STORYMIRROR

SHUBHAMOY MONDAL

Classics

4  

SHUBHAMOY MONDAL

Classics

না চাহিলে যারে পাওয়া যায় - ২

না চাহিলে যারে পাওয়া যায় - ২

3 mins
394

না চাহিলে যারে পাওয়া যায় - ২য় পর্ব

শুভময় মণ্ডল


আমি তো কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে, ভাবতে থাকি - ম্যক্সওয়েল পারলেন না, আইনস্টাইনের স্পেশাল থিওরী পারলো না, হাইজেনবার্গও পারেননি গাড্ডায় ফেলতে আমায়, আর এই পুঁচকি মেয়ে বলে কিনা, আমায় গাড্ডায় ফেলবে?


হাতি ঘোড়া গেলো তল, পিঁপড়ে বলে কত জল? আমি কি সংস্কৃতে অতই কাঁচা? হ্যাঁ সংস্কৃত হরফে পড়াশুনা এখন নিতান্তই কমে গেছে, তাই। নয়তো, সংস্কৃত পড়তে এই শর্মা ভয় পায় নাকি?


এই সব ভেবে, বুকে একটু বল সঞ্চয় করে তাই, ঠিক করলাম বিবাহ মণ্ডপেই ফিরে যাবো। দেখি কি সমস্যা হয়। এই ভেবে, ঘুরে ফিরে যাবার জন্য উদ্যত হতেই, কন্যাটি আমার হাতটা ধরে আটকে দিলো!


বললো - ভয় পাচ্ছো নাকি? ফিজিক্সের টীচারের আবার এত ভয়? আমি তোমায় কি এমন গাড্ডায় ফেলতে পারবো, যে তার থেকেও নিজে নিজে উদ্ধার পেতে পারবে না তুমি? এত ভীতু? কাপুরুষ?


আমার মাথায় তখন শরত চাটুজ্জ্যের শ্রীকান্ত এর কথাটা মনে পরলো। ইন্দ্রনাথ কাপুরুষ বলায় তার কিরকম অনুভূতি হয়েছিলো, সেটা পড়ার সময় না বুঝলেও আজ এই পুঁচকি মেয়েটার কথায় ভালোমতই বুঝতে পারলাম।


তাই বাধ্য হয়ে, থেমে গিয়ে বললাম - কাপুরুষ? আমি? হুঁ, কি গাড্ডায় ফেলবে তুমি, চলোতো দেখি? সে বললো - জামাইবাবু আমায় কি বলছিলো জানো? 


বললো - কি শালী, আমার ঐ বন্ধুটাকে পছন্দ হয়? খুব ঝাড়ি মারছো তো দুজনে দেখছি। ও কিন্তু খুব ভালো ছেলে, বলো তো কথা বলে দেখি। এই আসরেই তাহলে তোমাদের দুই বোনের একসাথে.... বলতে বলতে সে লজ্জায় মুখটা নিচু করে নিলো।


আমি বিয়ে বাড়ির সেই আধো আলো ছায়ায়, আর পূর্ণিমার জ্যোৎস্নায় স্নিগ্ধ তার মুখের পানে চাইলাম সোজা সুজি - প্রথমবার। তার ঠোঁটের ঠিক ওপরে একটা তিল ছিলো - সো রোম্যান্টিক, সো অ্যাডোরেবল, কি দারুণ লাগছিলো তাকে।


মাথা ভর্তি তার একরাশ ঝাঁকরা কোঁকরানো চুল, ঠিক যেন কিশলয় বইয়ের নজরুল! আর তার সেই দুটো কাজল কালো টানা টানা পটলচেঁরা চোখ - আমি ভিতরে ভিতরে যেন প্রচণ্ড দূর্বল হয়ে পড়লাম।


তার মুখপানে একরাশ ভালোবাসা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম বিহ্বলভাবে। সে বললো - আমি কিন্তু, সেজন্য তোমায় ডাকিনি। মায়ের পাল্লায় পরলে, তোমার হাল খারাপ হয়ে যাবে বুঝে, আর জামাইবাবুর কথায়, তোমাকে উদ্ধার করতেই এসেছিলাম - গাড্ডায় ফেলতে নয়।


আমি, কি করবো, কি বলবো, বুঝে উঠতে পারছিলাম না। পূর্ণিমার সেই চাঁদ আর কন্যাটির স্মিতবদন - দুইই যেন একাকার হয়ে গেছে তখন আমার চোখে। শেরওয়ানির বুক পকেটে একটা গোলাপ ছিলো, সেটাই খুলে নিয়ে তার হাতে ধরিয়ে দিলাম।


কিছু বলার আগেই, সে লজ্জায় যেন গলে গেলো! গোলাপটা নিয়ে এক দৌড়ে চলে গেলো সে ওখান থেকে। আমার তখন চোখে প্রেম, বুকে প্রেম, মুখে প্রেম। তার ঐ হরিণীর মতো ছুটে চলে যাওয়া দেখার পর, আর বিবাহ বাসরের হট্টগোলে যেতে ইচ্ছে করলো না।


প্রেমে পরলে, মানুষ - হয় নিঃসঙ্গ থাকতে পছন্দ করে, নয় তার সঙ্গীর সাথে। আমিও সেদিন প্রেমে পড়লাম, তেইশটি বসন্ত পার করে এসে আজ, হঠাৎ এক মৃগনয়না কিশোরীর ঠোঁটের কমনীয় তিল - লুট লিয়া মেরা দিল!


আমি তখন কি করি? আসে পাশে চারিদিকে বার বার দৃষ্টিপাত করেও কোথাও সেই চপলা হরিণীর দেখা পেলাম না আর। এরই মধ্যে ওদিকে, বুদ্ধদেবদাও বরাসন ছেড়ে বিবাহ মণ্ডপে প্রবেশ করেছে। 


সেই মাসিমাও - আমায় খুঁজে না পাওয়ায় অগত্যা, নিজেই মধ্যস্থতা করে দুই পুরোহিতের সমঝোতা করিয়ে দিয়েছেন। তাঁরাই একজোট হয়ে এখন বিবাকার্য সম্পাদন করছেন।


বুদ্ধদেবদার বিয়েটা লাভ ম্যারেজ ছিলো। হবু বৌদি নিজে শিক্ষিকা, অনেক আগেই চাকরী পেয়েছিলেন তিনি। আর তাঁরই সাপোর্ট পেয়ে, আমার ঐ দাদাও নিজের কেরিয়ার গড়েছেন বেশ সময় নিয়ে, নিজের পছন্দমতো করে। 


আমার এখনও পর্যন্ত দেখা - পরস্পরের প্রতি এত ভালোবাসা, এত ভরসা করতে পারা, সেরা জুটি তারা। মনে হলো - সত্যি, তাদের ঐ পবিত্র এবং গভীর ভালোবাসার ছোঁয়ায়, হয়তো আজ আমার জীবনেও প্রেম এলো। আসলে, তখনও জানিনা - প্রেম আসে নি, প্রেমের জন্য দুঃখ এলো।


যাই হোক, আমি তখন বিয়েবাড়ি থেকে চুপচাপ বের হয়ে গেলাম। বাড়ির সামনেই ছিলো একটা বুড়োশিবের মন্দির আর চাতাল। তার পিছনেই ছিলো একটা পুকুর, আর তার বাঁধানো ঘাট। সেই ঘাটের পাশে ছিলো আবার এক জোড়া বেলগাছ।


সেইরাতে পুকুরের জলে, পূর্ণিমার চাঁদের ছায়া ভাসছিলো। তাই দেখে, আমার সদ্য প্রেমে পরা হৃদয় বিগলিত হলো। শুধু ঐ চাঁদের পানেই চেয়ে থাকবো বলে ঐ ঘাটেই গিয়ে বসলাম। 


এরপর, শুরু হলো - জলে ভাসমান সেই চাঁদের ছায়ার মস্করা আমার সাথে! তখন, প্রেমে মত্ত হৃদয় আমার মস্তিষ্ককে নিশ্চয়ই নির্বোধ বানিয়ে দিয়েছিলো। নইলে মাঝরাতে বাড়ি থেকে বের হয়ে, বেলগাছের নিচে গিয়ে বসে কোন ন্যাড়া?


চলবে।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics