প্রয়োজন শেষ
প্রয়োজন শেষ
দূর্গা পুজোর শেষ দিন আজ, বিষন্ন মন নীলার। দশমীর যাত্রা থেকে শুরু করে ভুরিভোজের সবরকম আয়োজন সে একা হাতেই সামলেছে। চারদিক থেকে শুভ বিজয়ার বার্তা বয়ে আসছে, কখনও ফোন কলে কিংবা হোয়াটস্ অ্যাপ ম্যাসেনজারে। তবে কোনোটাই তার জন্যে নয়। তার গৃহাঙ্গন ও আজ আলোকিত। ননদ, ননদাই, ফুচকা আর চমচম ওরা এসেছে, বিজয়া সারতে। না না, নীলার সাথে তো ওরা কেউ মুখের কথাটুকুও বলে না। নীলা শুধু প্রয়োজন মেটানোর মেশিন। ফুচকা আর চমচমের জন্মের সময়, নিজের রক্ত দেওয়া থেকে শুরু করে, রুমা ও তার যমজ সন্তানদের যত্ন, কী না করেছে নীলা! ভেবেছিলো মা হওয়ার অক্ষমতার যন্ত্রনা, অপমান, সবকিছু ভুলে থাকবে এই ফুটফুটে শিশুগুলো কে নিয়ে। কিন্ত এখন যে নীলাকে আর কারোর প্রয়োজন নেই! সবকিছু ভুলে, সবার মতো ওরাও তো আজ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ওর দিক থেকে। বিয়ের আগে, সুখের সংসারের কতো সপ্নই না দেখিয়েছিল রনীত তাকে। কিন্তু এখন সবটুকুই তার নূতন বান্ধবী শ্রাবনীর জন্য। 'প্রেমিকা' শব্দটা নীলা আজ ও মানতে পারছেনা। শ্রাবনীও আজ এসেছে তাদের বাড়ীতে। সবাই মিলে অনেক হই হুল্লোর করছে রনীতের ঘরে। বারান্দার মেঝেতে বসে, ভেসে আসা আওয়াজ গুলো অসহ্য লাগছিল নীলার কানে। তাই উঠে সে রাস্তায় বেড়িয়ে পড়ে আপন মনে। ঘাটের ধারে ফেলে রাখা মায়ের মূর্তির টুকরো গুলোর মতন, তারও প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে আজ! ওখানে বসে বসে সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন যে অন্ধকার হয়ে এসেছে বুঝতেই পারেনি। না,আর নয়! চোখের জল মুছে, এবার উঠে দাঁড়ালো নীলা। জীবনটাই তো ভাঙ্গা-গড়ার খেলা। নিজের এই ভাঙ্গা জীবনটাকেও আবার নূতন করে গড়ে তুলতে হবে। এবার আর মানুষের প্রয়োজন হয়ে নয়, প্রিয়জন হয়েই বাঁচবে সে!