প্রায়শ্চিত্ত - ৩
প্রায়শ্চিত্ত - ৩
মাহবুবের ফোন দেখে আমি বুঝতে পেরেছিলাম, সে আমাকে জানাবে সুমি খুন হয়েছে। আমিও খুব ঠান্ডা মাথায় অভিনয় করে গেলাম। আমার বউ এই খবর শোনেই গভীর রাতেই রওনা দেওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেলো। শেষ পর্যন্ত তাকে নিয়ে পৌছালাম বাসায়। মানুষের ভীড় ঠেলে ভেতরে ঢুকলাম। পুলিশ সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে, এদিকে আমার বউ সুমির লাশ দেখে বেহুশ হয়ে পরে গেলো। এইসব ঝামেলা পার হয়ে সুমির লাশ নিয়ে মাহবুব তাদের গ্রামের বাড়ি রওনা দিলো। তখনি শেষ দেখা ছিল মাহবুবের সাথে। বেচারা কোন কথাও বলেনি। চুপচাপ শুধু গাড়ির পিছে সুমির লাশের পাশে বসে তার হাত ধরে রইলো। তার বন্ধুরা সব প্যাকিং করে গুছিয়ে তার সাথে রওনা দিলো। আমি পরের দিন রুম ক্লিন করিয়ে ভাড়া দেওয়ার জন্য To- Let টানিয়ে দিলাম। এদিকে আমার বউ শোকে পাথর হয়ে গেলো। ওই কাহীনি আমিও পুরোপুরি ভাবে ভুলে গেছি, কাজের ভিড়ে নিজের অনুশোচনা টুকুও মুছে গেছে। কিন্তু আমার শাস্তি শুরু হয় সপ্তাহ খানিক পর। একদিন আমার বন্ধুর বিয়ের দাওয়াত খেয়ে বাসায় ফিরতে বেশ দেরি হয়ে যায়। তাছাড়া বাসায় আমার বউ থাকে না, সে ওই ঘটনার পর আমার মায়ের সাথে থাকতো গ্রামে। তাই বাসায় ফিরে কাপড়চোপড় না পাল্টেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। কখন চোখ লেগে গেলো বুঝতে পারিনি, ঘুম ও না ঠিক একটু তন্দ্রা ভাব। হঠাৎ আমার চোখ খুলে কাচ ভাঙ্গার আওয়াজে। চোখ মেলে দেখি ঘরে কারেন্ট নেই। ঘুটঘুটে অন্ধকার, তবে ঘরে কেউ আছে এইটা বুঝতে পারছি। দরজা লাগাতে ভুলে গেছি হয়ত, তাই ঘরে চোর ঢুকেছে, এই ভেবে আমি ফোন টা বের করলাম। ভাগ্যিস, পকেটেই ছিলো! আবারো সেই আওয়াজ। মনে হচ্ছে আমার ঘরের সব কাচের জিনিসপত্র ভেঙ্গে ফেলছে। আমি ফ্ল্যাশলাইট অন করে তাড়াতাড়ি ডাইনিং রুমে গেলাম। ডাইনিং রুমের টেবিলের ডান পাশে একটা ওয়াল কেবিনেট ছিলো, ওইটা খুলে একটা মেয়ে কি যেন খুজতেছে, আর না পেয়ে থালা বাটি ছুড়ে ফেলছে। আমি বেশ জোরে ধমক দিয়ে বললাম, " এই কে তুমি? " এইখানে কি চাও? " "সাহস কত বড়, ঘরে চুপিচুপি ঢুকে আমার জিনিসপত্র ভাঙ্গচুর করছো,? " আমার কথায় মেয়েটা খোজাখুজি বন্ধ করে দিলো, ধীরে ধীরে সে আমার দিকে ফিরলো। আমি তখন তার মুখ দেখে পুরো ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম। মনে হচ্ছিলো, সেকেন্ডের ভেতরে আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত কেউ কারেন্ট পাস করে দিয়েছে। আমার কান পর্যন্ত গরম হয়ে গেলো ভয়ে। আমার সামনে সুমি দাঁড়িয়ে আছে। আমার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছিলো না।সুমি কিছুক্ষণ আমার দিকে অস্বাভাবিক একটা হাসি দিয়ে ঘাড় বাকিয়ে তাকিয়ে ছিলো। হঠাৎ তার মুখে ব্যাথার ছাপ দেখতে পেলাম। সে ব্যাথায় নুয়ে তার পেটে হাত দিয়ে দেখছিলো। আমিও সেই দিকে তাকিয়েই ছিলাম, হঠাৎ দেখি তার পেটে রক্ত জামার উপর দিয়ে ভেসে উঠছে। তখন সে গোঙানো শুরু করলো, আর তার জামা ছিড়ে পেটের কাটা অংশে নিজের হাত ঢুকানো শুরু করলো। এই দৃশ্য দেখে আমি ভয়ে দৌড় দিতে চাইলাম, কিন্তু মনে হচ্ছিলো আমার পা আটকে গেছে, আমি নড়তে পারছিলাম না। শুধু মুখ দিয়ে বের হলো " আমায় মাফ করে দাও" এই কথা শোনে সুমি রাগে আমার দিকে তাকালো, চোখ পুরোপুরি কালো কুচকুচে হয়ে গেলো, রাগে সে পুরো হাত টাই পেটে ঢুকিয়ে হ্যাচকা টানে কি যেন বের করে আনলো। আমার মুখের সামনে সেই জিনিস টা নিয়ে এগিয়ে আসতে লাগলো৷ তার হাতে ছিলো ছোট্ট একটা বাচ্চা, সে পায়ে ধরে রেখেছিলো উল্টো করে। আমি তখনো মাফ চাইতে লাগলাম, কিন্তু সুমি তখন এমন বিদঘুটে এক চিৎকার দিলো আর সাথে সাথে তার হাতের বাচ্চাটা আমার দিকে ছুড়ে মারলো। আমার মুখে এসে পরলো, তাকিয়ে ছিলাম বলে আমার ডান চোখে কি যেন ঢুকলো। আমি খুব যন্ত্রণা অনুভব করছিলাম চোখে, আমি দুই হাত দিয়ে চোখ চেপে ধরে রেখেছি। আর আমার হাত থেকে ফোন টাও পরে গেলো, ঠিক তখনি এই ফোনের শব্দে আমার ঘোর ভাঙ্গলো। দেখি আমি বিছানায় শুয়ে আছি , আর ফোন টা নিচে পরে আছে। কারেন্ট ও আছে ঘরে, লাইট ফ্যান চলছে। আমি ঘেমে পুরো জামা ভিজে গেছে। আমি ওয়াশরুমে ঢুকলাম, তখন লক্ষ্য করলাম আমার গা থেকে মানুষ পচা গন্ধ বের হচ্ছে। তাড়াতাড়ি কাপড় চোপড় খুলে আয়নায় দাড়ালাম চোখ টা দেখার জন্য, ডান চোখ আমার লাল হয়ে আছে, ফুলে অনেকটা ছোট ও হয়ে গেছে। আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। যে ব্যাপার টা আমার মাথায় নেই, সেইটা নিয়েই কেনো এমন স্বপ্ন দেখলাম। স্বপ্ন টা নিয়ে ভাবতে আর মন চাইছিলো না, এত বিদঘুটে ছিলো যে দৃশ্য গুলা মনে হতেই গা শিউরে উঠে। গোসল সেরে ডাইনিং টেবিলে পানি খাওয়ার জন্য গেলাম। গিয়ে দেখি ওয়াল কেবিনেট খুলা, আর বেশ কিছু কাচের থালা বাটি নিচে ভেঙ্গে পরে আছে। আর সেই মানুষ পচা গন্ধ, এইসবের মানে কি? রাত টা কোনমতে কাটিয়ে সকালে বের হয়ে গেলাম। আজকে ব্যবসায়ের অংশীদারদের লভ্যাংশ দিতে হবে। আমি অফিস রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে টাকা গুনতে লাগলাম, হঠাৎ আমার চোখ টা প্রচুর সুড়সুড় করতে লাগলো, মনে হচ্ছিলো কি যেনো একটা লেগে আছে চোখে। আমি ফোন টা বের করে, সেল্ফি ক্যামারা অন করে চোখ টা দেখতে লাগলাম। তখন দেখি আমার চোখ দিয়ে ছোট্ট একটা কালো সুতার মত লিকলিকে পোকা বের হচ্ছে কিন্তু অর্ধেক চোখের ভেতর আটকে আছে। এই দৃশ্য দেখে আমি ভয়ে কি করবো, কিছু না ভেবেই টেবিলে থাকা কলম দিয়ে চোখে ঘা দিলাম পোকা মারার জন্য। যন্ত্রণায় আর রক্তে আমি চিৎকার করে জ্ঞান হারালাম।
(To be continued.....)
