প্রতিশোধ
প্রতিশোধ
গ্রামের সুশ্রী এক মেয়ে। যার নাম আফসানা। সাজ-সকালে গ্রামের সবুজ মাঠে মুক্ত হরিণের ন্যায় ছুটে বেড়ানো যার কাজ। চুলের ভাজে গাধা ফুলের মালা গাথা, যার অনুপম গন্ধে ভরে যেত বাতাস। আফসানাকে দেখার জন্য রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে একটি ছেলে। তার নাম নূর। হালকা গড়নের এলোমেলো চুল। আফাসানা দস্যি মেয়ের মতো ছুটে চলে, আর নূর তা দাঁড়িয়ে চুপ করে দেখে। কিছুই বলতে পারে না। নূর যে আফসানাকে কখন ভালোবেসে ফেলেছে তা সে নিজেও জানে না। আফাসানাও লক্ষ্য করে দেখেছে বিষয়টা। তাই একদা বিকালে আফসানা নিজেই নূর এর দিকে এগিয়ে আসে। নুর কাছ থেকে আফসানাকে দেখে কল্পনার জগতে হারিয়ে যায়। তার(নূর) মনে হয় যেন বেহেশত থেকে হুর-বালা জমিনে নেমে এসেছে। আফসানা তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু নূর এর সে দিকে কোন খেয়াল নেই। হটাৎ আফসানার ধাক্কায় তার চেতনা ফিরে। আফসানাকে কাছে দেখে সে কিংকর্তব্যবিম্ঢ় হয়ে যায়। আফসানা নুরের চাহনি দেখে বুঝে ফেলে যে, নূর তাকে পছন্দ করে। কিন্তু সে নূর এর মুখে শুনতে চাচ্ছিল। তাই সে(আফসানা) নূর কে জিগাসা করে, কি হলো আপনার? নূর বলে কোই না তো। কিন্তু এত বড় সুযোগ পেয়েও নূর সাহস করে আফসানাকে আসল কথা বলতে পারে না। সেদিন এর মতো ওরা বাড়ি চলে যায়। আবার পরের দিন তারা আবার এক সাথে ঘুরে গল্প করে। এইভাবে ঘুরতে ঘুরতে একদিন তাদের মাঝে মাঝে ভাব-ভালোবাসা হয়ে যায়।
আফসানা-নূর তারা উচ্চ-মাধ্যমিকের গন্ডি বেড়িয়ে স্নাতক এ চলে আসে। দুজন খুব মেধাবী শিক্ষার্থী। নূর সিএসই তে পড়ে আর আফসানা ফোকলোর স্টাডিজ এ । আফসানা এর পিতা একজন ক্ষুদ্র ফল ব্যাবসায়ী অপর দিকে নূর এর পিতা শিক্ষকতা করেন। তাদের দুজনের পারিবারিক বৈষম্য তাদের এক হতে দিচ্ছিল না। নূর জানে তার পরিবার কোন দিন আফসানাকে মেনে নিবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের মেধা মনন দিয়ে ক্যাম্পাসের ছাত্র শিক্ষক বন্ধু সকলের মন জয় করে নেয়। কিন্তু নূর এর মনে সব সময় একটা ভয় কাজ করে, এই বুঝি আফসানা কে হারিয়ে ফেললাম। নূর তার মনের কষ্ট কাওকে বুঝতে দেয় না।
ওই দিকে আফসানাকেও বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল। একেরপর এক ছেলে আনতেছিল, সে সব ছেলেকে বিদায় করতে করতে আফসানা হাপিয়ে উঠেছিল। অবশেষে একটা ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায়।আফসানার বরের নাম মশিউর রহমান। তিনি পেশায় একজন ডিপ্লোমা প্রকৌশলী। একটা বেসরকারি কম্পানিতে সাইবার এক্সপার্ট হিসাবে কর্মরত আছেন। তার যে বিয়ে হয়ে গেছে এ কথা নূর অনেক পরে তার(আফসানা) অন্য এক বান্ধবীর মাধ্যমে জানতে পারে। নূরের বুক ফেটে যায় কিন্তু নূর তা কাউকে বুঝতে দেয় না। রাতের আকাশ আর বালিশ জানে নূরের বুকের ব্যাথা। অশ্রুতে বালিশ ভিজে একাকার হয়ে যায়। কিন্তু বিয়ের পরে আফসানা একটি বারের জন্য তার ভালোবাসার মানুষ কেমন আছে এটা জানার চেষ্টা করে না। ক্যাম্পাসে নূর এর সাথে দেখা হলে দূর থেকে সরে চলে যায়।
আফসানাকে হারিয়ে নূর তার ছন্দ হারিয়েছে। বন্ধুবান্ধব আর তার হাস্যজ্জল চেহারা দেখতে পারে না। বছর দেড়েক পরে হটাৎ একদিন আফসানা ফুটফুটে একটা বাচ্চাকে নূর এর কোলে তুলে দেয় আর বলে তোমার ভাগ্নে কেমন হয়েছে?। কথাটা নূরের বুকে তীরের মতো বিদ্ধ হয়। নুরের কাছে মনে হয় কেউ যেন খঞ্জর দিয়ে তার কলিজা এলোমেলো করতেছে। যে বাচ্চাটির পিতা তার হওয়ার কথা ছিল আজ সেই বাচ্চাটির মামা সে। নুর মনে মনে কল্পনা করে সে আফসানার প্রতিশোধ নিব। এই বিষয়ে পরামর্শের জন্য তার বন্ধু সাফওয়ান এর সাথে দেখা করে।
সাফওয়ান তাকে পরামর্শ দেয়, “সে তোমার মন ভেংগেছে এখন তুমি তার মন গড়ে প্রতিশোধ নাও” এর থেকে বড় প্রতিশোধ হয় না। নূর তখন প্রচুর পড়াশোনা গবেষণা করে। অনেক কষ্ট করে সে একটা আইটি ফার্ম গড়ে তোলে।আইটি ফার্মের নাম রাখে “আফসানা আইটি ফার্ম”। তার আইটি ফার্ম ধীরে ধীরে অনেক বড় হয়ে যায়। তার আইটি ফার্মে অনেক মানুষ চাকরি তাদের জীবিকা নির্বাহ করতেছে। নূর তার কম্পানিতে কিছু সাইবার এক্সপার্ট নিয়োগ দিবে। বেশ কিছু দরখাস্ত পায়, সেখানে সে মশিউর রহমান নামের একজনের দরখাস্ত থাকে এবং তাকেই নূর চুড়ান্ত হিসাবে সিলেক্ট করে। কিন্তু তখনও নূর জানত না যে, এই নূর তার প্রাক্তন এর বর।
মশিউর সাহেব খুব একনিষ্টতার সাথে কাজ করতে থাকেন। মশিউর সাহেব তার মেয়ের জন্মদিনে তার বস নূর কে দাওয়াত দেয়। নূর সেখানে যায় এবং জানতে পারে এটাই তার প্রাক্তন এর বর। নূর এই অগ্রগতী দেখে সে থ খেয়ে যায়। আজ যার জন্য নূরকে ছেড়ে এসেছিল সে আজ নূর এর অধিনস্ত কর্মকর্তা। আফসানা সে দিন অনুতপ্ত হয় তার চেহারা অশ্রু সিক্ত হয়ে যায় কিন্তু তার আর শুধরানোর সুযোগ ছিল না। আফসানা যে নূরকে সরি বলবে তারও কোন সুযোগ নেই আজ। তার এই খারাপ অবস্থার জন্য সে নিজেই দায়ি। সেদিন এমন না করলেও পারত। নূর মনে মনে সাফওয়ানকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফিরে এলো।