Biplab Das

Drama Thriller Others

3  

Biplab Das

Drama Thriller Others

প্রতাপবাবুর ভয়

প্রতাপবাবুর ভয়

9 mins
312



হাফ-ইয়ারলি পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে, খাতা দেখার কাজ চলছে। প্রতাপবাবু কখনই খাতা বাড়িতে নিয়ে আসেন্ না। টিচার্স রুমে বসেই দেখেন। দিনটা ছিল সোমবার। সবার আগে প্রতাপবাবু স্কুলে গিয়ে হাজির। রবিবার দিনই ঠিক করে নেন, বাকি যে কটা খাতা রয়েছে সেগুলি ক্লাস শুরু হবার আগেই দেখে নেবেন। তাই স্কুলে আগে পৌছনো।


স্কুল পৌঁছে দেখেন গেট খোলা অথচ দারোয়ান নেই। রোজ সে মেইন গেটে বসে থাকে। সেইই স্কুল খোলে। তাকে না দেখতে পেয়ে কিছুটা অবাক হলেও প্রতাপবাবু ভাবে কোন কাজে হয়ত বাইরে গেছে। স্কুলের ভিতরে ঢুকে সোজা টিচার্স রুমে চলে যান। টিচার্স রুম দোতালায়। বেসিনে হাত-মুখ ধুয়ে খাতা দেখার কাজ শুরু করেন প্রতাপবাবু। 

বেশ মনোযোগের সাথেই খাতা দেখছিলেন। কিন্তু হঠাৎ একটা ফিসফিসানি শুনতে পান। প্রতাপবাবুর মনে হতে লাগে কিছু লোক আশেপাশেই কোথাও কথা বলছে। কিছুক্ষণ শোনার পর বুঝতে পারেন ফিসফিসানিটা পাশের ঘর থেকেই আসছে। পাশের ঘর বলতে হেডমাস্টারের ঘর। তাহলে কি হেডমাস্টার মশাই চলে এসেছেন?- প্রতাপবাবু ভাবতে থাকতে থাকেন। কাজ থামিয়ে ভাবতে থাকেন, গিয়ে দেখলে কেমন হয়? এর মধ্যেই ফিসফিসানির মাত্রাটা বেড়ে যায়। প্রতাপবাবুর বুঝতে পারেন ঘরটিতে একাধিক লোক আছে। আর বসে থাকতে পারেনা প্রতাপবাবু। চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়েন। টিচার্স রুম ছেড়ে যেই হেডমাস্টারের ঘরের দিকে এগিয়েছেন, তখনই একটা ধমক শুনতে পান। সেটা আর ফিসফিসানি থাকে না। সবাই বেশ জোড়েই কথা বলতে থাকে। 


‘তুই আর কত চাস? অনেক পেয়েছিস। টাকা তুলে আনা ছাড়া তো আর কোনও কাজ তো তুই করিস নি। তোর এত খাই কিসের’? – কথা গুলো যে হেডমাস্টার মশাইয়ের তা নিয়ে কোন দ্বিধা থাকেনা প্রতাপ বাবুর।


‘আমার ১০ পারসেন্ট চাই। আমি কোনও কথা শুনবো না। স্কুলের ফান্ড থেকে টাকা সরাচ্ছেন আপনারা। নিজেরা লাখ লাখ কামাবেন আর আমার জন্য এইটুকু?’ এই গলাটাও প্রতাপবাবুর চেনা। এটা দারোয়ান বিনোদের গলা। তাহলে বিনোদ স্কুলেই আছে। বাইরে কোথাও যায়নি। এই কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আরও একজনের কথা শুনতে পায়। 


‘আস্তে কথা বল। আর কত চাই তোর?’ এটা কথা গুলো ক্যাশিয়ার রঞ্জন হালদারের তা নিয়ে কোন দ্বিধা থাকেনা প্রতাপ বাবুর মনে।

এরা কি বিষয়ে কথা বলছে? কোন টাকা নিয়ে তারা কথা বলছে? এত সকালেই বা তারা চলে এসেছে কেন? স্কুলের ফান্ড থেকে টাকা সরানোর বিষয়টা কি? এইসব একাধিক চিন্তা মাথায় ঘুরতে থাকে প্রতাপবাবুর মনে। প্রতাপবাবু ঠিক করেন লুকিয়ে লুকিয়ে শুনবেন ওদের কথপোকথন। এর মধ্যেই বিনোদ প্রায় চিৎকার করে ওঠে। ‘আমার শেয়ার আরও বেশি হবে। না হলে আমি সব ফাঁস করে দেব। সবাইকে বলে দেব’। এই বলে বিনোদ ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে। আসার সঙ্গে সঙ্গেই প্রতাপবাবুকে দেখতে পায়।


দরজার পাশে দাড়িয়ে এবং ওদের কথা শুনছে। ওকে দেখেই বিনোদ হকচকিয়ে যায়। তারপর সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘আরে প্রতাপবাবু যে, আপনি কখন এলেন?’ প্রতাপবাবু কিছু বলেনা। বিনোদ গলার স্বর চড়িয়ে ঘরের ভিতরে থাকা বাকি দুজনকে বলে ‘আরে দেখুন, এখানে কে’। ভিতর থেকে হেডমাস্টার মশাই ও রঞ্জন হালদার বেড়িয়ে আসে। দুজনেই প্রতাপবাবুকে দেখে অবাক হয়ে যায়। কিছুটা সামলে হেডমাস্টার মশাই জিজ্ঞেস করেন, ‘কি ব্যাপার আজ এত তাড়াতাড়ি? খাতা দেখার চাপ আছে বুঝি?’ কিছুটা সামলে নিয়ে প্রতাপবাবু বলেন, ‘হ্যাঁ, ওই আর কি। কাজ কিছুটা এগিয়ে রাখা’। প্রতাপবাবু যখন এই কথা গুলি বলছে বাকি তিনজনে একে অপরের মুখের দিকে চাওয়াচায়ি করতে থাকে। ওরা তিনজনেই বুজতে পারে প্রতাপবাবু সব শুনে ফেলেছে।


হেডমাস্টার মশাই তখন জানতে চায়, ‘আপনি এখানে কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছেন? কিছু বলবেন বলে এসেছিলেন? কোন দরকার আছে?’ প্রতাপবাবু এই প্রশ্নগুলি শুনে খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। জুতসই একটা উত্তর হাতড়াতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত বলে বসেন ‘না মানে টিচার্স রুম থেকে আওয়াজ শুনতে পেয়ে ভাবলাম কিসের আওয়াজ দেখি। এসে দেখি আপনারা কাজ করছেন’। হেডমাস্টার মশাই বুজতে পারে প্রতাপবাবু কি বলবেন বুঝে পারছেন না। তাই সে সোজাসুজি জিজ্ঞেস করে, ‘আপনি এখানে কতক্ষণ দাড়িয়ে ছিলেন। আর কি শুনেছেন?’ এবার রঞ্জন হালদার মুখ খোলেন, ‘প্রশ্নের উত্তর দিন। কি কি শুনেছেন?’ বিনোদও যোগ দেয়। কিছুটা আশ্বস্ত করার ঢঙ্গেই বলে, ‘ভয় পাবেন না। কিছু হবেনা আপনার। বলে দিন’।


প্রতাপবাবু আমতা আমতা করে বলেন, ‘কি সব শেয়ার নিয়ে আপনারা কথা বলছিলেন। আমি এইটুকুই শুনেছি’। হেডমাস্টার মশাই তখন রাগের সহিত বলে ওঠেন, ‘দেখুন শুনে যখন ফেলেছেন তখন এটাও জেনে রাখুন এই কথা যেন আমরা চারজন বাদে কেউ না জানতে পারে। কাউকে বলবেন না। বুঝলেন?’ উত্তরে কিছু বলেনা প্রতাপবাবু। এবার বিনোদ বলে ওঠে, ‘না উনি কাউকে বলবেন না। উনি ভালো লোক। তাছাড়া উনি কোথায় থাকেন তা তো আমি জানি। একাই থাকেন। কোথা দিয়ে কি হয়ে যাবে তা তো বলা যায়না’। হেডমাস্টার মশাই বিনোদকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘যান এবার গিয়ে খাতা দেখুন। যা শুনেছেন তা সম্পূর্ণ ভুলে যান। আর হ্যাঁ, মনে রাখবেন আমরা ফাঁসলে আপনিও ফাঁসবেন। তাই সাবধান। তাছাড়া এই কয়েকটা বছর আছে চাকরির তাই চুপচাপ কাজ করে যান’।


টিচার্স রুমে ফিরে আবার খাতা দেখার কাজ শুরু করলেও প্রতাপবাবু মন থেকে কিছুতেই হেডমাস্টারের কথা গুলি মুছে ফেলতে পারছিলেন না। স্কুল চলাকালীন আবার হেডমাস্টারকে দেখেন। বিনোদও দরজার বাইরে বসে রয়েছে। সব কিছু একেবারেই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রতাপবাবুর মন মোটেই স্বাভাবিক ছিলোনা। তার ভয় হতে থাকে উনি না এই বিষয়ের মধ্যে ফেঁসে যান। কিছুক্ষণ পর এটাও মনে হতে থাকে উনি নিজে তো কোন দোষ করেনি। তাহলে ভয় কিসের।

                                                             ২

প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় একটি সরকারি স্কুলে বিজ্ঞান পড়ান। ফুল-টাইম শিক্ষক। অনেক দিন ধরে পড়াচ্ছেন এবং যত্ন সহকারেই পড়ান। তার বিরুদ্ধে কারুর কোন অভিযোগ নেই। প্রতাপবাবুরও নেই। বিয়ে করেননি। বয়স সদ্য ৫০ ছুঁয়েছে। স্কুলের সামনেই একটা বাড়িতে ভাড়া দিয়ে থাকেন। নিজেই রান্না করে খান। মাসে একবার গ্রামের বাড়ি যান মায়ের সঙ্গে দেখা করতে এবং মাসোয়ারা টাকা দিতে। জীবন প্রতাপবাবুর একেবারেই নিস্তরঙ্গ। কিন্তু স্কুলের এই ঘটনা যেন তার নিস্তরঙ্গ জীবনকে সম্পূর্ণভাবে নাড়িয়ে দেয়।

সেদিন স্কুল শেষে যখন বাড়ির পথে প্রতাপবাবুর যখন এগোতে থাকে তখন মনে হয় কেউ তার পিছু নিয়েছে। ঘুরে তাকিয়ে বিনোদকে দেখতে পায়। চোখাচুখি হওয়াতে বিনোদ হাত নেড়ে চিৎকার করে বলল, ‘সাবধানে বাড়ি যাবেন, প্রতাপবাবু’। বলে সে একটা গলিতে ঢুকে যায়। প্রতাপবাবু বুজতে পারেন তার ওপর লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। কারন তার চাকরি জীবনে এই প্রথমবার বিনোদ পিছু নিলো এবং সাবধানে বাড়ি যাওয়ার কথা বলল। এতটুকু তো পথ। এর মধ্যে আবার সাবধানে যাওয়ার কি আছে? তাহলে কি এটা কোন সাবধান বানী ছিল? ভাবতে ভাবতে সেদিন বাড়ি পৌঁছে যান প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়।

এই দিকে স্কুল চলতে থাকে নিজের গতিতে। সবার মতন প্রতাপবাবুও রোজ স্কুল যাচ্ছেন। ওই তিনজনেও। কোথাও কোনও অস্বাভাবিকতা নেই। শুধু স্কুলের শেষে বিনোদের রোজ পিছু নেওয়া ছাড়া।

এক রবিবার বিকেলে যেই বসার ঘরের জানালার সামনে এসে বাইরেটা দেখবেন বলে প্রতাপবাবু দাড়িয়েছেন, দেখেন হেডমাস্টার মশাই, রঞ্জনবাবু এবং বিনোদ- তিনজনে প্রতাপবাবুর বাড়ির ঠিক উল্টোদিকের চায়ের দোকানে দাড়িয়ে চা খাচ্ছেন। কিন্তু তাদের নজর প্রতাপবাবুর বাড়ির দিকেই। এর পর প্রতাপবাবু ঠিক করেন যে এর একটা হেস্তনেস্ত তিনি করেই ছাড়বেন। কালই স্কুলে গিয়ে তিনজনের কাছে জানতে চাইবেন কেন তার ওপর নজর রাখা হচ্ছে।

পরের দিন স্কুলে গিয়েই প্রতাপবাবু হেডমাস্টারকে জানিয়ে দিলেন স্কুল শেষ হয়ে গেলে আপনারা তিনজনে থাকবেন। আপনাদের সাথে কথা আছে। বিকেলে স্কুল শেষ হতে বাকি মাস্টারদের বেড়িয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকেন প্রতাপবাবু। সবাই বেড়িয়ে যাওয়ার পর যে মুহূর্তে হেডমাস্টারের ঘরে গিয়ে ঢোকেন প্রতাপবাবু দেখেন তিনজনেই হাজির। কথা না বাড়িয়ে সোজাসুজি বলে দেন, ‘আমার পিছু নেওয়া বন্ধ করুন। না হলে ফল খারাপ হবে’। তিনজনের কেউই কোনও কথা বলে না। প্রতাপবাবু আর কথা বাড়ায় না। গটগট করে হেঁটে বেড়িয়ে যায়। বাড়ি ফিরে অনেকটা হাল্কা অনুভব করেন। বুঝতে পারেন কতটা সাহস সঞ্চয় করে তিনি ওই তিনজনকে কথা গুলি বলতে পেরেছিলেন এবং ভাবেন এই সমস্যার বোধহয় অবসান হয়েছে।

                                                               ৩

রাতের খাওয়া সেরে শুতে যাওয়ার আগে রোজই একবার সদর দরজা খুলে একবার রাস্তায় প্রতাপবাবু হাওয়া খেয়ে নেন। সেদিনও রাস্তায় এসে দাঁড়ালেন। এবং বিকেলে স্কুলের ঘটনাটির কথা মনে করতে লাগলেন। তিনি ভাবতেই পারেননি যে ওরা এত সহজেই মেনে নেবেন। এর সঙ্গে এটাও ঠিক করলেন এই বিষয় নিয়ে তিনি আর কিছু ভাবেন না। পড়ানোর কাজেই মন দেবেন।


একটু পায়চারিও করলেন। কিন্তু খানিকক্ষণ পরেই চোখ পড়ল কিছুটা দুরের একটা ল্যাম্পপোস্টের দিকে। ল্যাম্পপোস্টের নিচে দুটো লোক একদৃষ্টে তার দিকে চেয়ে রয়েছ। অনেকক্ষণ ধরেই লোকদুটো ওখানে দাঁড়িয়েছিল কিন্তু প্রথমে তিনি গুরুত্ব দেননি। ভেবেছিলেন ছেলে-ছোকরা হবে। এখন বুজতে অসুবিধা হলনা যে লোকদুটো তার দিকেই চেয়ে আছে। কিছুক্ষণ বাদেই লোকদুটো প্রতাপবাবুর দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। প্রতাপবাবুর বুকের ভিতরটা ঢিপঢিপ করতে লাগলো ভয়ে। এই দুজন লোক কারা? কেনই বা তার দিকে চেয়ে চেয়ে রয়েছে? তাহলে কি এই লোকদুটোকে কি হেডমাস্টারের দলের লোকেরা পাঠিয়েছে? আজকের বিকেলের ঘটনার বদলা নিতে চায়? যদি এই লোকদুটি আমাকে আক্রমন করে? যদি ওদের কাছে কোন আস্ত্র থাকে? এইসব নানান চিন্তা প্রতাপবাবুর মাথায় ঘুরতে থাকে। কিন্তু লোকদুটো কিছুই করেনা। কথা বলতে বলতে প্রতাপবাবুকে প্রায় লক্ষ্য না করেই চলে যায়। প্রতাপবাবু হাফ ছেড়ে বাঁচেন। কিন্তু ভয় একটা মনে থেকেই যায়।

বিছানার পাশেই টেবিল। টেবিলের ওপরেই জলের জগটা থাকে। প্রায়ই মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে যায় তখন হাত বাড়িয়ে জগ থেকে থেকে জল খেয়ে নেন। তাই টেবিলটিকে খাটের পাশে রাখা। কিন্তু সেদিন রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে, একটা ঘুমের ওষুধ খেয়ে নিলেন। ঘুম যাতে ঠিক মতন আসে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুম চলে আসলো এবং কিছুক্ষণ পরেই একটা স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন।


একটা আলোআঁধারিতে ভরা রাস্তা। উদ্ভ্রান্তের মতন ছুটে বেড়াচ্ছেন প্রতাপবাবু। হেডমাস্টার এবং তার দলবলের লোকেরা তাকে ধাওয়া করে বেড়াচ্ছে। প্রতাপবাবু দৌড়াচ্ছেন। থামছেন। হাঁপাচ্ছেন। আবার দৌড়াচ্ছেন। হেডমাস্টারের দলের লোকগুলি চিৎকার করছে, গালাগাল করছে। কিন্তু স্বপ্ন বেশিক্ষণ স্থির হয়না। প্রতাপবাবুর ঘুম ভেঙ্গে যায়। কারন – দরজায় কেউ জোড়ে ধাক্কা দিচ্ছে।


হঠাৎ এই শব্দে কিছুটা অবাক হয় প্রতাপবাবু। এত রাতে কে দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে? তাহলে কি ওই লোকদুটোকে সঙ্গে নিয়ে হেডমাস্টার আর তার দলবলের লোকেরা এসেছে? এদিকে দরজায় ধাক্কার মাত্রা ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। প্রতাপবাবু বুজতে পারেন দরজা না খুললে দরজা ভেঙ্গেই লোকগুলো ভিতরে ঢুকে যাবে। কিছুটা সাহস সঞ্চয় করেই গিয়ে দরজাটা খুলে দেন। দরজা খোলা মাত্রই হুড়মুড় করে একদল লোক ঘরে ঢুকে পড়ে। হ্যাঁ, যা ভেবে ছিল প্রতাপবাবু তাই – হেডমাস্টার, বিনোদ, রঞ্জন এবং ওই দুটো লোক যাদের রাস্তায় দেখেছিল কিছুক্ষণ আগে, লাঠিসোটা নিয়ে তার ঘরের ভিতর ঢুকে পড়েছে। ঘরে ঢুকেই রঞ্জন হালদার জোড়ে একটা ধাক্কা মারে প্রতাপবাবুকে এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। ধাক্কা মারতে মারতে শোয়ার ঘরে নিয়ে যায়। হেডমাস্টার বলে, ‘ধর হারামিটাকে। দড়ি দিয়ে বেধে ফেল খাটের সাথে। দেখাচ্ছি মজা। থ্রেট করা’। রাস্তায় যে দুটো লোককে দেখেছিল তারা প্রতাপবাবুর হাতদুটো শক্ত করে ধরে রাখে। বিনোদ মুখটা বেঁধে দেয়। হেডমাস্টার বুকে একটা জোড়ে ধাক্কা মারে। বিছানায় পড়ে যায় প্রতাপবাবু। চারজনে – রঞ্জন, বিনোদ এবং ওই দুটো অচেনা লোক, মিলে বেঁধে ফেলে প্রতাপবাবুকে খাটের সাথে। প্রতাপবাবু ছটফট করতে থাকে। হেডমাস্টার বলে, ‘তোকে আজ শেষই করে ফেলব’। এই বলে পকেট থেকে একটা ধারালো ছুরি বার করেন। অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন। প্রতাপবাবুর পেটের ওপর উঠে বসেন। সোজা বুকে ছুরিটা বসিয়ে দেন। বারবার কোপাতে থাকেন। প্রতাপবাবু কিছু বুঝে ওঠার আগেই গলগল করে রক্ত বেরোতে শুরু করে বুক থেকে। প্রতাপবাবু তাও ছটফট করতে থাকেন। শেষ চেষ্টা করতে থাকেন বেরিয়ে আসার। কিন্তু সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই শরীর অবশ হয়ে আসে। গোটা শরীর রক্তে ভিজে যেতে থাকে। শীতলতা অনুভব করতে শুরু করেন।


হটাৎ একটা আওয়াজ হয়। সঙ্গে সঙ্গে ঘুম ভেঙ্গে যায় প্রতাপবাবুর। দেখেন তিনি বিছানায় শুয়ে আছেন। বিছানার ওপর জগটা পড়ে রয়েছে। যেটা বিছানার পাশে টেবিলে রাখা ছিল। জল পড়ে গোটা বিছানাটা ভিজে গিয়েছে। বুজতে পারেন, তীব্র জোড়ে হাত নাড়াবার ফলেই জগটা টেবিল থেকে বিছানার ওপর এসে পড়েছে এবং উলটেছে। চারপাশে ভালো করে তাকিয়ে দেখে নেন কেউ কোথাও আছে কিনা? না কেউ নেই। বুকেও কোনও ছুরি বিঁধে নেই। সবকটা ঘর দেখে নেন। না কেউ নেই। রান্না ঘরের ঢুকে দেখেন জানালাটা খুলে গেছে। বাইরে জোড়ে হাওয়া দিচ্ছে তারফলে কপাটগুলো ধাক্কা খাচ্ছে। বুজতে পারে এই আওয়াজেই তার ঘুম ভেঙেছে। সেই রাতে প্রতাপবাবুর আর ঘুমোতে পারেন না। গোটা রাত বসার ঘরের একটা চেয়ারে বসেই কাটিয়ে দেন।

                                                                    ৪

পরদিন স্কুলে গিয়ে খবর পান যে গত রাতে হেডমাস্টারের ফ্ল্যাটে পুলিশ রেড করেছিল। অনেকদিন ধরেই নাকি তিনি স্কুলের ফান্ড থেকে টাকা সরাচ্ছিলেন। স্কুলেরই এক দপ্তরী ওদের কাণ্ডকারখানা সম্বন্ধে জেনে যায় এবং পুলিশে খবর দেয়। টাকা সমেত ধরা পড়েছে। সঙ্গে নাকি রঞ্জন এবং বিনোদও জড়িত ছিল। তিনজনেই এখন পুলিশ হেফাজতে। 


  



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama