STORYMIRROR

Md Nazmus Sakib

Classics

4  

Md Nazmus Sakib

Classics

ভালোবাসার উপখ্যান

ভালোবাসার উপখ্যান

4 mins
423

ভালোবাসার উপখ্যান

ঝিনাইদহ জেলার হলিধানি বাজার; গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে রাস্তার এক কোনে গাড়ির অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছে রূপসি দেখতে একটা অপরূপ সুন্দর একটা মেয়ে। নাম তাঁর তানিয়া। সে ২০২১ সালে মাধ্যমিক পাশ করেছে। সন্ধ্যা ৭ টা চার দিকে অন্ধকার। কোন গাড়ির দেখা নেই। কি করবে ভাবে পাচ্ছে না। হটাৎ তাঁর মনে হলো আরে আমার বয়ফ্রেন্ডের তো বাইক আছে। তাহলে তাকে একটা ফোন করে দেখি। যেইভাবা সেইকাজ বয়ফ্রেন্ড মাহমুদকে ফোন করে বসল তানিয়া। আর গার্লফ্রেন্ড এর ফোন পেয়ে আসবে না। এমন দুঃসাহস বাঙ্গালী বয়ফ্রেন্ড এর আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না। সে যাইহোক ফোন পাওয়া মাত্র দ্রুত গতীতে ছুটে আসে মাহমুদ। হ্যাঁ, বলতে ভুলে গিয়েছিলাম তানিয়ার বয়ফ্রেন্ড এর নাম মাহমুদ।

গার্লফ্রেন্ড কে পিক করে তাঁর বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে আসে। মাহমুদ তানিয়াকে বড্ড ভালোবাসে। তাকে ছাড়া মাহমুদের একটি মুহুর্তও কাটে না। তানিয়াও মাহমুদকে ভালোবাসে কিন্তু একটা ঘাপলা আছে। মাহমুদ তানিয়াকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। এই বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তানিয়ার তাঁর প্রতি নেই কোন কৃতজ্ঞতাবোধ। বাসা তে প্রবেশ করেই সে ম্যাসেঞ্জার নিয়ে বসল। সেখানে তাঁর নব্য বয়ফ্রেন্ড তানভির এর সাথে প্রেমালাপ শুরু করে দিলো। তানভির সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড রোবটিক্স নিয়ে পড়াশোনা করে। ফেসবুকে তাদের পরিচয়। এমন ভালো ছেলেকে হাত ছাড়া করতে চায় নাই। অপরদিকে মাহমুদ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে পড়ে। দুজনের তুলনায় তানভির এগিয়ে এজন্য এখন তানিয়ার মন তানভিরের দিকে ঝুঁকে আছে। আবার ৩ বছরের রিলেশন এটাকেও ছাড়তে পারে না। তাই সে এখানে একটা বুদ্ধি খাটালো। দুজনকেই বলে দিল যে, বিসিএস ক্যাডার না হলে আমি বিয়ে করতে পারব না। আর সে মনে মনে ঠিক করে নিলো দুজনের মধ্যে যে সবচেয়ে ভালো করবে তাকে বিয়ে করবে।

এভাবে ক্ষণে ক্ষণে বেলা এগোতে থাকল। তানিয়া তানভির ও মাহমুদকে প্রতি মুহুর্তে তাঁর বিভিন্ন ছবি পাঠাতে থাকল। তানভির ও মাহমুদ দুজনেই বেজায় খুশি। কারণ দুজনেই মনে করে তানিয়া তাদের অনেক ভালোবাসে। কিন্তু বাস্তবতা তো ভিন্ন। আসলে তানিয়া চেয়েছিল যে আগে প্রতিষ্ঠিত হবে তাকে বিয়ে করতে। হটাৎ একদিন তানিয়া তানভির কে জেএফসিতে দেখা করতে ডাকে। সেখানে তাঁরা দুজন অনেক্ষণ একান্তে থাকে। একে অপরের সাথে সময় কাটায়। সেখান থেকে ঘুরে বের হওয়ার সময় তানভির জিনিয়াকে নদীর পাড়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেয় কিন্তু তানিয়া সেটা সম্পূর্ণ রূপে নাকচ করে দেয়। তখন কারণ বুঝতে না পারলেও পরবর্তীতে তানভিরের কাছে কারণ টি পরিস্কার হয়ে যায়।

যাইহোক এইভাবে ত্রিমুখি সম্পর্ক সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। মাঝখানে আবার নতুন এক চরিত্রের সাথে তানিয়ার পরিচয় হয়। নাম তাঁর রফিক। সে যশোর ফ্লাইং একাডেমিতে শিক্ষানবিস বৈমানিক হিসাবে কর্মরত আছে। তাঁর সাথে কথা বলতে বলতে তানিয়া মনের আদান প্রদান করে ফেলে। কিন্তু এত কিছুর পরেও তানিয়া একবারের জন্য ভাবে নায় যে এরা সবাই এক হয়ে গেলে তখন তাঁর অবস্থা কি হবে! গ্রামের একটা সাদাসিদে মেয়ে খুব নিপুন ভাবে তিনটা ছেলেকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল যা দেখে খুব অবাক হওয়ার মতো।

কিছুদিন পরে তানভির বিষয়টা বুঝতে পারে। কারণ তিনজনের ম্যাসেজের রিপ্লাই দিতে গিয়ে তানিয়া স্বাভাবিক ভাবেই ম্যাসের লেট রিপ্লাই করে। এছাড়াও মাঝে মাঝে রাত ১/২ টার দিকে ফোনে বিজি পায়। জিগাসা করলে নানান ভাবে এড়িয়ে যেতে থাকে। কিন্তু এই বিষয় যখন নিয়মতান্ত্রিক ভাবে হতে থাকল তখন বিষয়টি নিয়ে গভীর অনুসন্ধানে নামে তানভির। সে একিদিন ঘুরতে ঘুরতে তানিয়াদের গ্রাম হলিধানিতে যায়। সেখানে গিয়ে মানুষের সাথে কথা বলতে বলতে মাহমুদের সাথে পরিচয় হয়। মাহমুদ ও তানভির দুজন মিলে ঠিক করে জিনিয়াকে কঠিন শিক্ষা দিবে। আর এটা করতে গিয়ে তাঁরা বেশ কিছু পরিকল্পনা করে। তাঁর পরেও ১৫/২০ দিন কেটে যায়। মাহমুদ ও তানভির যে একেঅপরকে চিনে এ কথা জিনিয়া বুঝতেই পারে না।

কাকতালীয় ভাবে রফিকের ফেসবুক আইডির ফ্রেন্ড ছিল মাহমুদ। একদিন সে তানিয়ার ছবি রফিকের ডে পিকে দেখে রফিককে তাঁর ব্যাপারে জিগাসা করে এবং তাদের দুজনের কথা বলে। সেই সাথে তাঁরা তিনজন একত্রিত হয়ে একটা শক্তিশালি জোট গঠন করে। প্লান মাফিক রফিকক তানিয়াকে দেখা করতে ডাকবে। কারণ রফিক আর তানিয়ার আজো বাস্তবে দেখা হয় নাই। ঝিনাইদহ জেয়ার একটা অভিযাত রেস্তরাতে দেখা করতে ডাকে। তাদের সেখানে আসার পুর্বেই সেখানে গিয়ে উপস্থিত ছিল মাহমুদ ও তানভির। হোটেলে বসে তানিয়া রফিকের ঘাড়ে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে বিভিন্ন প্রেমালাপ করছিল। ঠিক এই সুযোগের তাদের সামনের চেয়ারে এসে দুজন বসে। ৪/৫ মিনিট পরে ওদের সামনে মাহমুদ ও তানভির কে দেখে ভুত দেখার মতো করে লাফ দিয়ে উঠে। সে কি বলবে আর ভেবে পায় না। এই সুযোগে রফিক ও মাহমুদ যথেষ্ট অপমান করে বের হয়ে যায়। বেচারি মেয়ে কি করবে দিশেহারা হয়ে টলতে টলতে রাস্তা দিয়ে চলতে থাক্কে। এমন সময় পিছন থেকে তানভির এসে তানিয়ার হাত চেপে ধরে। তাকে নিয়ে নতুন করে সম্পর্ক শুরুর স্বপ্ন দেখায়। এতে তানিয়া কান্নায় ভেংগে পড়ে। কারণ এই তানভিরকে সম্পর্কের শুরু দিকে অনেক ভাবে অপমান করেছিল তানিয়া কিন্তু সব মেনে নিয়েও ভালোবাসা পাওয়ার অপেক্ষায় বসেছিল। সেজন্য তানিয়া তানভিরের সাথে টাইমপাস আর দুজনকে হৃদয় দিয়ে ভালোবেসেছিল। কিন্তু আজ তো হিসাব বদলে গেলো। এই কথা ভাবতে ভাবতা তানিয়া তানভিরের কোলে মুর্ছা হারালো।

কয়েক ঘন্টা পরে তানিয়া নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিস্কার করল। সেখানে দেখতে পেলো তানভির তখনো বসে আছে। ইতমধ্যে সেখানে তানিয়ার বাবা মা এসে উপস্থিত হয়েছেন। তাঁরা সকল ঘটনা শুনে তানভিরের কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন। তানিয়াও নিজের ভুল বুঝতে পারল। সে তানভিরকে বিয়ে করতে সম্মত হলো।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics