিছু হল?


- আগে তুমি বল … তারপর সব বলছি..


- আরে রাম পালের ছোট ছেলেটা, সুজয় আজ দুপুরে রেলে কাটা পরেছে তো…কার সাথে নাকি প্রেম করত, বাপ মা মানেনি… তাই নাকি… মরবি মর, রেলে কাটা পরতে হল!! ট্রেন বন্ধ ও ছিল তো দুপুরে… তার ওপর আবার এই বৃষ্টি... তোমাকে বলব একদম ভুলে গেছি… যাইহোক তুমি আবার আজ রেললাইন দিয়ে আসনি তো??  

গিন্নির কথায় আর উত্তর বেরুল না মুখ থেকে, শুধু বললুম …


- ওই ব্যাগে যা আছে “ একটু গঙ্গাজল ছিটিয়ে তবে তুলো”  



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror