প্রায়শ্চিত্ত -২
প্রায়শ্চিত্ত -২
ঠান্ডা বাতাস আমার শিড়দাড়া দিয়ে বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো। স্ট্যাম্প লাইট টা আবারো নিভু নিভু করছে। কেমন যেন একটা ঘোর লাগা পরিবেশ তৈরি হলো, মনে হলো দৃশ্য গুলো আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। গম্ভীর আওয়াজে লোকটা তার কাহীনি বলে যেতে লাগলো। " আমি খুব বড় ব্যবসায়ী ছিলাম। টাকা পয়সার কমতি আমার ছিলো না। বড় ফ্ল্যাট বাসা করে আমাদের থাকার জায়গা রেখে বাকিটুকু ভাড়া দিতাম। আমার বউ খুবই ভালো এবং মিশুক। কিন্তু তার সবচেয়ে বড় দুঃখ হলো সে কখনই মা হতে পারবে না। আমাদের দিন কাল ভালই যাচ্ছিল, তবে আমার দিন কাল বদলে গেলো নতুন ভাড়াটিয়া আসায়৷ New married couple. মাহবুব আর সুমি। মেয়ে টা দেখতে অসম্ভব সুন্দরী ছিলো, আর আমার বউ মেয়েটাকে খুবই পছন্দ করতো। তারা সব সময় একসাথে থাকতো, তাই মেয়ে টাকে দেখার সুযোগ হতো আমার। প্রায় সময় একেক বাহানা বানিয়ে বাসায় থেকে যেতাম সুমিকে দেখার জন্য। সুমির husband মাহবুব সকালে অফিসে যেত আর অনেক রাত করে বাসায় ফিরতো। তাই সুমি আমাদের ঘরেই থাকতো বেশির ভাগ সময়। এইভাবে দিন দিন ওর প্রতি আমার আকর্ষণ বাড়ছিলো। ওর কথা বলা, ওর হাসি, আমায় ভেতর থেকে পাগল করে দিতো, ভাবতাম, একবার ওকে কাছে পেতাম। সেই সুযোগ ও আমি পেয়ে গেলাম। একদিন ফোন এলো আমার মা অসুস্থ, তাই আমার বউকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিলাম আর বললাম আমার একটা জরুরি কাজ আছে ওইটা সেরে আমি রাতেই রওনা দিবো। বিকেলে আমার বউ চলে গেলো। সন্ধ্যা নাগাদ অপেক্ষা করলাম, কিভাবে যাবো কি বলবো। হঠাৎ করে আকাশে প্রচন্ড মেঘ করে বৃষ্টি নামতে শুরু করলো। বেশ ভালো একটা পরিবেশ তৈরি হচ্ছে ভেবে excited হচ্ছিলাম। এমন সময় বিদ্যুৎ চলে গেলো, আমি খুশিতে হাতে একটা বাটি নিয়ে ফোনের ফ্ল্যাশলাইট অন করে সুমির দরজার সামনে উপস্থিত হলাম। নক করতেই সুমি দরজা খুলে দাড়ালো৷ সুমি আমায় দেখে বললো ভাইয়া আপনি? ভাবী কোথায়? " আমি বললাম " আমার মা অসুস্থ ত, তাই তোমার ভাবীকে বাড়িতে পাঠিয়েছি। আমিও চলে যাবো একটা কাজ ছিলো ত, আচ্ছা তুমি আমায় একটু চিনি দাও ত আমি একটু কফি বানাবো ত চিনি নেই " সুমি হেসে দিয়ে বললো " এই কারণে চিনি নিতে হয়? কফি খাবেন আমায় বললেই হতো, আপনি বসুন আমি এক্ষুণি আপনাকে স্পেশাল কফি বানিয়ে দিচ্ছি " বেচারি জানতো ও না আমি কি উদ্দেশ্য নিয়ে তার কাছে এসেছি। সে রান্না ঘরে মোমবাতি নিয়ে ঢুকলো। আমিও এইফাকে দরজা লক করে, রান্নাঘরে গেলাম। সুমি আমায় দেখে বলতে লাগলো " ভাবী আমার কাছে বিদায় ও নিলো না? আমি একটু শোয়ে ছিলাম মাথা ঘুরাচ্ছিলো বলে, আমাকে ডাক দিলেই হতো, ভাবীকে মিস করছি খুব" তার কথা শেষ হতে না হতেই আমি তাকে জাপটে ধরে ফেললাম। সুমি এতো অবাক হলো, যে তার হাত থেকে কফির কৌটা নিচে পরে গেলো। আমি বলতে লাগলাম " তুমায় আমি খুব ভালোবাসি সুমি, এই সুন্দর সন্ধ্যা টা তুমি আমার হয়ে কাটাও, আমি তুমাকে কাছে পাওয়ার জন্য কত দিন অপেক্ষা করেছি। " বলে ওকে আরো শক্ত করে কাছে টেনে নিলাম। সুমি খুব ভড়কে গেলো সে আমার কাছে থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো আর বলতে লাগলো " এইগুলা কি ধরনের কথা ভাইয়া? আপনি আমায় ছাড়ুন, আমি কখনো আপনাকে এই রকম নোংরা মানসিকতা নিয়ে দেখেনি। আপনি কিভাবে এইসব বাজে কথা আমায় বলতে পারলেন? ভাবী জানতে পারলে খুব কষ্ট পাবে।" সুমিকে ছেড়ে দিয়ে আমি বুঝানোর চেষ্টা করতে লাগলাম কিন্তু সুমি ততই রেগে যাচ্ছিলো। এক সময় সে বললো আমি না বের হলে সে চিৎকার করে সব ফ্ল্যাটের মানুষদের জড়ো করবে। তখন আমি রাগে তাকে চড় মারি আর এতে সে উপুর হয়ে পরে যায়। আমি নিজের রাগ সামলাতে কিছুক্ষণ দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। হাত তোলা টা ঠিক হয়নি ভেবে অন্য উপায়ে বুঝানোর জন্য আবারো গেলাম সুমির কাছে, গিয়ে দেখি সে এখনো ওইভাবেই পরে আছে। আমি ফোনের ফ্ল্যাশলাইট অন করে তার কাছে গিয়ে দেখি রক্ত। আমি অবাক হয়ে ওর কাছে গিয়ে ভালো করে দেখার চেষ্টা করলাম। দেখলাম, ও উপুর হয়ে একটা বটির উপর পরে গিয়েছিলো, আর তার পেটের ভেতর ঢুকে আছে এই বটি। এই দৃশ্য দেখে আমি এক সেকেন্ড ও দেরি না করে রান্নাঘর থেকে আমার নিয়ে আসা বাটি টা হাতে নিলাম, বের হয়ে আমার রুমে ঢুকে কাপড় চোপড় গুছিয়ে বৃষ্টি তেই রওনা দিলাম গ্রামের উদ্দেশ্যে। আমার মাথায় কিছু কাজ করছিলো না। কিভাবে নিজেকে স্বাভাবিক রাখবো তাই ভাবছিলাম। বাড়িতে পৌছে মায়ের সাথেও দেখা করিনি, শুধু কাপড় চোপড় ছেড়ে শুয়ে পরলাম। কিছুক্ষণ পর আমার বউ এসে বলতে লাগলো সে সুমির জন্য গিফট কিনবে। আমি তার কারণ জানতে চাইলে সে বললো, সুমি ৩ মাসের প্রেগন্যান্ট নিজেও জানতো না। তাকে জোড় করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে এই খবর জানতে পারলো। আজকে মাহবুব কে সে সারপ্রাইজ দিবে। এই কথা শোনে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে এলো। আমি কি করলাম? আমার জন্য মেয়েটা....... …. এত বড় পাপ কাজ টা আমি করলাম? এমন সময় মাহবুবের ফোন এলো.......
(To be continued...)
