SAYANTANI DHAR CHAKRAVARTI

Romance Inspirational Others

3  

SAYANTANI DHAR CHAKRAVARTI

Romance Inspirational Others

পরী- নিতা

পরী- নিতা

5 mins
196



।।১।।

ইনফিউসন টা শেষ করতে করতে প্রায় সাড়ে পাঁচটা বেজে গেল, এখন না বেরলে ‘টিউলিপ’ ে পৌছাতে পারব না। আজ প্রায় সাত বছর হয়ে গেল আমি প্রতি শনিবার কফিহাউস আসি,কিছুটা সময় নিজকে দেওয়ার জন্য, এই সময়টা আমার সম্পূর্ণ নিজের, বেশ ভালবাসি আমি এই সময়টাকে।তবে আজ একটু তাড়াতাড়ি ই এসে গেলাম, আসলে সকালে মায়ের ফোনটা আসার পর থেকেই মনটা খুব চঞ্চল হয়ে আছে। পরীকে স্কুলে দিয়ে ক্লিনিকে বেশি পেশেন্ট ও দেখতে পারিনি, কি জানি কেন এমন হচ্ছে।


আমি নন্দিনী, ডাঃ নন্দিনী মুখারজী, পেশার শিশু-চিকিৎসক, পরী আমার মেয়ে, আমি সিঙ্গেল, কলকাতায় আজ প্রায় ১২ বছর হয়ে গেল,একাই থাকতাম তবে এখন আমি আর পরী, তবে মীরা দিদিও আছে আমাদের সব কিছু দেখাশোনা করে, কলকাতায় আসার সময় মা ওকে পাঠিয়েছিল আমার সাথে, তাই আজও রয়ে গেছে, বালিগঞ্জে ২ কামরার একটা ফ্ল্যাটে। সেই এসেছিলাম মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সময়, ইচ্ছে ছিল গ্রামে ফিরে ডাক্তারী করব, তবে তা আর হয়নি, না যাওয়া হয়নি বললে ভুল হবে, আমার মা বাবা-ই চান নি যে আমি ফিরে যাই। তবে আমরা মা-মেয়ে মিলে এখানে বেশ ভালই আছি, কোন চিন্তা নেই।


।।২।।

বেরতে যাব এমন সময় আরও এক পশলা বৃষ্টি, বাধ্য হয়ে আরও একটা ইনফিউশন অর্ডার করে কফিহাউসেই বসে গেলাম। আজ আর ওখানে যাওয়া হবে না, যা বৃষ্টি, ফিরতে রাত হয়ে যাবে, আমার পরী মেঘ ডাকলে বড় ভয় পায়, কাল যাব ওখানে, ফোন করে দেব।‘টিউলিপ” একটা অনাথাশ্রম, পার্কসার্কাসের একটু আগে, প্রতি শনিবার ওখানে যাই বাচ্ছাগুলর জন্য,কেউ অসুস্থ হলে ট্রিটমেন্ট করি আর না হলে এমনই খোঁজখবর নিয়ে আসি, মাঝে মাঝে পরীও যায় আমার সাথে, খুব ভালবাসে ও, ওখানে জেতে।আর তো সেরকম কেউই নেই আমাদের। তাই-ই হয় আজ এত বছর পর মায়ের ফোন পেয়ে অস্থিরতা টা কাটছে না।

সকালে যখন ফোনটা এলতখন প্রায় সকাল ১০টা, আমি আর পরী বেরিয়ে গেছি, ড্রাইভ করছিলাম আমি, মা কথা বলল, বাবাই ধরল না, শুধু বলল ওরা কাল আসছে,আমি আর পরী যেন বাড়িতে থাকি। ওরা কখনই পরীকে চায়নি আর মেনেও নেয় নি বা হয়ত ওকে আপন করতে পারেনি। আর হয়ত ভয়টা আমার সেই জন্যই, যদি ওরা আমার পরীকে আমার থেকে সরিয়ে নেয়। আমার বাবাই যথেষ্ট প্রতিপত্তি সম্পন্ন একজন মানুষ, বাবাই পারেনা এমন কোন কাজ নেই, তাই বোধহয় ভয় টা একটু বেশি।আজ আমি এত ভয় পাছহহি অথচ সেদিন সবার আগে ফোনটা আমি বাবাইকেই করেছিলাম।

।।৩।।

দিনটা ছিল ১৫ই জানুয়ারী, ওই মারাত্মক শীতেও এদিন বৃষ্টির রাতছিল, আমি ফিরছিলাম হসপিটাল থেকে, বালিগঞ্জে যখন ট্রেন থেকে নামলাম রাত তখন ১১ঃ১০-১৫ হবে, রাস্তায় একটা রিক্সা নেই, ইতিমধ্যে রাতুল তিন তিনবার ফোন করেছে, তখন আমি ও.টি. তে, একবার ফোন করেছিলাম ধরেনি, বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছিল। রাতুল আমার স্কুলফ্রেন্ড পরে বয়ফ্রেন্ড হয়েছিল, ও চাকরীসুত্রে চেন্নাইতে থাকত। বৃষ্টি আস্তে আস্তে বেশ জোরে চলে এল, বাধ্য হয়ে একটা শেডে্র তলায় গিয়ে দাঁড়ালাম আমি, লক্ষ্য করলাম কোথা থেকে যেন একটা কান্না মিশানো গোঙানির আওয়াজ আসছে, আওয়াজ লক্ষ্য করে গিয়ে দেখলাম একজন অবিবাহিত গর্ভবতী মেয়ে প্রসবযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে, কে যেন ওকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে গেছে, অনেক কষ্ট করে শেডের তলায় আনলাম ওকে, আস্তে আস্তে জল খাওয়ানোর চেস্টাও করলাম, কিন্তু ধীরে ধীরে ওর অবস্থার অবনতি হছহিল আর আমই কিছুই করতে পারছিলাম না, এমন সময়ে ওখান দিয়ে একটি গাড়ী পার হচ্ছিল, অনেক কস্টে তাকে দাঁড় করালাম, ওই ভদ্রলোকের সাহায্যে ওকে হাসপাতালে নিয়ে গেছিলাম,তবে সে রাত্রে ওই মেয়েকে আমরা বাঁচাতে পারিনি,তবে যাকে পেরেছিলাম সেই-ই আমার পরী।সেদিন রাত টা হসপিটালে থেকে পরদিন সকালে বাড়ী ফিরেছিলাম। সেবারে গ্রামে আর যাওয়া হয়নি। এক সপ্তাহ পরে রাতুলের আসার কথা ছিল কলকাতায়। সেদিন আর আমি ওকে আনতে যেতে পারিনি, ৭ দিনের ছোট্ট পরীকে রেখে আমি কিভাবেই জেতাম।কিন্তু রাতুল ফিরে সব শুনে এক সুন্দর অবিস্বাসের নজির দিয়ে গেল, পরীর পিতৃপরিচয় জানার অজুহাতে খুলে দিল ভালবাসার বাঁধনটা।পরীকে নিয়ে প্রায় ২ মাস পরে ফিরেছিলাম বাড়ীতে, বাড়ীর সবাই-ও সেই একই অজুহাতে ফিরিয়ে দিয়েছিল আমায়, সত্যিটা মানার মত কেউ ছিল তখন, একমাত্র প্রিয়ব্রত ছাড়া। প্রিয়ব্রত রায়, সেদিন রাতের দেবদূত, উনি পেশায় উকিল তাই পরীর যাবতীয় আইনী কাগজপত্র সব উনিই রেডি করে দিইয়েছিলেন। পরীর আরও একজন আপন জন আছে আমি ছাড়া, ওর পিউ আঙ্কেল, যে নিয়মিত খোঁজ নেয় , আর যদি পরীকে দেখতে ইচ্ছে হলে আমরা আজও বাইরে দেখা করি, উনি আসেননা এখানে, আসেননা আমার দুর্নামের ভয়ে।

।।৪।।

 সময়টা যেন আজ সকাল থেকে একটু তাড়াতাড়ি কাটছে, মনের মধ্যে যেন তোলপাড় হচ্ছে। পরীকে ব্রেকফাস্ট খাওয়াতে খাওয়াতে বাইরে থেকে গাড়ীর আওয়াজ এল, গিয়ে দেখলাম একটা নয় দু দুটো গাড়ী। দুটোই আমার চেনা, একটা বাবাই এর আর একটা প্রিয়ব্রত বাবুর গাড়ী। বাবা মার আসাটা প্রেডিক্টেড ছিল কিন্তু প্রিয়ব্রতবাবুর টা আকস্মিক।বাবাই-মা কে প্রনাম করে বসালাম, মীরা দিও প্রনাম করে একটু জল-খাবার আনতে গেল। পরীও ছুটে গিয়ে উঠল প্রিয়ব্রতবাবুর কোলে। আজ মা-রা প্রথম আমার পরীকে দেখল, পরীতো ওদের চেনে না তাই চুপ করেই ছিল। নিজেদের মধ্যে বেশ কিছুক্ষন কথা বার্তা চলার পর বুঝতে পারলাম, প্রিয়ব্রত বাবুর সাথে মা-বাবাই এর খুব ভালোভাবে যোগাযোগ আছে, তবে কিভাবে ঠিক বুঝলাম না, হঠাত-ই বাবাই আমাকে বলে উঠলেন

-“দেখ, এতদিন বাদে তোমার বিষয়ে আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি,আর আমরা চাই তুমি এটা মানো,

-“বল, সেরকমকিছু হলে নিশ্চই মানব” বললাম আমি

-“তুমি বিয়ে কর, এভাবে জীবন চলেনা, আমরা তোমার জন্য পাত্র দেখেছি”

-“না বাবাই তা হয় না, আমি পরীকে ছারব না, আমার পক্ষে এ বিয়ে সম্ভব নয়” বাবাই-এর কথার মাঝেই প্রায় গর্জে উঠলাম আমি।

-“আমরা সেকথা বলিনি.......

কথাটা “কথা কাটাকাটির’ দিকে যাচ্ছে দেখে প্রিয়ব্রতবাবু বললেন-

-“আমার আপনার সাথে কিছু কথা আছে, একটু বাইরে আসুন”

ওনার কথা মত বেরিয়ে এলাম আমি,বাইরে এসে ব্যালকনির চেয়ারটায় বসলাম দুজনে,

-“আমি পরীকে ছারব না, মা বাবাই এটা আমার সাথে কিভাবে করছে, আর আপনি, আপনি কিভাবে মানছেন এগুলো, আপনি তো সব জানেন, এর পরেও......” –

-“হ্যাঁ, জানি বলেই বলছি, আমি পরীর বাবা হতে চাই, বিয়ে করবেন আমায়?”


।।৫।।

আজ ফিরতে ফিরতে প্রায় ১০টা হয়ে গেল, সেই আগের মত আমরা সবাই ডিনারে গিয়েছিলাম মা, বাবাই, পরী, আমি, প্রিয়ব্রত আর মীরা দি ও। পরীর মধ্যে আজ নিজেকে দেখছিলাম আমি, মা-বাবাইকে ও একদিনেই আপন করে নিয়েছে, আর ওরাও, মীরা দি ও খুব খুশী আজ। মা বাবাই বেশ কিছুদএন এখানেই থাকবেন, বাবাই এর একটু চেক-আপের প্রয়োজন। আগামী পরশু আমাদের রেজিস্ট্রি আর সামনের মাসেই বিয়ে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance