SAYANTANI DHAR CHAKRAVARTI

Drama Inspirational

3  

SAYANTANI DHAR CHAKRAVARTI

Drama Inspirational

খুশি

খুশি

6 mins
313



সকাল থেকে কেনাকাটা সেরে, দৌড়ে এসে ফাইনালি ট্রেনটা পেয়েছে আলিশা, ভাগ্য ভালো একটা সিট পেয়েছে জানালার ধারে কোন রকমে। ট্রেনটা এবার ছাড়বে, ব্যাগ থেকে জলের বোতলটা বের করে সবে জল খাবে, এমন সময়

•মা আমি জানলার ধারে বসবো…

•দাঁড়া আন্টী জল খাচ্ছে তো,খেয়ে নিক আমি রিকয়েস্ট করছি।

•না … তুমি এখনি বলো…

•রোহিনি!! তোমাকে কতবার বলেছি, এক্টূ ভদ্র সভ্য হতে? বড়ো হচ্ছ তো নাকি? সব সময় জেদ?


জলটা খেয়ে আলিশা তাকালো, একটি বাচ্ছা মেয়ে তার মায়ের কাছে বায়না করছে জানলার ধারে বসবে বলে।ট্রেন খালিই ছিল, আলিশা বলল

•এসো এসো… বসো এখানে আমি উল্টো দিকে বসছি…

রোহিনি “থ্যাঙ্ক ইউ আন্টী” বলে জানলার ধারে বসল আর পাশে ওর মা। বাচ্চাটাকে দেখে বেশ ভালো লাগছিলো আলিশার, মনে পড়ছিল ছোট বেলার কথা, ওর ও ছোটবেলায় জানালার ধারে বসতে খুব ভালো লাগতো, মনে হতো যেন আশে পাশের গাছপালা গুলো সরে সরে যাচ্ছে। মামারবাড়ী যাওয়ার সময় তো দাদাভাইকে বসতেই দিত না কোনোদিন । তবে সেই  মামারবাড়ী ও আর নেই আর না আছে দাদাভাই।


ছোটবেলা থেকে কনভেন্টে মানুষ আলিশা, বাবা ছিলেন BDO আর মা ছিলেন শিক্ষিকা, দাদাভাই ওর থেকে মাত্র বছর দুয়েকের বড়। তবে সে বাবা মার কাছেই থাকতো। এরকমই একদিন পুজোর আগে বাবা মা আর দাদাভাই আসছিল আলিশার কাছে দার্জিলিং এ,পুজোর সময় কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। প্রতি বছরই আলিশা ফিরত পুজোর সময় সেই ঈদ কাটিয়ে ফিরত  । তখন ও মাত্র সাত বা আট বছরের হবে, ক্লাস থ্রি। সকাল থেকে বসে আছে আলিশা ওদের অপেক্ষায়, রাত প্রায় সাড়ে দশটা, সব বাচ্চারা ঘুমিয়ে পড়লেও আলিশার চোখে ঘুম নেই। 


•আলিশা বেবী, তুমি এখনও জেগে আছো?

আলিশা ঘুরে তাকাতে দেখলো, মিস ডিসুজা, ওদের ওয়ার্ডেন, খুব ভালোবাসতেন উনি ওকে। 

•No Miss, I'm waiting for Mom and Dad.. they are coming না..!!

•Okay.. my child  come with me.. we will wait Together in my room..

ছোট্ট আলিশা সেদিন বুঝতে পারেনি, কেনো সেদিন রাত্রে ওকে নিজের ঘরে নিয়ে চলে গিয়েছিলেন।তবে পরের দিন সকাল টা ছিল ওর কাছে আরো বিষাদের, যখন মিস ডিসুজা ওকে নিয়ে গিয়েছিলেন থানায়, যেখানে সাদা কাপড়ে ঢাকা অবস্থায় শুয়েছিলেন বাবা, মা আর দাদাভাই। ছোট্ট আলিশা সেদিন বুঝতে পারেনি, ও ঠিক কি হারিয়ে ফেলেছিল।পরে যদিও আলিশা জেনেছিল যে গাড়িতে ওর বাবা মা আসছিলেন সেটা টার্ন নিতে খাদে পড়ে যায় এবং ড্রাইভারসহ ওনারা তিনজনেই মারা যান । তবে তার পর থেকে মিস ডিসুজা ই ছিলেন ওর সব কিছু, উনিই মানুষ করেছেন, আজ আলিশা যাও কিছু হতে পেরেছে সবই ওনার জন্য। আজ আলিশা ওনার কাছেই থাকে, মিস ডিসুজা ও বৃদ্ধ হয়েছেন। আলিশা র কলেজে অ্যাডমিশন এর সময় উনি নিজের সব কিছু ছেড়ে, এমনকি চাকরিটাও ছেড়ে দিয়ে কে নিয়ে চলে আসেন কলকাতায়,শুধুমাত্র আলিশা কে ভালো কলেজে পড়াবে বলে। 


পুরনো কথাগুলো মনে পড়তে চোখটা ঝাপসা হয়ে উঠছিল আলিশার, এমন সময়ই ফোনটা বেজে ওঠে

•হ্যালো বেবী.. টুমি কট ডুর পৌঁছালে?

•মম, আমি এখন সবে বারুইপুর.. এখন ও সময় লাগবে ..

•ওকে.. but today you forget to call me, হামার চিন্তা হচ্ছে..

•Don't worry mom.. I've done all the shopping.. For everyone..like dresses, shoes, chocolates everything..

•I know .. I know my child .. I do have full confidence on you.. 

•Love you mom.. take care.. I'll be back soon ..

•Okay baby.. let me know once you reach.. and স্বামী জীর সাথে ও কথা বলিও.. 

•Sure mom ..

•Bye baby

•Bye mom .. 


ফোনটা রেখে আলিশা খেয়াল করল, ট্রেনটা বেশ খানিকটা ফাঁকা হয়ে গেছে, কিন্তু সামনের বাচ্চাটা আর তার মা এখনও আছে, আর বাচ্চাটা নানা কিছু বায়না করে যাচ্ছে মায়ের কাছে। কেমন জানি বাচ্চাটাকে দেখে বারবার ওর মনে। পড়ে যাচ্ছে নিজের ছোটবেলা র কথা। ব্যাগ থেকে একটা চকলেট বের করে এগিয়ে দিয়ে বাচ্চাটাকে আলিশা বলল 

•এই নাও .. It's for you..

•Thank you aunty..

বলে বাচ্চাটা চকলেট টা খুলে খেতে লাগলে ওর মা বকা দিয়ে বললেন

•আগে হাতটা sanitize করে নাও ..

বাচ্চাটাও মায়ের কথা মত তাই করল। মেয়েকে হাত পরিষ্কার করিয়ে উনি বললেন

•আর বলবেন না, পুজো আসছে .. আর বায়না শুরু.. 

•বাচ্চাদের তো এটাই আনন্দ..

•ওর আনন্দ , আমাদের ঝক্কি ..

কথার মাঝে রোহিনী বলে উঠলো,

•ওই যে হলুদ রঙের প্রজাপতি দেওয়া ড্রেস টা তো কেনাই হলো না..

•হ্যাঁরে.. সব টাকা তো তোমার জামাকাপড়ে দিয়ে দিই.. আর বলবেন না এই মেয়ের বায়না সামলাতে সামলাতে পাগল হয়ে যাচ্ছি..সারাদিন সারা কলকাতা ঘুরিয়েছে আমাকে জানেন..

আলিশা হেসে বলল,

•এই ছোটবেলাতেই তো করবে বলুন, একবার বড় হয়ে গেলে আর কাকেই বা বলবে, বলুন..

•সেটা ঠিক ই বলেছেন .. আপনি ও পুজোয় শপিং সেরে ফিরছেন নাকি? এত ব্যাগ…!!

•হ্যাঁ ওই আরকি …

•একাই গেছিলেন নাকি?

•হ্যাঁ.. এগুলো একাই করি ..

•ভালো.. কতদূর যাবেন আপনি?

•আমি তো এই সামনেই নেমে যাবো, যাবো লক্ষীগঞ্জে..

•লক্ষীগঞ্জ? কোথায় ? ওখানে তো আমার বাপের বাড়ী.. 

•ওহ্.. তাহলে তো আপনি চিনবেন.. ওখানে মা সারদা অনাথ আশ্রম আছে না,

•হ্যাঁ হ্যাঁ .. আমি চিনি, ওখানে তো ছোট্ট করে পুজো হয়, আমরা যেতাম ছোটবেলায় ..

•ওখানেই যাচ্ছি বাচ্চা গুলোর জন্য একটু আধটু জিনিস নিয়ে .. 

•ওহ্.. এগুলো ওদের জন্য.. আমি ভাবলাম আপনার বাড়ির জন্য ..

•বলতে পারেন ওটাও আমার একটা বাড়ী.. সারাবছর তো সেভাবে মানে ...কিছু হয়ে তো ওঠে না তাই একটু…

•না না এটাও অনেক ..আমরাই বা কতটা করতে পারি বলুন..আপনি অনেক ভালো কাজ করছেন .. 

•সেরকম কিছু নয়, actually I just got it from my mom .. মা বলেন,নিজের ইনকামের একটা অংশ সব সময় ওই সব মানুষদের জন্য দেওয়া উচিত, যাদের কে দেওয়ার মত লোক এই পৃথিবীতে খুব কম ই আছে..তাই একটু চেষ্টা করি ওদের জন্য..প্রতিমাসে একটু একটু করে জমানোর চেষ্টা করি..

•বাহ্.. খুব ভালো উদ্যোগ .. আপনি সত্যি খুব ভালো কাজ করছেন.. 

•ধন্যবাদ..

•আজ ই ফিরে যাবেন কলকাতা? 

•হ্যাঁ, রাত্রে...কাজ সেরে ফিরে যাবো.. 

•আমার নম্বর টা রেখে দিন, কখনো কোনো সমস্যা হলে ফোন করবেন .. আমার নাম অমৃতা.. অমৃতা দেব, আমাদের বাড়ি মুকুন্দপুর গ্রামে, এর পরের স্টেশনেই।


কথাটা বলে একটা কাগজে নম্বরটা দিলেন অমৃতা দেবী, ট্রেন ততক্ষণে পৌঁছতে চলেছে আলিশার স্টেশনে। 

•এলাম দিদি,আবার কথা হবে। আমি আমার নম্বর থেকে মিসড কল করে দিচ্ছি ট্রেন থেকে নেবে।আসছি… ভালো থেকো রোহিনী..

•আরে তোমার নামটাই তো জানা হলো না..

•এমা হ্যাঁ তো.. নমস্কার দিদি আমি আলিশা .. আলিশা খান .. 

ট্রেন ততক্ষণে পৌঁছে গেছে আলিশার গন্তব্যে। অমৃতা তাকিয়ে আছে আলিশার দিকে, আলিশা নিজের ব্যাগগুলো নিয়ে মিশে গেলো ভীরের মধ্যে, অমৃতার চোখের কোন থেকে গড়িয়ে পড়ছে জলের ফোঁটা। রোহিনী জিজ্ঞেস করলো

•মা, তুমি কাঁদছো কেনো?

•কাঁদছি না মা .. নতুন জামাগুলো পেয়ে তুমি খুশি তো মা?

•হ্যাঁ মা… খুব খুশি




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama