নির্ভেজাল আড্ডা
নির্ভেজাল আড্ডা
বারান্দায় দাঁড়িয়ে গোটা চাঁদ দেখেও মনটা ভালো হলো না। একটা নির্ভেজাল আড্ডার প্রয়োজন আছে বোধহয়।কয়েকটি দিন আমাদের সম্পর্কটা ঠিক চলছে না। আমরা রুমমেট মতো থাকি সব সময়। যদিও সবাই জাননে আমরা সুখী দম্পতি। বাড়ির লোকজন বিয়ে বিয়ে নিয়ে মাথা খারাপ করছিলো। এমন সময় কলেজ স্ট্রিট একটা পত্রিকার দপ্তরের আড্ডা মারতে মারতে আলাপ হলো সহেলীর সাথে। পুলিশে চাকরি করলেও, কবিতা লেখে তবে অন্যএকটি পরিচয় আছে। সে সমকামীদের প্রতিসমকামীদের প্রতি সহানুভূতিশীল । তাই আলাপটা জমিয়ে আরো কয়েকটি চা আঢ্ডা তারপর বিয়ের প্রস্তাব।আমি আসলে কোনও নরমাল মেয়েকে বিয়ে করতে চাইতাম না। স্কুল জীবনে আমি আমার বন্ধু বান্ধবদের আড্ডার মধ্যেমনি ছিলাম, কিন্তু আজকাল কোন আড্ডাই হয় না। বিবাহিত পুরুষ মানে সত্যিই মৃত । আর বিবাহিত জীবনের মানে সব স্বাধীনতা হারিয়ে শুধুমাত্র যৌনসুখের নিরাপত্তা পাওয়া যায়। কিন্তু তার সাথে আরো হাজার ঝামেলা চলে আসে। তাঁর মধ্যে সবচেয়ে বড়ো ঝামেলা ছেলে মেয়ে। আমি স্বাধীন থাকতে চেয়েছিলাম তাই সহেলীর মতো মেয়েকে বিয়ে করেছিলাম।
আজকাল কেন যেনো না সহেলীর মধ্যে কেমন একটা পরিবর্তন এসেছে। রিমঝিম তো রোজই আসে, আড্ডা মারে রাত কাটিয়ে যায় ওর সাথে। তাহলে আজকাল হঠাৎ কাছে কেন আসতে চাইছে? সেদিন দুইচারটে কথা শুনিয়ে দিলাম। তাই ওর মনটা খারাপ।
এ সমাজে প্রতেকটা মানুষের ভালোবাসার অধিকার আছে। বন্ধুত্ব কখনো লিঙ্গ দেখে হয় না মানিসিক হয়। পুরুষ হয়েও ভালো বন্ধু হলেও মানুষটা যদি ভালো হয় একসাথে থাকতে তো ইচ্ছে করতেই পারে। আইন স্বীকৃতি দিলেও একটা পুরুষ একটা পুরুষ সাথে একসাথে থাকাটা এখন স্বীকৃতি দেয়নি এ সমাজ। তাই নবারুণ আর আমি যাতে সারা জীবন সম্পর্কটা বজায় রাখতে পারি তাই সহেলী
র সাথে বিয়ে করা। কিন্তু সহেলি যখন কাছে আসতে চাইলো তখন মাথা ঠিক রাখতে পারলাম না, ভাবলাম নবারুণকে আমি ঠকাতে পারবো না । ওকে অপমান করে ফেললাম। আর তার ডেমেজ কন্ট্রোল করতে আজকের এই আড্ডা।
এক কাপ চা আর হাজার কথার ভীড়। আমার দুটোর অভ্যাস আমার নেই, আমি একা থাকতেই ভালোবাসি। চা আর আড্ডা তাদের প্রতি আমার কোনো ভালোবাসা, কোনোদিনও ছিল না,এটাও পুরোপুরি ঠিক নয়। আড্ডা, গল্প, হৈচৈ- এই তিনেই আমি যতোই বাদ দিতে যাই। যেখানেই যাই আমি, সেখানে ই মধ্যমনি হয়ে যাই আমি। কেমন লাগছে আমায় দেখতে, মানে ওই চিরাচরিত, মোটা না রোগা, ছেলে, স্বামী, শাশুড়ি খবর কি ? এ নিয়ে আলোচনা করা মহিলা মহলের আড্ডা , কিংবা রাজনৈতিক সমালোচনা আর প্রসঙ্গহীন তর্কবিতর্ক জুড়ে দেওয়া পুরুষালি আড্ডা নয়। একটা নির্ভেজাল আড্ডা । যেখানে আমরা যে আলাদা একটা মানুষ, শরীরের বাইরে যে আমার পরিচয় থাকতে পারে, সেটা নিয়ে আড্ডা আমাদের। যাইহোক রাহুল মুনমুন যোগ দিলো আজ আমাদের সাথে অনেক দিন পর। আসলে ওদের বাচ্চাটা এখনো অনেক ছোট।
আড্ডায় কোন মন নেই নবারুণের । বাচ্চাটা কোলে নিয়ে সব সময় সময় কাটিয়ে দিলো। আমি ওর কাছে যেতে আমার কোলে বাচ্চাটা দিয়ে উচ্ছাসিত ভাবে বললো " দেখ কি সুন্দর , কতো ছোট, ইস আমাদের যদি এরকম বাচ্চা থাকতো কি ভালো হতো।"
রিমঝিম আমাদের কথাটা শানতে পেলো।" সহেলি আমার বাচ্চা খুব পছন্দ। কিন্তু আমরা খোঁজ খবর নিয়ে দেখেছি। সমকামীদের বাচ্চা দত্তক নিয়ে মা বাবা হবার অধিকার নেই। "
সোহেলীর চোখে জল ভরে গেছে। আমি ওর কাছে গিয়ে ওর হাতটা ধরলাম।ও চোখের জলটা মুছে নিলো। রাত অনেক হয়েছে। সবাই বিদায় নেবে। কাল সকালে জানি সূর্যটা নিশ্চিত একটা নতুন সকাল নিয়ে আসবে মিষ্টি হাসি হেসে।