Scarlett MonaLiza

Fantasy Thriller Others horror

4  

Scarlett MonaLiza

Fantasy Thriller Others horror

নীল জলের আতঙ্ক

নীল জলের আতঙ্ক

21 mins
497


"আরো তিরিশ ডিগ্রী ইস্ট" বলে উঠলো এভলিন হকিন্স ম্যাথিউস। ক্যাপ্টেন এডি সেই আগ্যা পালন করলো, কিন্তু না আগ্যা পালন কোনো ভাবেই করা গেলোনা। ক্যাপ্টেন আবার সর্ব শক্তি জড়ো করে স্টিরিং হুইল ঘুরিয়ে ভেসেলটা চালানোর চেষ্টা করলো কিন্তু এবারও সে পারলো না। এবার মার্ক উঠে এসে হাত লাগলো। দুজনের চেষ্টায়ও একচুল নড়লো না ভেসেলটা। রবার্ট ডেকের থেকে কিছুটা দূরে বসে এদের কার্যকলাপ দেখছিল। এবার এগিয়ে গিয়ে বিশ্রীভাবে বললো, "চোখ আর চিন্তা সবসময় কাজের দিকে রাখতে হয় নইলে এসময় অবসরপ্রাপ্ত হতে হয়। স্টে অ্যাওয়ে ফ্রম এভলিন"। তারপর ক্যাপ্টেনকে রীতিমত ধাক্কা মেরে স্টিরিং হুইলের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিলো। ক্যাপ্টেন প্রায় পরেই যাচ্ছিল কিন্তু মার্ক তাকে ধরে নেয় আর রবার্টের হয়ে ক্ষমাও চায়। এদিকে রবার্টের নাজেহাল অবস্থা দেখে ক্যাপ্টেন "লুজ ড্রাইভার" বলে ব্যাঙ্গ করলো। রবার্টের মাথায় উঠে যাওয়া রক্ত এক নিমেষে বাষ্প হয়ে উড়ে গেলো মার্কের চিৎকারে। এই সময় ওরা তিনজন ছাড়া এভলিন আর জোয়ানাও ডেকে হাজির। চিৎকারের রহস্য ভেদ করার আগে নীল জলের নিচে বিশালকায় ছায়া দেখতে পেলো। পরক্ষনেই সেটি জলের অতলে যেতে যেতে অদৃশ্য হয়ে গেলো। তখন নেশা কেটে গেছে জোয়ানার। আকারের মোটামুটি যা আভাস পেয়েছে তাতে জিনিসটা চার মিটার লম্বা এটা সে সকলকে জানালো। জোয়ানার কোথায় ক্যাপ্টেনের কি একটা সংখ্যা হলো। তৎক্ষণাৎ সে কম্পাসটা হতে তুলে নিলো আর তখনই বুঝতে পারলো কিছু একটা অস্বাভাবিক ঘটতে চলেছে বা ইতিপূর্বে হয়তো ঘটে গেছে কিন্তু সেটা এখনো টের পায়নি। এভলিন ব্যাপারটা কিছুটা আন্দাজ করতে পারে ক্যাপ্টেনের পাশে এসে তার হাতে ধরা কম্পাসটার ফিকে তাকিয়ে বললো, "আশেপাশে ম্যাগনেটিক ফিল্ড অনেক বেশি তাই তোমার ম্যাগনেটিক কম্পাস এখানে কাজ করবে না"। এইকথা শুনে মার্ক প্রশ্ন, "আমার হ্যান্ড ওয়াচ কেনো চলছে না এতে তো চুম্বক নেই?" একই প্রশ্ন জোয়ানারও। ওরও ল্যাপটপ কাজ করছে না। অজানা আশঙ্কায় ক্যাপ্টেন সবাইকে মোবাইল চেক করতে বললো আর ঠিক তখনই জীবনের সব থেকে বড় ধাক্কাটা খেলো সবাই। কোনো এক অজানা কারণে কারোরই মোবাইল চলছে না। শুধু যে ব্যাটারি ডিড তা নয়, সেটা হিম শীতল হয়ে গেছে। সিম কার্ড শক্ত ঝামা বরফের একফালি শ্লেটের মতো হয়ে রয়েছে। রবার্ট বদমেজাজি হওয়ার কারণে বিশ্রীভাবে চিৎকার করে উঠলো। বললো, "তোমরা ফোনে চার্জ দাওনি তাই ডিভাইস গুলো কাজ করছে না। অযথা ভয় পাওয়া বন্ধ করো। তোমাদের মতো ভীতু আর মূর্খদের নিয়ে এখানে আশাই আমার উচিত হয়নি। আর মূর্খের রাজা এডমন্ড তোর ভেসেল যদি আর কোনোদিন ভাড়া করেছি আমি......"। এভিলিন তাকে কথার মাঝে থামিয়ে নিজেই বলে উঠলো, "আমরা একবারও বলিনি ভয় লাগছে। আর এখানে কেউ মূর্খ নয় সবাই এক্সপার্টস। সবাইকে ডিপার্টমেন্ট লাইসেন্স দিয়েছে এক্সপ্লোর করার। স্পেশালি এডি তো মূর্খ নয়। ও আমাদের ক্যাপ্টেন। সমুদ্রকে ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে চেনে, সে ভীতু হতে যাবে কেন দুঃখে"। এভিলিনের কথাগুলো ক্যাপ্টেনের ভালো লাগলো। আজ এত বছর পরেও এভিলিন তার হয়ে আবার প্রোটেস্ট করলো। এভিলিনের দিকে 'ইউ' বলে তেড়ে যেতেই মার্ক থামিয়ে দিলো রবার্টকে। দুটো হতে মাথার চুল খামচে ধরে বললো, "ওহ্ নো, সব কিছুর জন্য দাই ওই সামুদ্রিক ঝড়। কাল রাত্রে ওই ঘূর্ণায়মান ঝড়ের কবলে পড়ে আমরা ডিভাইস গুলোর কাজের ক্ষমতা হারিয়েছি। তোমাদের মনে আছে নিশ্চয়ই আবহাওয়া শান্তই ছিলো। পাড়ের কাছে ছোটো ছোট ঢেউ আঁচড়ে পড়ছিল, আর তখনই ভেসেলটা ভাসতে শুরু করেছিল। কিন্তু মিয়ামির পাড়ে দাঁড়িয়ে ভুল করে হলেও আবহাওয়ার কোনো সতর্ক বার্তা পায়নি আমরা, আর তার একটাই কারণ, যে ওই সামুদ্রিক ঝড় আটলান্টিসের মাঝেই আচমকা শুরু হয়েছিল। তাই আগে থেকে মৎস্যজীবীদের কোনো সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়নি। কারণ ওয়েদার রিপোর্টে কোনো ঝড়ের উতপত্তির চিন্হ পাওয়া যায়নি। এবার তোমরা বুঝতে পারছো তো কেনো আবহাওয়া শান্ত থাকা সত্বেও এই ঝড়ের কবলে পড়েছিলাম"। ক্যাপ্টেন বলে, " দুঃখের সঙ্গে জানতে হচ্ছে ভেসেলের নিম্নে থাকা একটা চাকা শক্ত কোনো বস্তুর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাই আমরা কিছুটা ধীর গতিতে এগোব"। জোয়ানা ক্রন্সওয়েল গরমে গায়ের জামাটা খুলে ফেললো। তারপর ইনার পড়া অবস্থায় ওদের সামনেই বসে পড়ে বললো, "এ কাট ফাটা রোদ্দুরে আমি আর পারছি না। আমায় বার্থে যেতে হবে। আস্থামা পাম্প না নিলে আর এগোতে পারবো না"। মার্ক তাকে অনুসরণ করতে গেলে, "বার্থে জেড আছে" বলে চলে যায় জোয়ানা।

রবার্ট ডেড ব্যাটারিটাকে নাড়াচাড়া করে বোঝার চেষ্টা করে এই তাপমাত্রায়ও সেটা একফোঁটাও গরম হচ্ছে না কেনো। ক্যাপ্টেন মার্কের দিকে চেয়ে বলল, "এমন ভয়ানক ঝড় আমি এর আগে কখনো দেখিনি। কাল রাত্রে আমার মন শুধুই সমুদ্রের দেবতাকে ডেকে গেছে"। তারপর এভিলিনের দিকে তাকিয়ে বললো, "আমি জানি গরমে তোমারও কষ্ট হচ্ছে। তুমিও বার্থে গিয়ে রেস্ট নিতে পারো তো। কোনো আইল্যান্ড দেখলে আমি তোমাদের খবর দেবো"। কথাগুলো এভিলিনের কানে পৌঁছল বলে মনে হলোনা। সে সেই সময় এক দৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছে তার থেকে ফুট কতক নিচে নীল জলরাশির আড়ালে দেখতে পাওয়া ছায়াটার দিকে। এদিকে রবার্ট গলা চেপে ধরলো ক্যাপ্টেনের। রাগের কারণ এভিলীন তার বাকদত্তা আর ক্যাপ্টেনের খারাপ নজর তার উপর। মার্ক এই মারপিঠ সামাল দিতে না পেরে ডেকের পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এভিলাইনের কাছে ছুটে যায়। কিন্তু সেখানে গিয়ে এভিলাইনের দৃষ্টি অনুসরণ করতেই সে যা দেখে তাতে তার সারা শরীর কেঁপে ওঠে। তিন-চার মিটারের একটা টেট্রাপড মাথা তুলে রেখেছে জলের উপরে। শরীরের বাকি অংশ জলের নিচে থাকার ফলে দেখা না গেলো মাথার সাথে সামনের দুটো বেঁটে বেঁটে পা দেখে বোঝা যাচ্ছে যে সেটা ওতন্ত ভারী একটি প্রাগৈতিহাসিক সম্ভবত পালেওজইক যুগের শেষাংশে বা মিসোজইক যুগের শুরুর সময়কার কোনো প্রাণী। খোলা মুখের ভিতরে থরে থরে সাজানো তিকনো দাঁতগুলো হিংস্র ভাবে বেরিয়ে আছে। মার্ক এই দৃশ্য দেখে চোখে হাত চেপে পিছতে গেলে এভলিন তার একটা হাত চেপে ধরে বলে, "সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পড়ে কালই আমরা মরে যেতাম কিন্তু ঘটনা চক্রে মিয়ামির উপকূলে দাড়িয়ে কোনোদিন ভাবতে পারিনি এমন বিপদে কোনোদিন পড়তে হবে। সাগরের কেন্ত্রবিন্দু থেকে উঠে আসা ঝড় আমাদের ভেসেলটাকে সামুদ্রিক একটা গহ্বরের ভিতরে টানছিল সেটা নিশ্চয়ই তোমার মনে আছে মার্ক। এডি যতই চেষ্টা করছিল ভেসেল ভাসানোর, প্রত্যেকবারই ব্যতিক্রম হচ্ছিল। শেষমেষ আমরা অতল জলের নিচে তলিয়ে না গিয়ে ত্রিকোনের দুনিয়ায় পৌঁছে গেছি"। কিন্তু মার্কের মুখ দেখে মনে হলো সে কিছুই বুঝতে পারেনি। তাই এভিলিন আবার বললো, "ফ্লোরিডার শেষ উপকূল, মিয়ামীর থেকে সোজা দুটো দাগ দুদিকে অর্থাৎ পুয়ার্ট রিকো আর বারমুডা ওপদি টানার পর সেই দাগের শেষাংশ মিলিয়ে দিলে একটা ত্রিভুজ তৈরি হয় সেটাকে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল বলে। এটা তুমি জানো কিন্তু যেটা জানোনা সেটা হলো এই টেট্রাপড আজকের দিনের উভচরের বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া পূর্বপুরুষ। প্রায় তিনশো নব্বই থেকে দেড়শো মিলিয়ন বছর আগে এরা বসবাস করতো কিন্তু এত ভারী জলে নয়। এরা সবসময় হালকা জলের উভচর ছিল। আর এই উষ্ণ আবহাওয়াও আজকের নয় মার্ক"। মার্ক এতক্ষণ বিপদের ভয়ে গুটিয়ে গিয়েছিল। এবার সে কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করে, "আবহাওয়া যা উষ্ণ তাতে বার্থে না গেলে আমারই টোস্ট হয়ে যাবে কিন্তু তুমি যা বলতে চাও তাই যদি হয় তাহলে আমাদের সামনে সমূহ বিপদ"। এভিলিন বললো, "ভুল করছো মার্ক, জলের গভীরে থাকা চুম্বকের টানে কাল রাত্রেই আমরা কএকশো মিলিয়ন বছর পিছিয়ে গেছি। বিপদে আমরা পড়িনি। বিপদ আমাদের নিজের দিকে টেনে নিয়েছে। গরমটা বুঝতে পারছনা মার্ক, এই গরম আমাদের চেনা পৃথিবীর নয়। চেনা পৃথিবীর অচেনা যুগের গরম"। কথা শেষ হতেই আকাশচুম্বী ঢেউটা আঁচড়ে পড়লো ডেকের উপর। তার সাথে কিজেনো একটা জিব উপহার দিয়ে নেমে গেলো ঢেউটা। ততক্ষনে রবার্ট ক্যাপ্টেনকে ছেড়ে দিয়েছে, ছাড়তে বাধ্য হয়েছে বললেও ভুল হবেনা, কারণ তারা সবাই ডেকের উপর এদিক ওদিক ছিটকে পড়েছিল। ভেসেলটি দুলে ওঠায় জেডও আর বার্থে শুয়ে থাকতে পারেনি। সেও বেরিয়ে এসেছে ডেকে। টেট্রাপডটার দিকে ততক্ষনে পাঁচজোড়া চোখের দৃষ্টি গিয়ে পড়েছে। পলকের জন্য বিস্মিত হতে গিয়ে আটকে গেলো ওরা রবার্টের কার্যকলাপ দেখে। ছেলেটা এক লাফে টেট্রাপডটার উপর উঠে বসে সেটার ঘর লক্ষ করে ক্রমাগত চাকু চালিয়ে গেলো। ক্রমাগত আঘাতের ফলে ফিনকি দিয়ে তরল বেড়িয়ে এলো। সম্ভবত সেটা রক্ত। এভিলিন সহ মার্ক, জেড, ক্যাপ্টেন তাকে এমন কাজ করতে নিষেধ করলো কারণ টেট্রাপডের রাগের শিকার হলে তাদের প্রাণ সংশয় হবে। অস্থির ভাবে ছোটো ছোটো চারটে পা আর মোটা লেজটাকে (যদিও লেজের শেষাংশ অনেকটা সরু) নাড়তে দেখে এভিলিন বলে উঠলো, "ল্যাবিরিনথোডোন্সিয়া"। ওর কথাটা কানে যেতেই ক্যাপ্টেন একটা দুঃসাহসী কাজ করে ফেললো। প্রথমে রবার্টকে পিছন থেকে ধাক্কা মারে, ফলে সে ছিটকে কিছুটা দূরে দিয়ে পরে। তারপর পিপেগুলো কাছে সার দিয়ে রাখা জালের মধ্যে একটা নিয়ে টেট্রাপডটাকে পেঁচিয়ে ফেলে। জেড প্রথমে কিছু বুঝতে না পারলেও পিপের দিক অনুসরণ করে ছুটে যায় তারপর মোটা দড়িটা দিয়ে সবার আগে উভচরটার প্রাগৈতহাসিক কুমির্টার মুখ বেঁধে ফেলে। রবার্টকে পাগলের মতো নিজের দিকে ছুটে আসতে দেখে ক্যাপ্টেন বললো, "কুইক! এটাকে জলে গেলো শিগগিরি"। যেমন বলা তেমন কাজ। ঝোপ করে একটা শব্দ আর জালে আটকা টেট্রাপড আবার নিজের জায়গায়। এবার রবার্ট হাতের মুঠোয় ধরা ধারালো অস্ত্রের প্রয়োগ করতে গেলো ক্যাপ্টেন দিকে কিন্তু শরীর দূর্বল থাকায় পারলো না। পিছমোড়া করে তার হাতদুটো বেঁধে ডেকের একপাশে ফেলে রাখলো ক্যাপ্টেন। মুখ ঘুরিয়ে বাকি তিনজনকে বললো, "স্টিরিং হুইলটা সামলাও আমি নীচটা দেখে আসি। সেই যে কাল রাত থেকে আন্ডারগ্রাউন্ড হয়েছে এখনও বোধয় তার নেশা কাটেনি"। সবাই বুঝলো ক্যাপ্টেন কার কথা বলছে। মার্ক হুইলে একটা হাত রাখলো। এভিলিন ক্যাপ্টেনকে অনুসরণ করলো। জেড রবার্টের কাছে হাঁটু মুরে বসে বললো, "ভাগিশ তোমায় লাইসেন্স দিয়েছে ডিপার্টমেন্ট থেকে, নইলে তোমার মতো ইনসেনকে টিম লিডার তো দূরের কথা, জল সার্ভ করার জন্যও কেউ এলোউ করবে না। চৌত্রিশ বছর বয়স হয়ে গেলো এখনও টেম্পেরামেন্ট কন্ট্রোল করতে শিখলে না। এরকম যদি চলতে থাকে তাহলে এভিলিনকে খুব তাড়াতাড়ি হারাবে"। 

ফ্লোর হুইল ঘোরাতেই একটা কামড়া খুলে গেলো ডেকের শেষাংশে। প্রথমে ক্যাপ্টেন তারপর এভলিন সিড়ি দিয়ে নিচে নামলো। নেমেই তারা টেডকে দেখে তাকে ডাকাডাকি শুরু করে। প্রথমে ঘুমোচ্ছে ভাবলেও পরে বুঝতে পারে ছেলেটা বেহুঁশ হয়ে পড়ে আছে। চোখেমুখে জল দিতেই টেড ধড়মড়িয়ে উঠে বসে বলতে থাকে, "ওটা ডেভিলস ট্রায়াঙ্গেল! আমরা আর বাঁচবো না এডি। এ কোন বিপদে পড়লাম"। ক্যাপ্টেন তাকে শান্ত করার চেষ্টা করে ভ্যাকেশনে কোরাল দ্বীপে নিয়ে যাবে বলে, কিন্তু তাতে তার ভয় একটুও কমে না। এভলিন ম্যাথিউস টেডের কথার আসল অর্থ ধরতে পারে আর সেটা ক্যাপ্টেনকে বলে, তখন ক্যাপ্টেন তাকে ভরসা দেয় যে সে থাকতে তাদের কোনো বিপদ হবেনা। সে তার জানটি ও জানে থাকা প্রাণগুলোর রক্ষাকর্তা। সুতরাং সে যতক্ষণ বেচেঁ আছে ততক্ষন যেনো তারা ভেঙে না পড়ে। এভলিন ক্যাপ্টেনের কাঁধে একটা হাত রেখে বলে হাই স্কুলের সময় থেকেই সে তাকে ভরসা করে। আর ভেসেলে উঠে ক্যাপ্টেনকে ভরসা না করার কোনো কারণই নেই। ক্যাপ্টেনের মনে কিছু পুরোনো স্মৃতির মন্থন হয়। ফলে বুকে এক সমুদ্র আবেগ নিয়ে এভলিনের দিকে এগোলেও আগের মতো আর চুম্মন করতে পারেনা। তার একটা কারণ টেডও। ছেলেটার পাগলামি ক্রমশ বেড়ে উঠছে। কেমন যেনো ভয় নিজেকে গুটিয়ে রেখে একভাবে কেঁপে চলেছে ওর শরীরটা। টেডের কথাগুলো যে সত্যি সেটা এভলিন হকিন্স খুব ভালো করেই জানে। ফলে মার্ককে শোনানো ডেকের কথাগুলো পুনরায় ক্যাপ্টেনকে সোনালো। ছেলেটাও মুখে টু-শব্দ না করে চুপচাপ শুনলো। এভলিন থামলে ক্যাপ্টেন বলে, "আমি অবাস্তব গল্পে বিশ্বাসী নই কিন্তু কিছুক্ষন আগে যা ঘটে গেছে তার পরে আমি যেকোনো অলৌকিক ঘটনাই খুব সহজে বিশ্বাস করে নেব"।

এইদিকে ডেকে মার্কের পক্ষে একা ভেসেল কন্ট্রোল করা মুশকিল হচ্ছে। জেড একটুও সিরিয়াস নয়। ছেলেটাকে ডেকে ডেকে মার্ক ক্লান্ত, কিন্তু সে রবার্টের পিছনে লাগছে একনাগাড়ে। জোয়ানার ক্লান্তি দূর হয়েছে এতক্ষনে। এখন তাকে আবার ডেকে দেখা যাচ্ছে। জেডের বোকা বোকা কাজ তার একটুও ভালো লাগেনা, একটা উন্সেরিওয়াস, এইমলেস ছেলেকে তার আর সহ্য হয়না। পিছন থেকে মাজাঘষা গলায় বলে ওঠে, "কাম-অন জেড, আমি বুঝতে পারছি আমার অবর্তমানে এখানে কিছু ঘটে গেছে, কিন্তু তার মানে এটা নয় যে তুমি রবার্টকে হাসাহাসি করবে। তোমার এই বোকামির জন্য ফ্লোরিডা পৌঁছনোর আগেই তোমার চাকরি না চলে যায়। আর টিমের লিডারকে এইভাবে বেঁধে রাখাই বা কেনো হয়েছে?" জোয়ানার প্রশ্নের উত্তরে একটু আগেই ঘটে যাওয়া ঘটনাটার বিবরণ দিয়ে কি যেনো একটা ভাবে মার্ক তারপর আবার মুখ খোলে, কিন্তু এবার সে এভলিন আর তার কথোপকথনটা বলে। কথাগুলো যতটা সম্ভব বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করে, কিছু বাদ না দিয়ে। মার্কের কথা শুনার সময় জেড অনেক অবান্তর প্রশ্ন করে কিন্তু জোয়ানার মনে যতই প্রশ্ন আসুক সে এসবে বেশি আমল না দিয়ে রবার্টের রক্তচক্ষুর দিকে মাঝে মাঝে তাকায় আর ভয়ে শিউরে ওঠে। সে ভালই বুঝতে পারে রবার্টের হাত দুটো খোলা হলে সে তাদের উপরেই ঝাঁপিয়ে পড়বে। কেনো যে এরকম একজন মেন্টাল আনস্টেবল লোককে পাঠালো ডিপার্টমেন্ট, তাউ আবার টিমের প্রধান বানিয়ে। যদিও রবার্ট মেন্টালি যথেষ্ট সক্ষম কিন্তু তার উটকো রাগই আনস্টেবিলিটির সমান।

ওইদিকে বেসমেন্টে এভলিনের সাপোর্ট পেয়ে ক্যাপ্টেন খুব খুশি হয়। খুশির ফলে এভলিনের দিকে এগিয়ে যায় চুম্মণ করতে কিন্তু থমকে যায় কারণ হাই স্কুলে পড়ার সময় তারা যতই ঘনিষ্ঠ হোক না কেনো ইউনিভার্সিটি যাওয়ার আগেই তারা মিউচুয়ালি ব্রেকআপ করে নিয়েছিল। অবশ্য এরও একটা সলিড কারণ আছে। গ্র্যাজুয়েশনের সাবজেক্ট হিসেবে মেরিন ডিপার্টমেন্টের সাবজেক্ট নিয়ে পড়তে চেয়েছিল এভলিন কিন্তু এডমন্ড আর পড়াশুনা করতে চায়নি।সে নিজে কোনো কিছু স্টার্টআপ করতে চেয়েছিল। ব্যাস তারপরই দুজনের রাস্তা আলাদা, কেউ একটু এডজাস্ট করবে না। কিন্তু আজ এতো বছর পর দুজনেরই মনে হচ্ছে একটু এডজাস্ট করতে পারলে বোধয় খুব খারাপ হতোনা। বুকে একরাশ তরঙ্গের উথালপাথাল ভাবাচ্ছে যে আর কি ফেরার কোনো পথ নেই। কিন্তু ভাবনায় ছেদ পড়ল টেডের ডাকে। সে এখন আর বেসমেন্টে থাকতে চায়না। অগত্যা তারা ডেকে উঠে এলো। তারপর সল্প আলোচনার পর সকলে একই সিদ্ধান্তে রাজি হলো। ক্যাপ্টেনেও বর্তমান জগতের কপনা করে আন্দাজ করার চেষ্টা করলো কোন দিকে গেলে রাতটা কাটানোর জন্য একটা সেফ আইল্যান্ড পাবে তারা।

বৃথা ঘড়ি দেখলো জোয়ানা। সময়টা রাত্রি হলেও টাইম বোঝা যাচ্ছে না। তবুও দক্ষিণের এই দ্বীপটা সুরক্ষিত বলেই মনে হচ্ছে তাদের। কোন দ্বীপ সেটা বুঝতে না পারলেও তারা এটা বুঝতে সক্ষম যে কিউবারই কোনো দ্বীপে তারা উঠেছে।

জেড ব্রাউন মনেমনে ভাবে ফ্লোরিডা ফিরে একটা ভালো এক্সপার্টের কাছে জোয়ানার কাউন্সিলিং করাবে সে। মেয়েটার মাত্রাছাড়া নেশা এই প্রথম মাস গুলোতেই ক্ষতি হতে পারে। সে আরো ভাবে যে ফিরে গিয়েই সর্ব সম্মুক্ষে আনুষ্ঠানিক ভাবে আংটি বদলও সেরে ফেলবে। তার মনে হচ্ছে এটাই সঠিক সময় সংসার শুরু করার। তারপর মার্কের দিকে তাকিয়ে তার যেনো একটু হাসিই পায়। তারপর মনেমনে বলে ওঠে 'নিগ্রো বয়, তুমি কখনোই জেনিকে পাবেনা, আর সেও কোনোদিন তোমার মনের কথা জানতে পারবে না। আমি তাকে জানতে দেবনা। এই মিশনের পরে এমনিতেও আমরা দুজনেই ইউ.কে.তে আমার আঙ্কেল জনের কোম্পানি জয়েন করব। জেনির সাথে তোমার হয়তোই আর কখনো দেখা হবে'।

ইতিমধ্যে টেডের পেটে চাপ পরায় মার্ক তাকে নিয়ে আইল্যান্ডের আরেকটু ভিতরে প্রবেশ করে। ছেলেটার বয়স সব চোদ্দো হয়েছে, এতো ছোট ছেলেকে এমন একটা জায়গায় একা ছাড়তে সাহস হলোনা ওদের তাই দাইত্তটা মার্কই নেয়।

এরপর জেডও একটা জল ভর্তি বোতল আর জোয়ানাকে নিয়ে উঠে যায় আইল্যান্ডের গভীরে। অবশ্য কিছু উল্টোপাল্টা কাণ্ড করার জন্য নয় বরং জোয়ানাকে বমি করানোর জন্য। এখন আগুন ঘিরে বসে আছে ক্যাপ্টেন এডি অরফে এডমান্ড জোন্স, এভলিন হকিন্স ম্যাথিউস আর রবার্ট ম্যাথিউস। সব কিছু কেমন শান্ত, নিস্তব্ধ হয়ে রয়েছে। একটা পিন পড়লেই কান ফেটে যাবে। এভলিনের মনে হলো দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের ঠিক আগের মুহূর্তের সাইরেনের অপেক্ষায় যেনো তারা এখানে বসে আছে, আর হিংসায়, রাগে রবার্টের চোখ দুটো ক্যাপ্টেনকে নিরীক্ষণ করে যাচ্ছে। কিন্তু লাফ দিয়ে ক্যাপ্টেনের ঘাড় লক্ষ করে ছুরিটা বসানোর আগেই অতি দক্ষ হাতে ক্যাপ্টেন রবার্টের হাতদুটো পুনরায় পিছমোড়া করে বেঁধে ফেলে এভলিনকে বলে, "এবার তো ডিভোর্স দেবে নিশ্চই এই সাইকোটাকে। মানে সিরিয়াসলি ম্যাথিউস, এই বয়সে এসে তুমি কলেজের ছেলের মতো গার্লফ্রেন্ড বেহাত হওয়ার চিন্তায় মারপিট করবে, তাউ আবার আমার মতো একজনের সাথে যে কিনা সাতটা বছর ফৌজে কাটিয়েছে। তোমায় দেখেই বোঝা যায় যে তুমি একটা উন্মাদ। না ভালো টিম লিডার হতে পেরেছো আর নাই ভালো স্বামী হতে পেরেছো। কিন্তু তাই বলে আমি কখনোই এভলিনকে তোমার থেকে কেড়ে নিতে চাইনা আর নেবও না, যদিনা এভি নিজে আসে আমার কাছে"। এই সুযোগে এভলিন বলে, "ফ্লোরিডা গিয়ে সবার আগে তুমি পিটিশনে সৈ করবে, আমার অলরেডী আগে থেকেই করা আছে আর আমি ইতালি যাবো কিন্তু তুমি কোনো ভাবেই আমায় আটকাবে না আর। ভেবেছিলাম ফ্লোরিডা ফিরেই ব্যাপারটা তোমায় জানাবো কিন্তু তোমার এই অভব্য আচরণ আমায় এখনই জানতে বাধ্য করলো"। রবার্ট রাগে, "ফ্যাক ইউ" বলে ওঠায় ক্যাপ্টেন রুমাল দিয়ে ওর মুখ বেঁধে দেয়। তারপর ওকে তুলে নিয়ে গিয়ে ভেসেলের ডেকে ফেলে দেয়। আইল্যান্ডে ফিরে এসে এভলিনকে প্রশ্ন করে, সে সত্যিই বিবাহ বিচ্ছেদ চায় কিনা। উত্তরে এভলিন তাকে জানায়, যে সে এমনটা চায়না, কারণ সে এর আগেও চেষ্টা করেছিল তখন রবার্ট তাকে হুমকি দিয়েছিল, যদি সে এমনটা করে তাহলে সে সিলভিয়ার কাস্টোডি পাবেনা। রবার্টই তাকে পেতে দেবেনা। তবে সুযোগ পেলে সে রবার্টকে হত্যা করতেও পিছ-পা হবেনা। ক্যাপ্টেন বুঝলো এভলীন একটুও সুখী নয় এই বিয়েটায়। ত্রিশ ঊর্ধ্ব বয়সে এসে তার মনে ক্ষীণ আশার আলো দেখা দিলো। সে এবার জানতে চাইলো বিশ্বের অন্য দেশ না বলে ইতালি বলার কারণ কি। এভলিন উত্তর দিলো যে সেখানের কোনো একটা বোর্ডিং স্কুলে তার মেয়ে পরে তাই এমন বলা।

গাদাখানিক বমি হলো জোয়ানার। মুখ মুছে একটু জল খেলো সে। তারপর একটু বসলো। জেডও বসলো তার পাশে। বাঁকা সিংয়ের মতো ক্ষয়া চাঁদটাকে বেশ ভালো লাগছে তাদের। জোস্নার আলোয় ভরে উঠেছে চারিদিক। এই মায়াময়ী ধরণীর ভূতপূর্ব মায়াবী পরিবেশে তাদের শিরায় শিরায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হলো। স্নায়ু, কোষ সবই আরো সক্রিয় হয়ে উঠলো। সব ভুলে এখন তারা সংযমের নেশায় মেতে উঠেছে। স্নায়ুতে যেনো আপনাআপনি সক্রিয়তার গতিবিধি বেড়ে গেলো। টেড বোধয় খেয়াল করেনি কিন্তু দৃশ্যটা মার্কের পক্ষে আপত্তিকর ছিলো তাই সে টেডকে পথ বদলাতে বললো। টেড ভাবলো মার্কের বোধয় এবার পেটে চাপ পড়েছে, তার মানে এবার তার পাহারা দেওয়ার পালা। কিন্ত জোস্না মুখরিত এই ছোট্ট দ্বীপের শ্যাওলার আড়ালে একটা চোখ দেখা গেলো, যার বাকি শরীর কাদা ও শ্যাওলায় মাখামাখি হলেও গলা দিয়ে ঘাড়ে মোটা কালচে দাগ। বলাই বাহুল্য সেটা রবার্টের দেওয়া ছুরির জখম। আস্তে আস্তে সে তার ছোটো ছোটো দুজোড়া পা নেড়ে জলে নামছে ভেসেল লক্ষ্য করে। যদিও ক্যাপ্টেনের সতর্ক কর্নে তার জলে নামার আওয়াজ ধরা দিয়েছে কিন্তু এভলিনের ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়ার পরত ছেড়ে সে বেরোতে চায়না। শেষবারের মতোই এভলিনকে সে ভালোবাসতে চায়, সম্ভবত এভলিনও তাই চায়, নইলে এই সময়টার এমন ব্যাবহার সে করতো না। লেজটা নাড়িয়ে সাঁতার কেটে পৌঁছে গেলো লক্ষ্যে। বদলা নিতে তাকে হবেই। অবলা জীব বলে তার উপর নৃশংসতা দেখানো হয়েছে কিন্তু সে সেটা মেনে নেবেনা কিছুতেই। বলদ কিংবা মহিষ অথবা পাঠা সে নয়। এই অত্যাচারী প্রজাতি অযাচিত ভাবে অনেক নির্মম জীবকে শোষণ করে আসছে যুগের পর যুগ ধরে। তাই সমস্ত অবলা জীবের প্রতিনিধি হয়ে আজ এই প্রাগৈতিহাসিক যুগের ল্যাবিরিনথোডোন্সিয়া প্রতিশোধ নেবে। আর নেবে নাই বা কেনো সে, তাকেওতো কেমন বিনা দোষে অত্যাচারিত হতে হয়েছে। আঘাত করা হয়েছে তাকে, তার কোনো দোষ না থাকা সত্বেও। গগনচুম্মি তরঙ্গ তাকে তুলে ছুঁড়ে ফেলেছিল ভেসেলের উপর কিন্তু সে তো কারোর ক্ষতি করেনি, বরং উল্টে সে নিজেই পালানোর পথ খুঁজছিল। কিন্তু এই উন্নত জীবের দল তার উপর কারণ ছাড়াই ঝাঁপিয়ে পড়ে নৃশংস অত্যাচার করেছে। হয়তো তাকেও মেরে তার চামড়া দিয়ে জুতো বা বেল্ট বানিয়ে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। বা হয়তো আচমকা আক্রমণ করে তার ধর থেকে মুন্ডুটা আলাদা করে নতুন জগতে নিয়ে গিয়ে কোনো মিউজিয়ামে রেখে দিয়ে জনতার খ্যাতি কুরোত। ভেসেলের উচ্চতা জলের থেকে উঁচু হলেও প্রাগৈতিহাসিক টেট্রাপডটির বোধয় খুব একটা অসুবিধা হয়নি সেটিতে চোড়তে।

রবার্টের আচমকা চিৎকারে নামহীন ভূখণ্ডটা একবার কেঁপে উঠলো মনে হয়। যদি তা নাও হয় অন্তত ছয়টি প্রাণতো কেঁপে উঠেছেই। প্রথমে ক্যাপ্টেন রীতিমত লাফ দিয়ে উঠে ভেসেলের উদ্দেশ্যে ছুটে গেলো। এভলিন তাকে অনুসরণ করলো। মার্ক আর টেডও খুব পিছিয়ে ছিলনা। তারপর জেডও জোয়ানাকে নিয়ে একই দিকে গতি বাড়ালো।

ইতিমধ্যে ডেকের মেঝে ভিজে যাচ্ছে কাঁচা রক্তে। আর রবার্টের একটা হাত টেট্রাপডটার মুখে। "যন্ত্রণায় বোধয় ম্যাথিউস অজ্ঞান হয়ে গেছে এভী। তোমরা ওর জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করো আমি এটাকে দেখে নিচ্ছি" বলেই স্টিরিং হুইলের পাশে রাখা মোটা দড়িটা তুলে নিয়ে দৌঁড়ে গিয়ে এক লাফে জাপটে ধরলো টেট্রাপডটাকে। ওদিকে রবার্টকে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা শুরু হয়ে গেছে। অবশেষে যখন রবার্টের জ্ঞান ফিরলো তখন ক্যাপ্টেনের আর দেখা পাওয়া গেলোনা। কিন্তু সকলের বিস্ময় কাটিয়ে সে আবার ডেকের উপর উঠলো। তারপর হাফতে হাফাতে বললো, "তোমরা কোনো প্রশ্ন করার আগে আমি একটা কথা বলি। দেখো যেমন আমরা সবাই জানি যে টেট্রাপডের এই ল্যাবিরিনথোডোন্সিয়া প্রজাতিটি অগভীর জলে শিকার করতো তেমনই আমরা এটাও জানি যে তারা লেট ডিভোনিয়ানে থাকতো, যেটাকে আমরা 'এজ অফ্ ফিশেস্' বলি মডার্ন সাইন্স অনুযায়......"। কথা পুরো শেষ হয়না কিন্তু জ্ঞান ফিরতেই রবার্ট তার উপর চেচিয়ে উঠে বলে, "ভনিতা না করে আসল কথাটা বলনা শালা"। ক্যাপ্টেনের এবার রবার্টের উপর রাগ হয়না। সে আবার বলে, "যে তোমার হাত নিয়ে গেছে সেটা আসলে একটা দের ফুটের ব্যেবি টেট্রাপড ছিলো ম্যাথিউস"। মার্ক প্রশ্ন করে, "ব্যেবি টেট্রাপড? তাহলে বরগুলোর সাইজ কেমন হবে?" ছেলেটার প্রশ্নের উত্তরেই বোধহয় ডেকের সিড়িতে কালচে সরীসৃপটাকে দেখা গেলো। এই অন্ধকার রাত্রেও জোস্নার উজ্জ্বল আলোয় তার ঘাড়ের দগদগে ঘা দেখা যাচ্ছে। শরীরের অনাবৃতে এখন আর শ্যাওলা আস্তরণ নেই, আটলান্টিসের স্বচ্ছ জলে সব সাফ হয়ে গেছে। শুধু ঘাড়ের গভির ক্ষতটা মুছে যায়নি। এবার আগুন ঝলসে উঠলো জেডের পিস্তল থেকে। কিন্তু লক্ষ্যভেদ হয়ে গেলো। টেট্রাপডটার চোঁখ লক্ষে ছিলো কিন্তু প্রাণীটা চালাকি করে সরে গেলো। তারপর দ্রুত বুকে হেঁটে লেজের এক বাড়ী মারে জেডকে, সে ছিক্তে পড়ে যায়। কেউ কিছু বোঝার আগেই মোটা মুখ দিয়ে একটা গুতো মারে আপাহিচ, বদমেজাজি ও বদরাগী লিডার মিস্টার রবার্ট ম্যাথিউসকে। সে ছিটকে আটলান্টিস মহাসমুদ্রে গিয়ে পড়ে। টেট্রাপডটাও মুখ হাঁ করে ঝাঁপ দেয় জলে। মার্ক, ক্যাপ্টেন, এভলিন তিনজনেই তাকে অনুসরণ করে। জোয়ানা যদিও জেডকে ছেড়ে যায়নি, আর তাকে অ্যাসিস্ট করার জন্য টেডও থেকে গেলো ডেকে। এদিকে মার্করা রবার্টকে আবার বাঁচিয়ে নেয় ঠিকই কিন্তু ততক্ষনে টেট্রাপডটা কালচে-নীল জলরাশির আড়ালে অন্তর্ধান হয়ে গেছে। এরপর তারা ডেকে তো উঠে পড়ে কিন্তু আর সাহস হয়না সেখানে থাকতে। সকলে মিলে তাই ঠিক করে তারা একসাথে থাকবে আর প্রথম সূর্য কিরণের সাথে সাথেই নিজেদের পৃথিবীতে ফেরার চেষ্টা করবে। কিন্তু এই মুহুর্তের একটা ভুল পদক্ষেপে তাদের প্রাণ সংশয় হতে পারে, তাই বার্থে থাকার সিদ্ধান্তটাই সঠিক মনে হলো সকলের। আপার বার্থ, লোয়ার বার্থ কোনোটাতেই শুয়ে তাদের ঘুম আসছে না। বিভীষিকাটার ভয়ে এক একটা সেকেন্ড তাদের কাছে এক এক বছরের সমান মনে হতে লাগলো। প্রতিটা মুহূর্ত আতঙ্কে কাটছে। সময়ের যেনো আর শেষ নেই, সময় যেনো থমকে গেছে। দরজা বন্ধ করে তাতে কান পেতে রইলো ক্যাপ্টেন কিন্তু বহুক্ষণ কেটে গেলো ডেকে কোনো কিছুর শব্দ আর পেলনা। এর মধ্যে জেডের হটাৎ করে ধূমপান করার ইচ্ছা হলো। সঙ্গী হিসেবে সে মার্ককে চায়। মার্ক রাজি না হওয়ায় সে মার্ককে রীতিমত জোর করতে থাকে। টেড ভয় পায় তাই মার্ককে জড়িয়ে ধরে যেতে বারণ করে। ক্যাপ্টেন আর কোনরকম ঝামেলা চায়না তাই সবাইকে পিস্তল দেখিয়ে চুপচাপ বসে থাকতে বলে। কিন্তু কে কার কথা শোনে, রবার্টের কাজিন হওয়ার ফলে তার মতো কিছুটা সভাব তো জেড অরফে জ্যাডেন ব্রাউনের মধ্যেও আছে। কোমরে গোঁজা পিস্তলটা বের করে পরপর দুটো শুট করে ক্যাপ্টেনের বুকের বাঁদিক লক্ষ্য করে, ক্যাপ্টেন ছিটকে পড়ে নিচের একটা বার্থে। তারপর মার্কের পায়ে একটা গুলি করে। কেউ যাতে না এগোয় তাই পিস্তল দেখিয়ে ভয় দেখায়। এরপর সে আর দেরি করেনা, মার্ককে ডেকে টেনে নিয়ে যায়, বার্থের দরজাটাও বন্ধ করে দেয় বাইরে থেকে। ভিতরের মানুষ গুলো বুঝতে পারে মার্কের খুব খারাপ পরিণতি হতে চলেছে কিন্তু তারা ভিতর থেকে চেয়েও কোনরকম সাহায্য করতে পারেনা মার্ককে। অকারণ ছেলেটা মার খায় জেডের কাছে। কারণ জানতে চাইলে জেড একটা সাইকো-টাইপ হাসি হেসে বলে, "ব্রাদার ববির রিভেঞ্জ আমি নিতে পেরেছি ক্যাপ্টেনকে মেরে এবার আমার রিভেঞ্জ নেবো তোকে মেরে। এই ভেসেলে না এলে জানতে পারতাম না যে সিস্টার-ইন-ল এখনও পুরনো স্মৃতি ভুলতে পারেনি। ব্রাদার ববি আমায় সব বলেছে মার্ক। তখন তোমরা ভাবছিলে আমি ব্যাঙ্গ করছি ব্রোহের কন্ডিশনটা দেখে, কিন্তু না আমি তার শত্রুর পরিধিটা দেখতে চেয়েছিলাম। যাই হোক এবার তোমরা সবাই মোরবে আর ব্রোহ আর জোয়ানাকে নিয়ে এখন থেকে চলে যাবো। তুমি যে জোয়ানাকে পছন্দ করো সেটা আমি সার্ভিস জয়েনিঙ্গের ফার্স্ট ডে-তেই বুঝতে পেরেছিলাম। কিছু বলিনি কারণ জোয়ানা কখনো তোমায় রেসিপ্রকেট করেনি। অবশ্য তুমি কোনোদিন ওকে সাহস করে বলেই উঠতে পারোনি, ফলে ও জানতেও পারেনি আর কোনোদিন পারবেও না" বলেই কনকনে ঠাণ্ডা জলরাশির মাঝে ছুঁড়ে ফেলে দেয় মার্ককে।

ওইদিকে লোয়ার বার্থে ক্যাপ্টেনের বুকের উপর কান দিয়ে টেড বলে, "ও তো বেচেঁ আছে। ও বেচেঁ আছে এভলিন। জেনি ও বেচেঁ আছে"। রবার্টের অসভ্যতামী নিজের চোখে না দেখলেও প্রথম থেকেই তার ব্যবহার ভালো লাগেনি টেডের। তাই তাকে কিছু বলারই প্রয়োজনবোধ করেনি সে। ভেসেলে ওঠার সময় থেকেই টেডের প্রতি খুব খারাপ ব্যবহার করেছিল রবার্ট। আসতে যেতে অ্যাবিয়াসিভ কথাবার্তায় তাকে বিরক্ত করছিল। তাই জন্যেই তো সে বেজমেন্টে চলে গিয়েছিল। কিন্তু এভলিন কান ছোয়াতে কোনো স্পন্দন পায়না। জোয়ানাও বুঝে উঠতে পারেনা সে কি করবে। এমন সময় রবার্ট শত যন্ত্রণার মধ্যেও আবার বিশ্রীভাবে হেসে ওঠে। তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বলে, "মাই বয় ফাকড হিম্। হি ইজ ডেড। দ্যাট সান অফ্ বিচ ইস ডিড"। এবার এভলিনও চেঁচায়। "ষাট আপ ইউ সাইকো ইন্সিকিওর্ড বাস্টার্ড। আই অ্যাম গনা সু ইউ। আই উইল কমপ্লেইন অ্যাট দি ডিপার্টমেন্ট অবউট বোথ অফ্ ইউ। সো বেটার বি প্রেপাইয়ার্ড টু পে ফর দি পেন্টালটি ফর দ্যা ক্রাইম ইউ বোথ হ্যাভ কমিটেড"। এবার নিজেই চুপ করে এভলিন। ও বুঝতে পারে সিয়রে বিপদ। জোয়ানা উঠে দাঁড়ায়। জেড বলে, "নো জেনি ইউ উইল নট আটার আ সিঙ্গেল ওয়ার্ড। সি ব্রোক মাই ব্রাদার্স হার্ট। আমি ওকে ছাড়বো না। আই উইল কিল্ হার"। কিন্তু মুখের কথা মুখেই থেকে যায় জেডের। ট্রিগার টেপার আগেই ক্যাপ্টেন এক লাথি মারে পিস্তলটা ফেলে দেয়। তারপর এলোপাথাড়ি মারধোর করে বেঁধে ফেলে টেডকেও। টেডের খুব ভালো লাগে ব্রাদার এডির এই ইউনিক স্টাইলের মারপিট। কারণ মারপিট শেষে তেলের পিপেটা সে-ই এগিয়ে দেয়। এবারও তাই হয়েছে, আর জেডকে বাঁধা অবস্থাতেই ঢুকিয়ে দিয়েছে ক্যাপ্টেন ওই তেলের পিপেতে।

রাতটা কোনমতে কাটিয়ে ভোরের প্রথম আলোর সাথে সাথেই ভেসেল ঘুরিয়ে দিলো ক্যাপ্টেন। পাড়ের কাছে একটা আওয়াজ পেলো ওরা। ফিরতেই দেখে মার্ক। তাড়াতাড়ি তাকে তুলে নিলো সবাই। গতরাতের ঘটনাগুলো বলতেই সবাই মার্ককে বোঝালো যে ক্যাপ্টেন ওদের যা বেবস্থা করার করেছে। এবার শুধু নিজেদের জগতে ফেরার পালা, তারপরই ফ্লোরিডা সিটি পুলিশের হাতে তুলে দেবে এই জোড়া মানিককে।

এরপর বেশ কিছুক্ষন পরে জলের সেই ঘূর্ণায়মান দৃশ্য তাদের চোখে পড়ে। আবার সেই চুম্বকের টান ঘূর্ণায়মান টর্নেডোর ভিতর থেকে তারা অনুভব করছে। ম্যাগনেটিক কম্পাসের কাটাটাও চঞ্চল ভাবে ঘুরছে। এমন সময় জেড কোনোভাবে নিজেকে ছাড়িয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। সে রবার্টকে নিয়েই ডেকে এসেছে। সকলের দিকে পিস্তল তাক করে হুমকি দিতে যাবে এমন সময় গগনচুম্মি একটা ঢেউ গতকালের সৃতির পুনাবৃতি ঘটালো। টেট্রাপডটাকে দেখে রাগে ফুলে উঠলো রবার্ট। যে হাতটা এখনো তার আছে সেটাকেই কাজে লাগিয়ে প্রাই জেডের হাত থেকে পিস্তলটা ছিনিয়ে নিয়ে লক্ষ্যভেদ করার চেষ্টা করলো কিন্তু গুলিটা ফাউল হয়ে গেলো। টেট্রাপডটা লেজের এক বাড়ি মারলো, রবার্টও সুযোগটা কাজে লাগিয়ে জেডকে সামনে এগিয়ে দিলো। ফলে জেড তো সোজা গিয়ে জলে পড়লো কিন্তু রবার্টের অবস্থা তার থেকেও মর্মান্তিক হলো। মৃত্যুর থেকেও বেশি ভয়ের বিভীষিকাটা তার কোমরটা চেপে ধরলো। সারি সারি ধারালো দাঁত তরবারির ফলার মতো বিধে যেতে লাগলো। এভলিন পিস্তল তাক করে কিন্তু জোয়ানা সেটাকে নামতে বলে। খুব শান্তভাবে টেট্রাপডটা তেলের পিপেগুলোর পাশে দাড়িয়ে মাথাটা ঘোরালো রবার্টকে মুখে নিয়ে তারপর সমুদ্রে ঝাঁপ দিলো। যদিও টেট্রাপডটাকে আর দেখা গেলোনা কিন্তু ঝাঁপ দেওয়া অংশটার জল লাল হয়ে যেতেই রবার্টের নির্মম পরিণতির কথা তারা বুঝতে পারলো।

ঘূর্ণায়মান টর্নেডোর খুব কাছে এসে পড়েছে এবার ওরা। ক্যাপ্টেনর হাতের বাইরে যাচ্ছে এবার ভেসেলের কন্ট্রোল। ঘূর্ণায়মান জলরাশির মধ্যে ভেসেলটা ঢোকার ঠিক আগের মুহূর্তে ওরা দেখতে পেলো, কিছু দূরেই যেখানে ম্যাগনেটিক ফিল্ড শেষ হয়েছে সেখানে জেড হাত নাড়ছে, সম্ভবত সাহায্য চাইছে। আর তার পিছন থেকেই মিটার চারেকের একটা বড় টেট্রাপড জল থেকে লাফিয়ে উঠে তার পুরো শরীরটাকে ঢুকিয়ে নিলো নিজের ফাঁকা করা মুখে।

চোখেমুখে জলের ঝাপটা লাগতেই ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো টেড। সামনে মার্ককে দেখে জড়িয়ে ধরলো। জোয়ানা বললো, "বিপদ চলে গেছে টেড, চিল নাও"। টেডের একটা প্রশ্ন অনেকক্ষনি মাথায় ঘুরছিল। এবার সেটা সে জিজ্ঞেস করেই ফেললো। উত্তরে ক্যাপ্টেন বললো, "আমি মরিনি তার কারণ আমার হৃৎপিন্ডটা ডানদিকে। এটা রেয়ার কেস ব্যাবি ব্রাদার। নইলে যে জায়গায় দুটো গুলি লেগেছিল, আমার মৃত্যু অনিবার্য ছিলো, কিন্তু আমার এখনও ইতালি যাওয়া বাকি তাই জিসাস আমার হেভেন টিকিটটা ক্যান্সেল করে দিলো। তারপর এভলিনের দিকে তাকালো, ওর হাসিতে নিজের উত্তর খুঁজে পেলো। এবার মার্ক প্রশ্ন করলো, "কিন্তু ক্যাপ্টেন তুমি কীকরে বুঝলে যে আমরা নিজেদের জগতে এই একই পদ্ধতিতে ফিরতে পারবো?" ক্যাপ্টেন বললো, "নিউটনের তৃতীয় সূত্র। যে দরজা দিয়ে বেরোলাম, সেই একই দরজা ঢোকার জন্য ব্যবহার করলাম। তবে হ্যাঁ, ক্যাপ্টেন না, শুধুই এডি। এখন থেকে আমায় এডি বলেই ডেকো তোমরা"। টেডের মুখ দেখে মনে হলো, সে কিছুই বুঝতে পারেনি। এডি ওর মাথায় একটা হাত রেখে বলল, "মজা করছিলাম টেড, সূত্র তুত্র কিছুইনা। আসলে এটা আমার অনুমান ছিলো মাত্র। কিন্তু ওদের কোনো দোষ নেই। ওরা তো নিজেদের মতো করেই প্রকৃতি মাতার কোলে খেলা করে। আমরাই ওদের মায়ের বুক থেকে ছিনিয়ে নিয়ে নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করি। নইলে ভেবে দেখো ওরা আমাদের কোনো ক্ষতি করলো না কেনো? কেনো শুধুই তাদের ক্ষতি করলো যারা ওদের ক্ষতি করতে চেয়েছিল? মনুষ্যত্ব বলে যদি কিছু থেকে থাকে তো ওই অবলা জীব গুলোরই আছে। ওদের মনে মায়া,মমতা এখনও বিরাজ করে যা আমাদের মনে বিন্দুমাত্র নেই।

পাঁচজনই জনসমুদ্রে ভরা মিয়ামি বিচে নেমে পড়লো। মার্ক জোয়ানাকে জানালো, যে সে গতরাত্রেই জেডের কাছে মার খাওয়ার সময় জেনেছে এরপর তারা ইউ.কে. যাবে, তাই সেও যেতে চায়, আর জোয়ানার যদি আপত্তি না থাকে তো সারা জীবন তার সাথেই ইউ.কে.তে কাটাতে চায়। যথারীতি একটা পবিত্র চুম্মনের দ্বারা জোয়ানা তার প্রশ্নে সম্মতি জানালো। আর টেড দেখতে পেলো তার ব্রাদার এডি আর এভলিন হাত ধরে আছে আর ডিপার্টমেন্টের দিকেই যাচ্ছে কারণ এভলিন ইস্তফা দেওয়ার পরেই তারা তিনজন এয়ারপর্ট যাবে ইতালির উদ্দেশ্যে। কিন্তু যেটা দেখতে পেলনা সেটা হলো মিয়ামি বিচের পাড় গেসে রাখা ভেসেলের মধ্যে যে তেলের পিপেগুলো আছে তারই পাশে প্রাগৈতহাসিক একটা ডিম, সেটা আবার একটু একটু নড়ছেও।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy