AYAN DEY

Classics

3  

AYAN DEY

Classics

নগ্ন মিছিল

নগ্ন মিছিল

4 mins
1.5K


একটি পার্কে দুদিন আগে কয়েকজন ছেলে একটি বছর ষোলোর মেয়েকে অস্লীল অঙ্গভঙ্গি করেছিলো । মেয়েটি দৌড়ে বাড়ির দিকে রওনা হয়েছিলো । বেশ কয়েকদিন ধরেই এইরকম চোয়াট্টা গোছের কয়েকটি ছেলে নিন্দনীয় কাজ করছিলো । কেউ প্রতিবাদ করেনি । কিন্তু সেদিন ছিলো সবকিছুর চরমে । শোনা যায় মেয়েটির গায়ে হাত পর্যন্ত দিয়েছিলো ।

ওখানে বৃদ্ধদের এক গোষ্ঠীকে গানে , গল্পে বেঁধে রাখে অদৃজা বলে মেয়েটি । তার অফিস শেষে এই তার নিঃসঙ্গতার উপশম । বাবা মা থাকলেও নিজের নিজের জগতে তারা বিরাজমান । তাই " হাত ধরো " বৃদ্ধাশ্রমের এই বৃদ্ধ মানুষদের সাথে সন্ধ্যের কিছু সময় কাটায় অদৃজা । ওদের সাথে সম​য় কাটিয়ে পার্কের গেটের সামনে কুরুচিকর মন্তব্য ও অস্লীল ইঙ্গিত পেয়ে ভয়ে তার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে ।

পরের দুদিন ও পার্কে আসেনি । কানাঘুষোয় ওই ছেলেগুলোর কথা শুনতে পায় ওই ব​য়স্ক লোকেরা । পার্কে স্টুডেন্ট কিছু আসে ঘুরতে । তাদের মধ্যেও অনেকে এর শিকার হয়েছে । ওই ব​য়স্ক মানুষগুলো ভ​য় পান পার্কে মেয়েদের সিকিউরিটি নিয়ে । ছেলেগুলো অদৃজার সাথে কিছু খারাপ করতে পারে ভেবে অদৃজার বাড়ি ওরা যায় । ওই পাড়ার মধ্যে সব পরিবারকে এক করে বৃদ্ধাশ্রমে জড়ো করেন । তাঁরা একটা প্ল্যান করেন ।

যে ভ​য়টা তাঁরা করেছিলেন ওই পার্কের ঘটনার দুদিন পর ছেলেগুলো অদৃজার বাড়ির কাছে জমা হয় । বাড়ির বারান্দায় সকলেই সতর্ক ছিলেন । শুরু হলো ছেলেগুলির লাম্পট্য । মেয়েটি পাশ কাটিয়ে এগোচ্ছে আর পিছনে ওরা নোংরা ভাষায় কথা বলে যাচ্ছে । এই বুঝি তারা ওর পোশাকে হাত দিলো । সালোয়ারের ওড়নায় টানের সঙ্গে সঙ্গেই মেয়েটি ঘুরে দাঁড়িয়ে শরীর থেকে পোশাক খুলে ফেললো । পাশের সব বাড়ি থেকে একে একে সব মেয়েরা নগ্ন হয়ে পথে নামলেন । অদৃজা বুকে বল পেয়ে বললো , " আয় শালা , হারামখোর । আয় , এই তো এত মেয়েমানুষ । দেখ ছুঁয়ে । একশোজন নগ্না দাঁড়িয়ে ৪টে পুরুষের সামনে । আয় শালা , আয় । "

একসঙ্গে অতজনকে বিবস্ত্ররূপে দেখে ছেলেগুলো চমকে ওঠে । পিছনদিকে ফিরে ছুটে চলে । ততক্ষণে নগ্নাবস্থায় নারীরা গান জুড়েছেন ,

" আয়রে পশু শরীর খাবি ,

মা বোনেদের খেতে পাবি ।

কাপ​ড়জামার বালাই ছেড়ে

দাঁড়িয়েছি রে তোদের পরে ...

যেই মায়েরই স্তন্যপানে হলি ব​ড় ,

ধর্ষিতে আজ তাদের হলি অগ্রসর ।

আয়রে দত্তি ছিঁড়ে খাবি ,

নরমাংস যা চাস তাই পাবি । "

এরপর প্রত্যেকে হাতে একটা কাপ​ড় মোড়া বাঁশে আগুন ধরালো , হ​য়তো কেরোসিন ছিলো । মশাল নিয়ে নগরের পথে শখানেক লোক নগ্নবেশে এগিয়ে চলেছে । ছেলেগুলি তখন পাগলের মতো ছুটছে ।

রাস্তায় সব গাড়ি দাঁড়িয়ে । সিগন্যাল অবিরত লাল । দোকানপাঠ থেকে লোকজন , পথের পুলিশ , বাকি লোকজন যেন কিছু হতবিস্মিত ভঙ্গিতে ওদের দিকে তাকিয়ে । সব ব​য়সী মেয়েরা অদৃজার সাথে ওই পাড়া থেকে নগ্নাবস্থায় হেঁটে চলেছে । ক্রমে পাড়া থেকে বেরোনোর পরে আরও আরও মহিলা যোগ দিলেন নগ্নাবস্থায় । ততক্ষণে তারা " আগুন জ্বালো " গান শুরু করেছে । ছেলেগুলো যেদিকে যাচ্ছে সেদিকে তাদের ধাওয়া করছে নারীদল । তারা একটা সম​য় মশালের আগুন ওদের দিকে ছুঁড়ে দিলো । গায়ে লাগলো না । তবে একে একে মশাল প​ড়তে প​ড়তে তাদের চারপাশে সীমারেখা তৈরী হয়ে গেলো । গনগনে আগুনের বলয়ে ওই চারজন । তার বাইরে ভয়াল কালিকার রূপে শদুয়েক নারী দাঁড়িয়ে । আক্রোশে ফুঁসছে ওরা । কোনোক্রমে ওই বৃত্তে দাঁড়িয়ে ওই চারটি ছেলে । আগামী ৬ ঘন্টা আগুন জ্বললো । আর তাদের ঘিরে দাঁড়িয়ে হাসতে শুরু করলো সব মেয়েরা ।

৬ ঘন্টা শেষে ভ​য় ও ট্রমার চরমে পৌঁছে গিয়েছিলো ওই ছেলেগুলি । পুলিশ অবশেষে ওদের গ্রেফতার করলো । " দাঁড়ান অফিসার । " বললো একটি মেয়ে ।

শটান সে একজনের সার্ভিস রিভলভার বের করে চারজনের দিকে তাক করে রইলো । পুলিশ রে রে করে আসবে কি তার মধ্যেই ট্রিগার করে দিয়েছে অদৃজা । মেয়েটি তাকে পিস্তল তুলে দিয়েছিলো । একে একে চারটি গুলি চারজনের মাথা লক্ষ্য করে তাক করলো অদৃজা । গুলি চালায়নি কোনোদিন । তবে অব্যর্থ নিশানা । 

ওই দলে একজন মহিলা ইন্সপেক্টর ছিলেন , হাতে রেখেছিলেন ওই সেম পিস্তলের চারটি বুলেট । রুমালে মুছে , বুলেটগুলো ভরে দিলেন পিস্তলে । তারপর পুলিশের দিকে এগিয়ে বললেন , " নিন স্যার , সার্ভিস পিস্তল যত্ন করে রাখুন । কোনো গুলি খরচা হয়নি । কয়েকটা কুকুর নিজেদের মধ্যে হাতাহাতিতে মরেছে । এই লিখবেন কেসে । নইলে ... পাবলিক আউটরেজ কী জিনিস জানেন না । "

ছেলেগুলোর লাসে থুতু দিয়ে মেয়েগুলো ফিরে চললো । কোলকাতা এ জিনিস দেখেনি । পরদিন খবরে এটা এলে শহরবাসীরা রীতিমতো চমকে উঠলো ।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics