Ankita Mukherjee

Classics Fantasy Thriller

3  

Ankita Mukherjee

Classics Fantasy Thriller

অদৃশ্য প্রণয়িনী

অদৃশ্য প্রণয়িনী

5 mins
172


টক্সিক, সাইকো এসব শুনতে শুনতে ছেলেটার মাথাই খারাপ হয়ে যাওয়ার যোগার হয়েছে। অফিসও সকাল সকাল মার খেয়েছে। বস বলেছে আগামীকাল তার টেবিল থেকে ফায়ার্ড চিঠিটা নিয়ে যেতে। কিন্তু সে জানে তার বলা প্রতিটা কথা একশত শতাংশ সত্য কারণ সেটা তার নিজের চোখে দেখা। কম্য শেষ করে উঠে দাড়িয়ে সিষ্টার্নটা চেপে দেয়। খুট করে একটা শব্দ হয়। সে আবার এসেছে। দরজাটা একটু ফাঁক করে দেখতে পায় সিংকের পাশে দাড়িয়ে থাকে তাকে। সটান মেয়েটার সামনে গিয়ে দাড়ায় প্রতিম। মেয়েটার মুখে এক টুকরো হাসি লেগে রয়েছে। জানলার বাইরে আকাশটা আবার সেই একই রকম লাল বর্ণের হয়ে গেছে। এমনটা হয় যখন এই মেয়েটা আসে। মেয়েটা কিভাবে তার অফিসের বাথরুমে ঢুকে তার সাথে কথা বলে সে জানেনা। এই কথাটা জিজ্ঞেস করলে মেয়েটা বলে সে তার ভাবনার সূত্র ধরে আসে কিছুক্ষনের জন্য তার সাথে দেখা করতে আর ভাবনায় ছেদ পরলে সে চলে যায়। অবার ২৪ ঘণ্টার অপেক্ষা। প্রতিম অনেকবার বাথরুমে গিয়ে সিংকের পাশে দাড়িয়েছে কিন্তু মেয়েটা তখন আসেনি। সে যখন মিনি বাথরুমে ঢোকে কিছু করার জন্য তখনই মেয়েটা এসে প্রতিবার একই ভাবে দাড়িয়ে থাকে সিংকের পাশে আর তখনই আকাশের রংও পাল্টে যায়। মেয়েটার আসে এবং যাওয়া দুই অদ্ভুত। সে প্রথম কএকবার আকাশের রং দেখতে বলায় প্রতিম জানলার দিকে এগোতো কিন্তু পিছন ফিরে তাকাতেই সে অদৃশ্য হয়ে যেত। তাই পরের দিকে সে বললেও প্রতিম আর জানলার কাছে দাড়িয়ে আকাশ দেখতে যায়না কিন্তু কেউ না কেউ ঠিকই ঢোকে বাথরুমে, সেই খুটখাট শব্দে প্রতিমকে বাধ্য হয়ে আগুন্তকের দিকে ফিরতে হয় আর তখনই মেয়েটা অলৌকিক ভাবে চলে যায়। বিষয়টা আগরওয়াল সাহেবের চোখে পড়েছে অনেকবার তবুও ভালো এম্প্লই বলে প্রতিমকে সে শুধু সাবধান করে ছেড়ে দিয়েছে, যায় সে বেশিভাগ সময় তার ডেস্কে কাটায় নয়তো সে তাকে বরখাস্ত করতে বাধ্য হবে। বাথরুমের ভিতরে সি সি টিভি ক্যামেরা না থাকায় তার চোখে কিছুই পড়েনি। তাছাড়া তার বাথরুমটা আলাদা। কিন্তু অন্যান্য এম্প্লইরা দেখেছে প্রতিমকে সিংকের সামনে দাড়িয়ে একা একা কথা বলতে। ভাবটা এমন যেনো সে অদৃশ্য কারোর সাথে প্রেম করছে। যথারীতি তারা এই ঘটনাটা আগরওয়াল সাহেবের কানে তুলেছে। আলাদা করে প্রতিমকে জিজ্ঞেস করলে সেও সত্যিটাই বলেছে। কিন্তু এই অদৃশ্য সত্যি কারোরই বিশ্বাস হয়নি। অতএব তারা এই উপসনহারে এসেছে যে, প্রতিমের মাথা খারাপ হয়ে গেছে আর নয়তো সে প্রথম থেকেই ছিট গ্রস্ত। অনেকে তাকে কাউন্সিলিং করিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল কিন্তু তার সেই কথাগুলো সহ্য হয়নি। সে বলেছিল তার কলিগরা তো ৫-৬টা করে প্রেম করে। স্কুল থেকে মেয়েদের পিছনে ঘুরত সেটা আসল প্রেম নয়। আসল প্রেম সেটাই যে একজন সঙ্গিতেই স্থির। এরপর তো তার কলিগরা সেই মেয়েটার সাথে দেখা করতে চায়। কিন্তু বাথরুমে গিয়ে বহুক্ষণ অপেক্ষা করতেও সে যখন আসেনা তখন কলিগরা তাকে নিয়ে মজা করতে ছাড়েনি। শুধু তাই নয়, তাকে ভীরু, মেনিমুখো, প্রভিতিও বলেছিলো। অনেকে তার চোখ বন্ধ করে সিংকের সামনে দাড়িয়ে থাকা আর মাঝে মাঝে জানলা দিয়ে আকাশ দেখার ভিডিও বানিয়ে সোশ্যাল সাইটে 'তন্ত্র সাধনা' ক্যাপশন দিয়ে আপলোডও করেছিল। যেটা আগরওয়াল সাহেবের চোখে পড়তেই সে প্রতিমকে ডেকে বিস্তারিত জানতে চায় পরের দিন। প্রতিম তার অভিজ্ঞ্যতা সম্পূর্ণই বলে। সব শুনে বসও তাকে সিক্রাটিকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। কিন্তু সেকথা প্রতিম শোনেনা। সে যোর দিয়ে বলে তার মনে কোনো রোগ নেই। মেয়েটা তার কল্পনা নয় সেটা সে প্রমাণ করে দেবে। যথারীতি তার পাগলামিতে আগরওয়াল সাহেবেও দেখতে যায় কমন টয়লেটে আর প্রতিম আবার মিথ্যে প্রমাণিত হয়। ফলে তাকে চাকরি হারাতে হয়। এবার সে তর্ক শুরু করে। ফল স্বরূপ আগারওয়াল সাহেব একটা চর মেরে তাকে বলে পরের দিন সে যেনো টেবিল থেকে ফায়ার্ড চিঠিটা নিয়ে যায়।

একটু পরে ডেস্কে চুপচাপ বসে থাকে তখনই অন্য কলিগরা টক্সিক, সাইকো এসব বলে তাকে উত্তক্ত করতে থাকে। সে মুষ্টি বন্ধ করতেই একজন আরো তাতিয়ে বলে সে মারলে তাকেই লোকে পাগল ভেবে স্পেশাল হোমে নিয়ে যাওয়া হবে। এবার প্রতিম ভ্যা করে কেঁদে ওঠে। অবার তার ভিডিও বানানো শুরু হয়। সে ছুটে চলে যায় জেন্টস ওয়াসরুমে। ভিতর থেকে ছিটকিনি তুলে চেচিয়ে কাদতে থাকে। কেউ তাকে বিশ্বাস করছে না আর বিশ্বাস করবেই বা কেনো সে তো প্রমাণ দিতে পারেনি। কিন্তু সে জানে তার বলা প্রতিটা কথা একশত শতাংশ সত্য কারণ সেটা তার নিজের চোখে দেখা। তারপর কম্য শেষ করে উঠে দাড়িয়ে সিষ্টার্নটা চেপে দেয়। খুট করে একটা শব্দ হয়। সে আবার এসেছে। দরজাটা একটু ফাঁক করে দেখতে পায় সিংকের পাশে দাড়িয়ে থাকে তাকে। সটান মেয়েটার সামনে গিয়ে দাড়ায় প্রতিম। মেয়েটার মুখে এক টুকরো হাসি লেগে রয়েছে। জানলার বাইরে আকাশটা আবার সেই একই রকম লাল বর্ণের হয়ে গেছে। সে চোখ মুছে জিজ্ঞেস করে কেনো তার আজ অতবড় ডাকা সত্বেও সে এলোনা। এই জন্য তাকে অপমানিত হতে হয়েছে, মিথ্যেবাদী,পাগল এসবও শুনতে হয়েছে। তাছাড়া চাকরিটাও গেছে। মেয়েটা তেমন ভাবে হেসে বলে যে, সে তার কল্পনা মাত্র। যতক্ষণ তার কল্পনা শক্তি প্রবল ভাবে তাকে ডাকতে পারবে, সে আসবে। কিন্তু যখন সেই কল্পনা শক্তি ফিকে হতে থাকবে সেও বিলীন হয়ে যাবে। প্রতিম এবার বোকার মত জিজ্ঞেস করে সবার সামনে এসে কেনো এলোনা কারণ তখন তো তাকে এক মনে ডেকেছিল প্রতিম। মেয়েটা বলে সে শুধুই তার কল্পনা তাই তাকে সে ছাড়া আর কেউ দেখতে পাবেনা। প্রতিম এবার আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে লাল রঙটা হটাৎ ফিকে হচ্ছে। সে বুঝতে পারছে মেয়েটা চলে যাবে। জানলার দিকে থেকে মুখ ফিরিয়ে লাফ দিয়ে ধরতে যায় তাকে, থুতনিটা সিংকে বাড়ি খায়। দাঁতে সে চোট পায় কিন্তু তার আর ব্যথা অনুভব হচ্ছে না। সে পাগলের মত হাত পা ছুঁড়ে কাদতে থাকে। অনেক্ষন বাথরুম বন্ধ তাই মেল এমপ্লয়িজরা অসুবিধায় পড়েছে। আগরওয়াল সাহেবের কানে কথাটা যেতেই সে বাথরুমের দরজা ভাঙার আদেশ দেয়। প্রতিম তখনও বাথরুমের মেঝেতে শুয়ে শুয়ে ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। সিংকের কল গুলোর মুখ খোলা। অফিস তো অনেক্ষনই আউট অফ্ ওয়াটার হয়েছে। আগরওয়াল সাহেব তাকে তুলে আবার চর থাপ্পড় মারে। সে হাসে বসের দিকে তাকিয়ে। আগরওয়ালের গা জ্বলে যায়। লাথি, ঘুষি মারে তাকে। সে তখনও হাসছে। একজন এম্প্লই তাকে ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করে বারণ করে বলে এ কাজ সে করবে। আগরওয়াল অনুমতি দেয়না। যেদিন প্রতিমকে মেন্টাল রিহ্যাবে নিয়ে যাচ্ছিল ওর মা খুব কাদছিল, কিন্তু ও জানে, ও যদি একাগ্র চিত্তে ডাকে সে নিশ্চই আবার আসবে। আর তাকে যেখানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেখানে প্রমাণ দিতে হবে না। সুতরাং একটা ক্ষীণ আসার আলো সে দেখতে পায়।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics