Rima Goswami

Drama Horror Thriller

3  

Rima Goswami

Drama Horror Thriller

প্রেম, লিপ্সার দেবী রতি

প্রেম, লিপ্সার দেবী রতি

14 mins
972



দেবী রতির নামটি এসেছে সংস্কৃত মূল শব্দ রম থেকে, যার অর্থ \"প্রমোদ\" বা \"পুলকিত হওয়া\"৷ ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অনুসারে ব্রহ্মার সন্ধ্যাদেবীর প্রতি লিপ্সা জন্মালে তিনি আত্মহত্যায় প্রাণত্যাগ করেন৷ শ্রী বিষ্ণু তাঁকে আবার উদ্ধার করেন এবং রতি নামে কামদেবের সাথে বিবাহ দেন৷ আবার শিব পুরাণ অনুসারে সন্ধ্যার আত্মহত্যার পর তিঁনি রাজা দক্ষের ঘর্মের দ্বারা রতি নামে পুনর্জন্ম পান ও শিবের নির্দেশে কামদেবকে বিবাহ করেন । কিছু গ্রন্থে শিবকেই রতির পিতারূপে বর্ণিত করা হয়েছে । এত পর্যন্ত একনাগাড়ে বলে হাঁপিয়ে উঠেছেন ঋষি । মাটির কুঁজো থেকে জল নিয়ে খানিকটা খেয়ে তৃপ্ত হলেন মনে হয় । তার পর আবার ব্যাখ্যা করতে শুরু করলেন চৌষটি যোগীনির মধ্য এক যোগিনী রতির । দানব তারকাসুর বিশ্বজুড়ে ব্যপক ধ্বংসলীলা চালানো শুরু করলে দৈববিধান দেওয়া হয় যে একমাত্র শিবের পুত্রই পারবে তারকাসুরকে দমন করতে৷ কিন্তু শিব তখন তার প্রথমা স্ত্রী সতীর মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন ও বাহ্যজ্ঞানহীন৷ এই কারণে কামদেবকে দেবতাগণ শিবের কামনা পুনরায় উদ্ভুত করার দায়িত্ব দেন৷ কামদেব রতি দেবীসহ মধু ও বসন্তকে নিয়ে কৈলাস পর্বতের উদ্দেশ্যে রওনা দেন৷ সেখানে গিয়ে কামদেব শিবকে কামবাণ প্রয়োগ করেন এবং কামনাশক্তির আহ্বান করেন৷ কামদেবের বাণে ঘায়েল হয়ে শিব সতীর অবতার দেবী পার্বতীর প্রতি আকৃৃষ্ট হয়ে পড়েন৷


সমস্ত ঘটনা বুঝতে পেরে শিব নিজের তৃতীয় নয়নের তেজে কামদেবকে অগ্নিদগ্ধ করেন । রতিদেবী কামদেবের মৃত্যুতে দুর্দশাগ্রস্থ ও মানষিকভাবে আহত হন । রতি দেবী পার্বতীর কাছে এর প্রায়শ্চিত্ত বিধান চেয়ে তাঁর কাছে নিজের স্বামীকে ফেরৎ পাওয়ার অনুরোধ জানান৷ পার্বতী তাকে শান্ত্বনা দেন যে কামদেবের পুনর্জন্ম হবে এবং তিনি পৃৃথিবীতে শ্রীবিষ্ণুর অবতার শ্রীকৃষ্ণের পুত্র প্রদ্যুম্নরূপে জন্মগ্রহণ করবেন এবং এতকাল যাবৎ রতি সম্বর অসুরের নিকট প্রদ্যুম্নের জন্মের অপেক্ষা করবেন । তার পর তো বাছারা সব জানোই শ্রী কৃষ্ণের পুত্র প্রদ্যুম্ন র কথা । তিনিই সতির স্বামী কামদেব । তো রতি কিন্তু এক যোগিনী বাছা । 


যোগিনী যুগপৎভাবে যোগের একজন মহিলা অভিজ্ঞ অনুশীলনকারী বুচেছ হে ! ঋষি জিজ্ঞাসা করলেন । আমরা আসলে এসেছি বেড়াতে হীরাপুর নামী স্থানে যা ওড়িশায় অবস্থিত । এখানেই অবস্থিত প্রসিদ্ধ চৌষট্টি যোগিনী মন্দির । এখানে আসা মাত্র আমি সাক্যদেব আর আমার বন্ধু মলয় জড়িয়ে পড়েছি এক মহা ঝামেলায় । তার থেকে মুক্তি পেতে আমরা শেষমেষ শরণাপন্ন হই এই চৌষট্টি যোগিনী মন্দিরের সমন্ধে পূর্ণ জ্ঞানী বালঠাকরে মহারাজের । উনি এখন ওই মন্দিরের নিকটবর্তী এক জলাশয়ের পাশেই সাধনা করেন । ব্যাপারটা খুলেই বলি ভারতের ওড়িশা রাজ্যের রাজধানী ভুবনেশ্বরের থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে খুর্দা জেলাতেই অবস্থিত এই হীরাপুর । 

ব্রাহ্ম রাজবংশের রানী হিরদেবী কর্তৃক নির্মিত হয় মন্দিরটি। চৌষট্টি যোগিনী মন্দিরটি ভারতের বিখ্যাত কিছু যোগিনী মন্দির গুলির মধ্যে অন্যতম। একটি বৃত্তাকার গঠনের মধ্যে নির্মিত, সম্পূর্ণভাবে মন্দিরটি বালি পাথরের খন্ড সঙ্গে একসাথে করে নির্মিত। 

মন্দিরটি একটি তান্ত্রিক মন্দির , সেদিন মলয় বললো চল সাক্য মন্দিরটা ঘুরেই আসি তার পর ভুবনেশ্বর চলে যাবো কাল । আমিও ভাবলাম এখানে ওই মন্দিরটা ছাড়া আর আছেই বা কি ? দেখে এলেই মিটে যায় । সেই মতো রওনা দিলাম ওদিকে । মলয় বা আমার দুজনেরই একটা বদ অভ্যাস আছে সেটা হলো মদ আর নারী আসক্তি । সেই আসক্তি আমাদের আজ জীবন আর মৃত্যুর খাদের ধারে এনে দাঁড় করিয়ে দিল । তো যেটা বলছিলাম , সেদিন একটা ছোট হোইস্কির বোতল , একটা সিগারেট এর প্যাক নিয়ে রওনা দিলাম মন্দিরের দিকে । ওখানে গিয়ে দেখি ফাঁকা জায়গা , মনের সুখে নিরীক্ষনে জুটে গেলাম দুজনেই । বৃত্তাকার প্রাচীরের অভ্যন্তরে মূর্তিটি রয়েছে, প্রতিটি গৃহের মূর্তিটি একটি দেবী। দেওয়ালের গর্তে চারপাশে প্রায় ৫৬ টি মূর্তি রয়েছে, দেবীর মূল মূর্তিটির কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত, মূর্তিটি দেবী কালীর । আমরা সব মূর্তি গুলি দেখে বাইরে গিয়ে একটু হুইস্কির স্বাদ নিতে শুরু করেই ছিলাম আর মলয় হঠাৎ করে বললো দেখ সাক্য শালা হেবি একটা মাল মাইরি । আমি মুখ তুলে এদিক ওদিক দেখলাম কই কেউ নেই ! হয়ত বা মন্দিরের ভিতরে ঢুকে গেছে , মলয় ধা করলো পিছু পিছু সেই রমণীর । তার পর বেশ কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে আসে মলয় বিধস্ত ক্লান্ত তৃপ্ত বদনে । আমি বুঝলাম ফাঁকা মন্দিরেই কার্য সমাধা হয়ে গেছে । আমাকে ও বললো যা ভাই মাইরি বলছি খাসা মাল । আমি অচেনা স্থানে , পবিত্র প্রাচীন মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট করতে চাইলাম না । আর তার পর হোটেলে ফিরে এসে সেই রাত থেকে বিপত্তি শুরু । ঘুমের মধ্যেই কানে এলো ছম ছম নূপুররর শব্দ , খিলখিল মেয়েলি হাসির শব্দ । ভাবলাম হোটেলের বোর্ডার কেউ হবে । ভুল ভাঙলো কিছুক্ষণ পরেই , মলয় চিৎকার করে উঠলো , তুমি ? তু তু তুমি কি করে এখানে এলে ? আমি লক্ষ্য করলাম একটা ছায়া মূর্তি সামনে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের খাটের কিনারায় । আমি এবার ভয় পেয়ে গেলাম , বিদেশ বিভূঁই এ এসে এ কি ? বন্ধ হোটেলের ঘরে এত রাতে কে ? ক্ষনিকের লিপ্সা আমাদের জীবনে ডেকে নিয়ে আসে চৌষট্টি যোগিনীর একজন অন্যতমা কে , যার নাম রতি । 



মলয় চিৎকার করে উঠলো , তুমি ? তু তু তুমি কি করে এখানে এলে ? আমি লক্ষ্য করলাম একটা ছায়া মূর্তি সামনে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের খাটের কিনারায় । আমি সাত পাঁচ ভাবছি যে সামনে কে আর আচমকা দেখি মলয় নেই । লাইট জ্বালিয়ে সারা ঘরে , বাথরুমে কোথাও পেলাম না ওকে । বাইরে বের হয়ে খোলা বারান্দা থেকে উঁকি মেরে দেখি দুপুরের সেই মেয়েটি আর মলয় দুজনে কোমর জড়িয়ে ধরে হেঁটে চলে যাচ্ছে ওদিকে । আমি ভাবছি মেয়েটা কি করে এখানে এলো এত রাতে , বন্ধ ঘরে ? আর মলয় ওভাবে ওর সাথে চলেই বা গেল কেন মাঝরাতে । না ও ফিরলেই ওকে আচ্ছা সে দিতে হবে । বিদেশ বিভূঁই এ এসে এসব ছেলে খেলা মেনে নেওয়া যায় না । তার পর ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম । মলয় ফিরলে ডাকবে আমাকে , আমি খুলে দেব দরজা । সকালে মিটিং আছে তাই শুয়ে পড়লাম । ভোর বেলায় , ঘুমের মধ্যে শুনতে পাচ্ছি বাইরে চিৎকার হচ্ছে । এই হোটেল কাম মেস শুধুমাত্র পুরুষদের এলার্ট করা হয় । ভাবলাম মলয় মেয়ে ঢুকিয়ে ছিল বলে হয়ত এরা কিছু ঝামেলা করবে । ঘুম জড়ানো চোখে দরজা খুলে দেখি , মলয় পরে আছে বারান্দা তে । একরাতের মধ্যেই শীর্ণ ক্লিস্ট অবস্থায় । ওকে ঘিরে বাকি বোর্ডাররা জটলা করছে । আমি এগিয়ে মলয় কে তুলে ধরে রুমে এনে বিছানায় শুইয়ে দিলাম । ও ইশারা করে জল চাইলো । একটু জল খাইয়ে দিলাম ওকে । হোটেল মালিক বললেন , কি হে ছোকরা তুমি তোমার বন্ধুকে রাতে বুঝি বাইরে বের করে একাই শুয়ে পড়ে ছিলে ? তোমরা এখানকার লোক না , তাই জানো না । এখানে যোগিনী ঘোরে রাতে । কামের দেবী সে , তার নাম রতি । সে কোন জোয়ান মদদ কে পেলেই তার সাথে যৌন সম্পর্ক গড়ে তোলে । আর ওনার সাথে শারীরিক ভাবে লিপ্ত হওয়া মানেই মৃত্যু । আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না । মলয় উত্তর দেবার চেষ্টা করে , ও হাত নাড়াতে শুরু করে । আমি হোটেল মালিক কে বলি , যে চৌষটি যোগিনী মন্দিরে এক মেয়ের সঙ্গে মলয় এর আলাপ হয় । সেই কাল রাতে এসে মলয় কে ডেকে নিয়ে যায় । তার পর এখন আমি মলয় কে এই অবস্থায় দেখছি । ওর এই একরাতে এমন অবস্থা কেন হলো আমার জানা নেই ।


শুনেই হোটেল মালিক , কানে হাত দিয়ে কি সব দুর্বোধ্য মন্ত্র উচ্চারণ করতে লাগলেন । আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না । তার পর হোটেল মালিক ই আমাকে ওনার রিসেপশন এ ডেকে নিয়ে গেলেন । মলয় কে একটা চাদর ঢাকা দিয়ে আমি ওনার সঙ্গে গেলাম । উনি যেটা বললেন সেটা শুনে আমি বিশ্বাস করতে না চাইলেও আমাকে বিশ্বাস করতে হলো কারণ কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে মলয় এর এই অবস্থা দেখে । ওকে যেন কেউ চুষে ফেলে দিয়ে গেছে । গোলগাল মলয় কে দুপুরের পর একটু দুর্বল রুক্ষ লাগছিলো ওটা আমি বা  ও কেউ গুরুত্ব দিনি । কিন্তু তার পর রাতে ..

হোটেল মালিক প্রদম জি বললেন , এই চৌষটি যোগিনী মন্দিরে যদি দেবী মুর্তি গুলিকে শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে না দেখে কেউ কামুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ও দেখে তো তার মৃত্যু হয় । দেবী রতি প্রেম, লিপ্সা ও পরিতোষের দেবী । এই এলাকায় কোন দুশ্চরিত্র পুরুষের স্থান নেই । তাকে দেবী নিজে শাস্তি দেন । মোহিনী রূপে ধরা দিয়ে শিকার কে করাগত করে তার জীবনী শক্তি টেনে বের করে আনেন দেবী । আমি বুঝলাম , মলয় কাল দুপুরে মূর্তি গুলোর সুন্দর ভাস্কর্য কে কালিমালিপ্ত করেছিল । মূর্তি গুলোর মধ্যে যৌন বিভঙ্গি খুঁজে বের করছিল ও । তার পরই কোথা থেকে উদয় হয় রহস্যময় নারী । মাঝরাতে মলয় কে নিয়ে যায় সে আর ওকে প্রায় নিকড়ে নিয়ে রেখে যায় । আমি প্রদম জি কে বলি , কোন একটা উপায় নেই ওকে বাঁচানোর ? একসাথে এসেছি কলকাতা থেকে অফিসের কাজে , ভালো বন্ধু ও আমার । ওকে ছাড়া ফিরতে পারবো না । প্রদম জি বললেন , ফিরতে হবেও না । মলয় এর সাথে কাল দুপুরে কে ছিলো ? তুমি তো সাক্যদেব ? কামদেবী তোমাকেও তার শিকার বানাবেন । আজ যদি মলয় কে রক্ষা করতে না পারো তো কালকে তোমার ও লাশ পড়ে থাকবে উড়িষ্যার এই চৌষটি যোগিনী ভূমে । আমার তো পুরোটাই মাথার উপর দিয়ে বেরিয়ে গেল । মানে ! আমাকে কেন শিকার বানাবে কামদেবী রতি ? আমি তো মুর্তি গুলোর দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ও দেখিনি , রতির সাথে লিপ্ত ও হইনি । হ্যাঁ আমার নারী দোষ আছে , কিন্তু কালকের ঘটনায় আমার কোন হাত ছিলো না । প্রদম জি বললেন , দেবী অসন্তুষ্ট হয়েছেন , তিনি ওই অসন্তোষ অবস্থায় তোমাকেও সামনে পেয়েছেন । তুমি নিজেই স্বীকার করলে , তোমার নারী আসক্তি আছে । রতির কোপে তুমিও পড়বে । সত্যি মিথ্যা জানি না , একটা কথা জানি প্রাণ নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে হবে । আমি বাকবিতন্ডা না করে শুধু বললাম , কোনো উপায় জানেন ? তারপর উনি আমাদের ঋষির কাছে নিয়ে আসেন ।  এই চৌষট্টি যোগিনী মন্দিরের সমন্ধে পূর্ণ জ্ঞানী বালঠাকরে মহারাজই হয়ত আমাদের বাঁচার উপায় দিতে পারেন । উনি এখন ওই মন্দিরের নিকটবর্তী এক জলাশয়ের পাশেই সাধনা করেন ।


উনি আমাদের বিস্তারিত বর্ণনা করে জানালেন যোগিনী দের কথা আর এই হীরাপুরের মন্দির সম্বন্ধে । মলয় বসে থাকার অবস্থায় নেই , ও আমার কোলের উপর মাথা রেখে শুয়ে শুয়ে সব শুনছে । বালঠাকরে মহারাজ বললেন , কামদেবের স্ত্রী হলেন রতি । কাল ছিলো অমাবস্যার প্রাগ লগ্ন , ওদিকে সুর্য গ্রহণ ও ছিলো । সেই সময় তোমরা মন্দিরে গিয়ে দেবী মূর্তি গুলোর দিকে কামনার দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছিলে । মন্দির বা তার পার্শবর্তী এলাকায় সুরা সমরোস পান নিষেধ । সে কাজও শুনছি করেছ তোমরা । দেবী ওই মাহেন্দ্রক্ষনে জাগ্রত হয়ে তার ভুবন মোহিনী রূপে ধরা দেন । সাক্যদেব ও মলয় কে দেখাও দেন । মলয় ওনার পরীক্ষায় অসফল হয় । ওনার ছায়াকে মনুষ্য ভ্রমে মলয় ছায়ার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে । দেবীর স্বামী কামদেব , তাই মলয় এর কাম কে নিজের স্বামীর অঙ্গরাগ ভেবেই দেবী তা গ্রহণ করছেন । কিন্তু মলয় তো সাধারণ মানুষ , তার ক্ষমতা নেই দেবীর উর্যা সহ্য করার । এদিকে দেবীর ডাকে সাড়া না দেবে এমন ক্ষমতা পৃথিবীতে কারো নেই । মলয় মাত্র দুবার সঙ্গম করেই অস্থি চর্মশার হয়ে গেছে । আজ দেবী আবার তাকে ডাকবে । এবার মলয় রতির সাথে সঙ্গম রত অবস্থাতেই পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে যাবে । তাতেও দেবী শান্ত হবেন না , সাক্যদেব তোমাকে ও উনি মোহতে জড়িয়ে শেষ করে দেবেন এই ভাবেই । আমি হাত জড়ো করে ঋষিকে বললাম বাঁচান আমাদের । উনি আমাদের হোম কুণ্ডের কাছে বসিয়ে তার চার দিকে গন্ডি কেটে দিলেন । বললেন হোমের সামগ্রী আনতে যাচ্ছি । যেই ডাকুক তোমরা বেরোবে না গন্ডির বাইরে । আমি ডাকলেও না , আজকের দিন না পেরিয়ে গেলে তোমাদের গন্ডি পেরিয়ে যাওয়া বিপদ ডেকে আনতে পারে । রতি ভিন্ন রূপ ধারণ করে আসবেন , তোমরা সাবধানে থাকো । আমি সরঞ্জাম জোগাড় করে আসছি । উনি তো চলে গেলেন , মাথায় উপর গণ গনে প্রখর সূর্য , সারাটা দিন রাত এখানে বসে থাকা সহজ হবে না । গন্ডির মধ্যেই এক কুঁজো জল , এক ছড়া কাঠালি কলা রেখে গেছেন ঋষি । অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলেও উনি ফিরলেন না । মাঝে একবার একটা কুকুর এসে গন্ডির বাইরে ঋষির অন্যান্য জিনিসপত্র তে মুখ দিচ্ছিল । ভিতর থেকে আমি তাড়ানোর চেস্টা করেছি , বাইরে বের হইনি । মলয় এর অবস্থা খুব খারাপ , ও অঘোরে ঘুমাচ্ছে । দেবীকে তুষ্ট করে ফেরত পাঠিয়ে , কলকাতা ফিরেই মলয় কে হসপিটালে ভর্তি করে দেব । মিটিং ক্যানসেল তো হলোই , প্রমোশন এর দফারফা । এবার পৈত্রিক প্রাণ বাঁচাতে পারলেই হয় । 



)


ঋষি সেই গেছেন ফেরার কোন নাম নেই । মলয় অস্থির হয়ে উঠছে মানে দেবী কাছাকাছি কোথাও আছেন । মলয় খুবই অসুস্ত ওর স্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে । সাক্যদেব ও মলয় কে নিয়ে বসে আছে , মনে উৎকণ্ঠা ভীষণ বেড়ে গেছে । সন্ধ্যা নেমে এসেছে , চারদিকে অমানিশা অন্ধকার হয়ে গেছে । মশার দল এসে ছিঁড়ে খাচ্ছে , সাক্য নিজের হৃদস্পন্দন নিজেই শুনতে পাচ্ছে । ক ছড়া কলা আর এক কুঁজো জল কখন শেষ হয়ে গেছে , খিদে ওদিকে মশার উপদ্রব আর গন্ডিতে থাকার ধৈর্য রাখতে দিচ্ছে না । একটা হিমেল বাতাস আচমকাই বয়ে এলো । সুন্দর একটা গন্ধ নাকে আসতে মনটা কেমন হালকা হয়ে উঠলো । চারদিকে কেমন যেন মায়াবী পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে আচমকা । সাক্য চেতনা হারালো আর মলয় যে এই মাত্র সাক্যর কোলে বেঘোরে পরে ছিল সে উঠে দাঁড়ালো । গন্ডির বাইরে দাঁড়িয়ে তাকে আবাহন করছে এক অতীব সুন্দরী নারী । চন্দনের মতো তার গায়ের রং , মুক্তোর মত দাঁত ... হাসিতে তার বিদ্যুৎ খেলে যায় , দীর্ঘ কাজল কালো নয়ন , কেশ যেন কোন যুবতী নদীর প্লাবন । গন্ডির বাইরে বের হয় মলয় , ওই নারী কে আলিঙ্গন করে সে । মুহূর্তে সব শেষ , মলয় ভস্ম হয়ে পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে যায় । এবার দেবীর প্রথম শিকার শেষ , লক্ষ্য দ্বিতীয় জন সাক্যদেব । সাক্যর কানে আসে এক মনোহর সুর । সাক্য চেতনা ফিরে পেয়ে সামনে পায় দেবী রতি কে । সাক্য মুগ্ধ হয়ে যায় , তীব্র বাসনা তাকে বেঁধে ফেলে দ্রুত । প্রেম জীবনে অনেক এসেছে কিন্তু তা তো প্রেমের নামে নিছকই বাসনা । সাক্য মোহিত তবুও তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় তাকে সজাগ থাকতে নির্দেশ দিচ্ছে অনবরত । তার কানে আসছে ঋষির নির্দেশ । সাক্য চিৎকার করে বলে , মলয় কে আপনি শেষ করে দিয়েছেন । সে অন্যায় কাজ করেছিল কিন্তু আমি কি দোষ করেছি দেবী ? 


দেবী বলেন , আমার স্বামী কামদেব আর উনি যার মাধ্যমে আমার কাছে আসতে চান আমি স্ত্রী হয়ে কি করে তাকে বাধা দিতে পারি ? তোমার মধ্য যে কামের জন্ম হয়েছে এখন সে আমার স্বামীর ই তো রূপ । এস সাক্যদেব আমার কাছে এসো , আমি তোমাকে পরিতৃপ্তি দেবো । কেউ আমার উর্যা সহ্য করতে না পারলে কি আমার দোষ ? এসো দ্রুত এসো সাক্যদেব ........ সাক্য কিছুতেই নিজেকে আটকে রাখতে পারছে না । তার পা এগিয়ে যেতে থাকে গন্ডির ওপারে । এমন সময় ঋষি হাজির হন আর সাক্য কে চিৎকার করে আদেশ দেন , এই ছেলে কিছুতেই ওই গন্ডি পেরিয়ে আসবে না । সাক্য ঋষিকে দেখে মনে বল পায় , কাম যা এতক্ষণ তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছিল তার স্থান নেয় ভয় । সাক্য  দাঁড়িয়ে যায় । ঋষি বলেন , হে মাতে আপনি কামদেবের স্ত্রী ... আপনি কাম ও লিপ্সা ই নয় পরিতোষ এর ও দেবী । আপনাকে এই অধম মা বলে ডাকছে । ছেলের মিনতি রাখুন মা । আপনি চৌষটি যোগিনীর একজন , আর আমি আপনাদের চৌষটি রূপের সাধক । আপনি এই নির্দোষ কে ছেড়ে দিন মা । দেবী তাকালেন ঋষির দিকে , না ঋষির দৃষ্টিতে কামদেবের কোনভাবেই উপস্থিতি নেই । দেবী বললেন , মূর্খ সরে দাঁড়া । আমার পথে এলে তোকেও মরতে হবে । ঋষিরও এবার রাগ মাথায় উঠলো , সে বললো তবে রে .... তার পর ঋষি চৌষটি যোগিনীর অন্যতমা দেবী চামুণ্ডা স্মরণ করলেন । দেবী দুর্গার তন্ত্রে উল্লিখিত চৌষট্টি বা চুরাশি জন সহচরী বা যোগিনীর অন্যতম হলেন চামুণ্ডা। আবার তিনিই ভগবতী দূর্গা। চণ্ড ও মুণ্ড নামে দুই অসুরকে হত্যা করে তিনি ‘চামুণ্ডা’ নামে পরিচিত হন। চামুণ্ডাকে দেবী কালীর অপর রূপ মনে করা হয়। পার্বতী, চণ্ডী, দুর্গা, চামুণ্ডা ও কালী এক ও অভিন্ন। কথিত আছে, চামুণ্ডার আবাসস্থল হল শ্মশানভূমি বা ডুমুর গাছ। আনুষ্ঠানিকভাবে পশুবলি দিয়ে ও মদ নিবেদন করে এই দেবীর পূজা করা হয়। প্রাচীনকালে চামুণ্ডার পূজায় নরবলিও দেওয়া হত। চামুণ্ডা প্রকৃতপক্ষে একজন আদিবাসী দেবী ছিলেন। ঋষি প্রচন্ড ক্রোধে একাগ্র চিত্তে মন্ত্র উচ্চারণ করতে শুরু করে 

ওঁ ঐঁ হ্রীঁ ক্লীঁ চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে

ওঁ ঐঁ হ্রীঁ ক্লীঁ চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে


আজ তার ভক্তির পরীক্ষা , সে সারা জীবন দিয়ে দিয়েছে এই যোগিনী সাধনাতে । এক নির্দোষ কে বাঁচাতে সে তার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করবেই । দেবী রতি ও এবার তাড়াহুড়ো তে কারণ শিকার কে এখনই করাগত না করতে পারলে , মা চামুণ্ডার আগমন ঘটে গেলে তা সম্ভব হবে না । হিন্দু দেবীরা সাধারণত সুডৌল স্তনযুক্তা ও সুন্দরী হন। কিন্তু চামুণ্ডার রূপ তাদের বিপরীত। এই রূপ জরা, মৃত্যু, ক্ষয় ও ধ্বংসের প্রতীক। চামুণ্ডা সপ্তমাতৃকার অন্যতম। দেবীপুরাণে চামুণ্ডা নামের একটি ভিন্নতর ব্যাখ্যাও পাওয়া যায়: এখানে চণ্ড শব্দের অর্থ ভয়ংকর ও মুণ্ড শব্দের অর্থ ব্রহ্মার মস্তক বা প্রভু বা পতি। দেবী রতি কখনই এই সাধারণ মানুষ দের কাছে হেরে যাবে না । সাক্য কে বশীভূত করে গন্ডির বাইরে বের করতে সক্ষম হয় দেবী তার পর সাক্য এগিয়ে এসে রতিকে আলিঙ্গন করতে চায় এমন সময় আচমকাই তার সামনে দাঁড়িয়ে যায় দেবী চামুণ্ডা । দেবী চামুণ্ডা রক্ত অথবা কৃষ্ণবর্ণা; নরমুণ্ডমালা শোভিতা; বর্ণনাভেদে চতুঃ, অষ্ট, দশ বা দ্বাদশভূজা; ডমরু, ত্রিশূল, খড়্গ, সর্প, খট্বাঙ্গ, বজ্র, ছিন্নমুণ্ড ও রক্তপূর্ণ পানপাত্র ধারিণী; শব অথবা প্রেতের উপর উপবিষ্টা অথবা পরাভূত দৈত্য বা প্রেতাসনে স্থিতা; ত্রিনয়না; কঙ্কালসার দেহ, ভয়াল মুখমণ্ডল, লম্বিত স্তন, সম্মুখপ্রসারিত দন্তপংক্তি, দীর্ঘ নখর ও স্ফীত উদর যুক্তা; অস্থি, কঙ্কাল, সর্প ও বিছের অলংকারে ভূষিতা, যা ব্যাধি ও মৃত্যুর প্রতীক; নরকরোটীর যজ্ঞোপবীত ধারিণী; মস্তকে জটার মুকুট এবং মস্তকে অর্ধচন্দ্র শোভিতা। দেবীর ভয়াবহ রূপ দেখে সাক্যর ভিতরে কাম অদৃশ্য হয়ে যায় । দেবী এবার ভীষণ ক্রোধ নিয়ে রতির দিকে ঘুরে দাঁড়ায় । দেবী চন্ডিকা  কিছু বলার আগেই দেবী রতি ও অদৃশ্য হয়ে যায় । কারণ যেখানে কাম নেই সেখানে রতি ও থাকে না । ঋষি মা চন্ডিকা কে নমন করে , তার পর দেবী অদৃশ্য হয়ে গেলে ঋষি সাক্যদেবের চোখে মুখে জল দিয়ে জ্ঞান ফিরিয়ে আনে । সাক্য জ্ঞান অর্জন করেই বুঝতে পারে বিপদ হয়েই গেছে , মলয় আর নেই । ঋষি তাকে সবটাই বলে , দেবী রতির মোহে ছিল বলেই সাক্যর কিছু মনে নেই । ঋষি তাকে ভোর হতেই এই হীরাপুর ছেড়ে চলে যেতে নির্দেশ দেন । আর পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দেন যে আগামী দিনে সাক্যদেবকে ব্রহ্মহচর্য পালন করে যেতে হবে । কারণ সে বিয়ে বা অন্য কোন ভাবে কোন নারীকে শারীরিক ভাবে গ্রহণ করলেই তার মধ্যে যে কামের উদ্বেগ হবে তাতে সে আবার দেবী রতির আবাহন করবে । রতি তার শিকার সুযোগ পেলেই করবে । সাক্য ঋষি কে কথা দেয় আর কোনদিন কোন নারীকে সে নোংরা দৃষ্টিতে দেখবে না । সে আজীবন ব্রহ্মহচর্য পালন করবে । মলয় কে হারিয়ে সাক্য একাই কলকাতা ফিরে আসে পিছনে ফেলে আসে কামনার দেবীর ক্রোধ । 







Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama