STORYMIRROR

Md Nazmus Sakib

Romance Classics

5  

Md Nazmus Sakib

Romance Classics

আত্মত্যাগ

আত্মত্যাগ

3 mins
544

অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা জলিল সাহেবের বড় মেয়ে অন অনন্যা। ২০১৯ সালে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেছেন। প্রথম দিকে খোলামেলা চলা ফেরা করলেও বর্তমানে তার মাঝে এসেছে ব্যাপক পরীবর্তন। এইতো ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার আগে র‍্যাগ ডে এর দিনেও প্যান্ট টি শার্ট পরে মর্ডান ড্যান্সের মাধ্যমে সম্পূর্ণ কলেজ মাতিয়েছিল কিন্তু আজ তার এত পরিবর্তন দেখে সবাই অবাক। বোরখা পরে চলা ফেরা করে।

সে যাইহোক ইন্টারমিডিয়েট শেষে বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং শুরু করে। বুকে তার অনেক স্বপ্ন। বিসিএস ক্যাডার হতে হবে। বাবা মা বোনদের পাশে দাড়াতে হবে। কারণ তার ভাই নেই। ছোট দুইটা বোন আছে। একজন ক্লাস ১০ পড়ে অপরজন ক্লাস ৬। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে থাকে কিন্তু কোন এক অজানা কারণে কোথাও চান্স হয় নাই। জীবনে অনেকটা হতাশ হয়ে যায়। আর এর মাঝে চলে আসে কদম ফুল ভাইরাস। যার আতঙ্কে সম্পূর্ণ জাহান স্থবির হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় সকল কার্যক্রম। এতে অনন্যা আরো ভেংগে পড়ে। আর এটা দেখে জলিল সাহেব নিজ মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিতে চান। যাতে মেয়েটা হতাশা থেকে বের হয়ে যেতে পারে। যার কারণে তিনি একে একে ছেলে আনতে থাকেন আর অনন্যা নানান অজুহাতে বিয়ে ভাঙ্গতে থাকে।

এরপর সে আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখতে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকেন্ড টাইম পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে থাকে। আর এইদিকে নিজের বিয়ে আটকানোর জন্য কথা রটিয়ে দেয় আমার বিয়ে বন্ধ রয়েছে। এইভাবে চলতে থাকে দিন। গুচ্ছ পরীক্ষা সিস্টেমে সে অংশ গ্রহণ করে। কিন্তু ভালো ফলাফল করতে পারে না। তারপরেও কোন রকম শেষ অবস্থায় আটকে যায়। একটা নাম করা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে ভর্তি হয়। এখন সারা জীবন স্কুলে পড়েছে। আরবি সম্পূর্ণ নতুন তাই ক্লাস ধরে রাখতে তার বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। ও হ্যাঁ বলতেই ভুলে গেছি, ইন্টারমিডিয়েট শেষ করে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন চান্স হচ্ছিল না তখন সে একটা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার টেকনোলজিতে ভর্তি হয়েছিল।

যাইহোক এইভাবে দুইটা ইন্সটিটিউটকে খুব সুন্দর ভাবে ম্যানেজ করে চলছিল। এত কিছুর পরেও বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে কিন্তু সে নানান ছুতোয় তা ভাংতে থাকে। কিন্তু এবার তার কাছে এমন একজন বিবাহের প্রস্তাব পাঠায় যিনি বিশিষ্ট এক্সপোর্ট ও ইমপোর্ট ব্যবসায়ী। ছেলেটা একটু বয়স্ক তবে ছেলেকে দেখে অনন্যার বুকে ধরকান বেজে উঠে। সে ভেবে নিলো এখন হোক আর কিছু দিন পরে বিয়ে তো করতেই হবে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছ্যাচড়া সিনিয়র যেভাবে আমাকে জ্বালাচ্ছে তার থেকে আমি বিয়েটা করেই ফেলি। এতে চরিত্র সহ সব ঠিক থাকবে। ছেলেটার নাম নবিন আহসান। সেখান থেকে অনন্যা আহসান হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। নবিনরা দুইভাই বোন। বড় বোনের বিবাহ হয়ে গিয়েছে। সে স্বামীর সাথে চায়নাতে থাকে। আর ঢাকার মোহাম্মাদপুরে বাবা মা কে নিয়ে নবিন থাকে। কোটিপতি মানুষ আর সেখানে শুধু বাবা-মা আর স্বামী খুব মজার সংসার চলবে। বুকের মাঝে নানান স্বপ্ন দেখতে থাকে। যেহুতু অনন্যা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়াতে পড়াশোনা করত। কিন্তু স্বামীর বাড়ি মোহাম্মাদপুর হওয়াতে তারা এখানে পড়তে দিবে না। অনন্যা সেটাতেও রাজি। যাইহোক অবশেষে অনন্যা ও নবিনের বিবাহ হয়ে যায়। বিবাহের পরে আবার শ্বশুরের গ্রামে সপ্তাহ খানেক থেকে তারা ঢাকা চলে যায়।

অনন্যাকে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেয়। তাদের সংসার খুব ভালো চলছিল। বিবাহের দেড় বছরের মাথায় অনন্যা ও নবিনের কোল আলো করে একটা কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। এরপর মেয়েকে মানুষ করতে গিয়ে অনন্যা আর পড়াশোনা এগোতে পারে নাই। সেখানেই থেমে যায় তার শিক্ষা জীবন। আজ মেয়েকে বুকে নিয়ে শুয়ে থেকে ভাবছে অনন্যা তার বিসিএস ক্যাডার হওয়ার কথা ছিল কিন্তু আজ সে স্নাতক শেষ করতে পারল না। তবে হ্যাঁ সে নিজেকে স্বার্থক মনে করে। কারণ সে একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। কয়েক মাস ক্লাস করেছিল। এই কথা ভেবেই সে তৃপ্তির ঢেকুর ছাড়ে। আর ভাবে আমার অপূরণীয় স্বপ্ন আমার মেয়ে পূরণ করবে।

নোটঃ আসলে আমরা অনেক সময় নানান কারণে মেয়েদের ছোট করে থাকি। কিন্তু একটা বিষয় খেয়াল করে দেখবেন মেয়েরা আমাদের অনেক সাহায্য করে থাকে। প্রত্যেকটা পুরুষের সাফল্যের পিছনে অবশ্যই কোন না কোন নারী থাকে। তাঁরা আমাদের অনুপ্রেরণা দিয়ে সাহায্য করে থাকেন। তাই আসুন আমরা মেয়েদের নিয়ে ট্রল বন্ধ করে তাদেরকে যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন করি।  


মো. নাজমুচ্ছাকিব

শিক্ষার্থী

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

০১৯৯২৫৪৭২০২

Snazmussakib01@gmail.com


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance