STORYMIRROR

Md Nazmus Sakib

Inspirational Others

4  

Md Nazmus Sakib

Inspirational Others

যৌতুক

যৌতুক

4 mins
389

হেমন্তের মিষ্টি রোদ্দুর। উঠানে বসে আছেন আবুল কালাম সাহেব। হাতে তার পত্রিকা। খবর গুলো নেড়েচেড়ে দেখছিলেন। প্রতিদিন দুইটা খবর খুব নৈমত্তিক হয়ে গিয়েছে। এক হচ্ছে ধর্ষণ আরেকটি হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনা। আবুল কালাম সাহেবের মনে অনেক ভয়। কেননা তার ঘরে রয়েছে তিনটি সমত্ত মেয়ে। তাদের বিবাহের ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু সেরকম ভালো ছেলেও পাওয়া যাচ্ছে না। আসলে বর্তমান সময় খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এখন বিবাহের জন্য ভালো ছেলে বা মেয়ে পাওয়া বড় দায় হয়ে গেছে। এসব ভাবতে ভাবতে কালাম সাহেবের চোখে তন্দ্রা চলে এসেছে। তিনি স্বপ্নে দেখতেছেন, তিনি একটা বাগানের ভিতর বসে আছেন তার কোলে ছোট বাচ্চা-কাচ্চা বসে আছে। নানার কোলে নাতী ঘুরবে এটাতো রাসূল সাঃ এর সুন্নাহ। তিনি কবে পালন করবেন এসব নিয়ে ভাবছেন। হটাৎ তিনার বড় মেয়ে আকলিমা কফি নিয়ে এসে ডাক দিলো আব্বা!

কালাম সাহেব মাথা ঝাড়ি দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, বল মা! , আকলিমা বলল বাবা নাও কফি খাও। কালাম সাহেব মেয়ের হাত থেকে কফি নিলেন। কালাম সাহেবের তিন মেয়ে। বড় মেয়ে আকলিমা, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়াতে আল হাদীস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ে। মেজ মেয়ে আনোয়ারা দারুননাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসাতে আলিম ১ম বর্ষে পড়ে। আর ছোট মেয়ে মুনিরা মনিরামপুর মাদরসায় অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে। কালাম সাহেবের কোন ছেলে নেই।

কোভিড-১৯ এর জন্য শিক্ষা প্রতিষ্টান বন্ধ থাকার জন্য তিন মেয়ে তার কাছে আছে। তাছাড়া বড় দুজন তো বাড়ির বাহিরে থাকত। কালাম সাহেম যশোরের একটি মাদরাসার অধ্যক্ষ। বর্তমানে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া অনেক কষ্ট হয়ে গিয়েছে। আলেম ওলামা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সবাই যৌতুককে ডাল-ভাত বানিয়ে নিয়েছে। এইতো কয়দিন আগে একজন আলেমের ছেলে মেয়ে দেখতে এসেছিল। মেয়ে দেখে সব কিছু ঠিকঠাক। কিন্তু যাওয়ার সময় ছেলের বাবা কালাম সাহেবের হাত ধরে বললেন দেখেন কালাম ভাই! আমার বাসা থেকে ছেলের মাদরাসা ১৮ কিঃমিঃ দূরে। প্রত্যেক দিন বাসে যাওয়া আসা করতে অনেক কষ্ট হয়। বাবা হয়ে ছেলের কষ্ট সহ্য করতে পারি না। তাই আপনি যদি জামাই একটা মটোর-সাইকেল কিনে দিতেন তাহলে ওর কষ্ট কম হতো। কথা শুনো কালাম সাহেব কেদে দিলেন একজন আলেম হয়ে বিয়ের আগে যৌতুক যাচ্ছেন, না-জানি বিয়ের পরে আবার কি করে বসেন। সেখানে আর মেয়েকে বিয়ে দিলেন না।

আসলে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছে। একটা বাবা তার মেয়েকে ২০/২১ বছর অনেক টাকা খরচ করে লালন পালন করেন কিন্তু সেই মেয়েকে বিয়ে করতে গিয়ে আবার যৌতুক দাবি করা কতটুকু যুক্তি যুক্ত এটা আমার বুঝে আসে না। যৌতুক ধর্মীয় দৃষ্টিতেও হারাম। যৌতুকের বিবাহ কে যিনা এর সাথে তুলনা করা হয়েছে।

যারা যৌতুক চাই তাদের ক্ষেত্রে মেয়ের বাবার প্রতি আমার একটা পরামর্শ থাকবে তা হচ্ছে, “ছেলের গলায় দড়ি ঝুলিয়ে মেয়ের হাতে ধরিয়ে দিবেন। মেয়ে দড়ি ধরে টেনে নিয়ে যাবে। কারণ আমরা গরু ছাগল কিনে দড়ি ধরে টেনে আনি। ঠিক তেমন আপনি তো যৌতুকের টাকা দিয়ে ছেলে কিনে নিচ্ছেন।“

আজ আকলিমাকে একটা ছেলে দেখতে আসার কথা। ছেলেটা অনেক বড় আলেম। বাবা চাচা অনেক আলেম। এই ছেলে যদি আকলিমাকে বিয়ে করে তাহলে কালাম সাহেবের বুক থেকে একটা পাথর নেমে যাবে। কফি খেয়ে কালাম সাহেব বাজারে চলে গেলেন। কালাম সাহেবের স্ত্রী অনেক বড় একটা ফর্দ ধরিয়ে দিয়েছেন। বাজারে গিয়ে বড় একটা ইলিশ মাছ কিনলেন তিন কেজি চিংড়ি মাছ, গরুর গোস্ত আরো হরেক রকম বাজার করে আনলেন।

আনোয়ারা ও মুনিরাও মনের অনেক আনন্দ। যথারিতি পাত্র পক্ষ দেখতে আসল। আনোয়ারাকে দেখে তারা পছন্দ করে ফেলল। ছেলে পক্ষ শর্ত দিয়েছে, তারা কোন যৌতুক নিবে না এবং কালাম সাহেব খুশি মনেও কিছু দিতে পারবেন না। কালাম সাহেব ছেলের মন ভাব থেকে অনেক খুশি হলেন। ছেলের বাবা ছিলেন কালাম সাহেবের বাল্য বন্ধু। তিনিরা বিয়ের তারিখ ঠিক করে ফেললেন। আনোয়ারা ও মুনিরার মনে আনন্দের ফোয়ারা। তাদের বড় আপুর বিয়ে। আপুকে সাজানো গোছানো শুরু করেছে। চলতি মসাসের ১২ তারিখে বিয়ে। ১১ তারিখ গায়ে হলুদ। বিয়ে উপলক্ষে মুনিরা ও আনোয়ারা মিলে একটা পরিকল্পনা করল তারা এমন কিছু করবে যাতে যৌতুক বিরোধী প্রচারণা থাকে। তাই তারা যৌতুক বিরোধী বিভিন্ন কবিতা লিখে প্যাণ্ডেলের চারিদিকে লাগিয়ে রাখল।

আজ আকলিমার গায়ে হলুদ। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান বাড়ির একদম অন্দরমহলে আয়োজন করেছে যেখানে অন্য কোন পুরুষ মানুষ কোন ভাবেই প্রবেশ করতে পারবে না। বিয়ের দিন পাত্র পক্ষ এসে যৌতুক বিরোধী লেখা পত্র পড়ে অনেক খুশি হয়। কালাম সাহেবের বন্ধু আব্দুর ওয়াদুদ সাহেব খুশি হয়ে আনয়ারা ও মুনিরাকে ১০০০০ টাকা উপহার দেন।

তিনি সেখানে ঘোষণাদেন আমাদের সবাই যদি এমন করত তাহলে আমাদের সমাজ থেকে যৌতুক প্রথা উঠে যাবে। তাদের এ কাজ সর্ব মহলে প্রসংসার দাবি রাখে। ওই দিকে কালাম সাহেব বড় মেয়ের বিয়ে দিতে পেরে আনন্দে কান্না করে দেন। আমাদের সমাজের প্রত্যেকটি মানুষকে এমন হতে হবে। আনোয়ারা মুনিরা আমাদের কাছে আদর্শ। আসুন আমরা সবাই মুনিরার মতো হই। 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational