রিমি ঘোষ

Tragedy

3.3  

রিমি ঘোষ

Tragedy

মিতালী

মিতালী

3 mins
84


মিতালী ছিল এক মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে, যার বাবা চ্যাটার্জী বাবু ছিলেন একজন পেশায় অটো চালক,ও তার স্ত্রী মানে মিতালীর মা ছিলেন একজন গৃহিণী। তাদের সংসার খুব অভাবেই চলতো। তার মা সবসময় মিতালীকে ঘরের কাজ, রান্না বান্না, শেখানোর চেষ্টা করতো, আর বলতো শশুর বাড়ী গিয়ে কিন্তু সবাই যা বলবে তাই মন দিয়ে শুনবি, কখনো "না" বলবি না। মিতালী তখন সব কথা তার মায়ের অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে বলে তার মা কে কথা দিয়েছিল। সে জানতো না যে "না" কথাটা তার জীবনের সবচেয়ে কাল হয়ে দাঁড়াবে।

ম.............মিতালী তখন ওই কলেজ শেষ করে একটি কম্পিউটার প্রতিষ্ঠানে পার্ট টাইম চাকরি করতো আর বাকি সময় সে তার নাচ নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। মিতালী নাচ করতে ভিষন ভালবাসতো।নাচ তার শিরা উপশিরাতে মিশে ছিল।

একদিন হঠাৎ পাশের পাড়ার ওই ঘোষ বাবু সে আবার একজন ঘটক, একদিন তড়িঘড়ি করে চ্যাটার্জী বাবুর বাড়ি এসে তাদের কাছে এমন এক প্রস্তাব রাখল তাতে চ্যাটার্জী বাবু ও তাঁর গিন্নি দুজনেই স্তম্ভিত হয়ে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে বলল "মশাই বলেন কি"? আমার মিতালীর অত্য বড়ো ঘরের বউ হবে......?

তখন মিতালী দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তাদের সব কথা শুনে ফেলেছিল, কিন্তু সে না শোনার ভান করে ঘরে চলে যায়। মিতালীর বাবা তার মা কে বলল যাও মেয়ের সাথে গিয়ে কথা বলো।

যথারিতি তার মা, মিতালীর কাছে গিয়ে বল্লো "মা রে তোর জন্য একটা সম্বন্ধ এসেছে বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড নিজের ২ তলা বাড়ি, বাবা মা এর একমাত্র ছেলে সোনার দোকান খুব বড়লোক, কিন্তু.......

মিতালী তখন জানলা দিয়ে আকাশ পানে চেয়ে ছিল...

মিতালী প্রশ্ন করলো কিন্তু...... কিন্তু কি মা....?

তার মায়ের সেই কিন্তুর উওর পেয়ে তার চোখের জল সে ধরে রাখতে পারে নি...... কারণ ছেলের নাকি আগে একটা বিয়ে হয়েছিল স্ত্রী মারা গেছেন আবার তাদের একটি সন্তানও আছে বয়স ৭। তার জন্যই দ্বিতীয় বার বিয়ে করা। বরের বয়স নাকি প্রায় ৪২। আর মিতালীর বয়স তখন ওই ২৩ এর দোরগোড়ায়। মিতালীর বাবা মা তার ইচ্ছে না জেনেই সেই সম্বন্ধের প্রস্তাবে হ্যাঁ করে দিয়েছিল। এরই মধ্যে ঠিক হয়ে গেল তার বিয়ের দিন আর মাত্র ২১ দিন বাকি। মিতালী তার বাবা মা কে জিজ্ঞেস করল, আমায় নাচ করতে দেবে তো?....

তার মা শুধু বলল অনেক কষ্টে সম্বন্ধটা এসেছে তারা যদি নাচ করতে দেয় তালে করবি, তাদের অমতে কিন্তু কিছু করিস না.... সে চুপ করে তাকিয়ে তার নিজের ঘরে চলে গেল।

বৌ ভাতের দিনে তার বর ঘরে আসতেই মিতালী জরসর হয়ে গেল, সে তার ঘোমটার আড়াল থেকে দেখল সে তো মদ্যপান করে দাঁড়াতে পারছে না একজায়গায়, মিতালী দৌড়ে গিয়ে তাকে ধরে বিছানায় শুয়ে দিল, তখন সে জানতে পারল তার বরের নাম সৌমেন।

সৌমেন তখন নেশায় অচৈতন্য অবস্থায় কি যেন বকে যাচ্ছে। আর মিতালী সারা রাত ঘরের এক কোনায় বসে চোখের জল ফেলছে। সে জানতো না যে এই চোখের জল তার কোনো দিনও শুকোবে না। পরের দিন সকাল হোতেই মিতালী তার শশুর শাশুড়ির জন্য চা নিয়ে তাদের ঘরে যেতেই তাকে বলা হল 'দেখো আমাদের বাড়িতে কোনো কাজ করার লোক নেই সব কিন্তু তোমাকেই করতে হবে, আমার নাতি মানে সৌমেনের আগের পক্ষের ছেলেকেও তোমাকেই দেখাশোনা করতে হবে।

মিতালী ঘাড় নাড়িয়ে সে চূপ করে চলে গেল। যখন সে তার নিজের ঘরে গেল, তখন সৌমেন ঘরে দাঁড়িয়ে, মিতালী তাকে দেখে আতকে ওঠে, তার স্বামী তাকে দেখেই বলতে লাগলো "আমার বাবা মা ছেলে সবাই কেই তোমায় দেখাশোনা করতে হবে আর তোমার নাচটাচ এইসব আর হবে না। আর আমার সামনে কোনদিনও আসবে না আমি তোমায় স্ত্রী এর সুখ দিতে পারবো না"।

মিতালী চুপ করে একজায়গায় দাঁড়িয়েই থাকল, তার মুখ থেকে কোনো আওয়াজ বেরোলো না। সেই মুহূর্তে মিতালী "না" বলতে চেয়েছিল। কিন্তু তার মা এর সেই কথা তার কানে বেঁধে গিয়েছিল।

"মিতালী ভালো করে সংসার করবি এখন থেকে ঐটাই তোর নিজের বাড়ি"-

কেন?

"মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেলে কি পর হয়ে যায়"?

তাদের বাবার বাড়িতে কেন কোনো অধিকার থাকে না? কেন আজকেও প্রত্যকটা বাবা মা বলে না "তোর জন্য তোর বাবার বাড়ির দরজা সবসময় খোলা"।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy